গল্পের নাম: বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ১১: তুমি_আমার
লেখিকা: #Lucky_Nova
“আ…আমার সাথে বাজে কিছু করার চেষ্টা করলে আ..আমি কিন্তু চিৎকার করব।”
এরোনের নাক মুখ শক্ত হয়ে গেল মিহির কথা শুনে। রাতারাতি এতটা পালটে গেল কি করে মেয়েটা! নাকি কোনো স্বপ্নর মধ্যে আছে ও।
এরোন কিছুক্ষণ মিহির দিকে প্রশ্নাতীত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
মিহি দ্বিতীয় দফায় আবার বলতে লাগলো, “ভু.. ভুল করেও আ…আমার কাছে আসবেন না। যদি আসেন…”
“যদি আসি?” রেগে কথার পিঠে প্রশ্ন করেই এরোন ওর দিকে আরো ঝুঁকলো।
মিহি চমকে মুখটা আরো পিছনে সরিয়ে নিলো। আর কোনো বাজ বিচার না করেই দাপটের সাথে বলে উঠলো, “এসব করার জন্যই ত তুলে এনেছেন তাইনা! আপনার লজ্জা করেনা? এভাবে একটা মেয়েকে…।”
মিহির কথা শেষ হতে না হতেই এরোন প্রচন্ড রেগে আচমকা ওর কোমড়ে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ওকে।
মিহি শিউরে উঠলো আর ভয়ার্ত চোখে তাকালো। এক শীতল শিহরণ শিরদাঁড়া বেয়ে মাথায় উঠে গেল। প্রচন্ড ভয় হতে লাগলো ওর।
“কি করার জন্য তুলে এনেছি বললা? সাহস থাকলে রিপিট করো।” তেজের সাথে বলল এরোন।
মিহি বেশিক্ষণ এরোনের চোখের দিকে তাকাতে পারলো না কারণ সেই চোখে এখন তীব্র রাগ। মনে হচ্ছে এখনি কিছু করে বসবে সে।
মিহি কিছু বলতে গিয়েও পারলো না। সব কথা গলায় দলাপাকিয়ে আটকে রইলো।
“তোমার কুৎসিত চিন্তাগুলো ঠিক প্রমান করে দেব?!”
এরোনের কথা শুনে কেঁপে উঠলো মিহি। তাও দৃষ্টি নত রাখলো।
“বলো, দেবো?” ধমকে উঠলো এরোন।
মিহি ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে কোনোমতে না সূচক মাথা নাড়ল।
“আমি চাইলে ত এতক্ষণে বাজে সবই করতে পারতাম! কিন্তু বাজে কিছুর চেষ্টা আজ পর্যন্ত করেছি আমি তোমার সাথে?” কঠোর গলায় বলল এরোন।
মিহি চোখমুখ খিচে বন্ধ করেই রইল। কিছু বলল না।
এভাবে এত কাছে আসার কারণে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে মিহি। এজন্যই শরীর মৃদুভাবে কাঁপছে ওর।
বিষয়টা আমলে আসতেই এরোন অতি দ্রুত মিহিকে ছেড়ে দিয়ে সরে এলো।
রাগের কারণে বিষয়টা মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল ওর।
এরোন ওকে ছাড়ার সাথে সাথেই ও বিছানায় উবুড় হয়ে পরে চাদরটা ডান হাতে খামচে ধরলো। চোখের জলের বড় বড় ফোটাগুলো গড়িয়ে চাদরে পরতে লাগল।
ওকে এমন করতে দেখে এরোনের নিজেকে অনেক দোষী মনে হতে লাগলো। এভাবে ওর কাছে যাওয়া সত্যিই উচিত হয়নি।
নিজের উপর নিজের রাগ হতে লাগলো ওর। তাই দ্রুতপদে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল এরোন।
__________________________
সন্ধ্যার পর এরোন প্রীতিকে মিহির জন্য খাবার নিয়ে যেতে বলল। যদিও এরোনের যথেষ্ট সন্দেহ আছে মেয়েটা খাবে কিনা।
তাই প্রীতিকে বুঝিয়ে পড়িয়ে খাওয়াতে বলে দিল।
“বিয়েটা কি হবে?” সন্দিহান কন্ঠে বলল রুনা।
“হবে৷ কিন্তু অন্যভাবে।” নির্লিপ্ত কণ্ঠে উওর দিল এরোন।
“অন্যভাবে কিভাবে?” সরু চোখে তাকালো সুভাষ।
“বলিস না যে গুলি টুলি দেখিয়ে?” রসিকতা করে বলল মেঘ।
তবে কেউ হাসলো না। সবার মুখে গোমড়াটে ভাব।
“অন্যভাবে মানে এমনভাবে যে ও জানতেও পারবে না।” ভাবলেশহীন ভাবে বলল এরোন।
সবাই চোখ বড়সড় করে একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল।
“সেটা কেম্নে মামা?” কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলো মেঘ।
“হলেই দেখতে পাবি।” নির্বিকার চিত্তে বলে এরোন সোফায় পায়ের উপর পা তুলে মাথার নিচে ডান হাত ভাজ করে রেখে শুয়ে পরলো।
কেউ আর জানতে চাইলো না। কারণ বলার হলে এরোন বলতই।
তাই প্রসঙ্গ পালটে মেঘ বলল,”গিলবো কখন আমরা? অর্ডার করা বিরিয়ানি ‘আও রাজা আও রাজা’ করছে।”
“সেটাই। কখন খাব?” ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল রুনা।
“খেতে কেউ বারণ করেনি। যা খা।” একদৃষ্টিতে উপরের দিকে তাকিয়ে বলল এরোন।
সুভাষ হাই তুলতে তুলতে বলল,”আর তুই?”
মেঘ এগিয়ে গিয়ে সুভাষের কাধে এক হাত রেখে বলল,”ব্যাট! বেহুলা না খেলে রোমিও খাবে কেম্নে?”
“বেহুলার লখিন্দর!” বিরক্ত হয়ে বলল সুভাষ।
“আগে ছিলো। এখন বেহুলাকে তুলে আনা হয়েছে। সে রোমিওর হতে বাধ্য।”
“জুলির কি হবে?”
“জুলিয়েটকে মারো গুল্লি। রোমিও এখন বেহুলার, আর বেহুলা রোমিওর।” বলতে বলতে দুইজনেই হেসে দিলো।
“আর লখিন্দর?” রুমা প্রশ্ন করলো।
“ও ব্যাটারে অজগরে খাই থুইছে। রাস্তা ক্লিয়ার।”
মেঘের কথায় সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো।
প্রীতি কিছুক্ষণ পরে নেমে আসতেই এরোন উঠে বসে প্রশ্নাতীত চোখে তাকালো।
প্রীতি ঠোঁট উলটে না সূচক মাথা নাড়লো।
এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আনমনে কিছু একটা চিন্তা করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেল।
“বেচারা এরোন!” হাতাশ গলায় বলল রুমা।
“আর যাই বল বেচারা বলিস না। ও বড়সড় কিছু প্লান করেছে। আমি হাড়ে হাড়ে চিনি ওরে। আমারে যে কেমনে উল্লু বানাইছিলো। হুহ। মিহিও রেহাই পাবে না। আমার বেচারী ভাবি টা।” আফসোস করার ভান করে বিরিয়ানি মুখে দিলো মেঘ।
“উল্লুরে উল্লু বানানো ত সহজ।” মুচকি হেসে বলল প্রীতি।
মেঘ সরু চোখে তাকালো।
এরোন মিহির রুমে এসে ঢুকতেই দেখলো ঘর পুরো অন্ধকার। আবছা আলোতে যা বুঝলো তা হলো মিহি উল্টোদিক ফিরে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে পরেছে। ঘুমিয়ে গেছে কিনা দেখতে হলে বিছানার কাছে যেতে হবে। কিন্তু গেলেই ত আরো বিপদ। কারণ জেগে থাকলে এই মেয়ে অবশ্যই ভুল বুঝবে।
তাই দরজার কাছে দাঁড়িয়েই নমনীয় গলায় প্রশ্ন করলো, “ঘুমিয়ে গেছো?”
ওর আওয়াজ কানে লাগতেই মিহি হন্তদন্ত করে উঠে বসলো আর ওড়না ঠিক করলো।
এরোন দরজার পাশের লাইটটের সুইচ চাপলো। মুহুর্তে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে গেল।
এরোন মিহির দিকে তাকালো। সে দুইহাতে হাটু জড়িয়ে ধরে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।
কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে এরোন বলল, “তোমার আমাকে বিয়ে করতে হবে না।”
শুনেই অবাক হয়ে এরোনের দিকে তাকালো মিহি।
এরোন গভীর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।
মিহির বুকের উপর থেকে যেন একটা বড় পাথর সরে গেল। কিন্তু এখনো সন্দেহ আছে ওর। কারণ এত সহজে ত ছেড়ে দেবার পাত্র এই ছেলে নয়।
“তার বদলে এক মাস আমার বাসার সব কাজ তুমি করবা।” শর্ত জুড়ে দিল সে।
মিহির মনে মনে রাগ হলো। বুয়া বানাতে চাচ্ছে! তার চেয়েও বড় কথা এক মাস এই ছেলের সাথে থাকাই ত রিস্ক।
“রাজি?”
“বুয়া রাখুন। আমি পারব না।” চোখ নামিয়ে যথাসম্ভব কোমলভাবে বলল মিহি।
“তাহলে বিয়েই ফাইনাল।” গম্ভীর মুখে বলল এরোন।
শোনার সাথে সাথে বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো মিহির। বিয়ে করা যাবেই না।
“এক মাসে আ…আপনি যদি আমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু…” এটুকু বলে থেমে গেল মিহি। আবার আগের বারের মত রাগিয়ে দিলে সমস্যা।
মিহি একটু থেমে আবার বলল,”তাছাড়া আমি একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে আপনার সাথে এক মাস…। আমার বাসায় যাব আমি।”
শেষ কথাটা বলতে বলতে কেঁদে ফেলল মিহি।
সবাই কি করছে কে জানে! আজ আশীর্বাদ ছিলো। নিশ্চয়ই অনেক অপমানিত হতে হয়েছে।
যদিও মুখে অপমান তারা করবে না। নিশ্চুপ হয়ে ফিরে যাবে। কিন্তু পাড়াপ্রতিবেশি? তারা ত ছেড়ে কথা বলবে না।
এরোন ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
“সেটা আমি ভেবে দেখবো। কাল আগে হাতে কলমে সাইন করবা যে এক মাসের জন্য তুমি আমার।”
‘তুমি আমার’ কথাটা শুনে চোখ গোলগোল করে ফেলল মিহি।
“আ..আপনার মানে!” ঘাবড়ানো গলায় বলল মিহি।
“আমার চাকরানী।” ত্যাছড়া ভাবে বলল এরোন।
কথাটা শুনে রাগে মিহির গা জ্বলে যেতে লাগল। তাও দাঁত কিরমির করে হজম করলো। কারণ এখান থেকে বের হলে এমন জায়গায় পালাবে ও যে এই ছেলে ওকে খুঁজেই পাবে না।
?
“তোমাকে এ বাড়িতে আসতে মানা করেছি না?” চরমভাবে তেতে উঠলো মিহির বাবা জোয়েল সাহেব।
এরোন আজ কোনো রকম তর্কে যাবে না সেইরকম মনস্থির করেই সকাল সকাল মিহির বাড়িতে চলে এসেছে।
এসেই বরাবরের মত মিহির বাবাকেই সামনে পেয়েছে। তবে আজ মিহির মা, কাকিসহ মিহির কাকাতো বোন অর্নিও আছে।
তারা মিহির বাবার চড়া গলা শুনে যে যার কাজ রেখে ড্রয়িং রুমে চলে এসেছে।
এরোন আগের মত সাবলীলভাবে দাঁড়িয়ে পরলো মিহির বাবার সামনে।
“তোমার সাহস ত কম না?”
“আমি আজ সব ক্লিয়ার করতে এসেছি।” বিনয়ীভাবেই বলল এরোন।
“কোনো দরকার নেই। সব আগে থেকেই ক্লিয়ার করেছি আমি। আমি তোমাদের কাউকে চিনি না।” ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বলল মিহির বাবা।
এরোন এতে দমে গেল না। সে বলতে শুরু করলো, “মিহি আমার সাথে রিলেশন করতে চায়নি। আমি জোড় করছিলাম ওকে। বার বার পিছু নেওয়ায় রাজিও হতে হয়েছিলো ওর। কিন্তু পরে আপনি বিয়ে ঠিক করে দিলেন। মিহিও বাধ্য হয়ে রাজি হলো। আর সব ছেড়ে এখানে চলে এলো। আমাকে জানালোও না। যোগাযোগও বন্ধ করে দিলো। ফলতঃ আমি সেদিন হুট করে না বলে চলে এলাম। ওর সাথে দেখা করলাম। এক রুমে সে রাতে দুইজনই অনেক কাঁদলাম। একে অপরকে সান্ত্বনাও দিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আপনাকে বুঝাবো। কিন্তু তারপর ফিরতি পথে আপনি দেখে নিয়ে উলটো বুঝে বসলেন। এর জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।”
ফটাফট মিথ্যাগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে বলে ফেলল এরোন। যদিও ওর নিজেরই সন্দেহ হচ্ছে এরা বিশ্বাস করবে কিনা। কারণ মিহি ওদিকে বিয়ে করবে না করবে করে মার্কেট কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।
“বেরিয়ে যাও।” বললেন জোয়েল সাহেব।
এরোন কান্তিময় নিঃশ্বাস ফেলল। বাপ আর মেয়ে দুটোই ত্যাড়া।
তবে সেও মহা ত্যাড়া।
মিহির বাবার থেকে সামান্য দূরে দুইজন মহিলা একত্রে দাঁড়িয়ে আছে। এরোন তাদের দিকে তাকাতেই মিহির সাথে একজনের চেহারার মিল পেলো। এটাই হয়তো মিহির মা।
সে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। তার চোখ বলছে আমার মেয়েটা কোথায়।
এরোন মিহির মায়ের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবার জোয়েল সাহেবের দিকে তাকালো। তারপর বলল, “আমি বিয়ের জন্য আপনার মত নিতে এসেছি।”
“কিসের মত?” গর্জে উঠলেন উনি।
“বিয়েতে আপনার মত না দেওয়া অব্দি আমরা বিয়েটা করবো না। তাই…।”
“মিহি নামের কাউকে চিনি না আমি।” থমথমে গলায় বলে উঠলেন উনি।
এরোন কি করবে সেটাই চিন্তা করতে লাগলো।
এর মধ্যেই মিহির মা কাতর গলার বলে উঠল, “আমার মেয়ে কোথায়? আসেনি কেন?”
“ও জানেনা আমি এসেছি।” বলল এরোন।
“আসলেও ঢুকতে দেব না। এবার মেয়ের হয়ে সাফাই গাইলে তোমাকেও বের করে দেব।” কড়া গলায় বলে উঠল মিহির বাবা।
“দিলে আমি সাথে করে নিয়ে যাব।” বলে ফেলল এরোন।
মিহির বাবা অগ্নি দৃষ্টিতে এরোনের দিকে তাকালো।
“আপনাদের মত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় বলেই আমি এখানে এসেছি। আমি সম্পর্কটা আর পাঁচটা সম্পর্কের মত স্বাভাবিক করতে চাচ্ছি। যেখানে সবার মত থাকবে। মিহি কাল থেকে না খেয়ে আছে। শুধু কাঁদছে। আপনাদের কাছে আসার জন্য অস্থির হয়ে আছে…”
“এ বাড়ির দরজা ওর জন্য বন্ধ।” বলে উঠল মিহির বাবা।
এরোনের ধৈর্য শেষ হয়ে আসতে লাগল।
মেয়ের মত বাপও বাংলা কথা বোঝে না। কখন থেকে বুঝাতে চাইছে মিহির দোষ নেই তাও মিহির জন্য নাকি দরজা বন্ধ!
“তুমি চুপ করো।” আচমকা তেজী গলায় বলে উঠলেন মিহির মা।
সবাই তার দিকে তাকালো।
“তোমার বড় মেয়ের জামাই ত অনুমতিই নেয় নি। উপরন্তু নিজের পলিটিক্যাল ক্ষমতা দেখিয়ে বাজে ব্যবহারও করেছে। ভাংচুর করেছে। এই ছেলেটা ত তাও অনুমতি চাচ্ছে। সাথে ক্ষমাও চাইছে। তাও কেনো মেনে নিচ্ছো না।” বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন তিনি।
মিহির বাবা বাজখাঁই গলায় বলে উঠল, “সিনেমা পেয়েছ নাকি? তোমার মেয়েরা যা করবে তা মেনে নেব আমি? সাহস কত! আবার এই ধরনের ছেলেই জুটিয়েছে। বিয়ে করুক আর মরে যাক আমার যায় আসে না। এধরনের ছেলেকে আমি মানবই না। তার উপর কিনা রাত-বিরেতে মেয়ের ঘরে ঢোকে আবার আমাকে শিখায় মুখ দেখতে এসেছে! সেদিন ত বলল আরেক কথা! আজ বলে আরেককথা!”
এরোন হালকা ভ্রু কুচকালো। আন্দাজ করে যা বুঝলো সেটা হলো আগের মেয়েরও কোনো কাহিনী আছে। সাথে এটাও অনুমান করলো যে প্রেমের বিয়ে আর পলিটিক্স এগুলোতে তাদের আপত্তি আছে। এজন্যই কি মিহিও ওকে চায় না? মাথায় প্রশ্ন চলে এলো এরোনের।
মিহির মা কান্না থামিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে উপহাস করে বলে উঠলো, “আ হাহা রে! এসেছে আমার নবাব পুরুষ! বিয়ের আগে তুমি কি করেছো!”
“দিপালি!” হুংকার দিয়ে উঠলেন উনি।
মিহির মা ভয় না পেয়ে বলল,”বাহিরের লোকজন ছি ছি করছে। গলা উঁচিয়ে মেয়ের রাত-বিরেতে করা কাজ পাড়া প্রতিবেশিদের জানাচ্ছো! সে খেয়াল আছে? কে বিয়ে করবে এখন মেয়েকে? একটা ছেলের সাথে ছিল গতরাতে সে। এখন তার সাথে বিয়ে না দিলে কি হবে বুঝতে পারছো?”
এই কথাগুলো কাল থেকে বলে যাচ্ছেন উনি। কিন্তু মিহির বাবা জেদে অনড়।
মিহির বাবা রাগে ফোসফাস করতে লাগলেন। কারণ তার স্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে তর্কে পারা যাবে না।
আগের মেয়েকে সাপোর্ট করে মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। এবার এই ছেলের সাথে মিহির সম্পর্কও সাপোর্ট করছে।
দেখা যাবে মিহিও ডিভোর্সি হয়ে ফিরে এলে আবার মিহিকেও ঘরে তুলতে বলবে।
“যে ঘরে মা ঠিক নেই, সেই ঘরে মেয়েরা কিভাবে ঠিক থাকবে! এ বাড়ির ত্রিসীমানায় এই ছেলে আর ওই মেয়েকে আমি সহ্য করবো না। বলে দিলাম।” কড়া গলায় বলতে বলতে উপরে উঠে গেলেন মিহির বাবা।
কাল থেকে বাড়িতে এই নিয়ে যুদ্ধ চলছে। সব হাতের বাহিরে যাওয়ার পরও এই লোকটা এত জেদ করে আছে। মানুষ জনের বাজে বাজে কথা ত আর হজম করা যাচ্ছে না।
মিহির মা নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে লাগলেন।
এরোন একটা নিঃশ্বাস বের করে বাড়ির বাহিরে পা বাড়ালো।
বাহিরের গেটের কাছে আসতেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠল, “শোনো…!”
এরোন থেমে ঘুরে তাকালো।
মিহির মায়ের পাশে থাকা মহিলাটা এসেছে।
“আপনি?” এরোন প্রশ্নসূচক কন্ঠে বলল।
“মিহির কাকি।”
এরোন সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল,”হ্যা বলুন।”
“বিয়ে করে নিয়ে চলে আসো। মিহির বাবা মুখে হ্যা বলবে না। এদিকে মিহিকে কেউ বিয়েও করবে না। এসব ঘটনার পর এমনিও অনেক কথা হচ্ছে। আর কথা না হোক এটাই চাই। তবে তাই বলে আমি তোমার পক্ষে না। যেদিন তুমি প্রমাণ করতে পারবা যে তুমি ওমন না সেদিনই আমি তোমাকে মন থেকে মেনে নেব। আমি কেনো সবাই মেনে নেবে। আগের জনের মত মিহিকে কষ্ট পেতে দিও না।” বলতে বলতে মিহির কাকির চোখের কোণে জল চলে এলো।
এরোন গভীরভাবে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।
ভদ্রমহিলা আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুতপদে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন।
(চলবে….)