গল্পের নাম: বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ৪৩: বৃষ্টি_থামার_পরে

0
2189

গল্পের নাম: বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৪৩: বৃষ্টি_থামার_পরে
লেখিকা: #Lucky_Nova

ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে আছে পুরো ঘর। আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। ভাঙচুরের আওয়াজ শুনে দিপালি দৌড়ে এসেছেন মিহির ঘরে।
“মিহি?” আতঙ্কিত কণ্ঠে ডেকে লাইট জ্বালালেন তিনি।
ঘরটা পুরো এলোমেলো করে ফেলেছে মিহি। সব জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে মেঝেতে।
দিপালির চোখ ভিজে গেল। তিনি এগিয়ে গিয়ে জাপটে ধরলেন মিহিকে। মিহি হাঁসফাঁস করে উঠছে। পাগলের মতো করছে।
“সবকিছু তো ঠিকই ছিল। হঠাৎ কেন এমন হয়ে গেল। আমি…আমি ওনাকে ছাড়া থাকতে পারব না মা। ওনাকে এনে দেও মা। প্লিজ।” বিয়ের শাড়িটা হাতের মধ্যে আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল মিহি।
“শান্ত হ। এমন করে আর কতোদিন বল তো!” কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন দিপালি।
মিহি কিছুতেই থামছে না।
হিঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। উনি কেন আসছেন না? উনি কি আমাকে আর ভালোবাসেন না? আমি তো বলেছি আর ভুল করবো না। আর কোনদিনো ওনাকে ফিরিয়ে দেবো না। তাও কেন এমন প্রতিশোধ নিচ্ছেন উনি? ওনাকে একবার আসতে বলো মা। একবার আসতে বলো। একবার আসতে বলো।”
পাগলের মতো করতে লাগল মিহি। দিপালি কিছু বলতে চেয়েও পারলেন না। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালেন।
মিঠি এসে দাঁড়িয়েছে দরজার কাছে। তার চোখেও জল ছলছল করছে।
মিহি আরো উত্তেজিত হয়ে গেল। দিপালির হাতটা আঁকড়ে ধরে বলল,”এরোনকে আসতে বলো মা। প্লিজ। আমার অনেক কষ্ট হয়। দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি পারি না।”
দিপালি শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলেন মিহিকে। শান্ত হতে বলেও লাভ নেই। এমনটা প্রতিদিন হয়ে চলেছে।
এই চার মাসে কান্নাই মিহির সঙ্গী হয়েছে। ঘরের এক কোনে পরে থেকে সারাদিন হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে সে। মাঝে মাঝে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে। শত চেষ্টা করেও কেউ কিছুতেই সামলে উঠতে পারে না। দিপালি জোর করে খাওনোর চেষ্টা করেন। মাঝে মাঝে তাও পারেন না। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি নিজেই কেঁদে ওঠেন।
“তোর বাচ্চাটার জন্য হলেও একটু খা। এমন করিস না। বাচ্চাটা যে কষ্ট পাচ্ছে।” ভেজা গলায় বললেন দিপালি।
মিহি শুনেও শুনলো না। কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা গেল আবার।
দিপালি কেঁদে উঠলেন। মিঠি এগিয়ে গিয়ে ধরলো মিহিকে।
“এভাবে কীভাবে চলবে বল তো? আমার মেয়েটা তো মরে যাবে।” আহাজারি করে উঠলেন দিপালি।
মিঠি চোখ মুছে নিজেকে সামলে বলল,”সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমিও যদি এমন করো তাহলে কী করে হবে? ধরো ওকে। বিছানায় নিতে হবে।”
দিপালি ধরলেন মিহিকে। দুজন মিলে ধরে বিছানায় নিয়ে এলেন।
“কিছু খাওয়াতে পেরেছ?” মিঠি জিজ্ঞেস করল দিপালিকে।
দিপালি নাসূচক মাথা নাড়লেন, “সকাল থেকে না খাওয়া।”
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো মিঠি। স্যালাইন দিয়ে দিয়ে আর কতদিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে ওকে! দিন দিন শরীরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে ওর। বাচ্চাটারও ক্ষতি হচ্ছে।
“তুমি গিয়ে বাবাকে খেতে দেও। তার শরীরটাও তো ভালো না। আমি মিহিকে দেখছি।” বলল মিঠি।
দিপালি চোখ মুছে মিহির দিকে ক্লান্ত চোখে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
মিঠি বসলো মিহির পাশে। জগ থেকে পানি নিয়ে ছিটালো মিহির নাকমুখে। বার দুয়েক ছিটাতেই ভ্রু কুচকে আস্তে আস্তে চোখ খুললো মিহি।
মিঠি আলতো করে মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে ম্লানমুখে বলল, “কতবার বুঝলাম তোকে বল তো! তাও কেন এমন করছিস? বাচ্চাটার কী দোষ? ওকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস?”
মিহির চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ও।
মিঠি আড়ালে নিজের চোখের জল মুছলো। মিহিকে বলল, “কাঁদিস না। একটু খেয়ে নে। এভাবে সুস্থ থাকবি কী করে?”

মিহিকে একপ্রকার জোর করেই খাওয়ালো মিঠি। তারপর বিছানায় শোয়ালো।
মিহির পাশে শুয়ে ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে বলল,”শক্ত হ। সব ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্বাস রাখ।”
মিহি ছলছল করা চোখে তাকালো মিঠির দিকে।
“কবে ঠিক হবে? কবে?” হু হু করে কেঁদে উঠল মিহি।
মুখটা মলিন হয়ে গেল মিঠির। বুক চিরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। মিহিকে বুকে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “খুব তাড়াতাড়ি। একটু ধৈর্য্য ধর।”

?
সময়টা মাঝরাত। ঘন কালো মেঘে আকাশটা মুড়ে গেছে। ঝড়ো হাওয়া বইছে। সাথে তীব্র মেঘ গর্জন। খানিক বাদেই ঝমঝম করে বৃষ্টি নামবে।
বারান্দায় পা গুটিয়ে বসে চোখের জল ফেলছে মিহি। সব স্মৃতি ঘুরপাক খাচ্ছে মন মস্তিষ্কে। রাত বাড়লেই কষ্টগুলো আরো প্রবল হয়। ভিতরটা জ্বলে পুড়ে যায়। যত দিন যাচ্ছে ততই কষ্টগুলো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সহ্যশক্তি কমে যাচ্ছে।
মিহি শূন্যে তাকিয়ে দেয়ালে মাথা হেলিয়ে দিলো।
“এভাবে এখানে বসে আছিস কেন?”
মিহি ঘুরে তাকাল না। বসেই রইল নির্বিকার ভঙ্গিতে।
মিঠি ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃ শ্বাস ফেলল।মিহির কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ।
খানিকক্ষণ বাদে নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বলল, “রুমে চল। বৃষ্টি নামবে। ভিজে ঠান্ডা লাগবে তোর।”
মিহি কানে তুলল না। বলল, “জানিস উনি মাত্র সেদিনই এই বারান্দা দিয়ে এসে হলুদ লাগিয়ে গেছে আমাকে। মাত্র সেদিন।”
মিঠি তাকিয়ে রইল মিহির দিকে। প্রতি মাঝরাতে বারান্দায় বসে এসব কথা বলে মিহি। মিঠি নীরব শ্রোতা হয়ে শোনে।
“তুই এসে পড়েছিলি না! মনে আছে? এজন্য সে কী বলেছিল জানিস? এই ঘরটা নাকি তার জন্য কুফা।” মিহি কাঁদতে কাঁদতে হাসলো।
মিঠির চোখ ভিজে এলো। আড়ালে চোখ মুছে মিহিকে ধরে উঠাতে চেয়ে বলল, “রুমে চল। আজ বৃষ্টি হবে। বারান্দায় থাকিস না।
মিহি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,”উফ! যাব না আমি কোথাও। এখানেই বসবো। উনি আসবেন।”
“আবার পাগলামি করছিস তুই! ওঠ।” জোর গলায় বলতে চেয়েও কণ্ঠ কেঁপে গেল মিঠির।
“আমি এখানেই বসবো।” দারাজ কণ্ঠে বলল মিহি।
অন্যদিনের মতো আজও মিহিকে জোর করেও ঘরে নেওয়া গেল না। ঠায় বসে রইল সে। তাই হাল ছাড়তে হলো মিঠিকে।
মিহি প্রতিদিন মাঝরাতে এখানেই বসে থাকে। মাঝে মাঝে এখানেই ঘুমায়। প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে এটা। জোর করেও লাভ হয় না।
মিঠি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে রইল।

অনেক সময় পর তীব্র বর্ষন শুরু হলো। বাতাসের দাপটে বৃষ্টি ছিটকে আসতে লাগল বারান্দায়। মিহি তাও বসে রইল। নড়লো না। মিঠি অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ঘরে আনতে পারল মিহিকে। শরীর বেশ খানিকটা ভিজে গেছে এটুকু সময়েই। মিঠি গা মুছে দিয়ে শাড়ি বদলে দিলো মিহির।
বিছানায় শুইয়ে দিতে দিতে কোমল স্বরে বলল, “একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।”

?
সারারাত বৃষ্টির পরে এখন পরিষ্কার নীল আকাশ। একটা সুন্দর রোদ ঝলমলে দিন। কে বলবে কালই এত ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল!
প্রকৃতিও মানুষের জীবনের মতোই। কখন কী রূপ ধারণ করে বলা মুসকিল।
বৃষ্টি থামার পরে এই সুন্দর রোদ ঝলমলে দিনের মতো জীবনটাও যদি এমন হতো! সব কষ্ট মুছে গিয়ে যদি সব আগের মতো ঠিক হয়ে যেত! কতই না ভালো হতো! মিহি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল বিষন্ন মুখে। বার বার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে।
কিন্তু এমনটা হতে এত দেরি কেন হচ্ছে? কেন সে এত অপেক্ষা করাচ্ছে? কেন এত কাঁদাচ্ছে? এত খারাপ হয়ে গেছে সে!
মিহি কেঁদে উঠল। হাঁটুতে মুখ গুজে বলতে লাগল, “আর কতো অপেক্ষা করাবেন আপনি? এখন তো আসুন প্লিজ। আর কত কষ্ট দেবেন আমায়। কেন আসছেন না? আমি..।”

“মিহি।”

মিহি চমকে উঠল। হৃদস্পন্দন থেমে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য। রুদ্ধশ্বাস হয়ে দ্রুত মাথা তুলে হাতের বামে তাকালো। সাথে সাথেই থমকালো। নিষ্পলক হয়ে গেল চোখের চাহনি। এই মুহূর্তে নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। এটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি!
মিহি দেয়াল ধরে ধরে উঠে দাঁড়ালো কোনোমতে। পলক ফেললো না। পলক ফেললেই যদি সে উধাও হয়ে যায়?
“কাঁদছ কেন?” এরোন মলিন মুখে হাসার চেষ্টা করে বলতেই মিহি এগিয়ে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো এরোনকে।
এরোন মিহিকেসহ পিছিয়ে গেল দুইপা।
মিহি অনেক শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে হাঁপরের মতো শ্বাস নিতে নিতে সজোরে কেঁদে ফেললো।
এরোন জড়িয়ে ধরতেই কান্নার বেগ বাড়ল মিহির। হাউমাউ করে কেঁদে যেতে লাগল মিহি। পুরো শরীর কাঁপতে লাগল ওর। মনে মনে শুধু একটুকুই চাইতে লাগলো যেন এটা কোনো স্বপ্ন না হয়। এটা যেন সত্যি হয়। আর যদি স্বপ্নও হয় তাহলে সে যেন চিরকাল এই স্বপ্নের মধ্যেই থাকে। এই ঘুম যেন কখনই না ভাঙে। কখনই, কোনোদিনই না ভাঙে।
“শান্ত হও প্লিজ।” ব্যগ্র গলায় বলল এরোন।
মিহি মোটেই শান্ত হলো না। তার কান্নার বেগ আরো বাড়লো। মুখে কিছু বলতে চেয়েও পারছে না সে। সব যেন কান্না হয়েই বের হচ্ছে।
“দেখি, তাকাও আমার দিকে।” এরোন ছাড়ানোর চেষ্টা করলো মিহিকে।
মিহি ছাড়লই না। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বুকে মুখ গুজে কেঁদে যেতে লাগল। যেন ছেড়ে দিলেই সে চলে যাবে! আবার চলে যাবে। তাই ভুল করেও ছাড়বে না মিহি।
এরোন জোর করলো না। জড়িয়ে রাখলো মিহিকে। অপেক্ষা করতে লাগল মিহির শান্ত হওয়ার।
মিহি অঝোরে কাঁদতে থাকল। একটুও থামল না। কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে জ্ঞানই হারিয়ে ফেলল সে।

?
অনেকক্ষণ পর আস্তে আস্তে পিটপিটিয়ে চোখ খুললো মিহি। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। একহাতে মাথাটা চেপে ধরে বার কয়েক পলক ঝাপটাতেই খানিকক্ষণ আগের ঘটনা মনে পড়লো। চট করে উঠে বসে সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে নিল মিহি।
এরোন! এরোন কোথায়? নেই কেন?
ঘাবড়ে গেল মিহি। বিছানা থেকে নেমে কাঁপা গলায় ডাকল,”এরোন?”
কোনো সারা শব্দই এলো না। মুহূর্তে দম আটকে গেল মিহির। হৃদস্পন্দন থেমে গেল।
স্বপ্ন ছিল? স্বপ্ন!
আবার স্বপ্ন!
ডুকরে কেঁদে উঠলো মিহি।
“না। এটা স্বপ্ন হতে পারে না। কোথায় আপনি?” চিৎকার করে উঠে হাতের কাছের টেবিল ল্যাম্পটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলল মিহি। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে লুকিয়ে বসে পড়লো মেঝেতে।
মিঠি দৌড়ে এসে রুমে ঢুকতেই মিহি বারান্দার দিকে ইশারা করে বলল, “আমার এরোন! আমার এরোন কোথায়? এইমাত্র ছিল। কোথায় ও?”
তীব্র আক্রোশের সাথে চিৎকার করে উঠলো মিহি।
মিঠি কিছু বলার আগেই এরোন হন্তদন্ত করে ঢুকল রুমে।
মিহি এরোনকে দেখে থমকালো। কালবিলম্ব না করে দৌড়ে এসে পুনরায় ঝাপটে ধরলো এরোনকে।
আহাজারি করতে করতে বলল,”কেন চলে যান? কেন? বারবার কেন চলে যান?”
“আর যাব না। সরি।” মুখ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিহিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেল এরোন।
“আপনি আবার চলে যাবেন। মিথ্যুক।”
“আমি আর যাব না কখনো। কান্না থামাও প্লিজ।”
মিহি কান্না থামালো না।
মিঠি ম্লানমুখে হেসে বেরিয়ে গিয়ে দরজাটা এগিয়ে দিলো।
মিহি কাঁদলো অনেকক্ষণ। তারপর মুখ তুলে তাকিয়ে এরোনের শার্টের কলার হাতের মুঠোয় টেনে উন্মাদের মতো চুমু খেতে লাগলো ওর সারা মুখে।
“এটা স্বপ্ন তাই না?” মিহি কান্নারত অবস্থায় পুনরায় জড়িয়ে ধরলো এরোনকে। সে এখনো বিশ্বাস করে না।
“স্বপ্ন না। বাস্তব।”
“ও…ওরা কেন বলল আপনি আর ঠিক হবেন না?” কান্নারত কণ্ঠস্বর কেঁপে গেল মিহির।
“ওরা ভুল বলেছে। তুমি কান্না থামাও প্লিজ।”
মিহি কান্না থামালো না। বাধভাঙ্গা কান্নাকাটি শুরু করলো।
“বিশ্বাস করো এটা আমিই। কেঁদো না। দেখি ছাড়ো।”
মিহি জড়িয়ে রেখেই না সূচক মাথা নাড়ল। অর্থাৎ সে ছাড়বে না। একদম ছাড়বে না।
এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কোলে তুলে নিলো মিহিকে। মিহি গলা জড়িয়ে ধরে তখনও কাঁদছে।
এরোন মিহিকে বিছানায় এনে শোয়াতেই মিহি এরোনকে আঁকড়ে ধরে বলল,”যাবেন না কোথাও। আমার কাছে থাকবেন শুধু।”
এরোন মিহির পাশে শুয়ে মিহিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,”বলেছি তো যাব না। এখন তো কান্না থামাও।”
মিহি কান্না থামালো না। তার এখনো খুব ভয় হচ্ছে। হারিয়ে ফেলার ভয়।
এরোন মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, “আর কত কাঁদবা?”
মিহি ছলছল করা চোখে তাকালো এরোনের দিকে। এরোন চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলল,”থামো এবার।”
মিহি থামলো না৷ ক্রন্দনরত অবস্থায় কাঁপা হাতে এরোনের কপালের সাদা ব্যান্ডেজে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, “আপনার অনেক লেগেছে, না?”
এরোন চিন্তিত মুখে তাকিয়ে রইল মিহির দিকে। কী অবস্থা হয়েছে এই কয়েক মাসে। শরীরটা শুকিয়ে গেছে। মুখটা বিবর্ণ হয়ে আছে। চোখ অনেক কান্তি।
“নিজের কী অবস্থা করেছ তুমি!” বিষাদময় স্বরে বলল এরোন।
মিহি হিঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলো।
“আ..আপনি কেন গেলেন আমাকে ছেড়ে? আমি..আমি.. এ কয়েক মাস কীভাবে ছিলাম জানেন? যখন ওরা বলল.. ওরা.. বলল সম্ভাবনা নেই। থা…থাকলে নাকি এতদিনে জ্ঞান আসতো। আমি মনে করেছিলাম…”
“শিসস! চুপ করো এখন।” এরোন চোখের জল মুছে দিলো মিহির।
মিহি ফোপাঁতে লাগলো। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো এরোনকে।
“এটা আমিই।” আশ্বস্ত করে বলে মিহির চোখ মুছে দিলো এরোন।
মিহি এরোনের দুই গাল ধরে পুনরায় চুমু খেলো সারা মুখে। তারপর আবার শক্ত করে জড়িয়েও ধরে কাঁদতে লাগলো।
“ফিরে এসেছি তো আমি! তারপরেও কেন কাঁদছ?এরোন হতাশ হয়ে গেল।
মিহি পুরোটা সময় এমনভাবেই পাগলামি করে গেল। শান্ত হলো না। আর এরোনকে একবারের জন্যও কাছ ছাড়া করলো না। ধরে রইল শক্ত করে।
কাঁদতে কাঁদতে একপর্যায়ে কান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো এরোনের বুকের উপরে।

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here