রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ১৯+২০

0
685

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৯_২০
রুবাইদা_হৃদি(ridy rahman)

চারদিকে ঘুমন্ত নগরী৷ আর এইদিকে আমি নির্ঘুম৷ আমায় আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছেন কাব্য ভাইয়া৷ আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি আরো কাছে এগিয়ে আসেন৷ আর অল্প একটু জায়গা বাকি সোফার৷ আরেকটু এগিয়ে আসলে নি”র্ঘাত আমার উপরে পড়বেন৷ তার কঁপালে চুমু দেওয়া মহা অন্যা”য় হয়েছে৷ যদি আমি চুমু না দিতাম তাহলে উনার হাতের বাঁধনে আটকা পড়তাম না৷ উফ! কি জ্বা’লায় পড়লাম,, সারাদিনের বিভিন্ন কাজে অনেক ক্লান্ত হয়েছে নিশ্চয়৷ এইজন্য কাঁচা ঘুম থেকে উঠানোর ইচ্ছা মোটেও করছে না আমার৷ তার উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখে আ’ছড়ে পড়ছে৷ অন্য অনুভূতি! সে ঘুমে তবুও মনে হচ্ছে, তার নিশ্বাস গুলো দিয়ে আমায় ইচ্ছা করেই জ্বালাচ্ছেন৷ তার খোঁ’চা খোঁ’চা দাড়ি গুলো হঠাৎ ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছা হলো৷ কানের পিঠের সেই তিল টাকেও ছুঁতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ তার গালে হাত বুলাতেই আমার হাতের তালুতে সুরসুরি লাগতেই হাত সরিয়ে নেই আমি৷ আর উনি নড়েচড়ে উঠেন৷ আমি আবার চুপ করে বসে থাকি৷ ঘুমের মাঝেও সে হাসে…! সেই মুচকি হাসি। তার জাম রাঙা ঠোঁট গুলো শুকিয়ে গিয়েছে৷ আমি আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই উনি চুমু দেন৷ আবারো বি’দুৎ খেলে গেলো আমার মাঝে আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে সাথে সাথেই হাত সরিয়ে নেই৷ সপ্ন টপ্ন দেখছেন নাকি উনি? আমি আবার তাকাতেই দেখি মুচকি হাসছেন। আমি এবার নিজের ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। আদেও কি উনি ঘুমিয়েছেন বোঝার জন্য আবার একটু উনার গালে হাত রাখি। না ..! সত্যি ঘুমিয়েছেন। নীতু,সকাল ছাড়া তোর ছাড়া পাওয়ার উপায় নেই। কি দরকার ছিলো উনার কাছ আসার? তার মুখ আর আমার মুখের মাঝে দু ইঞ্চি পরিমাণের জায়গা খালি আছে কিনা সন্দেহ। থেকে থেকে আমার কঁপালে তার ঠোঁট ছুয়ে যাচ্ছে । এইবার আমার অস্ব’স্তির পরিমাণ বেড়ে গেলো হু হু করে । কেমন লজ্জা লাগছে সাথে অনুভবের নিদারুণ সূক্ষ্ম ভালোলাগার ছোয়া ।তার ঠোঁট জোড়া আবার আমার কঁপালে ডিপ ভাবে লাগতেই আমি কেঁপে উঠি। উনি আবার মুঁচকি হাসছেন। অসভ্য মানুষ..! তারমানে ঘুমান নি। আমি রা’গীভাবে বললাম,

–‘ আপনি ঘুমান নি ? ছাড়ুন আমায় …! কি মি”থ্যুক ভাবা যায়,ঘুমের ভান ধরে আছে। ‘

উনি ছাড়লেন না আরো একটু আঁকড়ে ধরলেন আমায়। আমি উনার বুকের মধ্যে হালকা ধা’ক্কা দেই যাতে ছেড়ে দেন আমায়। উহু..! সে না ছেড়ে আরো কাছে টেনে নিলেন আমায়। আবার সেই অনুভূতি ! বুকের বা পাশে হৃ’দ’পি’ন্ডের ধু’ক ধু’ক আওয়াজ । শুধু আমার না কাব্য ভাইয়ার বুকের বা পাশের য’ন্ত্রটাও আমার য’ন্ত্রের মতোই সমান তালে ধু’কপুক করছে । উনার অস্বস্তি হচ্ছে আমার মতো? আমার ভাবনার মাঝেই উনি চোখ বন্ধ করে উত্তর দিলেন,

–‘ হা’র্ট দুটোকে বল, তাদের মালিকদের রো’মান্স করতে দিতে । এতো ধুক ধাক শব্দ করলে তাদের মালিকদের রো’মান্সে ব্যা’ঘা’ত ঘটে তারা জানে না?অ’শিক্ষিত হা”র্ট …!’

তার এমন কথা শুনে আমি হেসে উঠি। হা’র্ট ও অ’শিক্ষিত হয় বুঝি?
–‘ হ্যাঁ হয়! মোর হৃ’দ’পি’ন্ডের রাণী। ‘ উনি আমার মুখের উপর ফুঁ দিয়ে বললেন কথাটা । আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম মূহুর্তেই । কাঁপা ভাবে বললাম,

–‘ অ’শিক্ষিত হোক আর শিক্ষিত … তার মালিক কিন্তু দারুণ অভিনেতা । ‘
আমার কথা শুনে উনি হা হা করে হেসে উঠলেন। আমি চোখ পিটপিট করে খুলে সেই উঁচু দাঁতের হাসি দেখলাম। হাসলে তাকে এতো সুন্দর লাগে কেন? আমার কেমন হিং”সে হয়।

–‘ আমার সব তো তোর ,তাহলে হিং”সে করিস কেন ? হিং”সুটে।’
আমি ক’ম্পিত চোখে তার দিকে তাকালাম। মনে কথা উনি শুনলেন কি করে।
–‘ আমার মনের কথা আপনি শুনলেন কি করে ?’
–‘ মনে মনে বলেছিস বুঝি? ‘
–‘ হ্যাঁ ,শুনলেন কি করে? এই আপনি কি ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ,পার্লার আর মনোবিজ্ঞানী হওয়ার চেষ্টা করছেন?’

আমার কুচকানো কঁপালের মাঝে আবার কিস করে বললেন,
–‘ বউয়ের জন্য তো আমি সব হতে রাজী ।’

তার কথায় আমার চোখে মুখে লজ্জার আবরণ পড়লো। লজ্জায় মিইয়ে গেলাম। এখন তার কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে,’ তার কথা শোনার জন্যও তাকে আমার চাই ।’

একদিনের ব্যবধানে তাকে এতোটা কাছের কেন মনে হচ্ছে? এইটা কি কবুল বলার জন্য? হ্যাঁ, ওই একটা শব্দের জোড় অনেক। যেটা সহজেই একটা মানুষের আ’ত্মার সাথে অন্য একটা মানুষের আ’ত্মার মিল করিয়ে দেয়। হাজার অজানা কারণ এই একটা শব্দের কাছে ফিকে মনে হয়। আমি হাসলাম। জানি না ,তবে আজ তাকে নিজের বলে মনে হচ্ছে ।

~” তোর নামের শহরের অজানার ভীরে, ”
রাখবি কি আমায়…..!
ওওও রাখবি কি আমায়?’
~” ছোট শহর জানে ,আমার অজানা মনের কথা,
সেই শহরের ভীড়ে খুজে পেয়েছি তোর নামের কথা…! ”
~” ওওওও রাখবি কি আমায়?
তোর নামের শহরের অজানার ভীরে,,
রাখবি কি আমায়? ”
~” ভালোবাসার ছোট শহরে, তোর ঠোঁটের হাসির
অজানার কারণে ….!
ওওওও রাখবি কি আমায় !”
~ ” তোর ভালোবাসার দ্বীপ্রহরে, থাকবো তোর মনের অজানায়,
ওওও রাখবি কি তোর মনের কোঠায়,,,
থাকবো আমি তোর শহরের ভালোবাসা মোড়া পাতায়…!”
~ ” ওওও রাখবি কি আমায় ?”
( গানটা কিন্তু আমি লিখেছি?)

আমি থমকে গেলাম..!পুরোটা গান আমার দিকে তাকিয়ে গেয়েছেন উনি খালি গলায় । প্রত্যেকটা কথা যেন আমাকে নিয়ে লেখা । আমার চোখের কোণ বেয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়তেই উনি চোখের নিচে চুমু দিলেন। পানিটুকু গড়াতে দিলেন না। আমি কেঁপে উঠে তার চোখের দিকে তাকালাম। একরাশ লজ্জা আমায় ঘিরে ধরলো মূহুর্তেই। কি করবো ভেবে পেলাম না। উনার বুকের মাঝেই মুখ লুকাতেই উনি টাল সামলাতে না পেরে আমার উপর পড়ে গেলেন । আ’চমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি আমি । ভাগ্যিস আমার উপরে পড়েন নি । তাহলে আজ চ্যা’প্টা হওয়া থেকে কেও বাঁচাতে পারতো না আমায়। উনি হাসছেন । আমি তার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তাকালাম। উনি হাসতে হাসতেই উত্তর দিলেন,

–‘ লজ্জা পেলে তোকে রেড ভে’ল’ভে’ট কেক লাগে জানিস ? একদম টুপ করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা হয়। ‘

আমি আবার লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। উনি আবার বললেন ,
–‘ এখন কিন্তু সত্যি সত্যি খেয়ে ফেলবো । ‘

আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরালাম । শীতল ভাবে বললাম,
–‘ আমার উপরে থেকে উঠুন ।’
–‘ আজ সারারাত এইভাবে থাকবো । ‘
–‘ আমার ঘুম পাচ্ছে…!’
–‘ ঘুমিয়ে পড় !’
–‘ প্লিজ…’
উনি আমার মুখ তার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
–‘ এক শর্তে উঠতে রাজী !’
আমি থেমে থেমে বললাম,
–‘ কি শর্ত?’
উনি এক গাল হেসে বললেন, ‘ আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমার ই”জ্জত হ’রণের চেষ্টা করেছিস …! ‘

আমি হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে বলালাম,
–‘ একদম না, আপনার কঁপালে ম’শা ছিলো সেটা সরিয়েছি। ‘
উনি নাক ছিটকে বললেন,

–‘ ই’য়াক ছি:! নীতু তুমি ম’শা তাড়ানোর বদলে খেয়েছিস !’
–‘ আপনার মাথা …! আমি তো চু…’

নিজের কথার জালে নিজে ফেঁ’সেছি । উনি হাসলেন আবার । ঘর কাঁপানো হাসি। আমি আবার লজ্জায় পুরো মুখ হাত দিয়ে ঢেকে ফেললাম। উনি হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ ঘুমের মাঝে যে কাজ করেছিস সেইটা এখন করতে হবে। গুনে গুনে পাঁচটা তাও,,,

উনি নিজের ঠোঁট ইশারা করতেই আমি ব্যা’থা’তুর কন্ঠে বললাম,
–‘ আমার বুকে ব্য’থা করছে ! ‘
উনি আ”তং’ক নিয়ে তাকালেন। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলেন। ভয় মাখা কন্ঠে বললেন,

–‘ গ্যা’স্ট্রি”কের ব্য’থা? ঔষুধ এনে দিবো । ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না কেন? এই জন্যই তো ব্য’থা করছে । ‘

উনার কেয়ারিং কথা শুনে কেমন ভালোলাগার অনুভূতি ছেয়ে গেলো। আমি তাও নিজের ভালোলাগা দূরে সরিয়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লাম। উনিও আমার সাথে উঠে দাড়াতেই এক দৌড়ে বেডে শুয়ে পড়লাম । উনি তা”জ্জব হয়ে দাড়িয়ে আছে! মি’থ্যা বুঝতে পেরে হু হা করে হেসে উঠলেন। আমি চোখ খুলে তাকিয়ে আবার বন্ধ করতেই উনি বললেন,

–‘ আজ মি’থ্যা বলে পালিয়েছিস..! তবে কাল ? তারপরে? আমার কাছেই আসতে হবে তোর ।’

কথা গুলো শুনেও আমি ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। উনি আমার পাশে আসতেই আমি বেডের সাথে একদম লেগে শুয়ে থাকি । উনি আমার উপর কাঁথা টেনে দিয়ে বালিশ নিয়ে সোফায় চলে যেতে নিলেই আমি বললাম,

–‘ এতো বড় বেডে এক সাইডে আপনার জায়গা হবে ।’
উনি শুধু হাসলেন। মাঝে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়তেই আমি চোখ খুলে তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি । নীতু ইউ ফিল ইন লাভ ? ইয়াপ,,আই ফিল লাভ অন হিম ।’
নিজের মনেই কথা গুলো বিরবির করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
__________________________

ড্রাইনিং টেবিলে সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মোস্তাকিম ভাইয়া রুটি মুখে না দিয়ে হাতে নিয়ে মুখের সামনে ধরে বসে আছেন। আর সিনান আর রাহুল ভাইয়া ফিসফাস করছেন । ইরা মুচকি হাসছে । বাবা আর ফুঁফা বাইরে কোথাও একটা গিয়েছেন আর ফুঁপি রান্নায় ব্যস্ত । আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে বসে আছি। কারণ,কাব্য ভাইয়া আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছেন। বড়রা কেও নেই তাহলে কি ভাবতো ভেবেই আমার মাটির নিচে ঢুকে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা হচ্ছে। সিনান ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বললেন,

–‘ আহা! আমার বেঁ’চারা প্রাণপ্রিয় বন্ধু ,সারারাত কাজের জন্য ঘুমাতে পারে নি একদম । তাই খাবার টেবিলে ঘুমাচ্ছে।’

সিনার ভাইয়ার কথার মাঝেই মোস্তাকিম ভাইয়া রুটি মুখে পুড়ে বললেন,
–‘ ওও এই ব্যাপার । আমি তো অন্যকিছু ভেবেছিলাম।’

উনাদের কথা শুনে কাব্য ভাইয়া কে উঠিয়ে পানিতে চুবাতে ইচ্ছা হচ্ছে আমার । ইরা আমার খোঁচা মেরে বলল,
–‘ হাও রোমান্টিক ইয়ার..! ‘
আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই ও জুস ঢালতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফুঁপি খাবার নিয়ে আসতেই সব চুপ হয়ে যায়। আমি আরেকদফা লজ্জায় পড়ার আগেই ফুঁপি পরিস্থিতি সামলাতে রাগী সুরে বলল,

–‘ কাব্য এই কাব্য…! খাবার টেবিলে কিসের ঘুম? সেই ছোট বেলার মতো । টেবিলে ঘুমানোর অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে।’

সবাই ফুঁপির কথা শুনে একসাথে ” ও “বলে উঠেতেই কাব্য ভাইয়া ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
–‘নীতু, কাল রাতে আমাকে ধোঁকা দেওয়ার শাস্তি এইটা । ‘

ফুঁপি তাকে ডেকেই চলে গিয়েছিলো। ইশ! থাকলে কি অবস্থা হতো ভেবেই উনার মাথা আমার কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে আস্তে করে বললাম,
–‘ আপনার শাস্তি আপনার পকেটে রাখুন । অসভ্য লোক একটা । নিজে ঘুমাচ্ছেন আর কথা শুনতে হচ্ছে আমায়। ‘

উনি মাথা নীচু করেই ঘুম কন্ঠে জোরে উত্তর দিলেন,
–‘ এই কেও উল্টা-পাল্টা বকবি না ! নীতু লজ্জা পাচ্ছে ।’

উনার বেখেয়ালি কথা শুনে পাশে থাকা গ্লাসের পানি উনার দিকে ছুড়ে মারি আমি । সাথে সাথেই চমকে উঠে তাকায়। আমার দিকে গরম চোখে তাকাতেই সবাই হেঁসে উঠে। সবার মুখে দিকে গরম চোখে তাকাতেই সবাই উঠে চলে যায় । উনি আমার দিকে তাকাতেই আমিও উঠে চলে যেতে নিলেই আমার ওড়না ধরে তার ভেজা মুখ মুছেন। আমি ছাড়াতে চেষ্টা করলেই উনি হাতে পেঁচান। ধপ করে চেয়ারে বসে পড়তেই উনি আবার আমার কোমর একহাতে পেঁচিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–‘ এখন এইভাবে বসেই খাবি । পাক্কা দু ঘন্টা আমার সাথে বসে থাকবি। এক পা বাড়াবি তো ….সেটা রুমে নিয়ে বুঝিয়ে দিবো।’
আমি ঢোক গিলে ওইভাবেই বসে রইলাম। ফুঁপি বা কেও এসে এইভাবে দেখলে কি ভাববে ভেবেই কান্না কান্না পাচ্ছে। ঠিক ভাবে খেতেও পারছি না উনি আমার কোমরে সুরসুরি দিচ্ছেন থেকে থেকে । আমি ছাড়তে বললে বলেন,

–‘ চুমু খেতে না চাইলে রুটি খা ..!’
চলবে,,,,,

( গানটা জানি না কেমন হয়েছে! ওই গানের মধ্যে কাব্যের অনেক অনুভূতি আছে কিন্তু?
সে যাই হোক,কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন আর ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২০
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

কড়া রোদ এসে পড়েছে ড্রাইনিং টেবিলে! এখনো আমার কোমরে হাত দিয়ে গরুর হাড় চিবুচ্ছেন উনি৷ থেকে থেকে চাপ দিচ্ছেন কোমোরের উপর৷আমি খাবার নিয়ে বসেই আছি৷ উনি টুপ করে আমার গালে চুমু দিলেন৷ আমি তার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই উনি ঠোঁট উচু করে চুমু ইশারা করতেই আমি তরকারির বাটি উঠিয়ে উনার দিকে ছুড়ে দিতে নিলেই সে আমায় ছেড়ে উঠে যায়৷ আমি চিল্লিয়ে কিছু বলার আগেই আবার আমার ওড়না টেনে নিজের মুখ মুছেন৷ আমি টান দিতেই আমাকে টেনে তার সাথে রুমে নিয়ে যান৷ আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম,
–‘ এতো এমন কেন আপনি?’
–‘ কেমন? ‘
–‘ জানি না..! বিরক্ত করেন কেন আমাকে? ‘
–‘ আর কিছুক্ষণ সহ্য কর৷ তারপর তোর ছুটি৷ ‘
আমি থমকে দাঁড়ালাম৷ আজ বুধবার৷ মনে হতেই চুপ হয়ে যাই৷ আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ কখন যাবেন আপনি? ‘
উনি আমার কাছে..! একদম কাছে এসে দাঁড়ালেন৷ আমি সরলাম না৷ উনি স্থির ভাবে বললেন,
–‘ বিকেলে..ফ্লাইট রাত একটায়৷ ‘
–‘ ওহহ..! ‘
আমার দিকে আরো আগাচ্ছেন উনি৷ আমি পিছিয়ে গেলাম এইবার৷ পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে ঠেকলাম৷ উনি তার এক হাত আমার পাশে রেখে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন,
–‘ নীতু..!’
তার মুখে নাম শুনে অন্যধরণের ভালোলাগে৷ আমি শুধু চোখ তুলে তাকালাম৷ উনি আমার কোমড়ের পিছন দিয়ে হাত দিয়ে একদম তার সাথে মিশিয়ে নেন৷ আমি চমকে উঠলাম৷ চুপ করে তার হার্টের প্রত্যেকটা শব্দ শুনলাম৷ উনি আমায় জড়িয়ে রেখেই পাশে থেকে হাত বাড়িয়ে পানি নিয়ে গাছে পানি দিতে থাকলেন৷ আমি তার মুখের উপর তাকিয়ে আছি৷ সূর্যের আলোতে তাকে সোনালি লাগছে৷ আমার দিকে না তাকিয়ে উনি বললেন,
–‘ যত ইচ্ছা,মন প্রাণ ভরে দেখে নে৷ ‘
আমি চমকে উঠে তার দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম৷ আজ বুধবার আমার মনে ছিলো না৷ সে সত্যিই চলে যাবে..! কষ্ট লাগছে কেন এতো?
বাইরে থেকে ফুঁপার ডাক শুনেই আমায় ছেড়ে উনি বাইরের দিকে চলে গেলেন৷ আমি পিছু পিছু যাই৷ ফুঁপা আর আব্বু দাঁড়িয়ে আছে..! তাকে কিছু কাগজ দিয়ে ফুঁপা বলল,
–‘ সিনান,রাহুল ওরা তোমায় দিতে যাবে৷ আর সব দিকে খেয়াল রেখো৷ নিজের যত্ন নিয়ো৷ ‘
আব্বুও একই কথা বলে চলে গেলেন৷ আমায় দেখে উনি মুচকি হাসলেন৷ বললেন,
–‘ সেবা কর নীতু, স্বামী সেবা..! ‘
–‘ পারি না আমি..! ‘
উনি আমায় আবার টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললেন,
–‘ আয় শিখিয়ে দেই..!’
আমি উনার কথা শুনে থমকে গেলাম৷ বাইরে বেরুনোর জন্য বাহানা খুজতেই উনি জোর করে আমাকে বসিয়ে দিয়ে,কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন৷ আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম৷ উনি হাত টেনে তার বুকের মাঝে নিয়ে চোখ বুজে শুয়ে রইলেন৷ এতোটা স্নিগ্ধ কেন লাগছে তাকে?

বিকেলের হালকা রোদের আলো চারদিকে ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ সবার সামনে কাব্য ভাইয়া আমার কঁপালে উষ্ণ পরশ দিতেই আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকি৷ তার কোনো বাঁধা নেই! সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ সিনান ভাইয়া কিছু বলার আগেই রাহুল ভাইয়া থামিয়ে দেন৷ কাব্য ভাইয়া আমার দুই বাহুতে হাত দিয়ে ধরতেই আমি উনার মুখের দিকে তাকাই৷ তার চোখে-মুখে উদাসীনতা৷ মূহুর্তে আমার বুকের মাঝে একটা কষ্টের সুর তুলে৷ মানুষটা চলে যাবেন..!
–‘ নীতু,
শীতল কন্ঠের ডাক শুনেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি৷ উনি আমায় আবার ডাকতেই চোখ খুলে তাকাই৷
–‘ কথা বলবি না আমার সাথে? ‘
চোখের কোণে পানির আভাস পেতেই আমি লুকাতে চেষ্টা করে বললাম,
–‘ নি..জের যত্ন নিবেন৷ ‘
–‘ আর কিছু? ‘
–‘ ভালো থাকবেন..! ‘
–‘ মিস করবি না আমায়? ‘
আমি এইবার হু-হু কেঁদে দিলাম৷ মিস করবো কিনা সেইটা আবার জিজ্ঞেস করছেন উনি৷ এতো খারাপ কেন? আমি টেনে টেনে বললাম,
–‘ ম..মি..স কর ব বো কেন? আপনার তো যাওয়ার ছিলো৷ আর,, আর..’
উনি আমার মুখের উপর ঝুঁকে বললেন,
–‘ আর? ‘
আমি কাঁদছি! উত্তর দিচ্ছি না একদম৷ উনি আমায় টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন৷ আশেপাশের কেও দেখছে কিনা সেটা মাথায় একদম নেই আমার৷ আমি কান্না করে যাচ্ছি অনবরত৷ সে হাসছে..! মাথা দুলিয়ে হাসছে৷ আমার কান্না দেখে তার হাসি পাচ্ছে৷ আমার পিঠের উপর তার হাত সে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে আমায়৷ ফিসফিস করে বললেন,
–‘ সবাই কিন্তু আমাদের রোমান্টিক দৃশ্য দেখছে৷ ‘
উনার এতোটুকু কথায় তাকে ছেড়ে দূরে যেতে নিলেই হা হা করে হেসে বললেন,
–‘ প্রাইভেসি দিয়ে সবাই চলে গেছে মিসেস. কাল রাতের যে কাজটা করেছিলি সেটা এখন করতেই পারিস৷ এই দেখ আমার চোখ বন্ধ৷ ‘
মূহুর্তেই আমার কান্না থেমে যায়৷ উনার কাছে থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছুটোছুটি করছি৷ সেই কাজটা করা ঘোর অন্যায় হয়েছে তোর নীতু..! ঘোর অন্যায়৷
–‘ উম্ম..তাহলে আমি নিজেই নিয়ে নেই কি বলিস?’
আমি আবার মুখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলি৷ আঙুলের সাইড দিয়ে তার হাসি মুখ দেখতেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠি৷ উনি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ তার চোখের দৃষ্টিতে এতো মুগ্ধতা কেন? কেন এতো আকুলতা..! এই চোখের দিকে তাকিয়ে প্রেমের কবিতা অনায়াসে লিখা যায়৷ আমি কি কবিতা লিখবো তার চোখ নিয়ে?
হাতের উপর তার ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই আমি হাত নামিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে৷ এই লোক ভারী অসভ্য…! শেষে কিনা হাতের উপর দিলো৷
–‘ তোর আঙুল ধোঁকা দিয়েছে তোকে! তারা ঠিক ভাবে তোর লজ্জায় রাঙা মুখ ঢাকতে পারে নি৷ আমার কি দোষ বল তো? ‘
উনার হাত আমার কোমোরের উপর এখন৷ আমি তার হাতের উপর হাত রেখে থেমে থেম বললাম,
–‘ ছাড়ুন ত তো। ‘
–‘ ওকে, ছেড়ে দিচ্ছি..! ‘
উনার স্বাভাবিক কথা শুনে একটু অবাক হলাম আমি৷ এতো সহজে মেনে নিলেন কি করে? আমার নামানো চোখের উপর চুমু দিয়েই তিনি ছেড়ে দেন আমায়৷ এইটা কি হলো? চোখের উপর হাত দিতেই উনি চলে যায়।
ইরা আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে৷ হাসতে হাসতে বলল,

–‘ হাও রোমান্টিক কাব্য ভাই..! ইশ! তুই গাঁধি, রেসপন্স করবি কি উল্টে উনায় ছাড়তে বলিস৷ আমি হলে,,! ‘
আমি ওর হাত ছাড়িয়ে পিছনে ঘুরে রাগী স্বরে বললাম,
–‘ তুই হলে কি? লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখছিলি? ছিঃ! নির্লজ্জ৷ ‘
ইরা ভয় পাওয়ার বদলে আরো হাসে৷ পিছনের দিকে ইশারা করে বলল,
–‘ ফ্রি তে আমরা সবাই সিনেমা দেখেছি..! ‘
ওর হাতের ইশারা দেখে তাকিয়ে দেখি সিনান ভাইয়া আর দাদু দাঁড়িয়ে! আমাকে তাকাতে দেখেই তড়িঘড়ি করে অন্যদিকে ঘুরে যায়৷ কাদের পাল্লায় পড়েছি আমি? ইশ! কি ভাবছে সবাই৷ আজ উনি চলে না গেলে… চলে যাবেন? এই কথাটা মনে হতেই সব ভুলে আবার শূন্য লাগছে৷ ইরা হাসছে,আমি আর কিছু না বলে সামনে তাকিয়ে দেখি সে ফুঁপি কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি ধীর পায়ে সে দিকে এগিয়ে যাই৷ উনি একহাতে আমাকেও টেনে নেন৷ তার শরীরে কেমন ভরসার ছোঁয়া পাচ্ছি৷ এতো কষ্ট হচ্ছে কেন সে চলে যাবে বলে৷ আবারও চোখের কোণায় পানির আভাস পেতেই উনার গালের ছোঁয়াও পাই৷ সে ইচ্ছা করে তার গাল দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দেন৷ আমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠে৷ এতো কেয়ারিং কেন সে? তার মায়ায় এতো বাঁধছেন কেন আমাকে৷
_______________________
রাতের গভীরতা! সেই সাথে কাব্য ভাইয়ার ঘরের শূন্যতা৷ বুক চিরে কেমন দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে থেকে থেকে৷ আমি আমার রুম থেকে তার রুমে এসে পড়েছি৷ তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার লাগানো গাছ গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি৷ আজ সকালেও সে পানি দিয়েছেন গাছে৷ সেই পানির ফোঁটা আমার হাতে লাগতেই আমার চোখের পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে৷ তাকে কি আমি ভালোবেসে ফেলেছি? যাকে দেখলে ভয়ে পালিয়ে বেড়াতাম! আর দুইঘন্টার ব্যবধানে তাকে দেখতে পাবো না ভেবে কান্না পাচ্ছে৷ এই দুই ঘন্টা আমার কাছে দুই বছরের মতো কেন মনে হচ্ছে? আল্লাহ..! কতোদিন তাকে না দেখে থাকবো? তার গলার আওয়াজ শোনার জন্য নিজেকে পাগল পাগল লাগছে৷ সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করেও শান্তি পাচ্ছি না৷ কাব্য,,কাব্য,,এই একটা নাম এই একটা মানুষকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কেমন বিলীন লাগছে আমার৷ তার ছোঁয়া যেখানে আছে সেখানে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি আজ৷ এতোটা ডেস্পারেট হয়ে পড়লাম কেন আমি? এই জন্যই বুঝি বাবা আর রেদুয়ান ফুঁপা শর্ত দিয়েছিলেন তাকে? উফফ! তাকে কেন দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে! সামনে থাকলে দূরে ঠেলে এখন কেন এতো শূন্য লাগছে৷ আচ্ছা,উনার কি আমার কথা মনে পড়ছে না? সোফার সামনে ধপ করে বসে পড়ি৷ কান্না পাচ্ছে..! দরজা ধাক্কানোর শব্দে চুঁপ করে বসে থাকি আমি৷ জিনিয়া ডাকছে৷ জবাব দেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে না৷ ফুঁপি এসে দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
–‘ নীতু, আম্মু..! আমি জানি তুই কাব্যের রুমে৷ দেখ জিনিয়া তোর জন্য কাঁদছে! তোর ফুঁপা আর বাবা না খেয়ে বসে আছে তোর জন্য৷ আমাদের কি ভালো লাগছে বল, কাব্যকে ছাড়া? মেনে নিতে হবে যে! ‘
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,
–‘ ফুঁপি, তোমরা খেয়ে নাও৷ আমি পড়তে বসেছি! ক্লাস টেস্টের অনেক পড়া বাকি৷ ‘
ফুঁপি আর কিছু বলল না৷ হয়তো তার মন আমার চেয়ে খারাপ বেশী৷ আবার দরজা ধাক্কানোর শব্দে নড়েচড়ে বসি আমি৷ জিনিয়া আর ইরা চিল্লিয়ে বলছে,
–‘ ভাইয়া ফোন করেছে। নীতু নামক কাওকে চাচ্ছে৷ কিন্তু সে তো নেই৷ ভাইয়া ফোন কেটে দাও..’
উনি ফোন করেছে শুনেই ওড়না হাতে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে একটানে মোবাইল কেঁড়ে নিয়ে ধপ করে ওদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেই৷ ব্যাপার টা এতো জলদি হয়েছে ওরা অবাক চোখে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দেয়৷ হাসুক..! ফোন নিয়ে বুকের সাথে চেঁপে ধরে দাঁড়িয়ে আছি দরজায় ঠেস দিয়ে৷ দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই৷ ফোন কানে নিতেই গাড়ির শব্দ সাথে সিনান,রাহুল আর মোস্তাকিম ভাইয়ার হাসির শব্দ৷ ফোন কাঁনে নিয়ে উনার নিশ্বাসের শব্দ শুনছি৷
–‘ তোর হার্টের শব্দ তো গানের চেয়ে মারাত্মক নেশা লাগানো৷ ‘
উনার কথা শুনে লজ্জায় পড়ে যাই৷ কথা ঘুরানোর জন্য বললাম,
–‘ এয়ারপোর্টে পৌছে গেছেন? ‘
–‘ না..! রাস্তায় এখনো৷ ‘
–‘ ওহ..!’
আবার নীরবতা৷ নিশ্বাসের ফিসফিস৷ তার গলার আওয়াজ শোনার জন্য এতো আকুল হয়ে ছিলাম এখন কোনো কথা খুজে পাচ্ছি না৷ আমার চুপ থাকা দেখে সে নিজেই বলল,
–‘ কাঁদছিস কেন? ইউ মিস মি? ‘
আমি চমকে উঠলাম৷ উত্তর খুজে পেলাম না৷ উনি আবার বলল,
–‘ দুইঘন্টায় বউ আমার কেঁদে কেটে নদী বানাচ্ছে৷ বাংলাদেশ থেকে এখনো যাই নি এতেই এই অবস্থা..! না জানি বছরের পর বছর থাকলে এসে দেখবো সিলেট তার চোখের পানিতে ডুবেই গেছে৷ ‘
রাহুল ভাইয়া ভয়ার্ত ভাবে ফোঁড়ন কেটে বলল,
–‘ নীতু,বেহেনা! তোর কাব্য ভাইয়ের জন্য কেঁদে সমুদ্র বানিয়ে আমাদের ভাসিয়ে দিস না প্লিজ৷ আমরা সিঙ্গেল ভাই ব্রাদার বিয়ে না করেই ডুবে মরতে হবে যে৷ ‘
আমি হেসে ফেললাম৷ হাসির শব্দ শুনে কাব্য ভাইয়া বললেন,
–‘ হাসিস না..! আমার কষ্ট হয় যে৷ ‘
–‘ পৌছে ফোন দিয়েন৷ ‘
উনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন৷ সিরিয়াস ভাবে বললেন,
–‘ আই মিস ইউ লট..! রাতের খাবার খেয়ে নে জলদি৷ আর ফোন এইটা তোর৷ প্লেনে উঠার পর আর কানেক্টেড থাকতে পারবো না তাই ফোন রাখিস না৷ ‘
আমিও ফোন কানে রাখলাম৷ খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না৷ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূর আকাশ দেখে চলেছি আর উনি ফোনে৷ কথা বলছেন না৷ আমিও বলছি না৷ এখন একটু শান্তি লাগছে৷ চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে যাবেন উনি৷ আমি ধীর কন্ঠে নীরবতা ভেঙে বললাম,
–‘ আই মিস ইউ..! ‘
–‘ কি বললি শুনতে পেলাম না! ‘
রাগ হলো আমার৷ সিরিয়াস মোমেন্টে হেয়ালি না করলে হয় না উনার৷
–‘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ‘
–‘ জানি না। তবে ভালো লাগছে না৷ সব কিছুতে আপনাকে খুজে বেড়াচ্ছি কেন বলতে পারবেন? ‘
অজান্তেই কথা গুলো বলে চুপ হয়ে গেলাম৷ তবে বলতে পেরে ভালো লাগছে সাথে লজ্জা৷ লজ্জা পেয়েও আজ হাসলাম৷ কারণ লজ্জায় পড়লে সে দেখতে পাবে না সাথে আবার লজ্জায় ফেলতেও পারবে না৷
উনি ফিসফিস করে বললেন,
–‘ এই তোর নিশ্বাস কিছু একটা বলছে..!’
আমি ভ্রুকুচকে বললাম,
–‘ কি বলছে? ‘
–‘ ফিরে আসেন..! ফিরে আসেন..! মন যে নিয়ে গেছেন লাগেজে করে..! ‘
হাসলাম আমি৷ লোকটা পারেও বটে৷ সত্যি কি আমার মন নিয়ে গেছেন উনি? আমি বিরবির করে বললাম, ‘ সত্যি যদি ফিরে আসতেন..! ‘
জানি না সে আমার কথা শুনেছে কি না তবে উনি সুর টেনে বললেন,
— ‘ আসবো ফিরে এই আমি,
তোমার মনের দরজার কোণে,,
দোর খুলে দেখো,,
দাঁড়িয়ে আছি হাত বাড়িয়ে..! ‘
কাব্য ভাইয়ার বলার মাঝেই সবাই ‘ বা বা! ‘ করে উঠলেন৷ আমি ফোন রেখে দেই৷ লজ্জা লাগছে অনেক৷
উনি আবার ফোন দিলেন৷ আমি ধরলাম না৷ তিন চারবার বাজতে বাজতে কেটে যেতেই আমার বুকের মাঝে হু হু করে উঠে৷ আর কিছুক্ষণ তার পরেই চলে যাবেন বহু দূর৷ আর চাইলেও তাকে ছুঁতে,, চোখের সামনে দেখতে পাবো না৷ কতোদিন? কত ঘন্টা? আমি যে তিন ঘন্টার দূরত্ব মেনে নিতে পারছি না৷ শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ এতো কষ্ট কেন লাগছে৷
জোনাকিপোকার আলোয় চারদিক চিকচিক করছে৷ সেই রাতারগুলের রাতের মতো৷ আজ তো সে পাশে নেই..! কেন?কেন?
এই অন্দকার বারান্দায় আজ বসে থাকতে একদম ভয় লাগছে না৷ মনের কোণে শূন্যতা থাকলে ভয় বুঝি লাগে? একদম না..!
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর ফোনের ভাইব্রেশনে কেঁপে উঠি আমি৷ কাব্য ভাই কলিং… এইবার আর দেরি করলাম না একদম৷ ফোনটা ধরতেই ওপাশে নিস্তব্ধতা৷ কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ প্লেনে বসে গেছেন বুঝি? আমি যে বিদায় দিতে পারবো না৷ ‘
–‘ নীচে নেমে আয়৷ ‘
সিনান ভাইয়ার কন্ঠ..! নীচে নামবো কেন? বুকের মাঝে ধক করে উঠলো৷
–‘ কাব্য ভাইয়ার ফোন আপনার কাছে কেন?’
–‘ নীচে আয় নীতু,,
–‘ এই সিনান ভাইয়া, নীচে নামবো কেন? কি বলছেন উল্টো পাল্টা৷ ‘
ওইপাশ থেকে জবাব এলো না৷ লাইন কেটে গেছে৷ আমি ওড়না খুজে এক দৌড়ে গেটের সামনে যাই৷ বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা করছে৷ হঠাৎ নীচে আসতে কেন বললো৷ আর কাব্য ভাইয়া? তার ফোন সিনান ভাইয়ের কাছে কেন৷ অজানা ভয়ে দরজা খুলে বাগানে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়ি আমি,,,
চলবে,,,,

( কেমন হয়েছে জানাবেন৷ ভুল-গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here