রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ১৭+১৮

0
616

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৭_১৮
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

বাড়িতে পুরো বিয়ে বিয়ের আসর৷ মানুষের কোলাহল! এতো এতো মানুষের ভীরের মাঝে কাব্য ভাইয়া আমাকে নিয়ে ছাঁদের চিলেকোঠায় আটকে রেখেছে৷ উহু,,আটকে রাখে নি তার সো কল্ড কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে এসেছে৷ আমি দেয়ালের সাথে একদম লেগে দাঁড়িয়ে আছি আর উনি এক হাত দেয়ালে রেখে আমার দিকে ঝুকে দাঁড়িয়ে হাতের মেহেদী দেখে চলছেন৷ গভীর ভাবে দেখছেন তিনি মেহেদী! তার উ’ত্তা’প নিশ্বাস আমার হাতের উপর পড়ছে৷ আমার হা’র্ট বি’ট ক্রমেই বেড়ে চলছে৷ লোকটা আমার কাছে আসলে হা’র্ট নামক য’ন্ত্রটা একদম কথা শুনে না সেইটা তড়িৎ গতিতে হা”তুড়ি পি’টতে থাকে৷ আমি ক”ম্পিত কন্ঠে বললাম,
–‘ ফুঁপি ডাকছে আমায়..!’
–‘ তোকে বলেছে? ‘
–‘ আমি শুনতে পেলাম৷ ‘
উনি আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন৷ সরু চোখে বললেন,
–‘ মৃ”গী রো’গীদের মতো কাঁপছিস কেন এইভাবে? আমি কিছু করেছি তোকে! ‘
আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি কাঁপছি আমি৷ উনি আমার কাধে হাত রেখে চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘ কুল..এতো কাঁ”পা’কাঁ’পির কিছুই হয় নি৷ তবে হবে,,আজ রাতেই হবে৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ কি হবে! ‘
উনি আমার কঁপালে চুমু দিয়ে বললেন,
–‘ অনেক কিছুই হবে! তোর এতো জানা লাগবে কেন? বেশি পে’কে যাচ্ছিস দিন দিন৷ এখন সোজা রুমে ঢুকবি দেন গোসল করে আমার কাছে আসবি..তোকে নিয়ে পার্লারে যাবো ভু’ত সাজাতে৷ এমনি তো ভু’ত আছিস আরেকটু না হয় বানিয়ে আনলাম৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে তাকে ধা’ক্কা দিয়ে বললাম,
–‘ ভু’ত হলে হবে আপনার বউ৷ ‘
–‘ হ্যাঁ,,আমার বউ তো ভু’ত’ই! ‘
এই কথা বলে উনি হাসলেন৷ উনার হাসির জন্য দ্রু কুচকে তাকাতেই নিজের বো’কামির কথা বুঝতে পারি৷ বউ তো আমি..
__________________
সকাল দশটার সূর্যের আলো আজ মোহনীয় লাগছে আমার কাছে৷ গাড়িতে করে আমি আর কাব্য ভাইয়া কোথাও একটা যাচ্ছি৷ গাড়ির পেছনের সিটে আমাকে সাজানোর জন্য সমস্ত কিছু রাখা৷ পার্লারে ফুঁপি আর ইরা নিয়ে যেতে চাইলে কাব্য ভাইয়া জেদ করে, সেই নাকি নিয়ে যাবে আমায়৷ তার প্রত্যেকটা কাজে ব্যা’ঘা’ত দেওয়া লাগবেই লাগবে৷ আমি মন ম’রা হয়ে বসে আছি৷ উনি লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখে আমার উদ্দেশ্য বললেন,
–‘ আজ আমাকে বড্ড হ্যান্ডসাম লাগছে! দেখেছিস? ‘
আমি জবাব দিলাম না৷ তার কি প্রয়োজন ছিলো আমার সাথে আসার সেটাই তো বুঝতে পারছি না৷ আব্বু,জিনিয়া সবাই কাব্য ভাইয়াদের বাসায়৷ গাড়ি আমাদের কলোনী তে যেতেই আমি চমকে উঠি৷ আমাদের বাসার আশেপাশে পার্লার নামক কিছু আছে বলে আমার জানা নেই৷ আমি দ্রু কুঁচকে উনায় বললাম,
–‘ এখানে এনেছেন কেন? ফুঁপি কিন্তু তিনটার আগে বাসায় পৌছাতে বলেছে৷ ‘
উনি গাড়ি আমাদের বাসার সামনে পার্ক করতে করতে বললেন,
–‘ টাইম এন্ড টাইড ওয়েট’স ফর নান৷ তোর চেয়ে টাইমের জ্ঞ্যান আমার বেশী আছে! তাই চুপ করে বসে থাক৷ ‘

উনি নেমেই জিনিস গুলো হাতে উঠিয়ে বাসার ভেতর যেতে থাকলেন৷ পা”গল হওয়ার আর বাকি নেই কিছু! আজ ফুঁপির ব’কা একটাও মাটিতে পড়বে না৷ সাথে আমিরের হু”মকি….! উনি পিছন ঘুরে বিরক্তির স্বরে বললেন,

–‘ গাড়িতে বসেই সব করতে চাস তুই? ওকে আমি আসছি৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে নেমে দাঁড়াতেই জুঁহি আপু কোথা থেকে এসে জড়িয়ে ধরলেন আমায়৷ আমি ভয় পেয়ে যাই৷ কাব্য ভাইয়া আবারও বিরক্ত হয়ে বললেন,

–‘ জড়িয়ে ধরার পরেও সময় পাবি গাঁ”ধী! আমার বউকে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য ডেকেছি তোকে !এমন জড়িয়ে ধরার জন্য না৷ ‘

জুঁহি মেকি রা’গ দেখিয়ে বলল,
–‘ ইউ স্টপ,,রোমান্টিক পোলা৷ হুটহাট বিয়ে করছিস আগে না জানিয়ে, বউকে সাজানোর সময় আমাকে মনে পড়েছে৷ ‘

কাব্য ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দরজা খুজে বাসায় প্রবেশ করতেই জুঁহি আপু গ’দ’গ’দ হয়ে বলল,

–‘ আ’ম,সো এক্সসাইটেড নীতু! আমার এই প্রফেশনে আসার পর আজ প্রথম কোনো বর তার বউকে সাজিয়ে দিবে সেটা দেখতে পাবো৷ হাও রোমান্টিক ইয়ার! ছবি তুলে আপলোড করে আজ ভাই”রাল হয়ে যাবো ড্যা’ম সিউর৷ ‘

–‘ বর বউকে সাজাবে মানে? ‘ আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যায় জুঁহি আপু৷ কাব্য ভাইয়ার চাচ্চুর মেয়ে জুঁহি আপু৷ আমায় শুধু ফিসফিস করে বলল,

–‘ রোমান্টিক বো”ম পেয়েছিস তুই! সামলে রাখিস আমার ভাইটাকে৷ তোকে সে অনেক ভালোবাসে৷ ‘

আপুর কথা শুনে মূহুর্তেই দুনিয়া থমকে যায় আমার৷ আমাকে ভালোবাসে? সত্যি? তার মতো মানুষ ভালোবাসতে জানে বুঝি?
মনের কোণায় জানান দিলো, ‘ তার মতো আর কেও এতো ভালোবাসতে পারে না নীতু! সে যে কাব্য…কাব্যিক তার ভালোবাসা৷ ঠিক রৌদ্দুরে হঠাৎ আগমণ বৃষ্টির মতো৷ ‘
_____________________
আমার রুমের মাঝে বসে আছি তিনজনে৷ আমি রীতিমতো জুঁহি আপুর আর কাব্য ভাইয়ার ঝ”গড়ার জন্য হাঁ’পিয়ে উঠেছি৷ কারণে অকারণে ঝ”গড়া করছেন দুইজন৷ আমি অফ হোয়াইট কালারের গোল্ডেন পাড়ের লেহেঙ্গা পড়ে চুঁপ মেরে বসে আছি৷ লেহেঙ্গা নিশ্চয়ই কাব্য ভাইয়ার পচ্ছন্দের৷ উনার চয়েস এতো ভালো সেটা কখনো জানতাম না৷ হুট করে সব হলেও তিনি ঠিক আমার সপ্নের মতো করে সব করছেন৷ জুঁহি আপু কাব্য ভাইয়ার সাথে পেরে না উঠে আমার চোখে আইলাইনার লাগিয়ে রেগে চলে যায়৷ কাব্য ভাইয়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাঁসে! রহ’স্যময় হাসি৷ আমি ভয়ে বললাম,

–‘ আপনার জন্য আজ সব উল্টাপাল্টা হচ্ছে কাব্য ভাই..! জুঁহি আপুকে যেতে দিলেন কেন ?এইবার আমি সাজবো কি ভাবে? মানুষ জীবনে বিয়ে একবার করে আর আপনি…’

–‘ হুশ… তোকে একবার বিয়ে করবো কে বলেছে? হাজার হাজার বার তোকে..’

উনি তার কথা সম্পূর্ণ না করেই চুপ হয়ে গেলেন৷ তারপর এক গাল হেঁসে বললেন,

–‘ এই আইলাইনার ফাইলাইনার লাগানোর জন্যই ওই গাঁ”ধী টাকে ডাকা৷ ‘
–‘ মানে? তাহলে আমাকে সাজাবে কে!’
–‘ কেন আমি..!’
আমি উনার কথা শুনে পিছিয়ে যাই৷ চোখেমুখে হাত দিয়ে ঢেকে বললাম,
–‘ এই একদম না! আপনি পারেন কিছু? শেষে আমাকে সত্যি ভু’ত লাগবে৷ ‘
উনি আমার সামনে এসে হাত সরিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,
–‘ ইউ ট্রা’স্ট মি? ‘
তার কন্ঠে কিছু একটা ছিলো৷ আমি দুদিকে মাথা দোলালাম৷ উনি মুচকি হেসে বললেন,

–‘ তাহলে আমাকে আর জ্বা’লাস না প্লিজ..! আমার কাজ করতে দে৷ এইটা আমার সপ্ন৷ নিজের বউকে নিজের হাতে সাজাবো আমি৷ ‘

নিজের বউ! কথাটা শুনে আমার হা’র্ট অনেক জোরে বি’ট করে উঠলো৷ না চাইতেও ভালো লাগলো অনেক৷ উনি উঠে গিয়ে কালো গোলাপ, লাল গোলাপ, গোলাপি গোলাপ নিয়ে আসলেন সেই সাথে নাম না জানা অনেক ফুল৷ আমি দ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ উনি নিজে একমনে আমাকে ফুল দিয়ে সাজাচ্ছেন৷ আমি নড়তেই বারে বারে ধ”মকে উঠছেন উনি৷ আমার কান্না পাচ্ছে সেই সাথে অদ্ভুদ সুখ৷ এমনটা আগে কখনো হয়েছে কারো সাথে?এমন সৌভাগ্য বুঝি আমার কঁপালেই লিখা ছিলো? উনি পিছন ঘুরতেই তার মোবাইল দিয়ে কয়েকটি ছবি তুলে নেই আমি৷ আজ আমার রাজ্যের সুখ লাগছে৷ আজ মনে হচ্ছে, সেদিন কাব্য ভাইয়া আমাকে বিয়ে করে ভালো করেছিলেন৷ তা না হলে আজকের কাব্য ভাইয়া আমি পেতাম কোথায়৷ উনায় আঁকড়ে ধরে রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে!
___________________
কাব্য ভাইয়াদের বাসায় পৌছাতেই আরেক দফা ভালোলাগার ছোঁয়া মনেপ্রাণে বয়ে যায়৷ গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই বাসার সবাই হই হই করতে করতে এগিয়ে আসে৷ সেই সাথে উপর থেকে ফুলের বর্ষণ৷ ফুলের বৃষ্টি৷ আমি খুশিতে কাব্য ভাইয়ার হাত চেঁপে ধরি৷ উনিও মুচকি হাসেন৷ এতোটা সুন্দর আজকের দিনটা না হলেই পারতো৷ সব কিছু সাজানো গোছানো সপ্নের মতো৷ আর সেই সপ্ন তৈরি করেছেন কাব্য ভাইয়া৷

বাসার সবাই আমাদের দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । সিনান ভাইয়ারা চিল্লিয়ে বলে উঠলো,

–‘ মামা তো পুরোই রোমান্টিকের ডিব্বা । ইশ! আমাদের একটু শিখাতে তে পারিস । এক কাজ কর ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বউ সাজানোর দায়িত্ব নিয়ে নে । ‘

কাব্য ভাইয়া সিনান ভাইয়ার পেটে গুঁ’তো দিয়ে বললেন,
–‘ আমি শুধু আমার বউ সাজাতে পারি হা”রামির দল । সব সিক্রেট ফাঁ”স করার অপ”রাধে তোকে ফাঁ”সিতে ঝু”লাবো বিয়ের পর।’
ফুঁপি কাব্য ভাইয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,

–‘ এতো সুন্দর করে তুই সাজিয়েছিস ওকে? মাশাআল্লাহ…!কারো ন’জর না লাগুক আমার ছেলের বউয়ের উপর । ‘

আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম । একটু পরেই কাজি সাহেব আমার সামনে বসতেই আমি আশেপাশে তাকাই । আমির নামক অ”শুভ ছায়া এলো কিনা সেই ভয়ে জড়সড় হয়ে আছি । আমাকে কবুল বলতে বললে আমি চুঁপ হয়ে থাকি । কাব্য ভাইয়া আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ যে চিন্তা করছিস সেইটা বাদ দে,,,! আর বাসরের চিন্তা কর ,তাই জলদি কবুল বলে ফেল । ‘
আমি উনার কথা শুনে কবুল বলতেই ….?
চলবে….

( আবার রহস্য?উহু! একদম রহ’স্য নেই! কাল ধামাকা হবে।একটা সিক্রেট শেয়ার করি,ওদের প্রেম কিন্তু শুরু। আর হ্যাঁ,অনেকেই বলছেন আগাচ্ছে না কেন কাহিনী । আমি বলি লাস্ট পর্যায়ে এসে এই কাহিনীর উপর সব ডিপেন্ড করছে। কাব্য আর নীতুর প্রত্যেকটা মূহুর্ত উপভোগ করুন..! একটা সময় বড্ড মিস করবেন?আপনাদের সকলের মন্তব্য দেখতে চাই?না হলে কাল বিয়ে ভে’ঙে দিবো?
ভুল গুলো ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। )

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৮
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

বাসর ঘর নামক ফুলের সাম্রাজ্য বসে আছি আমি৷ হালকা অন্ধকার ঘরের মতো আমার মনের প্রতিটি কোণে অ’স্বস্তি নামক বাক্যটি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে৷ বেডের প্রতিটা কোণায় কোণায় বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো৷ আর রুমের প্রত্যেকটা জায়গায় মোমবাতি আর প্রদীপ দিয়ে সাজানো৷ প্রায় এিশ মিনিট আগে আমাকে কাব্য ভাইয়ার রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে সবাই৷ ভয় হচ্ছে…এতোদিন ঠিক ছিলো সব তবে এই ঘরটায় আসার পর থেকে কেমন যেন লাগছে৷ বাইরে সবার হই হুল্লোড়ের শব্দ ভেসে আসছে৷ তার মধ্যে সিনান,রাহুল ভাইয়ার বলা কথায় বুঝতে পারলাম,টাকা না দিলে বাসর ঘরে ঢুকতে দিবে না তারা৷ কাব্য ভাইয়া পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমি স্বস্তির নিঃ”শ্বাস ফেললাম৷ এইভাবে টাকা চাওয়া চাওয়ি চলতে থাকলে সময় কেটে যাবে৷ সাদা রঙের একটা ফুল থেকে সুন্দর মন মাতানো সৌরভ ভেসে আসছে৷ সেই ফুল হাতে নিতেই দরজা খোলার শব্দে কেঁপে উঠি৷ জড়োসড়ো হয়ে বিছানার চাঁদর খা”মচে ধরে বসে আছি৷ এতো জলদি ছেড়ে দিলো ভেবেই অবাক হচ্ছি । আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি না একদম৷ রুমের মধ্যে পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি৷ ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই চোখ তুলে তাকিয়ে উনাকে একদম আমার মুখের সামনে দেখতে পেয়ে চিল্লানি দিতেই আমার মুখ আটকে ধরেন উনি৷

–‘ এই… এই স্ট’প! চি’ল্লাছিস কেন? ‘
তার হাত আমার মুখের উপর থাকার জন্য দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে৷ আমার অবস্থা বুঝতে পেরে উনি হাত সরাতেই আমি হাফ ছাড়ি৷ রা’গী ভাবে বললাম,

–‘ মা’রতে চান আমাকে? এইভাবে কেও ধরে বুঝি! আর আপনি..না ওয়াশরুমে গেলেন৷ ”

–‘ তুই কি জানিস, তোকে অপরুপ লাগছে৷ ‘
তার মোহময় ঘোর লাগানো কন্ঠের কথা আমার দুনিয়ায় মূহুর্তেই হাজার খানিক ভালোলাগার অনুভূতির প্রকাশ পেল৷ লজ্জায় মিইয়ে গেলাম আমি৷ আমার থুতনিতে উনার হাত দিয়ে উঁচু করে ধরে বললেন,

–‘ তুই নিজেকে দেখেছিস? ‘
আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি৷ আজ অন্যরকমের লাগছে৷ উনি আবার আদুরে ভাবে বললেন,
–‘ এই নীতু,দেখেছিস? তোকে আজ অপরুপ
লাগছে৷ ‘

–‘ ন…না.. দেখি নি৷ ‘

উনি আমার কাছে থেকে সরে গেলেন৷ কিছুক্ষণ নি’স্তব্ধতা৷ তাকিয়ে দেখি উনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে কিছু একটা করছেন৷ আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ আমির আজ আসে নি কেন? তার তো পু’লিশ নিয়ে আসার কথা ছিলো৷ ‘
–‘ আসে নি বলে তোর খারাপ লাগছে বুঝি? ‘
উনি পিছন ফিরেই উত্তর দিলেন৷ আমি নিজের ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বললাম,
–‘ উঁহু… নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে তাই বলে জিজ্ঞেস করছি৷ ‘
–‘ ক’মি’শনার এসেছিলো! আমার গেস্ট হিসেবে৷ আর আমির বর্তমান জে”লে আছে৷ তোদের কোম্পানিতে যে কে”স করেছিলো সেটা মি”*থ্যা প্রমাণিত হয়েছে৷ ‘

বাবার কথা মনে হতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷ যাক এখন একটু টেনশন মুক্ত হবে তার৷ উনি ধীর পায়ে আমার দিকে আগাচ্ছেন৷ আমি উনার পায়ের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললাম,
–‘ আমি আমার রুমে যাচ্ছি..! ‘
–‘ কেন? ‘ উনার শীতল কন্ঠের আওয়াজে আবারও কথা আটকে আটকে যাচ্ছে আমার৷ উনি আমার সামনে এসে আবার বসলেন৷ আমি পিছিয়ে যেতেই আমার হাত ধরেন উনি৷ আমি কেঁপে উঠতেই সে মুচকি হাসে৷ আমার সামনে আয়না ধরেন৷ আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ে ইশারা করেন আয়নার দিকে তাকাতে৷ আমি তাকাতেই আরেক দফা অবাক হয়ে যাই৷ এতোটা নিপুণ ভাবে কেও সাজাতে পারে? হাতে,গলায় ফুলের গহনা ছিলো কিন্তু মাথায় ছিলো সেটা মাএ দেখলাম আমি৷ প্রত্যেকটা জিনিস সুন্দর ভাবে সেট করা৷ কালো আর লাল গোলাপ আমার মাথায়,, খোঁপায় হাত দিতেই উনি বললেন,
–‘ সেখানে গোলাপি আর লাল গোলাপের বাস৷ ‘
আমি নিজের হাতের ফুলগুলো ধরে বললাম,
–‘ আপনি পার্লারে কাজ করতেন? ‘
উনি আমার কথা শুনে কেশে উঠেন৷ আমার দিকে বি’স্ফো’রিত চোখে তাকিয়ে আছেন৷ আমি জোর করে হেসে বললাম,
–‘ না মানে..অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছেন৷ ‘
–‘ সেটা তোকে বলতে বলেছি? ‘
আমি আবার আয়নায় নিজেকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম৷ বিয়েতে যে ভাবে সাজার ইচ্ছা ছিলো তার থেকে হাজার গুণ সুন্দর সাজিয়েছেন তিনি আমায়৷ উনি হঠাৎ আয়না সরিয়ে ফেললেন৷ আমার হাত দুটো তার হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন,

–‘ আমার রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি হবি? ‘
‘ আমার এক আঁকাশের ডানা মেলা পাখি হবি? ‘
‘ এক পশলা বৃষ্টির স্নিগ্ধতায় মোড়া ভালোবাসা হবি? ‘

আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আজ কেন যেন ওই চোখ দুটো বলে বেড়াচ্ছে, ‘ নীতু তোকে আমি ভালোবাসি৷ ‘

আমি চোখ ফিরাতে পারলাম না৷ তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমার ঠোঁট কাঁপছে৷ উনি আমার ঠোঁট আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই চমকে উঠি আমি৷ আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ আমার ভালো লাগছে না..! একদম ভালো লাগছে না৷ আমার যে দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে৷ আপনার কথায় কেমন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ ‘

উনি আলতো করে আমার গালে হাত রাখলেন৷ আমি আবার তার দিকে তাকালাম৷ উনি স্নিগ্ধ কন্ঠে বললেন,
–‘ তোর আর আমার নিয়তি এক তুই জানিস? ‘

আমি দুদিকে মাথা দোলালাম৷ উনি মুচকি হাসলেন৷ আবার বললেন,
–‘ ভিন্ন ভাবে শুরু হওয়া দুনিয়াকে আমি খুব করে চাই..! ‘

আমি চুপ করে তার কথা শুনে চলেছি৷ কথা বলার মাঝেই আমার গালে থেকে হাত সরিয়ে উনি তার পিছনে থেকে তার ডায়েরিটা আনলেন৷ আমার হাতের মাঝে যত্ন করে তুলে দিয়ে বললেন,
–‘ আমার যত্নের এই ডায়েরির ভাজে তোকে চাই৷ ‘

আমি তার দিকে তাকিয়ে ডায়েরি হাতে নিতেই উনি আমার কঁপালে চুমু খেলেন৷ আত্মতৃপ্তি! এতোটা ভালোলাগার ছোঁয়া আমার জীবনে এই প্রথম মনে হচ্ছে আমার৷ আমি স্থির হয়ে বসে আছি৷ ধীরে ধীরে বললাম,
–‘ কিন্তু ডায়েরি তো আপনার৷ ‘
–‘ উহু! তোর৷ ‘
আমি ডায়েরি খুলতেই উনি গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ তোকে দিয়েছি…তার মানে এই না এখনই খুলতে হবে৷’
–‘ মানে? ‘
–‘ ঘুমিয়ে পড় নীতু৷ ‘

উনি আবার আমার দিকে ঝুঁকলেন৷ গভীর ভাবে চুমু খেলেন৷ হৃ’দ’পি’ন্ড তড়িৎ গতিতে ধুক করে উঠলো৷ আবার সেই ভালোলাগার ছোঁয়া৷ আমায় ছেড়ে উনি কিছু না বলেই বারান্দায় চলে গেলেন৷ একটু পর গিটারের আওয়াজ তারপর আমায় ডাকলেন উনি৷ আমি চমকে উঠে ভারী লেহেঙ্গা ধরে উঠে তার কাছে যাই! আমি তার পাশে দাড়াতেই পাশে থাকা বেতের মোড়ায় বসতে বললেন৷ আমি বসতেই উনি গেয়ে উঠেন,

~আমি চোখ বুজেই সপ্ন দেখেছি…
সেই সপ্নের আলোতে তোমায় খুজেছি…!
আমি না বুঝেই ভালোবেসেছি
~রৌদ্র ছায়া কাব্যে তোমায় খুজেছি……
বলা হলো না কতো না বলা কথা!
জানি না তুমি আসবে কি ফিরে আর……’

উনি থেমে গেলেন৷ আমি মোহে পড়ে গিয়েছিলাম তার কন্ঠের৷ হঠাৎ থেমে যেতেই আমি নড়েচড়ে বসি৷ উনি বললেন,

— ‘ দরজা খুলে তোর রুমে চলে যা নীতু৷ ‘
আমি অবাক হয়ে গেলাম৷ সাথে কেমন অ’পমান ফিল হলো৷ এইভাবে কেও বলে এতো সুন্দর একটা মূহুর্তে৷ আমি অভিমানের সুরে বললাম,
–‘ কেন? ‘
উনি গিটার পাশে রেখে বললেন,
–‘ আমার শূন্যতা মেনে নিতে পারবি হঠাৎ করে? তাই দূরে থাকাই ভালো৷ ‘

আমার বুকের মাঝে হু হু করে উঠলো৷ উনার দূরত্ব কথাটা কেমন বি”ষাদময় লাগলো আমার কাছে৷ আমার কি হলো জানি না, উনার হাত দুটো ধরলাম আমি৷ তিনি চমকে উঠে তাকালেন৷ আমি বললাম,

–‘ শূন্যতা পূরণ করার জন্য আপনাকে চাই কাব্য ভাই৷ শূন্যতা কথাটা আমার বড্ড ভারী লাগছে যে৷ ‘

মূহুর্তেই সেই চমকানো ভাবটা কেটে গিয়ে তার মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো৷
–‘ বাসর বাসর ফিলিংস হচ্ছে তোর? ‘

আমি উনার হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গিয়ে বললাম,
–‘ আপনি অস”ভ্য কাব্য ভাই…প্রচন্ড পরিমাণের অস”ভ্য৷ ‘

উনি হঠাৎ আমায় একদম কাছে টেনে নিলেন৷ আচমকা এমন হওয়ার আমি তার শার্ট খাঁ”মচে ধরি৷ উনি আমার ঘাড়ে মুখ গুজে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ অস”ভ্য হওয়া তো শুরু মাএ! তোর যে উপায় নেই নীতু…! ‘

আমি উনার থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলাম৷ উনি আমার কোমড়ে হাত রেখে আরেকটু জড়িয়ে ধরলেন৷ আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ ছা…ড়ুন কাব্য ভাই… আমার ভালো লাগছে না৷ ‘
উনি ছেড়ে দিলেন আমায়৷ চোখ তুলে তাকালেন না আমার দিকে৷ আমার কেমন খারাপ লাগা শুরু হলো৷ উনি আবার গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ আ’ম সর‍্যি…তুই ঘুমিয়ে পড়৷ ‘

আমি আর কিছু বলার আগে উনি উঠে সোফায় শুয়ে পড়লেন৷ আমি কি করবো? ভেবে পাচ্ছি না যে! উনার কি খারাপ লাগলো? কিন্তু এমন টা তো হওয়ার ছিলো না৷ আমি বারান্দায় বসে আছি৷ এখান থেকে কাব্য ভাইয়ার মুখ দেখা যাচ্ছে৷ নি’ষ্পা’প তার মুখ! চুল গুলো ছুঁয়ে যাচ্ছে তার কপালের মাঝে৷ তার কাছে আসা অস্বস্তি দিলেও ভালোলাগার তীব্র গন্ধ ছুটে চলে আমার মাঝে৷ আমি ধীর পায়ে উনার কাছে সামনে গিয়ে বসি৷ গভীর ভাবে তাকে দেখে চলেছি…! হুট করে আমি উনার কঁপালে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে চুমু দিয়ে বসি৷ উনি ঘুমের মাঝেই কঁপাল কুঁচকে ফেললেন৷ আমি নিজের করা কাজে নিজেই লজ্জায় ম’রে যাচ্ছি৷ ইশ! উনি কি ভাববেন?

চলবে….

ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here