কঠিন প্রেমের গল্প (পঞ্চম পর্ব)
ফারাহ তুবা
আমি সুস্থ হওয়ার পর সবার আগে নীতুকে ধন্যবাদ জানালাম। করোনার আতঙ্ক ছিলো কিছুটা মনের মধ্যে। কিন্তু সব ছেড়ে আমি একেবারে ঝেড়ে উঠেছি। নীতু ধন্যবাদ শুনে অবাক হয়ে গেলো। সম্ভবত মাছ কাটছিলো সেই সময়। কারণ হাতে ছাই লেগেছিলো। সে খুব অবাক আর কিছুটা তাড়াহুড়োর গলায় বললো,
“কেন?”
“তুমি যে ছেলেদের কাছে আমাকে অপমানিত হতে দাওনি সে কারণে।”
“কিছুই বুঝছি না। মানে কি!”
“ওই যে আমার শরীর খুব বেশি খারাপ হলে আমি যে একা শুতে চাই। সেই ব্যাপারটা আর কি।”
“ও আচ্ছা! এখানে অপমান সম্মানের বিষয় নাই। অসুস্থ থেকে তুমি হও চিরচিরা মেজাজের। এরপর ছেলেদের একগাদা বিরক্তিকর প্রশ্ন। ওরকম সময়ে তিনটা বিরক্তিকর চেহারা দেখতে ইচ্ছা করে না।”
বলেই আর অপেক্ষা না করে চলে গেলো। আমি কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলাম। এরপর আবারও কয়েকদিন সব স্বাভাবিকভাবে চললো। আমি ঠিক কিভাবে আগাবো বুঝতে পারছি না। আমার দিন দিন কেমন নেশার মতো লাগছে নীতুকে। ওর প্রতিটা আচরণ নতুন লাগে, প্রতিদিন মনে হয় সুগন্ধ ছড়িয়ে বাড়িতে উড়ে বেড়াচ্ছে। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি প্রায় প্রতিদিন নীতু সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। যেমন কয়েকদিন আগে ওর মুখ অন্যদিনের থেকে খুব বেশি ফ্রেশ লাগছে মনে হলো। খুব সংকোচের সাথে বলতেই সে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
“যাক বাঁচলাম। আজকে কণার পাল্লায় পড়ে পাঁচ হাজার টাকার একটা ফেসিয়াল করেছি। করার পর থেকে ইচ্ছা করছে মুখের মধ্যে দামটা লাগিয়ে ঘুরি। কেউ একজন বুঝলো বলে ভালো লাগছে। পল্লব তো কিছুই বুঝেনি। কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম যে আলাদা লাগছে কি-না। ও বলে কিনা আজকে একটু কালো লাগছে।”
এক নিশ্বাসে সব গল্প করে নীতু রান্নাঘরে চলে গেলো। এদিকে আমি কিছুই বুঝলাম না। পল্লব কে? কণা কে? আমি যতদূর জানি নীতু পার্লারে যায় না। তবুও নতুন কিছু তথ্য জেনে ভালো লাগলো।
আরেকদিন দেখি যে নীতুর চুল অস্বাভাবিক স্লিকি হয়ে আছে। আজকে আমি নিজেই জিজ্ঞেস করলাম,
“পার্লারে গিয়ে চুলে কিছু করেছো?”
“এটা প্রায়ই করি। এক/দুইদিন পর গিয়ে শ্যাম্পু করে আসি। কেন যেন এবার বেশি সিল্কি হয়ে গেলো।”
“এবারো কি কণা আর পল্লবের সাথে গিয়েছিলা?”
“কি আশ্চর্য! পল্লবকে এখন কোথায় পাবো?”
আমি আর কথা বললাম না। পল্লব আর কণা যে কে! আমার হঠাৎ করে মনে হতে লাগলো নীতুর সম্ভবত কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। সেই কারণে এত সাজগোজ, রাত জেগে নায়িকাদের মতো বসে থাকা, আবার জিমেও যাচ্ছে দেখলাম।
আমি এরপর থেকে তক্কে তক্কে আছি নীতুর ফোন চেক করার জন্য। করোনার কারণে সব কাজ ঘর থেকেই। অতএব সারাদিন নীতুকে চোখে চোখে রাখা যায়। লক্ষ্য করে দেখলাম বাচ্চাদের দুপুরে ঘুম পাড়িয়ে নীতু বাইরে যায়। দুই আড়াই ঘন্টাতেই ফেরত আসে। কিন্তু এই সময়টা ওর খুব ফিক্সড কাজ। চারদিন জিমে যায় আর বাকিদিন মনে হয় পার্লারে যায়। এছাড়া ওকে ফোনে কথা বলতে তেমন দেখছি না। তবে ওর ফোনে পাসওয়ার্ড দেওয়া তাই চেক করা যাচ্ছে না। সমস্যা হলো পাসওয়ার্ড জিজ্ঞেস করা যাচ্ছে না। করলেই আবার সে নিশ্চয়ই সচেতন হয়ে সব মুছে দিবে। অনেক কষ্টে প্রায় সাত আটদিন চেষ্টার পর আমি একদিন আকস্মিকভাবে পাসওয়ার্ডটা জেনে গেলাম।
আমার শাশুড়ি নীতুকে ফোনে না পেয়ে আমার কাছে ফোন করলেন। উনার একটা নাম্বার দরকার নীতুর কাছ থেকে। এদিকে নীতু তখন মাংস কাটছে বটিতে। সে নির্বিকারে আমাকে পাসওয়ার্ড বলে দিলো। নাম্বারটা বের করে ম্যাসেঞ্জার থেকে আমার শাশুড়িকে পাঠাতে বললো। এক ধাক্কায় আমি সরাসরি তার ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে গেলাম।
(চলবে)