#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২২ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
ঝকঝকে তকতকে নীল আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের ভেলা। মেঘের ভেলাগুলো এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে অচেনা অপরিচিত আত্মীয় স্বজনদের ভীরে জারা একা হয়ে পড়েছে কখন ওবাড়ির চেনা পরিচিত মুখ গুলো দেখতে পাবে। এখানে আসার পর থেকে জারার মেজাজ ক্ষীটক্ষীটে হয়ে আছে। তার অবশ্য বিশাল কারণ আছে আর সেটা হলো জোহানের ফেন্ড ভিষণ বাজে ভাবে জারার পিছনে লেগেছে। তার মা-ও না-কি ছেলের জন্য জারার মতো মেয়েকে খুঁজছিল। এই তো কাল রাতে ঘটনা……
ফ্ল্যাসব্যাক
রাতে সকল হইহট্টগোলের পর জারা ক্লান্ত হয়ে রুমে এসে শুতেই চোখে ঘুমের ঢল নেমে আসে। তখনি ফোন বেজে ওঠে জারার। ধরপরিয়ে উঠে বসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নম্বর প্রথমে ধরবে না ধরবে না করেও ধরল।
-‘ হ্যালো! মিস. জারা। আমি মারুফ বলছি আপনি চিনতে পেরেছেন। জোহানের ফেন্ড ‘
জারা ফোনের ওপাশের কথা শুনে জারা অবাক না হয়ে পারল না এতো রাতে ইনি কেনো ফোন দিলো ইশা ঠিক আছে তো? কথাটা ভাবতেই জারা ভয় পেলো।
-‘ জী ভাইয়া আপনি? আই মিন ফোন দিলেন যে ইশা ঠিক আছে ‘
-‘ হ্যাঁ সব ঠিক আছে। আসলে আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল ‘
জারার ভ্রু কুচকে এলো মনে মনে বলল ‘ওনার সাথে আমার আবার কি কথা থাকতে পারে?’
-‘ জি বলুন ‘
-‘ আসলে আমি আপনাকে….’
-‘ জি বলুন শুনছি ‘
মারুফ একটু সময় নিয়ে বলল
-‘ আমি আপনাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি। এনগেজমেন্টের দিন থেকে আমার ঘুম নাই শুধু আপনার কথা ভেবে। আপনাকে আমার লাগবে। উইল ইউ ম্যারি মি ‘
জারা এবার বিরক্তিতে মাথা চুঁইচুঁই তবুও হাসি মুখে বলল
-‘ সরি ভাইয়া আমার বয়ফ্রেন্ড আছে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার ফিউচার ওয়াইফের প্রাক্তন থাকুক? ‘
-‘ আমি বিশ্বাস করি না প্লিজ আমার ব্যাপারটা একটু….. ‘
মারুফকে আর বলতে না দিয়ে বলল
-‘ রাখছি ভাইয়া ‘
ফোন কাটতেই আবার ফোন এলো জারার মাথায় এখন ঘুম ছাড়া কিছু আসছে না মাথা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে যেনো তার ওপরে আবার এই বাঁশ। জারা ফোন রিসিভ করে ওপাশে কিছু বলতে না দিয়ে বলল
-‘ দেখুন ভাইয়া প্লিজ এই রাতে ডিস্টার্ব করবেন না আমার যা বলার তো আমি বলেই দিয়েছি। আপনি অন্য মেয়ে খুঁজে নেন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে বললাম তো আর আপনার মিনিমাম কমনসেন্স থাকলে আপনি আর আমাকে ফোন দিবেন না আশা করি ‘
জারা খট করে ফোন কেটে নিজেই নিজেকে বলল
-‘ “পুরান পাগলে ভাত পাই না নতুন পাগলের আমদানি ” কবে জানি আমি পাগল হয়ে যায় ‘
নিজে নিজে বকবক করতে করতে জারা ঘুমিয়ে পড়লো।
বর্তমান
জারা দেখলো ও বাড়ির সকলে এসে গেছে। জারা ওদের দিকে এগিয়ে গেলো। কুশল বিনিময়ের পরে শান্তি মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। জেনো নিজের প্রাণ ফিরে পেলেন।
জারা আর শান পাশাপাশি দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান্তি আর অন্য অন্য আত্মীয়রা এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জারা আর শান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ কারোর সাথে একটা কথাও বলে নি। জিয়া এসে বলল
-‘ আপু আমার সাথে একটু এদিকে আসো ‘
জারা জিয়ার সাথে যেতে যেতে বলল
-‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? ‘
-‘ আরে চলোই না গেলেই দেখতে পাবে। আর আমার কি মনে হচ্ছে বল তো? ‘
-‘ তুমি না বললে তোমার কি মনে হচ্ছে আমি কেমন ভাবে যানবো? ‘
-‘ হুম তাও ঠিক জানো আমার মনে হচ্ছে খুব শীগ্রই আমার একটা বিয়ের দাওয়াত পাবো।
-‘ আবার কার বিয়ে তোমার না-কি? ‘
জিয়া লজ্জা পেয়ে বলল
-‘ আরে দূর কি যে বলো না? নিজের বিয়ের দাওয়াত কি নিজে খাওয়া যায় না-কি আমি তো তোমার বিয়ের কথা বলছি ‘
জারা ভ্রু কুচকে বলল
-‘ মানে? ‘
-‘ আরে চলো গেলে-ই দেখতে পাবে।
জারা চিন্তিত হয়ে হাটতে লাগলো। কি অপেক্ষা করছে কে জানে? জারা গিয়ে দেখলো। শান্তি থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে তার সাথে একটা মধ্যে বয়স্ক মহিলা হাসি মুখে জারার দিকে তাকিয়ে আছে। জারা শুকনো ঢোক গিললো মনে মনে ভাবলো ‘ আমি আবার কোনো ভুল করে বসলাম না তো? ‘
জারা মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল
-‘ মনি। তুমি ডাকছ? ‘
শান্তি বেগম মুখ কালো করে তাকিয়ে রইলো। মহিলাটা বলল
-‘ বাহ! মা-শা-আল্লাহ মেয়ে তো দেখি খুব সুন্দরী আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে ‘
মহিলাটি জারাকে নিজের কাছে আনলেন। মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-‘ মা তোমার নাম কি? ‘
জারা ইতি মধ্যে বুঝে গেলো কি হচ্ছে জারা হাসি মুখে বলল
-‘ অায়রিন জারা আন্টি ‘
-‘ বাহ! তোমার মতো তোমার নামটাও মিষ্টি জারা ‘
মহিলাটা থেমে হাসি মুখে শান্তির দিকে তাকিয়ে বলল
-‘ কি বলেন আপা আপনার মেয়েকে আমার বাড়ির বউ হিসেবে দিবেন তো? ‘
শান্তি বেগম হাসার চেষ্টা করে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই জারা বলল
-‘ মাফ করবেন আন্টি আমি বিয়ে করতে চাইছি না। আমার ক্যারিয়ার পড়ে আছে। আর…’
জারাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মহিলাটি বলল
-‘ আমি জানি মা তুমি পড়াশোনা শেষ করে এখন এডভোকেট। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না তোমার কোনো কিছুতেই বাঁধা দিবো না তুমি বিয়ের পর ও তুমি এটা করতে পারো ‘
জারা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না শব্দ গুলো যেনো হারিয়ে গেলো। মাথা নিচু করে উপায় খুজতে লাগল ফাঁকা ফাঁকা লাগল। জারা এতোক্ষণে বুঝে গেছে এই মহিলা একে বারে নাছোরবান্দা ভ-য়ংক-র মহিলা।
-‘ এখানে কি হচ্ছে? কার বিয়ের কথা হচ্ছে?
জারা চমকে মুখ তুলে তাকালো। শান দাঁড়িয়ে আছে। কেউ উত্তর দিচ্ছে না দেখে শান রেগে বলল
-‘ কার বিয়ে জারার? জারা তো ম্যারিড ওর আবার বিয়ে লাইক সিরিয়াসলি? ‘
শানের কথায় জেনো বজ্রপাতের ন্যায় বি-ষ-ফোড়ন হলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ