অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব ২৬

0
788

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৬ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

কথা মতো মুষলধারা বৃষ্টি মাথায় বাড়ি ফিরল শান আর জারা। বৃষ্টির পানিতে শহরতলী পানিতে টইটম্বুর। বাড়ি এসে দেখলো জারার চিন্তায় শান্তি বেগমের প্রেসার লো হয়ে গেছে। তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেন না। শান্তির এমন অবস্থা দেখে জারা কেঁদে ফেললো।

-‘ মনি তোমার এমন অবস্থা কেনো? আমার জন্য তাই না সব আমার দোষ তোমাকে বলে যাওয়া উচিত ছিল। সব আমার দোষ ‘

-‘ পাগলি মেয়ে এভাবে না বলে গেলে আমার টেনশন হয় না জানিস না তুই তোর ফোনটাও বন্ধ তোর একটা খবর জানি না ‘

-‘ সরি মনি আর কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে। ‘

-‘ আচ্ছা হয়েছে যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে কিছু ‘

-‘ তুমি খেয়েছ কিছু? দাড়াও আমি তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনি ‘

কথাটা বলে জারা দৌড়ে রান্না ঘরে এলো। শান্তি স্যুপ খেতে পছন্দ করে না তাই সুজি বানালো। বানিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো।

—-

তারপরের দিন গুলো আলাদা হলেও আবার নিত্যদিনের মতোই। শান একটু একটু করে পাল্টাতে লাগল। জারাও ব্যস্ত হয়ে গেলো। পুতুলের কেসটা ওপরমহল থেকে স্থগিত রাখার আর্দেশ দিয়েছে। এটাতে জারা কেঁদে ফেলেছিল। মেয়েটার মৃত্যুর শাস্তি দিতে পারল না বলে। পুতুলের মা আর ছোট ভাই শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়েছে।

আজ ছুটির দিন বাড়িতে সকলে। শান্তি বেগম সুস্থ হয়ে গেছে এখনো আগের মতো হাঁটা-চলা করতে পারে। জারা রুটি বেলছে আর শান্তি সেগুলো ভাজছে। সেদিনের পর জারা বাসা থেকে চলে যাওয়া নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করে নি।

-‘ জারা শান এতো চুপচাপ হয়ে গেলো কেনো? আগের মতো চিল্লাপাল্লা করে না ‘

-‘ তোমার ছেলে পাগল তো সেজন্য পাগলের ডক্টর দেখিয়েছে তাই চেজ্ঞ হচ্ছে আস্তে আস্তে ‘

শান্তি বেগম অবাক হয়ে বলল

-‘ কি বলিস এগুলা ‘

-‘ তোমার ছেলের কাছেই শুনো ‘

শব্দ করে ফ্রিজ লাগানোর শব্দে জারা শান্তি চমকে উঠল। জারা রেগে বলল

-‘ ওটা আছাড় দেওয়ার জিনিস না নিজের টাকায় কেনা না তো বাপের টাকায় কেনা সেজন্য মায়া লাগছে না নিজের টাকায় কেনা হলে মায়া লাগত মনি তুমি কিছু বলতে পারো না সারাদিন এখানে ওখানে না ঘুরে তো অফিসে বসতে পারে ‘

শান্তি বেগম চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। শান রেগে বলল

-‘ আমি কেনো কিছু করবো আমার বউ বড় এডভোকেট তার টাকায় হয়ে যাবে ‘

-‘ ওহ গুড আইডিয়া তাহলে আপনি বাসার সব রান্না ঘরের কাজ সবটা করবেন আর আমি বাইরেটা সামলাবো যদি রাজি থাকেন তাহলে জানাবেন ‘

শান রেগে চলে গেলো। শান্তি বেগম মুখ চেপে হাসলো।

-‘ মনি তুমি হাসছ? তোমার ছেলেকে আদর দিয়ে দিয়ে বাদর বানিয়ে ফেলছ সেদিকে খেয়াল আছে? এবার তো লাগাম টেনে ধরো? ‘

-‘ বউ আছে তো আমি কেনো বলবো তুই বলবি ‘

-‘ তোমার ঔ আদধামড়া ছেলেকে আমি মানুষ করতে পারবো না আমার ওতো ঠেকা পড়ে নাই বুঝলে? ‘

-‘ তাই বুঝি। ‘

-‘ হ্যাঁ তাই ‘

৪ জনে খেতে বসলো। শান তার বাবা আসলামকে বলল

-‘ বাবা আমি কাল থেকে অফিসে বসতে চাই ‘

-‘ ভালো কথা। আমি ও তোমাকে বলবো ভাবছিলাম তুমি সব দায়িত্ব নিলে আমার ছুটি। কাল ম্যানেজারকে বলে দিবো সব বুঝিয়ে দিবে তোমাকে ‘

জারা খেতে খেতে বিরবির করে বলল

-‘ মানুষ হচ্ছে তাহলে? ‘

শান তাকালো জারার দিকে মেকি হাসি দিয়ে মুখ ভেংচি দিলো।

—-

রাতের মিশমিশে কালো আঁধার রাত ছাদের চারিদিকে রংবেরঙের বাল্বগুলো জ্বলচ্ছে। ছাদের পানি জমছে অল্প। জারা ছাদের দোলনায় বসে মেঘযুক্ত আঁধার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো উদ্দেশ্যহীন আজ চাঁদ তারার দেখা নেই কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে। মৃদু শীতল বাতাস কাঠগোলাপ গাছের ফুল নেই বললেই চলে। হাতে স্পর্শ পেতেই জারা চমকে কেঁপে ওঠেল। পাশ ফিরে শানকে দেখে বলল

-‘ আপনি এখানে? ‘

-‘ আমি ও তো প্রশ্ন করতে পারি তুই এখানে? ‘

-‘ আমি প্রায় আসি ‘

-‘ আমিও প্রায় আসি ‘

-‘ আপনি আমাকে কপি করছেন? ‘

-‘ কখন কপি করলাম আমি তো জাস্ট বললাম ‘

-‘ কপি না তা কি আমি যা বলছি আপনি তাই বলছেন কেনো? ‘

-‘ উত্তর একই তাই বলছি ‘

-‘ একদম মিথ্যা বলবেন না ‘

-‘ আমি যখন মিথ্যা বলছি তাহলে তুই সত্যিটা বলে দে ‘

জারা চুপ করে গেলো। যতকথা বলবে ততই কথা বাড়বে চুপ থাকায় শ্রেয়। শানও চুপ জারাও চুপ। জারা আড়চোখে তাকালো শানের দিকে শানও তাকিয়ে ছিল দু-জনের দৃষ্টি এক হলো। জারা চোখ সরিয়ে নিলো। শান তখনো জারার দিকে তাকিয়ে আছে জারা না তাকিয়েও বুঝতে পারছে। শান কিছুক্ষণ পর গান ধরল

ডুবেছি আমি তোমার চোখের অন্যন্ত মায়ায়

জারা শুনলো। জারা এই মূহুর্তে হঠাৎ একটা অদ্ভুত ইচ্ছে হলো শানের কাঁধে মাথা রাখতে। কিন্তু জারা নিজেকে দমিয়ে নিলো। মনে মনে বলল ‘ সম্ভব নয় ‘
জারা চট করে গানের রিলিক্সের দিখে খেয়াল হলো। মনে মনে বলল ‘ আমার চোখে সত্যি কি মায়া আছে? নাকি ওনি অন্য কারোর জন্য গায়ছে? ‘
জারা গানের মধ্যে চট করে প্রশ্ন করলো

-‘ আপনি কার জন্য গান গাইছেন? ‘

শান ঘাড় ঘুড়িয়ে এদিক সেদিক তাকালো শানের দেখা দেখি জারাও তাকালো। বলল

-‘ কি? এভাবে কি খুঁজছেন? ‘

-‘ তুই ছাড়া এখানে কেউ আছে? ‘

-‘ কই না তো ‘

-‘ তাহলে আমি কার জন্য গাইবো? ‘

-‘ আপনি আমার জন্য গাইছেন? কিন্তু আমার চোখে কি মায়া আছে ‘

-‘ কি জানে আছে হয়ত যে মায়ায় একজন বারে বারে পা পিচ্ছলে পড়ে ‘

-‘ কি সত্যি কে সে? ‘

শান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল

-‘ কিছু বুঝিস না তুই? আমি বলতে পারবো না খুঁজে নে ‘

শান গম্ভীর মুখে জারার দিক থেকে মুখ ঘুড়িয়ে ওপর পাশে তাকিয়ে রইলো। জারা শান আর জারার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। আসা থেকে এখন পর্যন্ত এখনো শান জারার হাতটা একই ভাবে ছুঁয়ে আছে।
নিরবতাবিচ্ছিন্ন করে শান বলল

-‘ কাল সন্ধ্যায় রেডি থাকিস ‘

জারা হাতের ওপর দৃষ্টি রেখেই বলল

-‘ কেনো? ‘

-‘ একটা জায়গায় নিয়ে যাবো ‘

-‘ কোথায়? ‘

-‘ গেলেই দেখতে পাবি ‘

-‘ এতো ত্যাড়াম করেন কেনো? সরাসরি বলে দিলেই হয় ‘

শান উত্তর দিলো না জারা আবার বলল

-‘ কাল না আপনার অফিসের ফাস্ট ডে তাহলে আবার কাল কই যাবেন? ‘

-‘ তো? ‘

-‘ দূর থাকেন আপনি আমি যায় ‘

জারা যেতে নিলেই শান হাত ধরে থামিয়ে দিলো। জারা থেমে গিয়ে বলল

-‘ আপনি আমার থেকে দূরে থাকবেন ‘

-‘ তোর কথা শুনতে আমি বাদ্ধ্য নয় ‘

জারা চুপ করে থেকে বলল

-‘ হাত ছাড়ুন ‘

-‘ যদি না ছাড়ি ‘

কথাটা বলে শান জারাকে ঘুড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। জারার নিশ্বাস ভারি হয়ে উঠলো। বলল

-‘ এসব কি করছেন? আপনি কি ফাজলামো পাইছেন ‘

-‘ আমার বউয়ের সাথে আমি যা ইচ্ছে করবো তোর কি? ‘

জারা শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল

-‘ আমি কিন্তু এখনো আগের কোনো কথা ভুলি নি ‘

শান থেমে ছেড়ে দিলো। জারা পিছু না ফিরে চলে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

আসসালামু আলাইকুম। দু’দিন গল্প দি নাই তার জন্য দুঃখিত একটু সিক আছি সেজন্য। আশা করি বুঝবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here