অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব ২৩

0
824

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৩ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

-‘ কার বিয়ে জারার? জারা তো ম্যারিড ওর আবার বিয়ে লাইক সিরিয়াসলি? ‘

শানের কথায় জেনো বজ্রপাতের ন্যায় বিস্ফোড়ন হলো। মহিলাটি অবাকের শীর্ষে চলে গেছে। জিয়ার মুখটা হা করে তাকিয়ে আছে। শান্তি আর জারা চোখ বড়বড় করে শানের দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলাটি বলল

-‘ তুমি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছ ছেলে ‘

-‘ মটেও নয় আপনার সাথে কি আমার ইয়ার্কি মারার সম্পর্ক না-কি আর একটা মেয়ের সম্পর্কে কিছু না জেনে না শুনে দুম করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন তাও মেয়েটা কি না আমার বউ! ‘

শান যে এসব কথা বলবে তা শোনার জন্য কেউ ই প্রস্তুত ছিল না। জারা এসব নিতে না পেরে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে গেলেই শান জারাকে কোমড় জড়িয়ে ধরলো।

——

পিটপিট করে চোখ খুলতেই শানকে একদম মুখের কাছে দেখে জারা ধড়ফড়িয়ে উঠল। ভয়ে ঘমতে লাগল। শান তখনো রাগি চোখে একদৃষ্টিতে জারার দিকে তাকিয়ে। জারার যেনো শাক্তি ফুরিয়ে গেলো। বহু কষ্ট করে বলল

-‘ সরুন ‘

-‘ সরবো কেনো? আমি তোর হাসবেন্ড আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। এভাবে থাকার এতো ছাড় দিয়ে দিয়ে তোর এই অবস্থা ‘

জারা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল

-‘ মানে কি বলতে চাইছেন আপনি ‘

-‘ আমি কি বলি বা বলতে চাই তুই বুঝিস না? শুধু তো পারিস ভুল বুঝে দূরে সরে যেতে আর আমাকে কথা শোনাতে ‘

-‘ মানে? এতো রহস্য করে কথা বলেন কেনো আপনি যা বলবেন স্ট্রেট বলবেন। আর কি বললেন? আমি আপনাকে কথা শোনা? আমি বুঝি ধোঁয়া তুলশী পাতা। আমাকে যে কথায় কথায় সবার সামনে অপমান করেন তার বেলা আবার আমাকে বলতে আসেন ‘

-‘ খুব বেশি খই ফুটছে দেখি তোর মুখে বাহ ভালো তো ‘

-‘ তা আমাকে কি আপনার আগের মতো বোকা মনে হয়। যা বলবেন সব চুপচাপ মেনে নিবো? নো নেভার কাভি নেহি। আপনি যদি আমাকে ১টা কথা শোনান তো আমি আপনাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে দিবো ‘

-‘ বাহ বাবাাবাহ একটা কথা জানিস তো যারা নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবে তারা বোকা হয় আর তুই সেই বোকা কেনো তার ওপরের বোকা হয়ে গেছিস ‘

জারা রেগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল

-‘ একদম ইনসাল্ট করবেন না বলে দিলাম আর আপনি সবার সামনে ওগুলো কেনো বললেন লজ্জা করে না আপনার ‘

-‘ আমার কেনো লজ্জা করবে লজ্জা তো তোর করা উচিত বিবাহিত হয়ে সিঙ্গেল বলে নিজেকে দাবি করিস আবার বিয়ে করবি বলে ছেলেও ঠিক করছিস ‘

-‘ হ্যাঁ আমি বিয়ে করবো তো আপনার কি কে হোন আপনি আমার? আপনি তো আর এই বিয়েটা মানেন না আমি বিয়ে করি আর না করি আপনার কি? ‘

শান জারার অধর মিলিয়ে দিলো জারা চমকে গেলো। প্রতিক্রিয়া করতে ভুলে গেলো। স্থির হয়ে রইল। বুকের ধুকপুকানি বারতে লাগলো কয়েকগুন। এটা তাদের বিয়ের পর দ্বিতীয় স্পর্শ! জারার মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ল। কয়েক মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে শান বলল

-‘ আমি তোর কে হই আশা করি আমি বোঝাতে পারছি ‘

কথাটা বলে শান চলে গেলো। জারার স্তম্ভিত ফিরে পেতেই লজ্জায় লাল হয়ে মুখ লুকালো বালিশে। এই সময়ও হঠাৎ জারার মন বলল

-‘ এগুলো কি আব্দেও ঠিক হলো? ‘

জারার হঠাৎ মন খারাপ করে ওয়াসরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে। আয়নায় নিজের মুখ দেখে নিজেই লজ্জায় গট হয়ে গেলো জারা। শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখলো শান্তি বেগম এসেছে। জারা নিজের লজ্জা দূরে সরিয়ে মুচকি হেসে বলল

-‘ মনি তুমি এসেছ ভালো করছ। তোমার সাথে আমার কথা ছিল তার আগে বলো ইশারা আসছে? ‘

-‘ হ্যাঁ। কি কথা বলবি? আর এই সন্ধ্যা বেলা তুই শাওয়ার নিচ্ছিস কেনো? ‘

-‘ কিছু হবে না। তুমি আগে বল তখন আমি অজ্ঞান হওয়ার পর কি হলো? ‘

-‘ কি আর হবে আমার ছেলে তোকে নায়কের মতো এসে ধরল আর তারপর বলল…

ফ্ল্যাসব্যাক

শান জারাকে নিজের কাছে এনে বলল

-‘ ও এখন প্রেগন্যান্ট আপনার এসব বিয়ের কথার চাপ নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো। আর কি কি বলছেন আপনি আমার বউকে? ‘

মহিলাটা ঘাবড়ে গিয়ে তুতলিয়ে বলল

-‘ আ আ আমি কি বলবো আ জব ত তো ‘

-‘ নিশ্চয়ই কিছু তো বলছেন না হলে ও এমন ভাবে জ্ঞান হারেবে কেনো? ‘

-‘ আমি সত্যি বলছি কিছু বলি নি ‘

-‘ ওর যদি কিছু হয় না আপনাকে আমি দেখে নিবো ‘

মহিলাটার মুখ চুপসে গেলো। শান এবার শান্তির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ আম্মু তোমরা এসো আমি জারাকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি আর টেনশন করো না যেনো ‘

শান জারাকে নিয়ে চলে গেলো। শান্তি বেগম শানের এতো পরিবর্তন দেখে মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু জারার এমন অবস্থা দেখে মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলেন। শান্তি বেগম মনে মনে বলল

– ‘মেয়েটার আবার কি হলো? শান যেটা বলল সেটা কি ঠিক? সেটা যদি সত্যি হয় তাহলো আমি দাদুমনি হবো? ‘

শান্তির চোখ মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠল।

বর্তমান

জারা টাস্কি খেয়ে বসে আছে এসব কি হচ্ছে? ভেবে কুল পেলো না। তবে কি শানের মতিভ্রম হলো? শান কি ভালো হয়ে গেলো নাকি নাটক মাত্র।

শান্তি জারার হাত দু মুঠোয় নিয়ে হাসিহাসি মুখে বলল

-‘ আমি সত্যি দাদু হবো? জানিস না আমি যে কত খুশি হয়েছিলাম কথাটা শুনে ‘

জারা ফাটা চোখে তাকিয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল

-‘ মনি তুমি তোমার ছেলের সাথে পাগল হয়ে গেছো? জানো না তোমার ছেলে মিথুক? এসব কিভাবে সম্ভব? ছি ছি আর কি কি মিথ্যা বলছে বল তো? আর তুমি ওসব বিশ্বাস করে নিলে? ‘

শান্তি বেগম কাঁদো কাঁদো মুখে বলল

-‘ একটু তো আমাকে দাদু বানাতে পারিস না-কি? আমাদেরকে চমকে দিয়ে একটা ছোট সদস্যকে আনতে পারিস না? ‘

জারা বোকাবোকা চোখে তাকিয়ে রইলো কি বলবে বুঝতে পারছে না এলোমেলো দৃষ্টি দিয়ে বলল

-‘ মনি তুমি অবুঝের মতো কথা বলছ কেনো? এটা কখনো সম্ভব না ‘

-‘ কেনো সম্ভব না? তোরা সব মিটিয়ে নিলেই সম্ভব এর বিহিত তো আমি করেই ছাড়বো ‘

জারা বেয়াকেলের মতো বসে রইলো। শান্তি বেগম শানকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলো। কি হচ্ছে না হচ্ছে সবই যেনো জারার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।

তারপরের ১ দিন গেলো জারার ঘরবন্দী হয়ে। লজ্জায় কারোর সামনে যেতেই ওর মরি মরি অবস্থা খাবারটাও রুমে খেলো। শানের মুখমুখি যেনো না হতে হয় সেই ব্যাবস্থা আর কি?

নিজের সাথে যুদ্ধ করে জারা আজ বিকালে বন্ধুমহলের সাথে দেখা করতে গেলো পার্কে। তাছাড়াও রুহানের সাথে কেসের ব্যপারে কথা আছে। কথা বলতে বলতে জারার চোখ গেলো পার্কের কোণে যেখানে কি না শান আর সেই মেয়েটা হাত ধরে হাটছে। জারা শ্বাস নিতে ভুলে গেলো। চোখ ফেটে পানি আসল। মনে মনে ভাবল।

-‘ যখনি ভাবি সব ঠিক হয়ে যাবে তখনি সবটা সবটা এভাবে এলোমেলো হয়ে যায় ‘

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here