#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ13
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
বর্তমানে,,,,
স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছেন নিহান,কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছে না। একবার ভাবছে ওতো নিশিকে পছন্দ করতে শুরু করেছে তাহলে তো বিয়েটা করলে আরো ভালো হবে। আবার ভাবছে ওর বাবা-মার কথা ওনারা সবটা জানলে কেমন রিয়েক্ট করবে তা নিয়েই ভাবছিল নিহান তখনই দাদুর ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় নিহান।
‘ তুমি কোন কথা বলছো না কেন নিহান। আমি যা বলেছি ভেবেচিন্তে বলেছি দেখো আমি জানি যে তোমরা এমন কিছু করোনি যাতে আমাদের মান-সম্মান যাবে কিন্তু এই কথা যদি গ্রামে একবার যারা জানি হয় তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এখন যদি তোমাদের বিয়ে হয় তাহলে তো আর কোন সমস্যাই থাকে না। তাই আমি,,,,’
‘ দাদু আমি আপনার সাথে একা কিছু কথা বলতে চাই!’
নিহানের কথা শুনে নিশির দাদু সবাইকে ইশারা করে নিচে চলে যেতে বলে।আর ওনার কথামতো সবাই নিচে চলে যেতেই নিহান বলল __
‘দাদু আমি কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! এটা না যে আমি নিশিকে অপছন্দ করি বা নিশির কথা অনুযায়ী নিশি কে আমি আমার অযোগ্য মনে করি।ইভেন আমার তো মনে হয় আমি নিশিকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। কিন্তু!কিন্তু, আমার বাবা-মা ব্যাপারটাকে ঠিক কিভাবে নিবে বা আঙ্কেল আন্টিই (নিশির বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে)বা বিষয়টাকে ঠিক কিভাবে নেব তা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত। নিশি উনাদের একমাত্র মেয়ে ওনাদেরও তো অনেক স্বপ্ন আছে নিশিকে নিয়ে ওর বিয়ে নিয়ে।’
নিহান এর কথার উত্তরের দাদু বললেন __
‘নিশির বাবা-মাকে নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে! আর তোমার বাবা-মাকে ও রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। তাহলে কি তুমি এই বিয়েতে রাজি।’
দাদুর কথা শুনে নিহার মুচকি হেসে বলল_
‘হুম,রাজি কিন্তু তোমাকে একটা কাজ করতে হবে আমি যে নিশি কে ভালোবেসে বিয়ে করছি এটা এখন কাউকে বলা যাবে না। নয়তো তোমার যেই নাতনি কারো কাছ থেকে এই কথা শুনলে আমার ঘাড়ের উপর উঠে নাচানাচি শুরু করবে। তাই তুমি বলবে যে আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না পরে তুমি আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে রাজি করিয়েছ,ঠিক আছে!’
নিহানের কথা শুনে দাদু মুচকি হেসে বলল__
‘হুম ঠিক আছে,এইবার তোমার বাবাকে ফোন দাও আমি নিজে তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।
__________
‘উফ,,,নিশি!এবার কান্না থামা দেখ নিহান স্যার যথেষ্ট ভালো মানুষ আর তাছাড়া শুনলাম গতকাল রাতে নাকি তোদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছে।তাহলে কেন এত কান্নাকাটি করছিস?’
নদীর কথা শুনে রুহিও বলল___
‘হ্যাঁ নিশি নদীতো ঠিকই বলছে,দেখবি তুই উনার সাথে ভালোই থাকবি।’
নদী আর রুহির কথা শুনে নিশি কান্না থামিয়ে নাক টেনে টেনে বলল__
‘ আমি জানি স্যার ভালো মানুষ কিন্তু! দাদু কিভাবে আমার সাথে এমনটা করতে পারে?স্যার বা ওনার ফ্যামিলি কেন এই বিয়ে মেনে নেবে?’
‘ এখন তুই হয়তো এমনটা ভাবছিস নিশি, যে আমি ভুল করছি কিন্তু একদিন দেখবি তুই নিজে আমাকে বলবি তুমি সেদিন ঠিক কাজটাই করেছিল দাদু’
হঠাৎ দাদুর কন্ঠে শুনে আমরা পিছনে ফিরে দেখি দাদু, দাদি,আপু,ভাইয়ারা সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
‘কিন্তু দাদু নিহান স্যার,,’
‘ নিহান এই বিয়েতে রাজি,আর ওর পরিবারের মতও নেওয়া হয়ে গেছে।তাছাড়া আমি তোমার বাবা মার থেকেও অনুমতি নিয়েছি।’
দাদুর কথা শুনে আমি পুরাই অবাক নিহান স্যার আমাকে বিয়ে করতে রাজি!
‘ দাদুর আমি একটু স্যারের সাথে কথা বলতে চাই।’
‘না তার আর কোন দরকার নেই একেবারে বিয়ের পর কথা হবে,তুমি নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করো।’
এই বলে দাদু চলে যায় দাদুর সাথে দাদি ভাইয়ারাও চলে যায়। দাদু যেতেই মেঘলা আপু আমার কাছে এসে বলল__
‘বুঝলিহ,,বোন একেই বলে কপাল আমি বড় বোন হয়ে ছোট বোনের বিয়ে খাব।’
মেঘলা আপুর কথা শুনে যেন আমার গা জ্বলে যাচ্ছে, আমি বাচিনা আমার জ্বালায় আর উনি এসেছে রসিকতা করতে।আমি চোখ গরম করে আপুকে বললাম__
‘আপু তুমি থামবে?আমার এমনি ভালো লাগছে না’
আমার কথা শুনে আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলল__
‘দেখ বোন যা হচ্ছে সেটা মেনে নে,জন্ম মৃত্যু বিয়ে সব আগে থেকেই ওপরওয়ালা ঠিক করে রাখেন তাই এত চিন্তা না করে যা হচ্ছে তা মেনে নে।এই তোরা(নদী আর রুহিকে উদ্দেশ্য করে)চল আমার সাথে যতই হোক খান বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা একটু তো আয়োজন করতেই হবে।আর নিশি নিজের সব গোছগাছ করে নে আজই আমরা ঢাকাতে ফিরে যাবো। এই বলে আপু চলে যায় আর আপুর সাথে সাথে বেরিয়ে নদী আর রুহিও বেরিয়ে যায়।
সন্ধ্যায়,,,
ড্রইংরুমে কাজী আর বাকি সবার সাথে বসে আছে নিহান।ক্রিম কালারের পাঞ্জাবি,হোয়াইট ওয়াচ,আর চুল গুলো সব সময়ের মতো সেট করা একেবারে সেজেগুজে বসে অপেক্ষা করছে নিহান নিশির জন্য। হঠাৎই নিরব নিহান কে বলে__
‘ ভাইয়া উপরের দিকে তাকাও!’
নিরবের কথা শুনে নিহান উপরে তাকাতেই দেখে মেরুন রঙের একটা সিল্ক শাড়ি, দাদি দেওয়া ভারী কিছু গহনা আর সবসময়ের মত হালকা সাজে সেজে উঠেছে নিশি। নিশিকে এই প্রথম নিহান শাড়ি পরা অবস্থায় দেখল। তারউপর নববধূ সাজে নিশিকে দেখে নিহানের চোখ যেন নিশিতেই আটকে গেছে। নিহান নিশির দিকে তাকিয়েই অস্পষ্ট সূরে বলে উঠলো __
‘ নিশি আবারও নতুন করে তোমার প্রেমে পড়লাম আমি। #তোমার_মায়া_আবদ্ধ_আমি হলাম।
‘ এই নিহান ভাইয়া! তুমি এখনও ওই দিকে তাকিয়ে কি দেখছো? নিশি তো তোমার পাশেই বসে আছে।’
নিরবের ডাকে নিহানের ধ্যান ভাঙ্গতেই নিহান দেখে সত্যিই নিশি নিহানের পাশে বসে আছে।তারপর আর কি কাজী বিয়ে পড়াতে শুরু করল।উপস্থিত সকলের সামনে সকলকে সাক্ষী রেখে ঘরোয়া ভাবে নিশি আর নয়নের বিয়েটা সম্পন্ন হলো। বিয়ে শেষ হতেঈ নিশিরি দাদু আর দাদীকে বিদায় জানিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।আসার সময় নিশি দাদু আর দাদিকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছে।মেয়েদের তো এটাই বিয়ের পর সব অপনজনকে ছেড়ে যেতে হয় অন্য নতুন এক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে।
_______
এখন রাত প্রায় নয়টা বাজে আরও প্রায় দুই ঘন্টা লাগবে নিশীদের ঢাকায় পৌঁছাতে। নিশিদের গাড়ি এগিয়ে চলছে আবারো শহরে ব্যস্ত নগরের রাজপথের দিকে।গাড়ির জালানার কার্নিস বেয়ে আসছে ফুড়ফুড়ে বাতাস আজ আবারও আকাশে উঠেছে বিশাল চাঁদ। যার আলো তে চারপাশ মৌহিত লাগছে। কিন্তু আজ এই মুগ্ধকর দৃশ্যও যেন নিশির মন ভালো করতে পারছে না।আর পারবেই বা কিভাবে সব আপনজনকে ছেড়ে চলে যেতে হবে যে অন্যের হাত ধরে অজানা এক গন্তব্যে।
_______
গাড়িতে নিশির পাশেই বসেছিল নিহান নিশি এভাবে মন মরা দেখে নিহান মনে মনে বলে__
‘তোমাকে এমন শান্তশিষ্ট মানায় না নিশি! তোমাকে তো চঞ্চলতাতেই বেশ মানায়। আর আমি তো তোমার সেই চঞ্চলতার প্রেমেই পড়েছি। আজ আমি নিজেই নিজের কাছে শপথ করছি যে,তোমাকে আমি সব সময় হাসি খুশি রাখবো,তোমাকে কোনদিন কষ্ট পেতে দেবো না, কোন কষ্টের আচরও লিগতে দেবো না।’
রাত প্রায় এগারোটার দিকে নিশিদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে। গাড়ি থামতেই নিশি গাড়ি থেকে বের হয়ে শাড়ি উঁচু করে তাড়াহুড়ো করে বাড়ির ভেতরে যেতে যায়।ঠিক তখনই ঘটে অঘটন! যে মেয়ে শাড়ি পড়ে হাটতে পারবে কিনা সন্দেহ সে যদি দৌড় দিতে যায় তাহলে অঘটন ঘটবেই।নিশি বাড়ির দিকে তাড়াহুড়ো করে যেতে যাবে তখনই শাড়ির সাথে পা বেজে পড়ে যেতে নেয়।নিশিকে এইভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে নিহানও নিশির সাথে সাথে বেরিয়ে যায় গাড়ি থেকে।হঠাৎই নিশিকে পড়ে যেতে দেখে নিহান ওকে ধরে ফেলে। কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে নিশি চোখ খুলে দেখে যে সে নিহানের বাহুডোরে আটকে আছে। এই দেখে নিশি দ্রুত নিজেকে নিহানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। নিশি সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেখে নিহান কিছুটা রাগী গলায় বলে __
‘যেটা পারো না ওটা করতে যাও কেন? শাড়ি পরে মনে তো হয় না হাঁটতে পারো!’
‘ আপনি কিন্তু আবারো আমার ওপর রাগারাগী করছেন!’
‘আমি কি সাধে তোমার উপর রাগ করি? তুমিই তো আমাকে রাগিয়ে দাও।’
‘কেন, আপ,,,’
‘ নিশি’
হঠাৎই মায়ের কন্ঠে পেয়ে নিশি ঝগড়া থামিয়ে পেছন ফিরে দেখে নিশির মা দাঁড়িয়ে আছেন। নিশি তার মাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় কারণ ওর মাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি হয়তো অনেক কেঁদেছে। হয়তো একমাত্র মেয়েকে অন্যের ঘরে পাঠাতে হবে এই ভেবে কান্নাকাটি করেছেন। মায়ের মন তো সন্তানের জন্য কাঁদবেই।
#চলবে,
(