তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ১২

0
712

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ12
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

‘এটা তুমি কি বলছো দাদু! আমি উনাকে বিয়ে করতে পারব না।আর একটা রাত দুজন মানুষ একসাথে বসে থাকলেই যে বিয়ে দিতে হবে এটার কোন মানেই নেই। আর আমরা তো ইচ্ছে করে একসাথে ছিলাম না!’

‘ আমি জানি নিশি তুমি বা তোমরা এমন কাজ কখনোই করতে পারো না।কিন্তু এখন যদি এই কথা গ্রামে জানাজানি হয় তাহলে আমার মান সম্মান কি থাকবে? আর তাছাড়া নিহান খুব ভালো ছেলে। তার উপরে বংশ,আভিজাত‍্য, নাম ডাক কোন দিক থেকেই আমাদের থেকে কম নয়।’

‘নাম ডাক থাকলেই কি সব হয়? আমি না হয় তোমার মান-সম্মানের কথা ভেবে রাজি হয়ে গেলাম কিন্তু ওনি,ওনি কেন আমাকে বিয়ে করতে যাবেন। আর তাছাড়া গ্রাম জানার কথা আসছে কোথা থেকে কে জানাবে সবাইকে!’

‘নিশি তুমি ছোট মানুষ তাই এ কথা বলছ, আর এসব কথা হাওয়ার সাথে সাথে ছড়ায় আমরা পা জানতে চাইলে ও এই কথা জানাজানি হবে তাই আমি যা বলছি তাই হবে, তুমি নিহানকে বিয়ে করবে ব‍্যস এটাই আমার আদেশ।’

‘কিন্তু দাদু স‍্যার কেন আমার মত একটা অযোগ্য মেয়েকে তার জীবনের সাথে জুড়বেন। উনার মত শিক্ষিত স্মার্ট একটা ছেলে আমার থেকে আরও ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে। আর,,,’

‘ব্যস নিশি তুমি আর একটা কথা ও বলবে না চুপ কর, নিহানকে আর ওর পরিবারকে আমি দেখে নেব তুমি ঘরে যাও আর বিয়ের জন্য তৈরি হও।’

দাদুর কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে আপনি আপনি জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করল। কি এমন দোষ করেছি আমরা যে আমাদের সাথে এমন করা হচ্ছে। এসব ভেবে আমার আরো চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। না আমি আর পারছিনা নিজের কান্না টাকে আটকে রাখতে,তাই ছাদ থেকে দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলাম। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলাম। আর ভাবছি যে কেন কাল রাতে ছাদে যেতে গিয়েছিলাম কাল যদি ছাদে না যেতাম তাহলে তো আজ এমন কিছুই হতো না।

গতকাল রাতে,,,,,,,

হাওড়া থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতেই চোখ বন্ধ করে নিল নিহান। কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই নিহানের চোখে ভেসে উঠলো নিশির সাথে কাটানো সময়গুলো। নিশির মুখটা ভেসে উঠতেই নিহান সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে তারপর বেড সাইড টেবিলের উপর থাকা ক্যামেরাটা নিয়ে দেখতে থাকে পাহাড়ে নাচ করার সময় তোলা নিশির ছবিগুলো, তারপর সকালে পাহাড় আর বিকেলেও ঘুরতে যাওয়ার সময় তোলা নিশির ছবিগুলো।নিহান ছবিগুলো বারংবার দেখছে, আর মাঝে মাঝে আনমনেই হেসে উঠছে নিশির করা দুষ্টুমির কথাগুলো ভেবে।তারপর ক‍্যামেরাটা রেখে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু ঘুম যেন নিহানের চোখে ধরা দিতেই চাইছে না। এভাবে অনেকক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করার পরও যখন নিহানের ঘুম আসছিল না তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় ছাদে যাওয়ার। যা ভাবা তাই কাজ গুটিগুটি পায়ে নিহান চলে যায় ছাদে।ছাদে এসে রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিহান বলে__

‘ কেন হচ্ছে এমন আমার সাথে!কেন আমার চোখে শুধু নিশির মুখটাই ভেসে উঠছে?তাহলে কি!আমি না এ কি করে সম্ভব যে আমি এই পিচ্চি মেয়ের প্রেমে না, প্রেমে না মায়ায় পড়ে গেলাম?হাউ ইস ইট পসিবল?’

‘ আপনি এখানে কি করছেন স্যার?’

নিশির ডাকে নিহান তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে পিছন ফিরে দেখে ওর পিছনে নিশি দাঁড়িয়ে আছে। নিশিকে দেখে নিহান বলল ___

‘তুমি এখানে এত রাতে কি করছো?’

‘ আসলে হাওড় থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই এখন ঘুমটা ভেঙে গেছে আর ঘুম আসছিল না তাই ভাবলাম আকাশে এতো সুন্দর চাঁদ উঠেছে যাই ছাদে গিয়ে একটু চন্দ্র বিলাস করে আসি,তাই এলাম। আপনি এত রাতে ছাদে কেন এসেছেন?’

‘ আমারও ঘুম আসছিল না তাই ভাবলাম ছাদ থেকে ঘুরে আসি।’

‘আপনার কোন ঘুম আসছিল না?’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘তোমার কথা ভেবে (নিচু স্বরে )!’

‘আপনি কি কিছু বললেন?’

‘ কই তেমন কিছু না তো!’

‘ ও,, আমার মনে হলো আপনি কিছু বলেছেন।’

‘কই তেমন কিছুই বলিনি! বলেছি আজকে চাঁদটা সত্যি ই খুব সুন্দর!’

‘বাহ, আপনার মত গম্ভীর মানুষও চাঁদের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে!’

‘তুমি আমাকে অনেক রাগী আর গম্ভীর ভাবো তাই না?’

‘ হ্যাঁ,আপনি তো তাই!কিছু হলেই রাগ করেন আর সব সময় কেমন বাংলা প্যাঁচার মতো মুখ করে রাখেন।’

নিশির কথা শুনে নিহান কিছুটা রেগে বলল__

‘ কি বললে তুমি?’

‘দেখলেন তো?একটু কথাতেই কেমন রেগে গেলেন।’

নিশির কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে বলল__

‘ আসলে কি বলতো নিজের দেশ, ফ্যামিলি, বন্ধু- বান্ধব সবাইকে ছেড়ে এতদিন বিদেশে একা একা ছিলাম তো তাই কেমন একটা হয়ে গেছি।এখন একা একা থাকাটাই অভ্যেস হয়ে গেছে।তাই হয়তো কথায় কথাই রেগে যাই!হ্যাঁ হয়তো ওখানেও কিছু বন্ধুবান্ধব ছিল কিন্তু দিন শেষে তো একাই ছিলাম তাই এমন হয়ে গেছি।’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__

‘ ডোন্ট ওয়ারী! চিন্তা করবেন না মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে চলে আসবেন, তাহলে আমাদের সাথে হইহুল্লর করে দেখবেন একা থাকার ইচ্ছাটাই চলে যাবে।’

নিশির কথার বিনিময়ে নিহান শুধু মুচকি হাসে।হঠাৎই নিশি নিহানের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে__

‘ তাহলে স্যার আজ থেকে নো মোর ঝগড়া।আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড ওকে!’

নিহান নিজের দিকে নিশির বাড়িয়ে থাকা হাতটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুছকি হেসে নিশির দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল। নিশি নিহানকে হ্যান্ডশেক করতে দেখে খুশি হয়ে বলল __

‘চলুন স্যার, ছাদের ওই দিকটায় যাই ওখানে গেলে পাহাড়ের দৃশ্য গুলো খুবই ভালো দেখাবে।’

এই বলে নিশি চলে গেল ছাদের বাগানের একে বারে কর্নার সাইডে।নিশিকে যেতে দেখে নিহান চলে যায় বাগানের সাইডে।
_______

বাড়ির টুকটাক সব কাজ সেরে রহিম (নিশিদের সার্ভেন্ট )দরজা জানলা সব লাগানো হয়েছে কিনা সব দেখে ছাদের দরজা বন্ধ করা হয়েছে কিনা।রহিম ছাদে এসে দেখে ছাদের দরজা খোলা তাই রহিম ছাদের দরজার দিকে উকি দিয়ে দেখে কেউ নেই তাই সে ছাদের দরজা বন্ধ করে চলে যায়।আর এই দিকে ছাদের বাগানের কোনায় দাঁড়িয়ে নিশি আর নিহান কথা বলতে এতটাই ব্যস্ত যে তাদের ছাদে কেউ আটকে রেখে চলে গেছে তার খবর পর্যন্ত নেই। প্রায় অনেকক্ষণ পর এটা সেটা নিয়ে গল্প করে রাত একটার দিকে নিহান নিশিকে বলে___

‘ নিশি আমার মনে হয় আমাদের এখন রুমে যাওয়া উচিত। এত রাতে যদি কেউ আমাদের এভাবে কেউ কথা বলতে দেখে তাহলে ভুল ভাবতে পারে।’

‘হ্যাঁ ঠিক বলেছেন আর এইবার আমারও বেশ ঘুম পাচ্ছে।’

‘চলো তাহলে!’

এই বলে নিশি আর নিহান ছাদের দরজার কাছে গিয়ে দেখে ছাদের দরজা ওইপাশ থেকে কেউ আটকে দিয়েছে এই দেখে নিশি বলল__

‘ এখন কি হবে?আমরা নিচে যাব কিভাবে!’

‘ আমার মনে হয় রহিম কাকা এমন করেছেন আমরা ওই পাশে থাকায় দেখতে পায়নি তাই হয়তো ছাদের দরজা বন্ধ করে চলে গেছে।’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__

‘ তাহলে আর কি করার প্রায়ই মাঝ রাত হয়ে গেছে! সবাই তো গভীর ঘুমে ডাকলেও শুনতে পাবে না তার ওপর দরজা ধাক্কাধাক্কি করলে গ্রামের মানুষ আওয়াজ পাবে।তারপর বিষয়টা খারাপ দেখাবে এর চেয়ে ভালো চলুন দোলনায় গিয়ে বসে আমরা গল্প করি।’

‘ কি আর করার চল’

তারপর নিশি আর নিহান ছাদে থাকা দোলনায় বসে আবারো গল্প শুরু করে দিল। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর নিহান কথা বলছে কিন্তু নিশি কোন উত্তর দিচ্ছে না দেখে নিহান নিশির দিকে তাকিয়ে দেখে নিশি দোলনার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। জোছনা রাতের চাঁদের আলোয় নিশির মুখের দিকে তাকাতেই নিহানের চোখ যেন নিশিতেই আটকে গেছে।ঘুমন্ত নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে নিহান বলে উঠলো__

‘হ‍্যাঁ,নিশি আমার মন বলছে আমি সত্যিই তোমার মায়ায় পড়ে গেছি। হ্যাঁ,#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি হয়েই গেছি।
______

সকালে ফুলবাগানে পানি দিতে এসে রহিম দেখে নিহান কে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে নিশি। আর নিহানো খুব যত্ন করে নিশি কে আগলে রেখে ঘুমিয়ে আছে।এই দেখে রহিম বাড়ির ভেতর থেকে সবাইকে ডেকে আনে ছাদে।সবাই ছাদে এসে এই দৃশ্য দেখে পুরাই থ হয়ে গেছে। সবার যেন কথা বলার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। কিছুক্ষণ পর নদী নিশিকে ডেকে তুলে ঘুম ভাঙতেই সবাইকে নিশির দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিশি বলল__

‘ কি হল তোমরা সবাই এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?’

নিশির কথা শুনে নিলয় বলল__

‘তুই কি বুঝতে পারছিস না তুই কোথায় আছিস?’

নিলয়ের কথা শুনে নিশি ভালো করে তাকিয়ে দেখে সে নিহানের বাহুডোর আবদ্ধ।এ দেখে নিশি লাফ দিয়ে নিহানকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নিশি ধাক্কা দিতেই নিহান ধরফরিয়ে ওঠে। সজাগ হয়ে নিহান দেখে সবাই ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। নিলয় নিহানকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে বলল___

‘নিহান এসব আমি কি দেখেছি!’

নিলয়ের কথা শুনে নিহান বলল__

‘ নিলয় প্লিজ এমন করে বলিস না! তুই আমাকে ভুল বুঝছিস!’

তারপর নিহান সবাইকে বলে কিভাবে ওদের ছাদে হঠাৎ দেখা হয় আর ওরা কিভাবে ছাদে আটকে যায়।সব শুনে নিশির দাদু গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে__

‘ আমি তোমাদের বিশ্বাস করি, কিন্তু এসব যদি গ্রামে জানাজানি হয় তাহলে আমাদের মান সম্মান সব যাবে। এখন এর একটাই প্রতিকার তুমি নিশিকে আজকের মধ্যেই বিয়ে করবে।’

একথা শুনে নিহান স্তব্ধ হয়ে যায় আর নিশি বলে ওঠে__

‘ এটা তুমি কি বলছো দাদু!’

(তারপর তো সব আপনারা জানেনই)

বর্তমানে,,,,

#চলবে,

(আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন সবাই? রিচেক দেওয়া হয়নি তাই ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে বলবেন কিন্তু ?ধন্যবাদ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here