অন্যরকম_ভালোবাসা পর্ব::১৯

0
2360

অন্যরকম_ভালোবাসা পর্ব::১৯
#ইফা_আমহৃদ

চোখের সামনে আয়ান আয়রাকে দেখে স্তব্দ হয়ে গেল ইশরা।।তারা বাবা মেয়ে একে অপরের খাইয়ে দিচ্ছে ।।যতোই এদের দুজনকে দেখে,, ততই অবাক হই ইশরা।।এই কয়েকদিনেই যেন একে অপরের প্রান হয়ে গেছে।।আয়রাকে ছাড়া খাইয়া,,গোসল,, পড়াশোনা কিছুই হয়ে ওঠে না আয়ানের।। হঠাৎ করে রৌদ্র জুবায়ের এর কথা মাথায় চারা দিয়ে উঠলো।। ছোটবেলায় যখন ইশরা খেতে চাইতো না,, রৌদ্র জুবায়ের এটা ওটা বলে একপ্রকার জোর করে খাইয়ে দিতো।।ঘুম পাড়িয়ে দিতো।।তমোনা বকলে রৌদ্র জুবায়ের এর পিছনে লুকিয়ে পড়তো।।সেই বাবাকে দেখে না ৫ বছর হয়েছে।। এবার যে করেই হোক রৌদ্র জুবায়ের এর সাথে কথা বলেই ছাড়বে।।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আয়রার দিকে এগিয়ে গেল।।আয়রার পাশে বসার আগেই হাওয়ার বেগে বসে পড়লো দিবা।। মুহুর্তেই হাসি মুখটা উধাও হয়ে ,, একরাশ রাগ এসে জমাট বাঁধলো।। একবার দিবার দিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে আবার উপরে ছুটলো। সন্ধ্যা থেকে মাথা ব্যাথা করছে ইশরার।।
মেডিসিন খেয়ে শুয়ে ছিল।এখানে আসার মোটেও ইচ্ছে ছিলো না।। নেহাৎ অনয়া বারবার আসতে বলেছে।। নাহলে অসুস্থ শরীর নিয়ে নিচে নামতো না।।

— “পাপা তুমি কোথা থেকে তিমি মাছ ধরে এনেছো।।মাম্মাকে এতো করে বলতাম কিন্তু মাম্মা এনে দিতো না।বলতো ,,তিমি মাছ নাকি বিক্রি করে না”।।(আয়ানের মুখে তুলে দিতে দিতে আয়রা)

আয়রার কথায় থেমে গেল চরণ ।।সামনে দিকে আর না এগিয়ে আঢ়চোখে আয়রার দিকে তাকালো।।আয়রা বেশ তৃপ্তি করে চিংড়ি মাছ খাচ্ছে।।ভালোভাবে প্লেট পর্যবেক্ষণ করে চিংড়ি মাছ ছাড়া আর কিছু দেখতে পেল না।।ইশরার বুজতে বাকি রইল না,, মেয়ের আবদার পূরণ করতে চিংড়ি মাছকে তিমি বানিয়েছে।।
ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো ইশরা ।।পূর্নরায় আবার রুমের দিকে পা বাড়াতে নিলে,, অনয়া হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে দিলো।।তৃক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাঠ কাঠ গলায় বললো..

— “কতোবার তোমাকে এখানে আসতে বললাম!! দেরী করে এসে ,, এখন আবার না বলে চলে যাচ্ছিলে”।।

অনয়ার কাঠ কাঠ গলা শুনে সবাই তাকালো ইশরার দিকে।। এতোক্ষণ যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলো।।ইশরা এখানে এসেছে খেয়াল করে নি।।অনয়া ইশরার করুন দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকালো।।আয়ানের পাশে দিবাকে বসে থাকতে দেখে ইশরার মন খারাপ কেন বুঝতে বাকি রইল না।। সবার অগোচরে ইশরার কানের কাছে এগিয়ে বিরবির করে বললো..

— “ও এই ব্যাপার ,,,এতো ভালোবাসা।। ভাইয়ের সাথে কথা বলো না অথচ ভাইয়ের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারছো না”।।

— “মোটেও না আসসসলে আমার মাথাটা একটু” ।।

— “হয়েছে থাক আর মিথ্যা বলতে হবেনা।।(সবাইকে উদ্দেশ্য করে অনয়া) কখনো আমার সমুদ্র দেখা হয়ে ওঠে নি।। আসলে কিছুদিন পর আমাদের বিয়ে !! তখন সমুদ্র দেখতে পারবো কিনা জানিনা।।তাই ভেবেছিলাম,,কালকে একবার সমুদ্র দেখতে যাবো ।।সাথে তোমারাও যাবে” ।।

কারো উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফট করে বলে উঠলো ইশরা।।

— “দুদিন পর তোমরা বিয়ে করবে।।তোমরা হচ্ছো নিউ মেরেড কাপল।।এখন সবসময় দুজনে একসাথে টাইম স্পেন করবে ।।তা নয় আমাদের মতো বুড়োবুড়িকে টানছো”।

সবে আয়রাকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট রাখতে যাচ্ছিল।। এমন সময় ইশরার কথা শুনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।।ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে বললো..

— “ওয়াট ডু ইউ মিন বাই বুড়ো বুড়ি!!মাত্র একটা বাচ্চার জন্ম দিয়েছি ।।চাইলে এখন ১১+ ১১=২২ ।।দুইটা ক্রিকেট টিম তৈরি করতে পারি।। এবং আগামী ওয়াল্ড কাপ আমরাই নিবো”।।(ক্ষিপ্ত হয়ে আয়ান)

— “মাত্র একটা বাচ্চার জন্ম দিয়েছি।।এমন ভাবে বলছে যেন আয়রাকে নিজে গর্ভে ধরেছে।। সিজারিয়ানের সময় সিজার দেখে জ্ঞান হারিয়ে বসে ছিল।। আবার ২২ টা বাচ্চার জন্ম দেয়।। যত্তসব”!!(ভেংচি কেটে ইশরা)

ইশরার এমন উত্তরে হাসলো সবাই ।।আয়ান কিছু বলতে নিলে হাত বাড়িয়ে থামিয়ে দিল অনয়া।। দ্রুত ছুটলো হাতের প্লেট রাখতে ।।

— “বলছি ,, তুমি তো যাবে না তাই না।।তাহলে আয়রাকে ও পাঠিও না।। আয়ান আয়রার দিকে খেয়াল রাখতে পারবে কিনা ,, তাই বললাম আরকি”!!(দিবা)

— “দেখ অনয়া ।। তোমার নাম দিবা ,, তাই বলে সারাদিন দিবাস্বপ্ন দেখো না।। তুমি ভাবলে কি করে ,, আমি আমার ইশুপাখি আর লিটেল প্রিন্সেসকে ফেলে ঘুড়তে যাবো।।তার চেয়ে বরং তুমি যেও না।। সেখানে আমরা আমাদের মতো থাকতো আর ওরা ওদের মতো।।তোমাকে কে কম্পানি দিবে”।।

অনেক দিন পর আবার ইশুপাখি ডাকটা শুনলো আয়ানের মুখে।। একরাশ ভালোলাগা কাজ করছে ইশরার মনে।।আয়ানের কথা ইগোতে লাগলো দিবার।। রাগে ফুঁসফুস করতে করতে চলে গেল।।আয়ান দিবার দিকে তাকিয়ে ইশরার পাশে বসে পড়লো।।অনয়া বাঁকা হেসে আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো…–“” প্রিন্সেস আমরা সমুদ্র দেখতে যেতে চাইছি ।। কিন্তু মাম্মা যাবে না””।।আয়রা ছোট ছোট চোখ করে ইশরার দিকে এগিয়ে গেল।।মায়ের ওরনা টানতে টানতে করুন গলায় বললো,, মাম্মা যাবো।।ইশরা আর বাধা দিল না।।রাজি হয়ে গেল।। আবার আড্ডায় ফেটে পড়লো সবাই।।

_________________________

মিষ্টি কার্লার শাড়ি পড়েছে ইশরা।। অনেক দিন পর আবার শাড়ি পড়েছে।।ইশরার সাথে ম্যাচ করে আয়ান আর আয়রা দুজনেই মিষ্টি কার্লার পড়েছে।।আয়নাতে নিজেকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।। আজ একটু সাজতে ইচ্ছে করছে।। খুঁজে একটা গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক পেল।।সেটা লাগালো ,, হালকা কাজল দিল।। কাজল দিয়ে রাখতে নিলে ।। চোখ পড়লো আয়রার দিকে মাকে লিপস্টিক,,কাজল দিতে দেখে নিজেও লিপস্টিক কাজল দিচ্ছে।। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যন্ত করে আস্তে আস্তে দিচ্ছে।। মেয়ের কান্ড দেখে বুকে দুহাত গুঁজে দাঁড়ালো ইশরা।।আয়রা সেজে তার মায়ের দিকে তাকালো।।ইশরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখল।।যেন লজ্জায় ঘিরে ধরেছে।। মেয়ের এমন কান্ড দেখে আলতো হাসলো ইশরা।। অপেক্ষা না করে আয়রার দিকে ঝুঁকে দুগালে চুমু খেল।আয়রাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এলো।।

!!!!

দুয়ান আর অনয়া হাঁটতে হাঁটতে অন্যপ্রান্তে চলে গেছে।।ইশরা পানিতে পা ভিজিয়ে তীরে বসে আছে।। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে ।।দমকা হাওয়া এলোমেলো করে দিচ্ছে ইশরার চুল।। সেদিকে আক্ষেপ নেই তার ।।চোখ বন্ধ করে সেই হাওয়া উপভোগ করছে।।আজ যেন সমুদ্র দেখায় মন দিয়েছে।।আয়রা একটু উপরে বালির মাঝে কি সব আঁকি ঝুঁকি করছে।। আয়ান আয়রার পাশে দাঁড়িয়ে ইশরাকে দেখছে।।আজ
যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত।।আয়রা আঁকি ঝুঁকি শেষ করে আয়ানকে দেখে রাখতে বলে ইশরার দিকে ছুটে গেল।।ইশরা সমুদ্রের পানিতে আয়রার হাতের বালি গুলো ধুয়ে দিয়ে একসাথে উঠে এলো।।আয়রা আঁকার দিকে চোখ পড়তে,, থেমে গেল চোখ পাতা।। স্তব্দ হয়ে রইলো সেখানে।।আয়ানও সেদিকে তাকিয়ে আছে।।

আয়ান+ইশরা
= আয়রা

লিখে চারপাশে লাভ সেপ করে রেখেছে।।এই বাচ্চা মেয়েটা এতোটা বুঝে ,, যেটা হুট করে কেউ বুঝে উঠতে পারবে না।।

!!!!

হঠাৎ আয়ানের ফোনে কল আসাতে ব্যস্ত হয়ে ছুটে গেল সে।।বড্ড উদ্ভর লাগছিলো তাকে।।যাওয়ার আগে আয়রা বারবার বারণ করছে কিন্তু শুনে নি।। এখন আয়রা চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে..– মাম্মা আমার পাপা চলে যাচ্ছে ,, প্লীজ তাকে নিয়ে এসো।মাম্মা…।।
আয়রার এমন কান্না সহ্য করতে পারেনি ইশরা।।তাই আয়রাকে দুয়ান আর অনয়ার রেখে ইশরা ছুটলো আয়ানের পিছুপিছু।।

__________________

— “একে জাগাও!! শুনলাম আমার অবর্তমানে মেঘ নামক বিড়াল ,, হিংস্র বাঘ হয়ে গিয়েছিল।।তাই আজ হিংস্র বাঘকে চিরতরে ঘুম পাড়ানো ব্যবস্থা করছি”!!( বাঁকা হেসে আয়ান)

আয়ানের কথা শুনে একজন গার্ড এক গ্লাস পানি মেঘের মুখের উপর ছুড়ে ফেললো।। পানি মুখে পড়তেই চোখ খুলে ফেললো মেঘ।। হাত পা বাধার কারণে উঠে বসতে পারলো না।। আয়ান ভালোভাবে জানতো আয়ানের অবর্তমানে মেঘ পালিয়ে যেতে পারে ,, তাই চিটাগাং এ আসার সময় মেঘকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলো।। একটু সময় আগে আয়ানকে ফোনে করে মেঘের কথাই জানানো হয়েছিল ‌।।আয়ান ঘাড় বাঁকা করে বললো..

— “তুই নাকি হঠাৎ হিংস্র বাঘ হয়ে গিয়েছিলি।।তাই তোকে সারাজীবনের মতো ঘুম পাড়াতে এলাম”।।

— “আমি ভালোভাবে জানি ,, ইশরাকে খুঁজে না পাওয়া গেল ,,তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবি না”!! (ঠোঁট কামড়ে মেঘ)

চলবে..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here