#অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::১৭
#ইফা_আমহৃদ
— “নিজের হাসবেন্ডকে না নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছো।তোমার কতো কাছাকাছি এসেছি ।।আদর করে একটু কাছে টেনে নেবে !! না ,, তুমি কি করলে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছ”।।(দুকদম এগিয়ে এসে আয়ান)
আয়ানের কথায় রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা ইশরার।। কিন্তু এখন চেঁচামেচি করতে চাইছে না।। চেঁচামেচি করলে একদিকে আয়রার ঘুম ভেঙ্গে যাবে ,,অন্যদিকে বাড়ির সবাই এসে হাজির হবে।তাই রাগিদৃষ্টি দিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।। আয়ান ইশরার মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে চুপসে গেল।। মেয়েটার স্বভাব আগের চেয়ে অনেকটা বদলে গেছে।। কথায় কথায় যে মেয়েটা হাসতো ,,আজ সে শুধু চোখ গরম করে তাকায়।।আয়ানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইশরা বলল..
— “দেখ আয়ান ,, এই মাঝরাতে আমি কোনো সিনক্রেট করতে চাই না।।তোমার ভালোর জন্য আমি ,,তোমাকে ছেড়ে দূরে চলে এসেছি ।।এবার প্লীজ আমার লাইফ থেকে চলে যাও”।।
— “চলে যাওয়ার হলে চলেই যেতাম ।।তোমাকে পাগলের মতো খুঁজতাম না।।কেন ছেড়ে এলে আমায় ,, কেন আবার এখন চলে যেতে চাই”??( ছলছল চোখে আয়ান)
— “স্বার্থপর ভালোবাসা,, স্বার্থপর শহর কিংবা স্বার্থপর মানুষের মাঝে আমি ফিরে যেতে চাই না।।না মেয়েকে স্বার্থপর বানাতে চাই”‘।।(মুখ ঘুরিয়ে ইশরা)
— “ইশরা শেষ বারের মতো মাপ করে দাও !! কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমাকে হার্ট করবো না ।।প্লীজ ফিরে চলো না”।।
— “অবৈধ সন্তান আর সন্তানের মাকে আজ কেন ফিরিয়ে নিতে চাইছো!! আবার অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিবে তাই “।।
— “ইশরা প্লীজ ,, আমার সন্তানকে অবৈধ বলো না।।আমি সত্যিই খুবই অনুতপ্ত ।। ভেঙ্গে পড়েছি আমি ,, ভালো নেই আমার ইশুপাখি,, আর প্রিন্সেস আয়রাকে ছাড়া”।।( হাঁটু গেড়ে নিচে বসে হাত জোড় করে )
— “আয়ান দেখ আয়রা..!!
আর বলতে পারলো না ,, ইশরার চোখ গেল আয়রার দিকে ।।আয়রা ঘুম থেকে উঠে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।।এখানে এক্সজেকলি কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে।। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির সবাই এসে হাজির হলো ইশরার রুমে ।।আগে থেকেই সবার ধারনা ছিলো,,এমন কিছু একটা হতে পারে ।।সবাই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে ,, তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে।। শরীর থেকে ব্লাঙ্কেট সরিয়ে আয়ানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।। নিজের আধো আধো হাত দিয়ে আয়নের চোখ মুছে দিয়ে জিজ্ঞেস করল…
— “নতুন ভালো আঙ্কেল” তোমার কি হয়েছে ।।এভাবে কাঁদছো কেন ?? তুমি না বলেছিলে ,,তুমি কাঁদো না।।তাহলে এখন কাঁদছো কেন”??
আয়ান কোনো কথা না বলে আয়রাকে বুকে জরিয়ে নিলো ।।অজশ্র চুমুতে ভরিয়ে দিল আয়রাকে।।আয়রার গালে হাত রেখে বললো..
— “তোমার মাম্মা যে তোমার পাপার উপর রেগে আছে ,,কথা বলছে না?? তাই কাঁদছি সোনা”!!
— “আমার পাপা এসেছে ??(অবাক হয়ে আয়রা) কোথায় এখন !!!আমি পাপাকে দেখবো” !!
— “তোমার পাপা দেখতে মন চায় সোনা “??
— “হ্যা তো ।। শুধু আমার না মাম্মাও দেখতে চায়।।আমি প্রায় প্রায় মাম্মাকে জিজ্ঞাসা করি ,, আমার পাপা কবে আসবে ?? মাম্মা উত্তরে শুধু কাঁদে !! তখন আমি মাম্মাকে শান্ত করি !! মাম্মা বলে ,, আমি যখন বড় হব,তখন পাপা আসবে।। (লকেট টাকে ইশারা করে)এটা দেখতে পারছো না!! আমি প্রতিদিন লকেটের কাছে বলি যাতে পাপা তাড়াতাড়ি ফিরে আসে।। আকাশে প্লেন দেখলে আমি দৌড়ে যাই ,, কিন্তু আমার পাপা আসে না ।।আচ্ছা বলতে পারো ,, আমার ফ্রেন্ডদের পাপা তো তাদের সাথেই থাকে ,, আমার পাপা কেন থাকে না”।।(মন খারাপ করে আয়রা)
সব মেয়েই পাপাকে একটু বেশী ভালোবাসে ।।তাই বলে এতোটা ,, সবাই ইশরার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে।।মুখ ফুটে শুধু একবার বলতে বলছে ,, আয়ানের কথাই সত্যি।।
আয়রার মুখ থেকে এমন কথা শুনে অন্যদিকে ফিরে রইল ইশরা।।ইশরা যানে আয়রা তার পাপাকে অনেক মিস করে ,, কিন্তু এতোটা করে জানতো না।। আয়ান আর নিজেকে সামলাতে পারলো না ।। বলে দিলো ..
— “প্রিন্সেস সোনা আমি তোমার পাপা”!!
উত্তরের অপেক্ষায় আয়রা ইশরার মুখপানে তাকিয়ে রইল।।ইশরাও আর চায় না আয়রাকে তার পাপার থেকে দূরে রাখতে ।।ইশরা চোখের ইশারায় হ্যা বললো।।
— “হ্যা প্রিন্সেস ইনিই তোমার পাপা” ।।
আয়রা তো মহাখুশি নিজের পাপাকে পেয়ে ।। সাথে সাথে প্রশ্ন ছুরলো আয়রা ..
— “পাপা তুমি আমাকে আর মাম্মাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবে না তো” ??গেলে আমরা অনেক কাদবো
আয়ান স্মীত হেসে ”’না” বললো।।পাপাকে জরিয়ে ধরে আছে ,,কতো কথা বলছে।। শেষের কথায় লজ্জায় পড়ে গেল ইশরা..
— “পাপা মাম্মাও অনেক কেঁদেছে ।। তুমি আমাকে যেমন আদর করে দিয়েছো ।।এখন মাম্মাকে একটু দাও ।।দেখবে মাম্মা আর কাঁদবে না”।।
আয়রার এমন লাগামহীন কথা শুনে সবাই মুখ ঢেকে চলে গেল।। আয়ান তো ইশরার দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।।ইশরা মাথায় হাত দিয়ে বেডে বসে পড়লো।।শেষে কিনা মেয়ের জন্য সবার কাছে লজ্জিত হতে হলো।।
____________________
কিভাবে একটা দিন কেটে গেল হিসেব নেই।।এই একদিন আয়রার প্রতি আয়ানের পাগলামো গুলো দেখেছে ইশরা।।আয়রাকে ঘুমা পাড়িয়ে দেওয়া ,, খাইয়ে দেওয়া ,, গোসল করিয়ে দেওয়া,, হোম ওয়ার্ক করা ,, খেলাধুলা সব কিছু ছিলো আয়ানকে ঘিড়ে।।ইশরা শুধু বসে বসে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখছে।।আয়ান একবারও বিরক্ত হয়নি সব সামলে নিয়েছে।।
এখন ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করতে করতে রাত ৮ টা ছাড়িয়ে ৯ টার কাছাকাছি।। গত তিন ঘন্টা ধরে ল্যাপটপে কাজ করছে ইশরা ।। ইশরার কোলে আয়রা বসে বসে ভিডিও গেমস খেলছে। আয়ান কোথাও একটা বেরিয়েছে।। কোথায় গেছে বলে যায় নি।।বলে গেছে আসতে একটু সময় হবে ।।যে কাজ করতে মাত্র এক ঘণ্টার দরকার পড়ে ,,,সেই কাজ করতে তিন ঘন্টা ছাড়িয়ে গেছে শুধু আয়রার দুষ্টুমিতে।।প্রায় দুই মিনিট চুপ করে থাকার পর আবার মুখ খুললো আয়রা ..
— “মাম্মা,, পাপা কোথায় গেছে।।দেখেছো কতোক্ষণ হয়ে গেছে এখনো পাপা এলো না।।আবার চলে টলে গেল নাকি ।।যদি আমি পাপার সাথে যেতাম”।।
গেলি না কেন পাপার সাথে !! গেলেই ভালো হতো ,, একলিস্ট এখন বসে বসে আমার কান দুটো নষ্ট হতো না ।।এখন এই কথাগুলো ইশরার বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বললো না।। প্রচুর রাগ হচ্ছে আয়ানের উপর ,, বাহিরে যাওয়ার কি দরকার ছিলো।।
— “পাপা একটু কাজে গেছে ,,একটু পর ফিরে আসবে । তুমি গেমস খেলো”।।
কথাগুলো বলে আবার ল্যাপটপে মন দিলো ইশরা।।এই নিয়ে ৩ ঘন্টায় ৯৮ বার জিজ্ঞাসা করেছে , মাম্মা পাপা কোথায়।।পাপার পরিচয় পাবার পর একবারও আয়ানকে একা ছাড়ে নি।।সাথে সাথে ছিলো ।। ওয়াশরুমে গেলে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতো।।বাবার প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে ছলছল করে উঠতো ইশরার চোখ।।যদি আয়ান সেদিন ওমন ব্যবহার না করলো ,, তাহলে আর পাঁচটা গল্পের মতো ভিন্ন হতো তাদের গল্প।।
মিনিট দুয়েক যেতে না যেতেই বলে উঠলো আয়রা..”” মাম্মা নুডুলস খাবো।।”” মূলত সময় কাটাতে বলা।।
ইশরা আয়রার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো..
— “মাম্মা মাত্র ২দাও।।আমার কাজটা প্রায় হয়ে এসেছে”।
ইশরার জন্য অপেক্ষা করলো না আয়রা।। দূরত্ব পায়ে কিচেনে ছুটলো।।একটা কাপ নুডুলস বের করে নিলো।।গ্যাস অন করে পানি চুলায় দিয়ে একটু সময় দাড়িয়ে রইল।।
গরম পানির পাত্র নামাতে নিলে ,, হাত ফসকে নিচে পড়ে গেল।। সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে কেউ আয়রাকে কোলে তুলে নিলো।।ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো আয়রা।।বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে আয়ানের ভয়ার্থ মুখটা দেখতে পেল।।গরম পানি সব আয়ানের পায়ে।।বেশ খানিকটা লালচে হয়ে গেছে।। কয়েকপা সামনে এগিয়ে আয়রাকে নামিয়ে দিলো।।আয়রাকে নামিয়ে দিতে সে দৌড়ে ছুটলো ফাস্ট এইড বক্স আনতে।
সবে শপিং মল থেকে ফিরেছে আয়ান ।।আয়রার জন্য গিফট ,, জামা কাপড়,, খেলনা চকলেট কিনতে গিয়েছিলো ।।এসে এমন পরিস্থিতি দেখবে ভাবতে পারেনি।।
আয়রার জন্য নুডুলস বানাতে এসে থমকে গেছে ইশরা।মেয়ের একটু সময় সহ্য হবে না ,, ভাবতে পারেনি।।
আয়রাকে দেখে হুস ফিরলো।।বাচ্চা মেয়েটা স্বযত্নে বাবার সেবা করছে।।আয়রাকে আয়ানের পাশে বসিয়ে দিলো।।কয়েক টুকরো আইসবার এনে আয়ানের পা দুটো ভিজিয়ে রাখলো।।বক্স থেকে একটা মলম বের করে ফুঁ দিচ্ছে আর আলতো হাতে লাগিয়ে দিচ্ছে।।চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে ।।দেখে মনে হচ্ছে আয়ানের না ইশরার আঘাত লেগেছে।।ইশরার কান্ড দেখে মুচকি হাসলো আয়ান ।। সামান্য একটু লেগেছে তাতে এমন করছে যেন ভয়ানক কিছু হয়ে গেছে।। আয়ানের সাথে কথা বলে না অথচ আয়ানের ব্যথায় ব্যাথিত হচ্ছে।।
ভালোবাসা হয়তো এমনই হয়।।কাউকে স্বার্থহীন ভালোভাবে ভালোবাসলে ,, নিজের কষ্টকে তুচ্ছ লাগে।।আর ভালোবাসার মানুষটির কষ্ট পাহাড় সমান মনে হয়।।
_____ শতজনকে চাই না প্রিয়, তুমি শুধু আমার হও✨
দেখিয়ে দেবো শতরকম ভাবে একজনকে ও
ভালোবাসা যায় ?
— ইফা ?
চলবে..??