দুইটা পয়তাল্লিশ পর্ব ১

0
638

রাত গভীর হয়ে এসেছে। আর নওরিনও গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। যেন এখন তার কাছে ঘুমটাই এখন সবচেয়ে আপন জিনিস। এই গভীর রাতে হঠাৎ নওরিনের ফোনে ০২৪৫২৬ নাম্বার থেকে কল আসল। নওরিন ঘুমের ঘোরেই নাম্বারটা না দেখে ফোনটা তুলল। তারপর ঘুম মাখা কন্ঠে বলল, ‘হ্যালো!’
ওপাশ থেকে একজন বলল, ‘এখন রাত দুইটা পয়তাল্লিশ বাজে। আপনি কি ঘুমাচ্ছিলেন?’
কন্ঠটা প্রথমত অপরিচিত। আর দ্বিতীয়ত কন্ঠটা একজন পুরুষ মানুষের। তাই নওরিন কিছুটা রেগে গেল। মেজাজটাও গরম হয়ে গেল। নওরিন বলল, ‘এতো রাতে ঘুমাবো না তো কি করব! আর আপনি কে? এতো রাতে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করতেছেন।’
‘ঘুমাচ্ছেন ভালো কথা। আপনি কি খেয়াল করেছেন আপনার পাশে যে ঘুমাচ্ছিল সে এখন নেই? সে কোথায় গেছে আপনার ধারণা আছে? সে তো ওয়াশরুমেও যাই নি। তাহলে কোথায় যেতে পারে ভাবুন তো। হাহাহা।’
হাড় হিম করা একটা হাসির আওয়াজ আসল আর সাথে পেছন থেকে ভেসে আসল কুকুরের কান্নার আওয়াজ। নওরিন ভয় পেয়ে যায়৷ আর সাথে সাথে তার হাত পাশে রাখতেই দেখেই আসলেই কেউ নেই। ভয়ে নওরিনের গলা শুকিয়ে যায়৷ আর তখনই নওরিন জোরে চিৎকার করে উঠে। আর সাথে সাথে নওরিনের বাবা ‘কি হয়েছে! কি হয়েছে!’ বলতে বলতে নওরিনের ঘরে ঢোকে৷ নওরিন তার বাবাকে দেখার পর তার বাবাকে বলল, ‘আব্বু! আমার পাশে যে ঘুমিয়েছিল সে কোথায়?’
সাদ্দাম সাহেবের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘তোর পাশে আবার কে ঘুমাতে যাবে? তুই তো সব সময় একাই ঘুমাস।’
কথাটা শুনে নওরিনের হুশ ফিরল যে সে আসলে একা ঘুমিয়েছিল। শুধু আজ না সে সব সময়ই একা ঘুমায়। নওরিন এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। নওরিনের বাবা সাদ্দাম সাহেব নওরিনের কাছে গিয়ে পাশে বসে হাত মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘কিরে মা, ভয় পেয়েছিলি?’
‘হুম। মনে হয় একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছিলাম।’
‘ও। তোর কি তোর মায়ের কথা মনে পড়ছিল?’
‘না। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল মনে হল কেউ পাশে ঘুমিয়েছিল সে এখন আর নেই।’
‘ও। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম তোর চিৎকার শোনার পর ভাবলাম কি না কি আবার হলো। এখন ঘুমাতে পারবি তো নাকি আবার তোর পাশে বসে থাকতে হবে।’
‘না থাক তুমি গিয়ে ঘুমাও। আমি ঘুমাতে পারব।’
‘আচ্ছা তুই ঘুমা। আমি লাইট অফ করে দিতেছি।’
‘না থাক আব্বু। আমি পরে অফ করে দিব।’
নওরিনের বাবা নওরিনের কপালে একটা চুমু দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। তার ধারণা নওরিনের তার মায়ের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। কারণ তার মা যখন বেচেছিল সে প্রায়ই নওরিনের পাশে ঘুমাতো। এখন হয়তো তার কথা মনে পড়ে গেছে। আর হঠাৎ পাশে না পেয়ে ভয় পেয়ে গেছে।
রাতে আর নওরিনের ঘুম ধরল না৷ নওরিন তার বাবার কাছ থেকে ফোন কলের ঘটনাটা লুকিয়ে ফেলল। কারণ সে জানে তার বাবা যদি এ ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে বিভিন্ন ধরণের লজিক দাড় করিয়ে দিবে। তাই তার কাছ থেকে নওরিন বিষয়টা লুকিয়ে রাখাই বেশি উপযুক্ত মনে করল। সারাটা রাত তার জাগ্রত অবস্থায় কেটে গেল। তার ঘুম ধরল ভোরের দিকে। নওরিন ভোর বেলায় ঘুমিয়ে গেল। পরে সকাল বেলায় সাদ্দাম সাহেবের ডাকে তার ঘুম ভাঙল। ঘুম থেকে উঠতে চাইছিল না। কিন্তু ক্লাস থাকার কারণে উঠতে হলো। নওরিন রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে গেল। সেখানে গিয়ে নাবিলার সাথে দেখা। নাবিলা হচ্ছে নওরিনের বেস্টফ্রেন্ড। দুজনের মধ্যে খাতিরটা একটু বেশিই। নওরিন ক্লাসের মাঝেই নাবিলাকে রাতের কথাটা বলে দিল। নাবিলা তো কথা গুলো শুনে হাসতে হাসতেই শেষ। নওরিন ভ্রু কুচকে নাবিলার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুই হাসছিস! আমি যে কতটা ভয় পেয়েছিলাম তোর ধারণা আছে?’
‘সরি সরি,’ বলে নাবিলা আবার হাসা শুরু করে দিল। নওরিন রাগ করে বলল, ‘ধুর তোকে বলাই আমার ভুল হয়েছে। যা তোর সাথে আর কথা বলব না।’
‘যাই বলিস। যে করছে। সে কিন্তু জোস একটা আইডিয়া বের করছে। ভালোবাসার কথা বলে পাত্তা পাবে না দেখে সোজা তোকে ভয় দেখিয়ে দিল।’
‘তুই কিভাবে বলতেছিস যে ফোনটা করেছে সে আমার কাছে পাত্তা পাই নি৷ আমার পুরো ব্যাপারটাই রহস্যময় মনে হচ্ছে। প্রথমত কল এসেছে ০২৪৫২৬ নাম্বার থেকে। আর আমি খেয়াল করে দেখলাম আমার ফোনে কলটাও এসেছিল রাত দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে। নাম্বারটা ভাঙলে দুইটা পয়তাল্লিশ AM পাওয়া যায়। AM পাওয়া যায় বাটন ফোনের দুই আর ছয় চাপলে। আর সে ফোন করেই বলেছিল এখন রাত দুইটা পয়তাল্লিশ বাজে।’
‘বাহ! তুই তো দেখি ভালো ডিটেকটিভ হয়ে গেছিস। একটা ফোন এসেছে আর তুই এর নারী নক্ষত্র সব বের করে ফেললি।’
‘ফাইযলামি করবি না। আমার এই কলটার কারণে সারারাত ঘুম আসে নাই৷ এর পেছনে কোন প্যারা নরমাল একটিভিস্ট নাই তো?’
‘তুই দিনে প্রায়ই হরর মুভি দেখিস। আর রাতের বেলায় ভয় পাস। মুভি দেখা বাদ দে দেখবি দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। আমার তো মনে হয় তোর নাম্বারে কোন ফোনই আসেনি। সব তুই স্বপ্নে দেখেছিস।’
‘আমি স্বপ্ন দেখিনি বাস্তবে। আর পেছন থেকে কুকুরের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। হাসিটাও ছিল একদম হাড় হিম করা। আমার তো ভয়ে অবস্থা বাদ দে তো।’
‘তুই এসব কথা বাদ দে তো। আর আরেকটা কথা তুই কি কল ব্যাক করছিলি?’
‘ধুর আমি কি পাগল নাকি যে আবার কল দিব। একবার কথা বলেই যে ভয় পাইছি। আমি সাথে সাথেই নাম্বারটা ডিলিট করে দিসি। আমি এমনিতেই একা ঘুমাই। আর আমার সাথে এমন করছে সে যদি মানুষ হয় আর আমি যদি একবার ধরতে পারি তাহলে ওর একদিন কি আমার একদিন?’
‘ওর একদিন হবে কিভাবে ওর তো রাত। রাতে কিভাবে ওর সাথে পেরে উঠবি।’
এমন সময় স্যার চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে অর্থাৎ চশমা নাকের উপর রেখে তার উপর দিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘এই তোমরা দুজন ওখানে সেই কখন থেকে ফিসফিস করছ। ক্লাস করার ইচ্ছা নাই নাকি? না থাকলে বাইরে বেড়িয়ে যাও।’
দুজন চুপ হয়ে গেল। ক্লাসের মধ্যে দুজনে আর কোন কথা বলল না।

রাতে আবার নওরিনের ফোনে একই নাম্বার থেকে কল আসল। নাম্বারটা হচ্ছে ০২৪৫২৬। অর্থাৎ দুইটা পয়তাল্লিশ AM। আর কলটাও এল রাত দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে। এবারও নওরিন আগের মতো ঘুমিয়ে ছিল। নওরিন আবারও কলটা রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল, ‘হ্যালো! কে বলছেন?’
প্রথমে একটা কুকুরের কান্নার আওয়াজ আসছিল। তারপর হাড় হিম করা কন্ঠে জবাব এল, ‘এখন রাত দুইটা পয়তাল্লিশ বাজে। আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’
নওরিন ভয়ে চোখ খুলে ফেলল। আর নওরিনের ভয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেল। নওরিন বলল, ‘কে আপনি? আর আমার কাছে কি চান?’
‘আপনার কি একা ঘুমাতে ভয় করছে?’
‘হ্যা করছে। আপনি বলুন আপনি কে?’
‘তাহলে এখন একটা হরর মুভির কথা চিন্তা করুন দেখবেন আর নিজেকে একা মনে হবে না। সব সময় মনে হবে আপনার দিকে কেউ তাকিয়ে আছে। হাহাহা।’
আবারও একটা হাড় হিম করা হাসি দিয়ে ফোনটা কেটে দিল। হাসিটা এমন যে হরর মুভির হাসিকেও হার মানিয়ে দিবে। নওরিন আবার সেই নাম্বারে কল দিল। তখন একটা সুন্দর কন্ঠের মেয়ে বলল, ‘আপনার এই নাম্বারটিতে সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়। দয়া কর…’
নওরিন কলটা কেটে দিল। নওরিনের কিছুক্ষণ পর আসলেই একটা হরর মুভির কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। যেখানে একটা মেয়ে খাটের উপর শুয়ে ছিল। আর তার পাশ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ভুতুরে কার্যক্রম ঘটছিল। তার মনে হচ্ছিল হয়তো তার পাশে কেউ একজন আছে। যে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। দাত রক্তে মাখা। চোখ থেকে রক্ত ঝড়ছে। আর সে চোখ খুললেই তাকে দেখতে পাবে। কিন্তু চোখ খোলার সাথে সাথে দেখে কেউ নেই। তাই এই রাতটাও তার নির্ঘুমভাবে কাটে। সে গভীরভাবে চিন্তা করতে থাকে কে হতে পারে। আর ফোন নাম্বারটাই বা এতো অদ্ভুত কেন। ল্যান্ড ফোন বা মোবাইল থেকে এই কল করা সম্ভব না। তাহলে কলটা করে কিভাবে।
কথাগুলো পরেরদিন আবার নাবিলাকে বলে। তবে এবার নাবিলা বিষয়টাকে সিরিয়াসভাবে নেয়। নাবিলা নওরিনকে আইডিয়া দিল যে এখন থেকে ফোনটা ফ্লাইট মোডে দিয়ে ঘুম পারতে। নওরিনও এটা করার সিদ্ধান্ত নিল।

নওরিন তাই ঘুমানোর সময় ফোনটা ফ্লাইট মোডে দিয়ে ঘুমানো শুরু করল। সেদিন আর কল আসল না। নওরিন সে রাতটা ভালোভাবে ঘুমাতে পারল। রাতে আর কেউ তাকে ভয় দেখালো না৷ এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল৷ সে কিছুটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে ফোন ফ্লাইট মোডে রাখলে তাকে কেউ কল দেয় না। তবে আবার কলটা এল। সেদিন রাতেও ফোন ফ্লাইট মোডে ছিল। তবুও ফোনে কল আসল। নওরিন কলটা রিসিভ করল না। নওরিনের কানের কাছে কলটা বেজেই চলেছিল। কিন্তু নওরিন রিসিভ করল না। এক মুহূর্তে কলটা কেটে গেল। কলটা ঠিক দুই মিনিট পয়তাল্লিশ সেকেন্ড এর মতো কলটা বেজেছিল। নওরিন আগে যতটুকু ভয় পেয়েছিল এবার তার চেয়েও কয়েকগুন বেশি ভয় পেয়ে গেল। কারণ এখন তার ফোন ফ্লাইট মোডে থাকার পরও কল আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইট মোডে কারো ফোনে কল আসা ইম্পসিবল।

সে কথাগুলো নাবিলাকে জানায়। নাবিলার মুখেও এক ধরনের চিন্তার ছাপ দেখা গেলো। যখন নাবিলা আর নওরিন কথা বলছিল তখন তাদের মাঝে আসাদুর রহমান এসে উপস্থিত হয়। আসাদুর রহমান হচ্ছেন নওরিনদের ভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট এর টিচার। সাথে নওরিনের চাচাতো ভাই। নাবিলা নওরিনকে বিষয়টা আসাদুর রহমানকে বলে সে জন্য খোচাখুচি করছিল। কিন্তু নওরিন তাকে কিছু বলল না। আসাদুর রহমান চলে যাওয়ার পর নাবিলা বলল, ‘তুই ওনাকে বিষয়টা বললি না কেন? উনি তো তোর কাজিন।’
‘এমনিতেই বলি নি৷ আমার নিজের ব্যাপারে আমি এ ধরনের কাউকে জড়াতে চাই না।’
‘আমাকে জড়িয়েছিস ঠিকই।’
‘তুই যে আমার বেস্টফ্রেন্ড। তাই।’
এই বলে নওরিন নাবিলার গাল টেনে ধরল। তারপর বলল, ‘এখন বল এই ভৌতিক অবস্থা থেকে কিভাবে বের হব।’
নাবিলা অস্পষ্ট ভাবে কিছু একটা বলল৷ নওরিন সাথে সাথে গালটা ছেড়ে দিল। তারপর বলল, ‘সরি সরি।’
‘আমার কাছে সাহায্য চাইতে আসিস আর আমাকেই ব্যাথা দিস না। যা আমি কিছু বলব না। ভুত এসে তোকে ধরুক।’
‘এমনভাবে বলিস না। আমাকে যদি ধরতে আসে তাহলে আমি তোকে দেখিয়ে দেব।’
‘না, না! সেটা করলে আমি মরে যাব। এখন শোন। আজ থেকে মোবাইলের ব্যাটারি সিম কার্ড খুলে ঘুমাসবি।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

সবচেয়ে আজব ব্যাপারটি ঘটল এবার। তার ফোনে সিম কার্ড আর ব্যাটারি না থাকার পরও তার ফোনে আসল। আর কলটা রাত দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে আসল। এছাড়া আর কোন সময় কলটা আসত না। কিন্তু এবারও কলটা রিসিভ করল না। তার মনে একটা ভয় ধরে গেছে।
পরের দিন কথাগুলো আবার নাবিলাকে বলল। নাবিলা এবার বলল, ‘তুই এবার সরাসরি তার সাথে কথা বলবি আর তার সাথে দেখা করতে চাইবি। আর যদি দেখা করার জন্য রাজি হয় তাহলে আমি তোর সাথে গিয়ে দেখা করব আর ওর ঘাড় মটকাব।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। এবার তার সাথে ভালোভাবে কথা বলব৷ ওর একদিন কি, সরি ওর এক রাত কি আমার এক দিন হবে।’

নওরিন চিন্তা করল এবার একটা সমাধান করতেই হবে। তার মন বলছিল আজ এই রাতে তার কাছে কলটা আসবে। তাই নওরিন আর ঘুমালো না। ঠিক আবার রাত দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে কলটা আসল। তাই নওরিন ফোনটা রিসিভ করল। এবার নওরিন প্রথম বলল, ‘আমি জানি এখন রাত দুইটা পয়তাল্লিশ বাজে। আর আমি ঘুমিয়ে নেই। আপনি বলুন আমাকে আর কিভাবে ভয় দেখাবেন?’
‘না। এবার আর ভয় দেখাব না। এবার আমি নিজের চেহারা দেখাতে চাই। আপনাকে আমি তৃতীয় দিন ফোন করেই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি ফোনটা রিসিভ করেন নি। আমি আপনার সাথে দেখা করব। আপনি কি আমার সাথে দেখা করবেন?’
নওরিন মনে মনে বলছিল এই তো সুযোগ পেয়ে গেছি। নওরিন বলল, ‘তো বলুন আমরা কেন দেখা করব?’
‘আমার আপনাকে অনেক ভালোলাগে। আমি মনে হয় আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। তাই আমার মনে হয় আপনার সাথে আমার দেখা করা উচিৎ।’
‘আপনি দেখা করতে চান সেটা প্রথম দিন বললেই পারতেন। এভাবে আমাকে ভয় দেখানোর কোন মানে হয় না।’
‘আমি এমন করেছি আপনার কাছ থেকে আমার নিজের গুরুত্ব অর্জনের জন্য। আপনাকে যদি সরাসরি দেখা করার কথা বলতাম তাহলে আপনি পাত্তা দিতেন না।’
‘তাহলে নাবিলা আমাকে ঠিকই বলেছিল।’
‘মানে? কোন নাবিলা?’
‘কিছু না। আর নাবিলা আমার ফ্রেন্ড।’
‘ও।’
‘হুম। বাই দ্য ওয়ে, আপনি সত্যি মানুষ তো? কারণ আপনার প্রতিটা বিষয় আমার কাছে রহস্যময় মনে হয়।’
‘আমি মানুষ কিনা দেটা নাহয় দেখা হওয়ার পরেই দেখলেন।’
‘তো কোথায় দেখা করবেন। আপনাদের বাসার পাশে একটা পার্ক আছে সেখানে আপনার সাথে দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে দেখা হবে।’
‘কি আবার দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে। না আমি পারব না।’
‘দুপুর দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটেও পারবেন না।’
‘হুম। সেটা পারব। পার্কের কোথায় দেখা করব।’
‘আমি আপনার জন্য বেঞ্চ নাম্বার টু ফোরটি ফাইভে অপেক্ষা করব।’
‘আচ্ছা এই দুইটা পয়তাল্লিশ এর মধ্যে কি আছে যে আপনার সব কাজের মধ্যে এই নাম্বারটা আছে। আর আপনি আমার ফোন ফ্লাইট মোডে থাকার পরেও কিভাবে কল দিতে পারেন? আর আমার ফোন এ ব্যাটারি বা সিম কার্ড না থাকলেও কিভাবে কল দিতে পারেন? আর আপনার নাম্বারে আমি কেন কল দিতে পারি না। আমার মধ্যে এই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এই প্রশ্নের উত্তরগুলা একটু দেন তো।’
‘সব দিয়ে দিব। সময় হলেই দিয়ে দেব।’
‘আপনার সময় মানেই তো দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিট।’
‘আমাকে এখন কলটা কাটতে হবে। কল ডিউরেশন দুই মিনিট পয়তাল্লিশ সেকেন্ড হয়ে গেছে।’
এই বলে ফোনটা কেটে দেয়। ফোনটা কাটার পর নওরিন খেয়াল করল ওদের মধ্যে ঠিক দুই মিনিট পয়তাল্লিশ সেকেন্ড কথা হয়েছে। এই ব্যাপারগুলো নওরিনকে সম্পূর্ণ অবাক করে তোলে। নওরিনের হঠাৎ মনে পড়ল সে নামটা জিজ্ঞাসা করতেই ভুলে গেছে। নওরিনের কাছে বিষয়টা একটু বেশি ঘোলাটে হয়ে আসছিল। সে দেখা করবে কিনা সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। আর এবার কথা বলার সময় কথা বলার ভঙ্গিটাও ভিন্ন ছিল। প্রতিবার যখন কথা বলত তখন তার আওয়াজ শুনলেই নওরিনের ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। কিন্তু এবার তার কথা বলার ধরণ। শব্দ উচ্চারণ এর ভঙ্গি সব পরিবর্তিত। এবার কথাগুলোশুনেতার মনেই হয় নি এই ছেলেই তার সাথে এমন করেছে।

নওরিন রাত তিনটার দিকে নাবিলাকে ফোন দিল। নাবিলা ফোন তোলার সাথে সাথে বলল, ‘ঘুমাচ্ছিস?’
‘এতো রাতে ঘুমব না তো নাচব। আর কে আপনি?’
‘তুই নাম্বার দেখিস নাই। নাম্বার দেখে নে।’
নাবিলার বিষয়টা বুঝতে খানিকটা সময় লাগল। তারপর নাম্বারটা দেখল। দেখার পর বুঝতে পারল যে নওরিন ফোন দিয়েছে। নাবিলা বলল, ‘তুই এতো রাতে ফোন দিয়েছিস কেন? তুই জানিস না রাতে আমি ঘুমালে আমি কে সেটাই ভুলে যাই।’
‘জানি। একটা কথা বলার জন্য ফোন দিলাম।’
‘কি কথা? তোর মি. দুইটা পয়তাল্লিশ কি আবার ফোন দিয়েছিল?’
‘হুম। আর আমার সাথে দেখা করতে চায়। কাল দুপুর দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে। তুই কিন্তু আমার সাথে যাবি। দেখবি কাল কি টাইট দেই ওরে।’
‘আচ্ছা যাব নে। এখন ঘুমা আর আমাকে ঘুমাতে দে।’

ভার্সিটি বন্ধ থাকায় সুবিধা হলো৷ নওরিন নাবিলাকে সরাসরি পার্কে যেতে বলে। দুপুরের সময় নওরিন দেখা করার জন্য বের হয়। নওরিন পার্কটাতে পৌছায় দুপুর দুইটা চল্লিশ মিনিটে। আর বেঞ্জ নাম্বার টু ফোরটি ফাইভের কাছে যায় ঠিক দুইটা তেতাল্লিশ মিনিটে। সেখানে গিয়ে যা দেখল তা দেখে পুরো থমকে গেল। নওরিন দেখল সেখানে কেউ নেই। আর নাবিলা তখনও সেখানে এসে পৌছায়নি। বেঞ্চটাতে শুধু একটা ফুলের তোরা আছে যেটা শুন্যে ভেসে ছিল। আর তার দিকে এগোচ্ছিল। এটা দেখে সে মনে মনে ভাবে তার জীবন শেষ কারণ তার প্রেমে এবার কোন মানুষ না স্বয়ং ভুত পরেছে। এই কারণে তার সব কাজ গুলো ভুতুরে ছিল। এটা ভাবতে ভাবতে অজ্ঞান হয়ে গেল।

পর্বঃ ১
গল্পঃ #দুইটা_পয়তাল্লিশ
ধরণঃ সায়েন্স ফিকশন
লেখকঃ Parvez Rana

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here