#অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::১৬
#ইফা_আমহৃদ
চোখের কোণে অশ্রু ঝরে আছে।। একবার চোখের পলক ফেললে,,গড়িয়ে নিচে পড়ে যাবে।।এক দৃষ্টিতে ইশরার দিকে তাকিয়ে আছে আয়ান।।বিশ্বাস করতে পারছে না।।যাকে আয়ান তনতন করে খুঁজেছে ,, সে তার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে।।ইশরা এখনও অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে দিবার দিকে তাকিয়ে আছে ।।ইচ্ছে করছে ,, আরো কয়েকটা লাগিয়ে দিতে।। কিন্তু মানবতার খাতিরে কিছু বলতে পারছে না।। এতক্ষন চুপ করে থাকার পর মুখ খুললো ইশরা.
— “”লজ্জা করে না একটা বাচ্চা মেয়ের গায়ে হাত তুলতে।। নাকি সেই শিক্ষাটুকু নেই।।বাচ্চারা ফেরেশতার সমান হয়।। তাদের সাথে ভালোভাবে আর ভদ্র ভাবে কথা বলতে হয়।।(একটু থেমে আবার) আর তোমার সাহস হলো কিভাবে ,, আমার মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ার।।ওকে মারা তো দূরে থাক ,, চোখ রাঙালেও তাকে আস্ত রাখবো না।।একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ,, নেক্সাস টাইম যদি আমার আয়রার আশে পাশে তোমাকে দেখি ,, সেদিন আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।। মাইন্ড ইট।। আর এই বাড়িতে থাকার জন্য আমরা বসে নেই,, শুধুমাত্র তোমার বাবা “জীবন উদ্দীনের”” আর ভাই দুয়ানের জন্য এখানে পড়ে আছি”।।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দিবা ছাদ থেকে হনহন করে চলে গেল।।রাগ হচ্ছে এই মানুষটি উপর ,, যখন দিবা এতো গুলো কথা শোনালো ,, তখন কিছু বলে দিলেই হতো।।
— আপনি কেমন বলুন…
আর বলতে পারলো না ইশরা।।সামনে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে ।।আয়ানের দৃষ্টি ইশরার মুখে স্তব্দ হয়ে আছে।।সময় থমকে গিয়েছে ,, দুজনে এক অন্য পৃথিবীতে হারিয়ে গেলে।।মুখের কথা মুখে আঁটকে রইলো ।।সব বর্নগুলো গলায় দলা পাকিয়ে গেছে।। বুকের ভেতরে কেমন উথাল পাতাল করছে।।হাত পা রীতিমত কাঁপছে।।
হঠাৎ করেই জীবনটা যেন উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে।।চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে এসেছে।। হার্টবিট সাধারন তুলনায় আরো কয়েকশ গুন দূরত্ব গতিতে চলছে।।আজ কতো গুলো বছর পর আবার দুজন ,,দুজনকে দেখছে।
চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।। গরমে চেহারা লালচে আকার ধারণ করেছে।। বুঝতে বাকি নেই মাত্র আদালত থেকে ফিরেছে ।।আর এসেই মেয়েকে খুঁজতে বের হয়েছে।।
দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।আজ দুজনের চোখের কোণে অশ্রু জমেছে।।কেউ পলক ফেলছে না।
ইশরা বুঝতে পারছে না আয়ান এতো গুলো বছর পর এখানে কেন এলো ,, কেন আবার দু’জনের দেখা হলো,, আবার ৫ বছর আগের মতো আয়ানের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে কিনা।।
আয়ানের মনে অনেক প্রশ্ন জমাট বেঁধে আছে ।।কেন একবার বলে এলো না ,, কেন সবাইকে না জানিয়ে এতো দূরে চলে এলো।। ইশরাকে বুকের খুব কাছে টেনে নেওয়া উচিত নাকি সেদিন চলে আসার জন্য প্রচুর বকে দেওয়া উচিত।। কিন্তু কিছু বলার ক্ষমতা আয়ানের নেই ।।আস্তে আস্তে শরীরে সমস্ত ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।।মনে হচ্ছে ,, চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে এলো।। হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আয়রা পড়ে যেতে নিলে ,, আহহ করে চিৎকার করে উঠলো।।আয়রার চিৎকার শুনে হুস ফিরলো দু’জনের।।হাত বাড়িয়ে আয়রাকে ধরলো।। সাথে সাথে স্পর্শ করলো দুজন দুজনার হাত।। সেদিকে পরোয়া না করে আয়ারাকে টেনে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।।শক্ত করে বুকের কাছে টেনে নিলো।। সাথে সাথে চোখের পাতা বুজে এলো ।। চোখ থেকে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা অশ্রু।। অশ্রুসিক্ত নয়নে আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল…
— আয়ান তুমি আজও আগের মতোই আছো ।। পরিচয় না জেনে ওকে খাইয়ে দিলে,, ঘুম পাড়িয়ে দিলে ।।এখন আবার খেলছিলে,, সব বায়না পূরন করার চেষ্টা করছিলে।। যখন বুঝতে পারলে ,, ওর আমার মেয়ে ।।তখন কোল থেকে ফেলে দিতে চাইলে ?? ছিঃ !! তোমার থেকে এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করা যায় না।।
তর্জনী দিয়ে চোখ মুছে দুরত্ব পায়ে ছাদ থেকে নেমে এলো ইশরা।। নিজেকে আর দূর্বল প্রমান করতে চায় না।।
কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে ইশরা।।মাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ,,ছোট আয়রাও কেঁদে ভাসিয়ে দেবে।। তাই মেয়েকে কিছু খেলনা ধরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।।
আয়ান কেন আবার আমার লাইফে ব্যাক করলে ?? আমি তো নিজেকে ,, নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছিলাম।।তাহলে আমাকে আবার কেন দূর্বল করে দিতে চাইছো।।প্রতি মুহূর্তে নিজেকে স্ট্রং করার পরিক্ষা দিতে দিতে আমি হাঁফিয়ে উঠেছি।।আর পারছি না।।প্লীজ চলে যাও আমার জীবন থেকে ।।আর এসো না।।
খারাপ সময় তো জীবনের অংশ,, সে যেমন আসে
তেমন আবার চলেও যায় ।।
শুধু থেকে যায় খারাপ সময়ের পাওয়া কিছু
অভিজ্ঞতা,, চেনা হয়ে যায় কিছু মানুষের আসল রুপ,,
আর এগুলোই অনেকটা সাহায্য করে জীবনের বাকি
পথগুলো চলতে ।।
__________________
এতোক্ষণ এখানে কি হলো বোধগম্য হলো না আয়ানের ।। সত্যি কি ইশরা তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো ,, ভাবতে পারছে না।বৃদ্ধা আর তর্জনী দিয়ে ডান হাতে চিমটি কাটতেই হুস ফিরলো তার ।। অপেক্ষা না করে দৌড়ে নিচে নেমে এলো।ছেলেকে এমন উস্কোখুস্কো অবস্থায় দেখে কাছে এলো তিথি।।সবাই ড্রয়িং রুমে আসর জমিয়ে ছিলো।।সবার দৃষ্টি আয়ানের দিকে স্থীর হয়ে আছে।। একটু আগে তো স্বাভাবিক ভাবে ছোট বাচ্চা মেয়েটার সাথে খেলছিলো। হঠাৎ কি এমন হলো।। ছেলের কাঁধে হাত রেখে বার কয়েক জিজ্ঞাসা করলো তিথি ,,”” কি হয়েছে””!! উত্তরের বদলে তিথিকে জাপ্টে ধরে কেঁদে দিলো আয়ান।।বন্ধ হয়ে আসা নিঃশ্বাস কয়েকবার টেনে বললো..
— মা..!!!ইশরা!! আমার ইশরা।।মাই লিটেল প্রিন্সেস আয়রা !!
— কি হয়েছে ইশরাত আর আয়রার।। একটু আগে দেখলাম দিবা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুমে চলে গেল।।(পেছন থেকে কৌতূহল নিয়ে দুয়ান)
কিছু বলতে পারলো না আয়ান ।। চোখ জোড়া শতচেষ্টা করেও সামলাতে পারেনি ।।এক রাশ অন্ধকার নিয়ে জ্ঞান হারালো আয়ান।।
_________________
— দেখো ইশরা ,, আমি তোমাকে আবার আমার লাইফে ফেরত চাই ।।এজ এনি কজ !! (চেঁচিয়ে বললো আয়ান)
আয়ানের এমন ব্যবহারে ভয় পেয়ে গেল ইশরা।। নিজেকে সামনে ,, আয়রাকে জড়িয়ে ধরে বললো..
— কিন্তু আমি তোমার লাইফে আর ফেরত যেতে চাই না।। আয়রা আমার সব ,, আমি আয়রাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।। তুমি যদি আয়রাকে ফেরত নিতে চাও ।।তাহলেও আমি তোমার কথায় রাজি আছি।।
— সরি বেবী !! সেটা সম্ভব নয়।।কারন কোনো অবৈধ সন্তানের দায়িত্ব আমি আয়ান আহম্মেদ অভি নিতে পারবো না।।
— তাহলে আমিও তোমার কাছে ফিরে যেতে পারব না।।
আয়ান অনেকক্ষন তৃক্ষদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইশরার থেকে টেনে আয়রাকে ছাড়িয়ে নিলো।। শক্ত করে আয়রার গালে চেপে ধরে ছাদ থেকে ফেলে দিলো।।নিচের দিকে একবার তাকিয়ে ,, আবার ঘাড় বাঁকিয়ে ইশরার দিকে তাকালো।।ইশরার চট জলদি নিচে নেমে গেল।।তার সামনে আয়রার রক্তাক্ত দেহ দেখে চিৎকার করে উঠলো।।
॥॥
”’নাহহহ” বলে চিৎকার করে চোখ খুলে তাকালো ইশরা।পুরো জামা ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে।। নিজের হাতের উপর আয়রাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে একটু শান্ত হলো সে।। জমিয়ে রাখা নিঃশ্বাস নিতে লাগল।। পরপর কয়েকবার ঠোঁট ছুয়ালো মেয়ের পুরো শরীরে।।আস্তে আস্তে নিজের হাত থেকে আয়রার মাথাটা বারিশে রেখে দিলো।। টেবিলের উপর রাখা জগটা থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে নিলো।।এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে পুরোটাই শেষ করে আবার টেবিলে রেখে দিলো।। পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।।ড্রিম লাইটের আলোর মাঝখানে কয়েকটা ক্যান্ডেল জ্বলছে।। প্রতিদিনের মতো আজকেও একই গঠনে রুম সাজানো।। এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো ভেবে ,,কপালে থাকা ঘামগুলো মুছে নিয়ে।।কি ভয়ানক স্বপ্ন দেখছিলো,, মনে হচ্ছিল জীবনটাই বের করে নিলে গেল।।
চারদিকে দিকে আযানের ধ্বনি অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।।ইশরা সময় নষ্ট না করে বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল।। ফজরের নামাজ আদায় করে,, একে একে নিজের আর আয়রার জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করল।কাল রাতে তিথি ,,তমোনা,, অনয়া এসেছিলো ।।দুয়ান বলেছিলো অনুর সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে,, সেই অনু যে অনয়া ।।সেটা বোধগম্য হয়নি তার।।
অনেকক্ষন দরজা নক করে কিন্তু ইশরা খুলে নি।।আর চায় না তাদের মুখোমুখি হতে।। তাছাড়া রাতের স্বপ্নটা যদি সত্যি হয়ে যায়।। আয়ান যদি ওমন ভয়ঙ্কর কিছু করে বসে।।তখন নির্ঘাত ইশরা মরে যাবে।।
অন্ধকার রুমের মাঝে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো কেউ।।জামা কাপড় ভাঁজ করা রেখে সামনে তাকালো ইশরা।। রক্তিম আলোর মাঝে আয়ানের মুখটা দেখে দুকদম পিছিয়ে গেল সে।। একটু আগেই জ্ঞান ফিরেছে আয়ানের।।আর জ্ঞান ফেরার পরই ইশরার রুমে এসেছে।। ইশরাকে ভয় পেতে দেখে বলল..
চলবে…??
১..!! আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই দুয়ানের সাথে কথা বলার কারনে কো-ইন্সিডেন্টলি তেল পড়ে গিয়েছিলো,,যাতে ইশরার এক্সিডেন্ট হয়।।(পর্ব::০৪)
২..!! “”শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর”” চট্টগ্রামে অবস্থিত।। তাছাড়া আমি আরো একবার মেনশন করে দিয়েছিলাম চট্টগ্রামে আছে।(পর্ব::১৪)
৩..!! দুয়ান ইশরার বেস্টফ্রেন্ড+ দুয়ানের বাবাকে এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছে।।তখন থেকে ওদের সাথে থাকে।।দিবা দুয়ানের বোন।।(পর্ব::১৩+পর্ব::১৬)
৪…!! দুয়ান সংক্ষেপে অনয়াকে অনু বলে ডাকে ।।তাই বুঝতে পারেনি।।ইশরা দেরী করে বাড়িতে ফেরে+জুয়ান অনয়াদের আসার কথাটা বলতে পারে নি।।(পর্ব::১৩)
ইতি কথা::– এক পর্বে সব কথা উল্লেখ করা যায় না।।তাই আস্তে আস্তে উল্লেখ করে দিয়েছি।।আপনারা হয়তো মিস করছেন।।আর কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন,,, ধন্যবাদ