অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব:: ১১
#ইফা_আমহৃদ
ছোট বাচ্চার কান্নার শব্দের আওয়াজ,, সম্পূর্ণ হসপিটাল জুড়ে শোনা যাচ্ছে।।আয়রাকে না দেখেও বোঝা যাচ্ছে ,, নতুন কোনো নবজাতক শিশুর জন্ম হয়েছে।।আয়রাকে থামাতে ব্যস্ত পুরো আহম্মেদ পরিবার।। শুধু ইশরা আর আয়ান জানে না তাদের ছেলে নাকি মেয়ে হয়েছে।।আয়রার কান্নায় তখন মাতয়ারা সবাই ।।তখন পিটপিট করে চোখ খুললো ইশরা।। মূলতঃ আয়রার কান্নার আওয়াজেই স্বপ্নের জগৎ থেকে ফেরা।।চোখ খুলতেই সামনে দেখলো,, সাদা কাপড়ে মোড়ানো একজনকে নিয়ে সবাই আত্মহারা।।ইশরাত বুঝতে বাকি রইল না যে ,, এই সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাচ্চাটা আর কেউ নয় ।।তার নবজাতক সন্তান ।।বাড়ির সবাই থামানোর চেষ্টা করছে ,, কিন্তু থামছে না।।ইশরার জ্ঞান ফিরতে দেখে ,, আয়রাকে শুইয়ে দিলো ইশরার পাশে।।
ইশরা ছোট আয়রার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।। একদম আয়ানের মতো কিউট হয়েছে।।সে যেন বিশ্বাস করতে নারাজ ,, এটা তার বেবী।।এই ছোট বেবীটা ইশরার অংশ।। নিজের হাতটা আলতো ভাবে আয়ারার গালে রাখলো।।আয়রা নিজের ছোট্ট ছোট্ট আধো আধো হাত ,,, ইশরার হাতের উপর রেখে হেঁসে উঠলো।।হয়তো এতোক্ষণ সে ইশরাকে খুঁজছিলো।। এতোক্ষণের কান্নার আওয়াজ যেন এক মুহুর্তের মধ্যেই সমাপ্ত হয়ে গেল।। মায়েদের ছোঁয়া এমন ম্যাজিকের মতোই হয় ।। সবসময় সন্তানদের সব বিপদ থেকে আগলে রাখে।।সন্তানরাও মায়ের কাছে নিজের সব দুঃখ কষ্ট সহজেই প্রকাশ করতে পারে।।
ইশরাও যেন নিজের দশ মাসের কষ্ট এক নিমেষেই ভুলে গেল ।।আয়রার মুখের দিকে তাকিয়ে।।মা আর মেয়ের এমন জুটি দেখে হেসে দিলো সবাই ।।
— “”কেমন মেয়ে দেখেছো ।।আমরা এতোক্ষণ ধরে সামলানোর চেষ্টা করছি ,, কিন্তু কিছুতেই কান্না থামছে না।।আর মা একবার হাসি মুখে গাল ছুঁলো ।।ওমনি কান্না থেমে গেল””।।
অনয়ার মুখে কথাগুলো শুনে হাসলো ইশরা।।আয়রা ইশরার চুলগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।।ইশরা মাথা তুলে চুমু খেল আয়রার কপালে।।ইশরার চোখ সারা কেবিন জুড়ে,,,আয়ানকে দেখার উদ্দেশ্যে ।।তমোনা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো….
— “”মা আর সন্তানের বন্ধনগুলো এমনি হয়।।যেগুলো হয় জন্ম জন্মান্তরের ।।সন্তান যখন গর্ভে থাকে ,, তখন মা তাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে হাজারও কষ্ট করে।। তারপর যখন পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ তখন সন্তান যেই ছোঁয়া,, ভালোবাসা খুঁজে ।।যেই ছোঁয়া সে গর্ভে থাকাকালীন পেয়েছে।। আস্তে আস্তে যখন বড় হয় তখন এইটা” মা ” বলে ডাক,, মায়ের সারা জন্মের কষ্ট গুছিয়ে দেয়।।এটাই হচ্ছে মাতৃত্বের স্বাদ।।সেটা আমি ইশরার দ্ধারা উপভোগ করেছি””।।
— “”যখন আয়ান তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো ।।ভেবে নিয়েছিলাম।। হয়তো এই জীবনে আয়ানের সন্তানের দাদী কখনো হয়ে উঠতে পারবো না।। আমার ছেলেটা আবার আগের মতো অগোছালো হয়ে যাবে ।। কিন্তু না ,, তোরা আবার রং নিয়ে এলি””।।(তিথি)
__________________
চঞ্চল পায়ে কেবিনে ঢুকলো আয়ান।।জ্ঞান ফিরলে প্রচুন্ড পরিমাণে অবাক হয়েছিলো সে।।পরক্ষণে তখনকার কথা মনে পড়তে দৌড়ে অপারেশন থিয়েটারের কাছে গেল।। কিন্তু সেখানে ইশরা নেই।।ডাক্তার জানায় ,, তার প্রিন্সেস হয়েছে।।কেবিন নং বলে দিয়েছে ,, তাই আর রিসেপশন যেতে হয়নি ইশরার কেবিন নং জানতে ।।তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে এই ভেবে ,, বউয়ের পাশে থেকে সাহায্য করার বদলে ।।আরো জামেলা পোহাতে হয়েছে তাকে নিয়ে।
ইশরার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট আয়রা।। ইশরার চোখজোড়া বন্ধ।।বোঝাই যাচ্ছে,, আয়রাকে বুকে নিয়ে একধরনের অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে।। নিজের মাথা কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো ইশরা।।আয়ানকে ভেতরে আসতে দেখে সবাই সাথে সাথে কেবিন ত্যাগ করলো ।। ইশরার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে আয়ারার দিকে দিলো।। পকেট থেকে ডায়মন্ডের একটা লকেট বের করলো।।একটু ঝুঁকে ইশরার গলায় পড়িয়ে দিলো।। ইশরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।। সেদিকে তোয়াক্কা না করে বেবীকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল আয়ান।। আগে কখনো বেবী নেওয়ার অভ্যাস নেই ,,তাই ভালোভাবে নিতে পারছে না।।উপায় না পেয়ে আবার ইশরার বুকে আয়রাকে রেখে দিলো।। আয়ানের এমন বিহেবে বিরক্ত হলো ইশরা।।আয়ানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো..
— “”এখন বেবীর দাম দিতে শিখে গেছো দেখছি”‘!!!
— “”কিসব উদ্ভব কথাবার্তা বলছো।।ইশরা আমার জান আর আয়রা আমার প্রান ।। এদের কাউকে কেনার কিংবা দাম দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।।আমাকে এতোবড় একটা গিফট দিলে ।।তাই এটা আমার পক্ষথেকে তোমার জন্য সামান্য রিটার্ন গিফট।।যদি কখনো তোমাদের সাথে আমি না থাকি ,, তখন এই সামান্য লকেটটা আমার জায়গা পূরন করবে”” ।।
আয়ানের এমন কথায় মন খারাপ হয়ে গেল ইশরার।।সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিলো।।আয়ান এতো এতো কথা বলছে ,, কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি দিলো না ইশরা।।এত সুন্দর একটা মুহূর্ত ,, শুধুমাত্র একটা কথায় মন খারাপ করে দিলো আয়ান।।ইশরার কাছে এখন আয়ানকে বড্ড বিরক্তিকর লাগছে।।
________________
হসপিটাল থেকে ফিরেছে প্রায় এক মাস হয়েছে।।এই এক মাস আয়ান আর ইশরা একে অপরের থেকে আলাদা আলাদা থেকেছে।।ইশরা আয়রাকে নিয়ে তিথি আর রিহুর সাথে ঘুমিয়েছে।। আয়ান দাদু আর বাবার সাথে গল্প করে রাত পার করে দিয়েছে।। ইশরাকে আয়ানের রুমে নিতে চাইলে তিথি বারবার খোঁটা দিচ্ছে ।।সেদিন আয়ানের দায়িত্বজ্ঞান হীনতা আর হসপিটালে অজ্ঞান হওয়ার কথা বলে দমিয়ে রেখেছে।।
কিন্তু আজকে যে করেই হোক ইশরাকে নিজের রুমে এনেই ছাড়বে।।প্রয়োজন পরলে বোম মেরে সব উড়িয়ে দেবে ,,, তবুও ইশরাকে নিজের রুমে আনতেই হবে।
আয়ান রুমে পায়চারী করে ইশরার ফোনে ফোন করলো ।। আলাদা রুমে থাকার কারনে ,, একটা কমদামী ফোন কিনে দিয়েছে ইশরাকে।।যেটা দিয়ে দু’জনে সকলের অগোচরে কথা বলে।। কয়েকবার ফোন করার পরেও রিসিভ হলো না।।কোনো উপায় না পেয়ে ইশরার রুমের দিকে পা বাড়ালো।।
সবে মাত্র আয়রা ঘুমিয়েছে।।তাই একটু আধটু হাঁটাচলা করছে ইশরা।।ডাক্তার প্রথম কয়েকমাস হাঁটাচলা করতে বলেছে।। আয়রা সারাদিন দুষ্টুমি করে।। যখন একটু ঘুমায় তখন রুমে হাঁটাচলা করে।। হঠাৎ ফোনটা বাজে উঠলো ।। নাম্বার চেক না করেই রিসিভ করে নিলো ইশরা।। এই ফোনের নাম্বার রৌদ্র জুবায়ের,, তমোনা আর আয়ানের কাছে আছে।। রিসিভ করতেই শোনা গেল আর্ত চিৎকার।।ধরপর করে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নিলো।।তিথি ফোন করেছে ।।এতো রাতে হঠাৎ তিথি ফোন করার কারণটা ঠিক বোধগম্য হলো না ইশরার।। আবার ফোন কানের কাছে ধরতে শোনা গেল ।।তিথি কান্না মিশ্রিত কন্ঠ।।তিনি বলছেন..
— “”ই-শ-রা ,,তো-র,,, বা-বা ।।প্লীজ ওনাকে বাঁচা””।।
মায়ের এক কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে গেল ইশরা।। নিজেকে সামলে মাকে প্রশ্ন ছুঁড়লো সে..
— “”মা শান্ত হও।।এভাবে কেঁদো না ।।বাবা কি হয়েছে আমাকে বলো””!।
— “”তোর বাবার ।।(থেমে গেলেন তিথি ) ল্যাকের পাড়ে আমাদের পুরোনো ফ্যাক্টরিটা আছে না।। তাড়াতাড়ি সেখানে চলে আয়।।তোর বাবাকে বাঁচা””।।
ওপাশের কন্ঠস্বর আর শোনা গেল।। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ইশরা ।।হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেল।।কোন দিকে যাবে ,, কি করবে কিছু পারছে না।।কোনো দিকে না ভেবে দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।।এক মুহুর্তের জন্য নিজের মেয়ে আয়রার কথাটাও মাথা থেকে বেরিয়ে গেল ইশরার।।
_______________________
ফ্যাক্টরির চারপাশে ঝোঁপঝাড়।।।দূর থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।। এই ফ্যাক্টরিটা দিয়ে রৌদ্র জুবায়ের প্রথম ব্যবসা শুরু করেন ।।পরে কিছু ত্রুটি থাকার কারনে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে।। হঠাৎ এই ফ্যাকক্টরির রৌদ্র জুবায়ের কেন আসতে গেলেন।।আর তমোনাই বা কিভাবে খবর পেলেন।। এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেয়ে বাবাকে বাঁচানো টাই যেন ইশরার কাছে সর্বাপেক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।।
ভেতরে ঢুকে চারপাশে ভালোভাবে চোখ বোলাতে লাগলো ।। কিন্তু সেখানে অন্ধাকার ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ছে না।। ভয়ে একটু একটু গ্ৰাস করছে তাকে।।ফোনটাও আনতে ভুলে গেছে।।নাহলে টর্চ লাইটের আলোয় একটু হলেও সামনের দিকে এগুতে পাড়তো।। নিজের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে মার বাবাকে ডাকতে লাগলো ইশরা…
— “”মা….!!! বাবা….!! কোথায় তোমরা সাড়া দাও ,,আমি চলে এসেছি।।মা….!!!!
তখনই কোনো শক্তপোক্ত হাত পেছন থেকে জরিয়ে নিলো ইশরাকে।।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে ইশরার ।।এই ছোয়াটা আগেও অনেকবার উপলব্ধি করছে ইশরা।।তবে আয়ানের নয়।।নিজেকে ছাড়ানোর অনেক
চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে।। হঠাৎ কেউ পেছনে থেকে দুজনকে ছাড়িয়ে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো ইশরার গালে ।।পরতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ইশরা।।জ্বলে উঠলো টর্চের আলো।। তমোনা সামনে দাঁড়ানো।। একটু আগে তো তিনিই ইশরাকে এখানে আসতে বললেন ।।তাহলে হঠাৎ এমন করার মানে বুঝতে ব্যর্থ হলো সে।।
— “”লজ্জা করে না।। নিজের স্বামী সন্তান সংসার থাকতে অন্য একটা ছেলের সাথে রাশ লিলা করতে ।। তোকে জন্ম দিয়ে এই দেখতে হলো।। যদি আজ তোর পিছু না নিতাম ।।তাহলে তো এইসব জানতেই পারতাম না””।।(রাগে গজগজ করতে করতে তমোনা)
— “”মা তুমি এইসব কি””??
আর বলতে পারলো না ।।সামনে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে।। আয়ান এখানে কি করছে।।তাহলে কি আবার আয়ান তাকে ভুল বুঝবে!!!
চলবে…??
বিঃদ্রঃ ১!! গল্পটার কিছু অংশ সিনেমেটিক হতে পারে।
বিঃদ্রঃ ২!! আজকে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না ,, তবুও দিলাম।।কালকে দিবো না,,কেউ অপেক্ষা করবেন না।।