অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::০৭
#ইফা_আমহৃদ
গত দু’দিন ধরে এক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে ইশরা।।কখন অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আয়ান আসবে।। অভিমান বড্ড কষ্টদায়ক ,, যখন তখন একজনের মনকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে পারে।।ইশরার মনে কণেও জমে আছে হাজারও অভিমান,, শুধু আয়ানের জন্য।।
হঠাৎ সেদিন আয়ানের রেগে যাওয়ার কারন বুঝতে ব্যর্থ হলো ইশরা।। মেঘের কথাতে নাকি মেঘের আসাতে।একজন মানুষ নিজের ইচ্ছেতে আসলে ,তাকে তো বের করে দেওয়া যায় না।। সে যদি জনম জন্মের শত্রুও হয়।। ভেবেছিলো ,, রেগে যখন গেছে ।।হয়তো নিজের রাগ কমিয়ে একটু পর আবার ফিরে আসবে ।। কিন্তু আর এলো না।।
ইশরার ভাবনার মাঝে ভেতরে ঢুকে এলো তিথি আর তমোনা।।আজ ইশরাকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে।। কিন্তু আয়ান আসেনি ।।তাই রিসেপশনে বিল পে করতে গিয়েছিলো।। ইশরার পড়নে থাকা হসপিটালের ড্রেস চেঞ্জ করে একটা ডিলেডালা ফ্রোক পড়িয়ে দিলো।। তারপর আবার আয়ানকে নাম্বারে ডায়াল করতে লাগলো।। পরপর পাঁচ বার ডায়াল করার পরেও রিসিভ হলো না।। ছেলের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা দেখে কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করতে তিথির ।।কেন তখন রৌদ্র জুবায়ের আর আজাদ আহম্মেদ কে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।।কেন বলতে গেলে তারা পারবে।।হতাশা হয়ে ইশরার পাশে বসে পড়লো ।। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো…
— মা ইশরা,, আয়ানকে ফোনে অনেকবার ট্রাই করে ছিলাম ।। কিন্তু রিসিভ করলো না।।কেমন দায়িত্বহীন সেটাই ভাবছি।।আর তোর বাবা ,শ্বশুরকেও বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম।।এদিকে তোকেও ডিসচার্জ করলাম।।এই কেবিনেও তো অন্য প্যাশেন্ট আসবে।।একটু কষ্ট করে,,আস্তে আস্তে আমাদের সাথে চল।।
ইশরা কোনো কথা বললো না ।।হাত বাড়িয়ে তিথির হাত থেকে ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো।।কল লিস্ট চেক করে আয়ানের নাম্বারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।। উপরে থাকার কারনে কষ্ট করে আর খুঁজতে হলো না।। একবার ফোন করলো ,, কিন্তু রিসিভ হলো না।।টেক্সট লিস্টে গিয়ে আয়ানের নাম্বারে একটা মেসেজ সেন্ট করলো ।। কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসলো ,, কিন্তু ইশরা সিন করলো না। আবার কলও এলো ,, রিসিভ করলো না।।ফোনটা সাইলেন্ট করে পূর্নরায় ফোনটা তিথির হাতে ধরিয়ে দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো ইশরা।।
_____________
সবে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে আয়ান।।শরীরে পেঁচানো ভেজা টাওয়াল।। কাবার্ড খুলে টাওজার আর টি শার্ট বের করে চেঞ্জ করে নিলো।। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ব্রাশ করতে নিলে পেছন থেকে ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বলে উঠলো।। দুদিন ধরে ফোনটা সাইলেন্ট মুডে আছে।।যার কারনে রিংটোনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না।। হেয়ার ব্রাশ টা রেখে ফোনটা হাতে নিলো সে।।অন করতেই ফাইভ মিসড কল লেখাটা জ্বলজ্বল করে উঠলো।। কল লিস্ট চেক করলো ।। তিথি ফোন করেছে।।দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফোনটা রেখে দেওয়ার আগে আবার বেজে উঠলো।। এবারও রিসিভ করলো না।।
কল বাজতে বাজতে কেটে গেলো।।পরক্ষনে কিছু একটা মনে করে সাইলেন্ট মুড থেকে নরমাল মুখ করে নিলো।। আবার দূরত্ব পায়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।।
হঠাৎ ফোনে টুংটাং শব্দে ফোনটা হাতে নিলো ।। তিথির ফোন থেকে মেসেজ এসেছে।। বিরক্তি নিয়ে মেসেজ সিন করলো ।। কিন্তু মেসেজটা সিন করলে বিরক্তির বদলে মাথায় রাগ চাড়া দিয়ে উঠলো।। সাথে সাথে কয়েক টা মেসেজ করলো ,, কিন্তু বিপ্লাই আসলো না।।ফোন করলো ,, তাও রিসিভ হলো না।।ইচ্ছে করছে নিজের চুল টেনে ছিঁড়তে।। অবশেষে না পেরে দূরত্ব পায়ে হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেল আয়ান।। চুলের পানি কপাল গড়িয়ে পড়নের জামা কাপড় ভিজিয়ে দিচ্ছে।। কিন্তু সেদিকে হুস নেই তার।। মেসেজে লিখা ছিলো,,
“” আয়ান ডাক্তার আমাকে একটু আগে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দিয়েছে।।এখন অযথা হসপিটালে বসে থাকার কোনো মানেই হয়না।।তার উপর দুদিন আপনি মিসিং।।ডাক্তার আমাকে এক সপ্তাহ নড়াচড়া করতে বারণ করেছে।।তাই আমি নড়াচড়া করতে পারবো না।।১৫ মিনিট সময় দিলাম ।।এই সময়ের মধ্যে যদি আসতে না পারেন ,, তাহলে আমি মেঘকে ফোন করবো ।।মেঘ এসেই নাহয়,,, আমাকে কোলে করে বাড়ি পৌঁছে দিবে “”।।
_______________
ঘুমের মধ্যে নিজেকে পাখির মতো লাগছে ইশরাকে ।। নিজের ইচ্ছেটা পূরন হচ্ছে ।।হাত দুটি পাখিদের মতো মেলতে পারছে সে।। কিন্তু যতই হোক মানুষ তো আর পাখির মতো উড়তে পারেনা।। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো ,পাখির মতো উড়ার।।স্বপ্নের মাঝে এমন একটা ইচ্ছে পূরণ হতে চলেছে ।
তাই নিজের ঘুম নষ্ট করে এমন স্বপ্ন মিস করতে চায় না ইশরা।। ঘুমের মাঝে টুপ টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো চোখে ।।প্রথমে চোখ খুলতে চাইলো না , কিন্তু পড়ে পানির মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।। কৌতুহল মেটাতে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো ইশরা।।চোখ খুলতেই আয়ানের বিরক্তিমাখা মুখটা ভেসে উঠলো।। চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো আয়ান তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে।। হসপিটালে করিডোরে তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।।আয়ান নিজের মতো করে সামনে দিকে হেঁটে চলেছে।।ইশরার দিকে একবারও তাকাচ্ছে না।।নিজের হাত দুহাত দিয়ে আয়ানের গলার জরিয়ে ধরলো।। ঠোঁট উঁচু করে টুস করে আয়ানের গালে চুমু খেতে গেল।। জ্ঞান ফেরার উপস্থিতি অনুভব করে ইশরার দিকে তাকাতে ,,, হয়ে গেলো উল্টোটা ।। ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করলো।। সাথে সাথে থেমে গেল আয়ানের পা ।।চোখ দুটো স্থীর হয়ে রইলো ইশরার মুখের উপর।।আয়ান এমন বিহেবে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তার ।। চাইলো কি করতে আর হলে কি ??? চোখ জোড়া নামিয়ে আয়ানের বুকে মুখ গুজলো।। ইশরার পাগলামি দেখে হাসলো আয়ান ।। সামনের দিকে হাঁটা দিলো আর বললো..
— এর জন্য বুঝি মেঘকে ফোন করে আসতে বলতে চেয়েছিলে ।।
— আমি মটেও মেঘকে আসতে বলিনি ।।আমি তো জাস্ট আপনাকে আনার জন্য টেকনিক ইউস করেছি !!(আয়ানের বুকে থেকে মাথা তুলে ইশরা)
— কিসের টেকনিক !!!( জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে আয়ান)
— কিসের আবার !! আপনাকে এখানে আনার।। ডাক্তার আমাদের বেশি নড়াচড়া করতে বারণ করেছে ।। এই তিনতলা থেকে নিচতলা আমার পক্ষে নামা সম্ভর নয়।।আপনাকে ফোন করলাম।। কিন্তু রিসিভ করলেন না।। অবশেষে বাধ্য হয়ে ঐরকম মেসেজ সেন্ট করলাম।।তাই বলে আপনি এই ধরনের ড্রেস আর চুল ভালোভাবে না মুছেই চলে আসবেন ।।বড় অদ্ভুত আপনি।।(মুচকি হাসি দিয়ে ইশরা)
— হ্যা ।।আমি ওদিকে ড্রেস চেঞ্জ করি ,, চুল মুছি ।।আর এদিকে আমার বউ আরেকজনে নিলে যাক।।
আয়ানের এমন উদ্ভর কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসলো ইশরা।।যে হাসিতে কোনো শব্দ নেই।।আগে থেকেই গাড়িতে তিথি আর তমোনা বসে ছিলো ।। আয়ান আর ইশরাকে আসতে দেখে দরজা খুলে নেমে গেল তিথি।। আয়ান ব্যাক সিটে তমোনা আর তিথির মাঝে ইশরাকে বসিয়ে দিয়ে ,,নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।। লুকিং গ্লাসে ইশরার ক্লান্তিমাখা মুখটা দেখে ড্রাইভ করতে মন দিলো।।
______________
— গাড়ি থামান,,, থামান ।।প্লীজ প্লীজ গাড়ি থামান।।
একপ্রকার চেঁচিয়ে বললো ইশরা।।ইশরার এমন চিৎকার শুনে গাড়ির ব্রেক করলো আয়ান।।সবাই ভ্রু কুঁচকে ইশরার দিকে তাকিয়ে আছে ।।ইশরাত সেদিকে তোয়াক্কা না করে ,, জোরে জোরে বললো
— ওমা ঐ দেখো ফুচকা ওয়ালা।।চলো না ফুচকা খাই ।। বেশী না মাত্র ১ এক প্লেট ।।(ইনোসেন্স ফেইস করে ইশরা)
— তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।। এখন এই অবস্থায় ফুচকা খাবি।।এইসব খেলে বেবীর সমস্যা হবে।। আবার মেডিসিন খেলে ,,,তাও কাজ করবে না।।(তমোনা)
— ওমা ,,মাগো ।।বেশি ই মাত্র এক প্লেট ।।এখন তো বেবীর বয়স মাত্র ৬ মাস ।।কিছু হবে না।প্লীজ ।।
— একদম না ।। ছয় মাসে অনেক কিছু হয়।।আরো চার মাস যাক।।।তারপর মন ভরে খাস ।।(তিথি)
মন খারাপ করে বসে রইলো ইশরা।। আয়ান একবার ইশরার দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
ফিরে এলো হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে।। ইশরার দিকে এগিয়ে দিলো প্যাকেটটা।।গোমরা মুখ করে প্যাকেটা খুলতে উচ্চস্বরে হেসে দিলো ইশরা।।আয়ান ফুচকা নিয়ে এসেছে।। কিন্তু পরক্ষনে আবার ফোনটা খারাপ হয়ে গেল।। আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো..
— আপনি অনেক পঁচা ।।ফুচকা এনেছেন টক কোথায় ,,ঝাল কোথায় হ্যা ।।এটাকে ফুচকা বলে না ,, আটা বলে ।।(মুখ ফুলিয়ে ইশরা)
— খেতে হবে না,, এদিকে দাও ।।(হাত বাড়িয়ে আয়ান)
সাথে সাথে ইশরা অন্যপাশে ফিরিয়ে খেতে লাগলো।। এরজন্যই বলি চাওয়ার আগেই ফুচকা কেন নিয়ে এলো ।ফাজিল ছেলে ।।দুটো ফুচকা খেয়ে রেখে দিলো।। শুকনো ফুচকা খাওয়া যায় নাকি।। তারপর আবার মন খারাপ করে বসে।। আয়ান তখন ফুচকা ধড়িয়ে দিয়ে আবার কোথায় জানি চলে গেল।।
ঘন্টাখানেক পর ফিরে এলো হাতে ডাব নিয়ে।
ইশরার দিকে এগিয়ে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।। কিন্তু ড্রাইভ করলো না।।এর মধ্যেই কয়েকজন সেলসম্যান বড় বড় কার্পেট এনে তাদের গাড়ির উপরে সেট করে দিয়ে চলে গেল।। এতো কার্পেট যা দিলো দিয়ে একটি বাড়ি ঢেকে দেওয়া সম্ভব।। কৌতূহল দমাতে অনেকবার আয়ানকে জিজ্ঞানা করলো তিথি ,, কেন কার্পেট এনেছে ,, কিন্তু কিছু বলেনি আয়ান।। চুপ করে শুধু ড্রাইভ করেছে আর ইশরার গোমরামুখে ডাব খাওয়ার দৃশ্যটা দেখছে।।।
_____________
বাড়িতে ফিরতেই শুরু হয়ে গেছে আয়ানের পাগলামি।।
ইশরাকে রুমে শুইয়ে দিয়ে কার্পেট দিয়ে পুরো বাড়ি ঢেকে ফেলেছে।।তখন হয়তো রাত ৯ টার বেশি বাজে।।দৃষ্টিপাত করেনি সেদিকে।।কিংবা সকালের জন্য অপেক্ষা করে নি।।
ড্রয়িং রুম থেকে শুরু করে ওয়াশরুম পর্যন্ত।।ইশরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে সবটা দেখেছে।।কিছু বলতে পারেনি ,,বললেই হয়তো আবার কয়েকটা ঝাড়ি খেতে হবে।। ক্লান্তি মাখা শরীর নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো আয়ান ।। আয়ানের প্রবেশে শোয়া থেকে উঠে বসলো ইশরা।। আয়ানের কাঁধে মাথা রেখে শুরু হলো তার আরেক পাগলামী ।।এই রাত দুপুরে শাওয়ার নিবে ইশরা।। কিন্তু আয়ান কিছুতেই দেবে না।। শাওয়ার নিতে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।।তাই ইশরা শর্ত দিয়েছে ।। নিজের হাতে চেন্জ করিয়ে দিতে হবে ।।নাহলে শাওয়ার নিবেই নিবে ।।এখন আয়ান পড়েছে মহাবিপদে ।। বিরক্রি মাখা মুখ নিয়ে কাবাড থেকে একটা টি শার্ট আর প্ল্যাজু বের ইশরার হাতে ধরিয়ে দিলো ।।এই ড্রেসগুলো কিনতেই সেদিন আয়ান বেরিয়ে ছিলো।।পরে বাড়ি ফিরে কাবার্ডে গুছিয়ে রেখেছে ।।
চলবে…??
ব্যস্ততার কারণে দেরি হয়েছে।।তার জন্য দুঃখিত।