” বুকের আঁচল অমন নিচে করে রেখেছ কেন ” রুমে ঢুকেই আহাসান একথা বলে উঠলো।একথা শুনে স্নেহার মনে হচ্ছিল যে কোন সময় দম আটকে মরে যেতে পারে। ইচ্ছা করে তো আর সরায় নি। এসিটা অফ হয়ে গেছে কি করে জানি। এত ভারি সাজ নিয়ে হাঁসফাস লাগছিল তাই একটু খানি সরিয়ে রেখেছিল আঁচলটা। তাই বলে রুমে ঢুকেই প্রথমে কোন কথা না এই কথা বলবে? এতক্ষন যাবত বাসর ঘরে দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করেছে স্নেহা। কেন জানি না মনের মধ্যে অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা আসছে তার। আচ্ছা এসে আগে করবে কি। জোরাজোরি করবে না তো আবার। উফফ কেন জানি না কিছুই ভাবতে পারছে না স্নেহা। একদিনের মধ্যে এমন করে কারো বিয়ে হতে পারে সেটা তার জানাই ছিল না। পরশুই দেখতে এসে পছন্দ করে ফেলে স্নেহাকে আহসানের আম্মা। স্নেহার এত গাঁইগুঁই স্বত্তেও স্নেহার বাবা শফিক সাহেব পাকা কথা দিয়ে দিয়েছিলেন। ছেলেকে শুধু এক পলক দেখেছিল স্নেহা। আর্মিতে জব করে বিশাল উঁচু মনে হয় উটের মত লম্বা আর ট্রেনিং দেওয়া ফিট বডি। এ টুকুই দেখতে পেরেছিল। তারা যখন প্রস্তাব দিয়েছিল আজই বিয়ে স্নেহার মা অমত করলেও শফিক সাহেবের কথার কাছে তা আর ধোঁপে টেকে নি। তার ফলশ্রুতিতে আজ স্নেহা বাসর ঘরের বাসিন্দা। কতক্ষন স্নেহার ননদ অতশী আর তার বেশ কয়েকটা কাজিন ছিল স্নেহার কাছে অনেকক্ষন। নানা ধরনের কথার পরে যেই আহসানের বড় ভাবি মানে নীলা এসে হাজির সব গুলোকে কান ধরে বের করে দিল। সবাই বের হয়ে গেলে নীলা স্নেহার পাশে বসে আস্তে আস্তে বলল ” দেখো ভাই আমার দেবর কে যেন বেশি অপেক্ষা করিও না ” এই বলেই নীলা হাসতে লাগল। স্নেহা বেশ অবাক হয়ে ভাবে সে কি রুমের দরজা লক করে রাখবে নাকি যে তার দেবর বাইরে অপেক্ষা করবে? আহাসান যখন রুমে ঢুকলো ঘড়ির কাটা রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। আর ঘরে ঢুকেই মহাশয়ের বাঁশ মার্কা কথা।
গরমে স্নেহার পরান যায় যায় অবস্থা। আহাসান এসেই ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে ফ্রেশ হয়ে যখন বের হল দেখলো স্নেহা ঘেমে নেয়ে একাকার। গম্ভীর গলায় স্নেহাকে বলল ” যাও যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও। অনেক রাত হল কাল ঠিক সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠতে হবে”। বিনা বাক্য ব্যয়ে স্নেহা গয়না গুলো খুলে রেখে যখন ওয়াশরুমে ঢুকলো৷ তখন আহাসান চুল ঠিক করছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। স্নেহা ওয়াশরুমে ঢুকে মনে মনে হাসতে হাসতে শেষ যে চুল হচ্ছে এক৷ ইঞ্চি এক ইঞ্চি তাও আবার পুরো কান পিঠ টাক বের করা সেটা রেও ঠিক করে আঁচড়াচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে মেকাপ উঠিয়ে একবারে গোসল করে বের হল স্নেহা। বেরিয়েই দেখে মার্চপাস্ট করার মত সোজা স্ট্রেইট হয়ে শুয়ে আছে আহাসান। কেন জানি না খুব মন খারাপ হল স্নেহার মানুষের জীবনে এই রাতটা একবারই আসেভার সে কি না ঘুমিয়ে পড়েছে। এই যে স্নেহা কচি কলা পাতা কালারের শাড়ি পরেছে নাভিটা অনেক খানি বের করে রেখেছে। আর ব্লাউজের পিঠও অনেক বড় করা স্লীম ফিগার মেদহীন পেট এসব তো তাকে দেখানোর জন্যই করা কিন্তু তাই বলে সে এমন করে ঘুমিয়ে পড়বে? তাও আবার এই রাত্রে….. এসব ভাবতে ভাবতেই স্নেহা আহাসান পাশে বেশ দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়লো। ইন্টার পর্যন্ত পড়াশোনার চাপে কখনোই প্রেম নামক কোন কিছু জীবনে আসতে পারে নি স্নেহার। যখন মেডিকেল এ চান্স হয়ে গেল দিনরাত তখন এক ধ্যান জ্ঞান পড়া আর পড়া। তারপরেই ধুম করে এই বিয়ে। প্রেম মনে হয় আর হল না স্নেহার কপালে।এসব ভাবতে ভাবতেই স্নেহা কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো নিজেই জানে না। রোজ সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠা আহাসান এর অভ্যাস। আর্মিতে জয়েন করার পর এই অভ্যাসটা হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেন জানি না আজকে কেমন জানি অন্যরকম মনে হচ্ছে অন্য দিনের চেয়ে। কিন্তু কেন, হঠাৎই মনে হল বুকের ভিতরে এক উষ্ণ অনুভূতি। তাকিয়ে দেখে স্নেহা তাকে জড়িয়ে ধরে বুকের ভিতরে মুখ গুজে বাচ্চাদের মত অঘোরে ঘুমাচ্ছে। শত হলেও পুরুষতো। নিমেষেই যেন সারা শরীরের রক্ত ছলকে উঠলো আহাসানের। রিমিও তো তাকে কত দিন জড়িয়ে ধরেছে কই কখনোই তার এমন তো লাগে নি। সকালে মিষ্টি একফালি রোদ পর্দার ফাঁকা থেকে এসে স্নেহার পেটের উপরে পরেছে।ভাল করে তাকিয়ে স্নেহাকে দেখে আহাসানের তো আক্কেল গুড়ুম। শাড়িটা সম্পুর্ন খুলে গেছে আঁচলের এক পার্ট কোন রকমে বুকের উপরে বাকি শাড়ি খাটের অন্য কোণায়। ফর্সা ধবধব পেট অনেক খানি বের হয়ে আছে। সারাটা শরীর যেন মূর্তির মত করে গড়া যেখানে কোন মেদের ছিঁটে ফোঁটা নেই।সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে মিষ্টি মুখটা। কিছু কিছু মুখ আছে না দেখলেই ভাল হয়ে যায় ঠিক তেমনই একটা মুখ। জোর করে আহাসান মুখ ফিরিয়ে নিল এই মোহে আর দ্বিতীয় বার সে পড়বে না। মন ঠিক কাঁচের মত ভাঙ্গলে আর জোড়া লাগে না।
আহাসান যখন ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো আহাসানের ফিরোজা খানম তখন বেশ অবাক হলেন। ” কি রে ঘরে নতুন বউ রেখেই তুই ডিউটিতে যাচ্ছিস?” মায়ের প্রশ্ন শুনে টেবিলে বসতে বসতে সে বলল ” মা তোমার কি মনে হয় বিয়ে হয়েছে তাই সব কাজ ফেলে ঘরে বসে থাকব “। ” তাই বলে আজকের দিনেও অফিস? না গেলে হয় না? ” অনেকটা অনুরোধের সুরে বলল ফিরোজা খানম। ইমপোর্টেন্ট মিটিং আছে উর্ধতন কর্মকর্তারা আসবে। এই বলেই বেরিয়ে গেল আহাসান। নীলা টেবিলে আসলে ফিরোজা খানম বলল ” তুমি যেয়ে স্নেহাকে ডেকে উঠিয়ে দেও এখনও মনে হয় উঠতে পারে নি “। শাশুড়ীর কথামত নীলা সোজা আহাসানের রুমে গেল দরজা বাইরে থেকে ভেজানো একবার ভাবল নক করবে পরে মনে পড়ল তার দেবরই তো ঘরে নেই এখন এমনেই ঢুকতে পারে। দরজা খুলে নীলা মুচকি হেসে দিল। এলোমেলো অবস্থায় স্নেহা ঘুমাচ্ছে। ব্লাউজের বুকের উপরের দুই বোতাম খোলা শাড়িটা ফ্লোরের উপরে পড়া পেটিকোটের রশি খোলা। তার দেবর তো বেশ ভালই রোমান্টিক আর বিয়ে আগেই এই লোকই কি না না না বলে বাড়ি মাথায় তুলেছে। নীলার বুকটা জানি কেমন খাঁ খাঁ করে ওঠে আহাসানের বড় ভাই ইমতিয়াজও আর্মিতেই আছে। এখন বর্তমানে জাতিসংঘের মিশনে সুদানে আছে। প্রতিটা মূহুর্তে নীলা ইমতিয়াজের অভাব অনুভব করে। বড় একটা নিশ্বাস ফেলে সে স্নেহাকে ডাকতে লাগল। কিছু ক্ষন ডাকাডাকির পরে স্নেহা ঘুম জড়ানো চোখে উওর দিল ” মা এমন করতেছ কেন আর কিছুক্ষন ঘুমাই না “। নীলা হেসেই ফেলল স্নেহার কথা শুনে পাগল মেয়েটার মনেই নেই যে উনি অন্যের ঘরে আছে। ” এই স্নেহা ওঠো না অনেক বেলা হল। মা ডাকছেন ” নীলা ডাকতে লাগল। ঘুম ভাংতেই স্নেহা তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। সে আছেটা কই। পরে খেয়াল পড়লো কালকে তো তার বিয়ে হয়ে গেছে উঠে বসতেই নিজের অবস্থা দেখে স্নেহা লজ্জায় শেষ এ কি অবস্থা তার। তাহলে রাতে কি কিছু হয়েছিল। না না তা হলে কি……. উফফ এই অবস্থায় সে কি স্নেহাকে দেখেছে জাষ্ট ভাবতে পারছে না স্নেহা কিছুই। তাড়াতাড়ি বালিশটা বুকের উপরে টেনে নিল। তাই দেখে নীলা মুচকি হেসে বলল ” এত লজ্জা পাচ্ছ কেন তোমার এই পাঠ আরো দেড় বছর আগে পড়া হয়ে গেছে আমার। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নাস্তা করতে আসো, মা অপেক্ষা করছে “। এই বলেই নীলা দরজা টেনে বেরিয়ে গেল। স্নেহা আজব হয়ে ভাবতেছে কখন কি হল। আর উনিই বা গেল কই? গোসল করে পাতলা একটা গোলাপি শাড়ি পরে মাথার চুল ছেড়ে ঘোমটা টেনে স্নেহা নিচে নেমেই তার শাশুড়ীকে সালাম করল। ফিরোজা খানম স্নেহাকে জড়িয়ে ধরলেন
___ ঘুম ভালো হয়েছে তো মা।
___ জি মা। ( মাথা কাত করে বলল স্নেহা)
___ বসো নাস্তা করে নেও তাড়াতাড়ি।
স্নেহা টেবিলে বসতেই অতশীও ঘুম থেকে উঠে এসে স্নেহার পাশে বসল। নীলাও ওদের সাথে নাস্তা করতে বসল। ” মা ভাইয়া কই” অতশী জিজ্ঞেস করল মায়ের দিকে তাকিয়ে। ” উনি দেশ রক্ষা করতে গেছে ” ফিরোজা বেগম চোখ কুঁচকে বিরক্তির সাথে বলল। ” ছোট ভাবি এই মেজর সাহেবরে যদি তুমি টাইট দিতে না পারছ তো খবর আছে কিন্তু বলে দিলাম ” স্নেহার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল অতশী। নীলাও সায় দিল ” এদের যদি কেউ বলে রাত বারোটায় সব ফেলে ডিউটিতে আসো তাও সমস্যা হবে না এদের “। স্নেহা সবার কথা মাথা নিচু করে শুনেই যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে কালকে সারারাতে মাত্র দুইটা লাইন কথা আর কিছুই বলে আর তাকে সবাই মিলে শাষন করতে বলতেছে । আল্লাহর দুনিয়ায় কারে যে কে কি বোঝায়।সকালে নাস্তা খেয়ে উপরে আসতেই স্নেহা দেখলো রুম পুরোপুরি গোছানো বিছানা খুব সুন্দর করে পাতা বাকি সব ফিটফাট। কালকে রাতে ঘরে আনার পরে স্নেহা ভাল করে রুম দেখতে পারে নি তাই এখন মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রুম দেখতে লাগল। একপাশে বিশাল এক বিছানা পাতা ঠিক জানালার পাশে। অন্য পাশে মেঝে থেকে উপরের ছাদ প্রায় ছুঁইছুঁই একটা বুক শেলফ যাতে ঠাসা বই। একটা ড্রেসিং টেবিল একটা ওয়্যারড্রয়ার আর বড় একটা কাঠের আলমারি। খুব ছিমছাম গোছানো ঘর। রুমের সাথে লাগোয়া বেলকনিটা আরো সুন্দর খুব বড় আর দুটো বেতের সোফা আছে বসার জন্য।
দুপুরের খাওয়া শেষ করে স্নেহার কেন জানি না খুব ইচ্ছা হল আহাসানের সাথে কথা বলার। নাম্বার বিয়ের আগেই পেয়েছিল কিন্তু কল দেওয়ার আগেই বিয়েটা হয়ে গেল। দুরুদুরু বুকে একবার ফোন দিয়ে আবার কাটে আবার কল দেয় আবার কাটে। এমন করতে করতে ফোন রেখেই দিল। মাথায় নিচে বালিশ দিয়ে শুয়ে শুয়ে ফোন দেখতে দেখতে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। আহাসান বাসায় এসে দেখি যেন পিনপতন নিরবতা কি ব্যাপার সব গেল কই। বুয়া এসে বলল যে যার রুমে যেয়ে শুয়ে পড়েছে। দুপুর দুইটায় ডিউটি শেষ হয় আহাসানের বাসায় আসতে আসতে তিনটা বেজে যায় এসেই সাধারণত দুপুরের খাবার বাসায় খায়। আস্তে আস্তে উপরে উঠে আসল সে। একবার ভাবল নক করবে নিজের রুমে পরক্ষনেই ভাবল কি দরকার নিজের রুমে নিজে যাবে তার আবার এত কাহিনী কিসের। দরজার লক আস্তে করে মোচড় দিতেই খুলে গেল তার মানে দরজা খুলেই ঘুমিয়েছে মহা রানী। রুমে ঢুকেই তার নজর গেল বিছানার উপরে হালকা গোলাপী শাড়ি পরনে ম্যাচ করা ব্লাউজ কাত হয়ে উল্টো পাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে স্নেহা। ফর্সা পিঠটা খুব ভাল করেই দেখা যাচ্ছে। কোমরের বেশ খানিকটা অংশ বের হয়ে আছে। কোলবালিশের উপরে একটা পা তুলে দিয়েছে স্নেহা ফর্সা পায়ের অনেক খানিই দেখা যাচ্ছে মোট কথা যে কোন ছেলেকে পাগল করে দেওয়ার জন্য এনাফ। কোন রকমে চোখ ফিরিয়ে তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করল আহাসান। নিচে নেমে এলো আবার নিঃশব্দেই ” বুয়া আমার খাবার দেও”এই বলেই টেবিলে বসল আহাসান। আসলে হুট করে বিয়েতে মোটামুটি সবার উপরেই চাপ গিয়েছে। বড় ভাইও দেশে নেই তাই সবাই অনেক খেটেছে। তাই এই অসময়েই সবাই অঘোরে ঘুম। খেতে খেতে হঠাৎ চোখ পড়লো ফোন স্ক্রীনে। বারোটা টেক্সট মেসেজ মেসেজগুলো যে নাম্বার থেকে এসেছে একসময় ওই নাম্বার থেকে শতে শতে মেসেজ আসতো আর এখন এর জন্য সারা মেয়ে জাতিকেই ঘৃণা করে আহাসান।ফোনটা অফ করে দিয়ে খাওয়া শেষ করে আবার উপরে উঠলো সে। তখনও স্নেহা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আহাসান যেয়ে আস্তে করে মেয়েটার পাশে শুয়ে পড়লো আর ভাবতে লাগল কি করেছিল সে যে তার সাথে এতবড় প্রতারণা করল রিনি। চোখ খুলে চারপাশে অন্ধকার দেখলো স্নেহা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল যে সে আছেটা কই? পাশ ঘুরতে যাবে এমন সময় দেখলো…………
চলবে
অন্যরকম ভালবাসা
মারিয়া আফরিন নুপুর