অন্যরকম ভালবাসা পর্ব ৪

0
983

অন্যরকম ভালবাসা
৪র্থ পর্ব
মারিয়া আফরিন নুপুর

” স্নেহা চোখ খুলবে না একদম ” হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে বলল আহসান। ” কেন কি হয়েছে বলবেন তো নাকি ” স্নেহা পাল্টা প্রশ্ন করল। একটু পরেই স্নেহার চোখ থেকে হাতটা সরে গেল। সামনে দেখতে পেল শফিক সাহেব মানে স্নেহার বাবা। বাবাকে সামনে দেখতে পেয়েই স্নেহা জড়িয়ে ধরল। আসলে আহসান দূর থেকেই শফিক সাহেবকে দেখেছিল তাই স্নেহাকে সারপ্রাইজ দিতেই চোখ চেপে ধরেছিল।
___ ” কি রে মা কেমন আছিস”
গাঢ় এক স্বরে বলল শফিক সাহেব। মেয়েকে এমন করে কাছে পেয়ে যাবেন ভাবতেই পারেন নি উনি।
___ ” এই তো বাবা, ভাল আছি। তুমি কেমন আছো মা কই? ওষুধ খাচ্ছ তো ঠিক করে ”
এক নিঃশ্বাসে প্রশ্ন করে গেল স্নেহা। মেয়ে অবস্থা দেখে শফিক সাহেব বললেন,
___ ” আরে মা হইছে তো থাম থাম। এদিকে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। সকালে হাঁটতে পারি নাই তাই এখন একটু নিরিবিলি দেখে হাঁটতে আসলাম। তোর মা আছে ভালই। তোরা এখানে বুঝি ঘুরতে এসেছিস”?
শফিক সাহেব প্রশ্ন করলেন। স্নেহা লজ্জায় মাথা নোয়ালো। স্নেহাকে উদ্ধার করল আহসান এসে।
___ ” আসলে বাবা একটু ঘুরতে এসেছিলাম। আমিই জোর করে স্নেহাকে নিয়ে এসেছি”।
হেসে বলল আহসান।একটু সময় কথাবার্তা বলে শফিক সাহেব বিদায় নিলেন। স্নেহা আর আহসান বারবার বলার পরেও উনি চলে গেলেন। একটু পরেই অন্ধকার হয়ে আসলো। ওরা দুজনেও গাড়িতে উঠলো বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য। সারাপথ কেমন জানি চুপ করে রইল স্নেহা কেন জানি না খুব ইচ্ছা করছিল ওর বাবার কাছে যেতে। বাসায় ঢুকেও চুপ করে রইল অনেক ক্ষন। ফিরোজা খানম ইশারায় ছেলের কাছে জিজ্ঞেস করলেন ব্যাপার কি? আহসান ইশারা দিয়ে মানা করল কিছু বলতে। কেন জানি না মনে হল ওর স্নেহাকে একটু একা থাকতে দিক। মেয়েটার মুখ এত অন্ধকার কখনও দেখে নাই। রাতে কোনরকমে নাকে মুখে গুঁজে স্নেহা এসে চুপ করে শুয়ে পড়ল। আহসান এসে দেখলো রুমের লাইট অফ। লাইট না জ্বালিয়েই চুপ করে বারান্দায় যেয়ে বসল। কেন জানি না আহসানেরও অসম্ভব খারাপ লাগছিল যে স্নেহা কেন এত মন খারাপ করল।

___ ” স্নেহা ঘুমিয়েছ “।
___ ” হুম”
___ ” ঘুমালে মানুষ উওর দেয় কি করে ” অবাক হয়ে প্রশ্ন করল আহসান।
___ ” আমি ঘুমিয়েও কথা বলতে পারি ” পাশ ফিরে শুতে শুতে বলল স্নেহা।
___ ” তাড়াতাড়ি উঠে শাড়ি ঠিক করে নেও ” আহসান বলল।
___ ” এত রাতে যাবেন কই”?
___ যেখানেই যাই না কেন আমার সাথে যেতে তো সমস্যা নেই তাই না “!সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
উঠে শাড়িটা ঠিক করে স্নেহা আহসানের পিছু পিছু চলল। দেখলো আহসান ছাদে যাচ্ছে। আসলে এ বাড়িতে আসার পরে ছাদে যাওয়া হয় নি কখনোই। ছাদে এসেই দেখল আহসান এক কোনায় যেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক চোখে ছাদ দেখতে লাগল স্নেহা। খুব সুন্দর ছাদ এবাসার। ধীর পায়ে আহসানের কাছে এগিয়ে আসল স্নেহা। ওর দিকে তাকিয়ে আহসান বলল,
___ ” চাঁদটা দেখেছ তুমি “?
স্নেহা মুখ উঁচু করে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখল মস্ত বড় এক প্লেটের সাইজের চাঁদ। যা দেখে শুধু মুগ্ধই হতে হয় অন্য কিছু না।স্নেহা আহসানের কাধেঁ মাথা দিয়ে চাঁদ দেখতে লাগল। ওদিকে ঝিরিঝিরি বাতাসে স্নেহার চুল উঠে উঠে আহসানের মুখে পড়তে লাগল। টের পেল চুল থেকে শ্যাম্পুর এক মাতাল করা ঘ্রান আসতেছে যা পৃথিবীর যে কোন পারফিউম এর ঘ্রানকে হার মানায়। কেন জানি না আহসানের মনে হতে লাগল এই মেয়েটা আর অন্য দশটা মেয়ের মত না একদম আলাদ। যেন ঠিক৷ ওর জন্যই বানিয়েছেন। মনে অনেক কিছু বলার থাকলেও কেন জানি আহসান কিছুই বলতে পারে না। কেন জানি না ওর মনে হল স্নেহা কেমন জানি হাত পা ছেড়ে দিচ্ছে। চুল মুখের উপর থেকে আলতো করে সরিয়ে দেখলো স্নেহা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিছুই না করে স্নেহাকে কোলে তুলে নিল আহসান। আসলে ঘুমালেই মেয়েদের খুব মায়াবি লাগে। চাঁদের আলো এসে ফর্সা মুখটার পড়ে মায়া যেন আরো হাজার গুনে বাড়িয়ে তুলেছে। চোখ যেন ফেরানো যায় না এত এত মায়া ও মুখে।

স্নেহাকে নিয়ে নিচে নেমে এসে রুমে যেয়ে ওকে শুইয়ে দিল বিছানায়। আহসান ভাবল দরজা তো লাগাবোই তার আগে একটু স্নেহাকে দেখে নিক। আসলে এই মেয়ের থেকে যতই দূরে থাকতে চেষ্টা করতেছে কেন জানিনা ততই কাছে চলে আসতেছে এমন ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে আহসান নিজেও জানে না। সকালে নীলা এসে দেখলো প্রায় সাতটার কাছাকাছি বাযে। স্নেহা বা আহসানের কোন খবর নেই। এতক্ষনে তো আহসানের উঠে যাওয়ার কথা। আর আজ যেহেতু স্নেহার ডিউটি আছে ওর ও রেডি হয়ে যাওয়ার কথা। নীলা আস্তে আস্তে উপরে ওঠে ওদের ডাকতে।রুমে নক করে প্রথমে আস্তে আস্তে পরে বেশ জোরে জোরে। দরজার শব্দে আহসানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু কেন জানি না আহসানের মনে হচ্ছিল ওর বুকে বেশ ভার। কিন্তু ও তো উপুড় হয়ে ঘুমায় তাহলে বুকের উপরে ভার আসল কি করে। উঠতে যেয়ে টের পেলো ওর পিঠের উপরে স্নেহা কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে বাচ্চাদের মত। স্নেহাকে আস্তে করে বিছানায় রেখে খালি গায়েই আহসান দরজা খুলে দিল। নীলা তো হেসেই খুন ওই অবস্থা দেখে বলল
____ ” কি ব্যাপার আমার দেবরের গায়ের কাপড় কি বউ নিয়ে গেছে নাকি ”
___” ভাবি খালি সব ব্যাপারে বেশি করো “.।
___ ” আজকে তোমার অফিস নেই। স্নেহা তো শুনলাম হসপিটাল এ যাবে “।
এই বলেই নীলা ঘরের ভেতরে উঁকি দেওয়া শুরু করল।
___ ” ভাবি ঘরের মধ্যে মুক্তা মনি নেই যে তুমি উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখবে “।
মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল আহসান। নীলাও হাসি ঝুলিয়ে বলল
___ ” বউ নিয়ে ১৫ মিনিটের মাথায় নাস্তা করতে এসো না হয় মা কে পাঠিয়ে দেবো উইত অতশী।
এই বলেই নীলা চলে গেল। আহসান ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলল আর মনে মনে ভাবল মেয়ে মানুষ বড়ই ঝামেলার। মন বোঝা বড়ই দ্বায়। স্নেহাকে ডেকে ঘুম থেকে তুলল সে। তাড়াতাড়ি দুই জনেই রেডি হয়ে নিচে নামল তারা। নাস্তার টেবিলে তখন সবে বসা ধরেছে সবাই। স্নেহা আর আহসানকে দেখে অতশী হাসতে হাসতে বলল
___ ” জাঁহাপনা আর তার রাণির আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম ”
___ ” বাহ, বেশ বলেছ তো অতশী ”
নীলা হেসে বলল।
___ ” বড় ভাবী অতশী অলওয়েজ রাইট ” মাথার চুল এপাশ থেকে ওপাশে নিতে নিতে বলল অতশী। আহসান টিপ্পনী কেটে বলল,
___ ” হুম, অতশী অনেক রাইট তাই কালকে তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে সারারাত মায়ের সাথে ঘুমিয়েছে”।
___ ” দেখ ভাইয়া ফালতু কথা একদম বলবা না বলে দিলাম ”
___ ” ফালতু কথা কই বললাম শুনি একটু।তুই হ্যাঁ বা না তে জবাব দে তো “।
রাগে ফুলতে ফুলতে কোন কথা না বলে অতশী খেতে লাগল। ভাইবোনের এই দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি নীলার আর স্নেহা বেশ ভালই ইনজয় করল। খাওয়া শেষে আহসান চলল স্নেহাকে হসপিটালে ড্রপ করতে। গাড়ি যখন জ্যামে আটকে পড়লো সিগনালে তখন স্নেহা দেখলো ঠিক ওদের গাড়ির পাশেই একটা বাইক এসে থামলো। একটা তার ওয়াইফ আর বেবিকে নিয়ে যাচ্ছে বাইকে চড়ে। দেখে যেন মনটাই জুড়িয়ে গেল। ইসস ওর যদি একটা বাবু থাকত কত্ত মজা হতো। ওদিকে আহসান দেখলো নীলা অনেকক্ষন একমনে বাইরে দেখছে। সিগনাল ছাড়লেই বাইকটা পাশ কেটে সামনে চলে গেল। স্নেহা মনে মনে এক বিশাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামতেই স্নেহা গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। একটু সামনে এগিয়েই আবার পিছু ফিরলো। একদম আহসানের কাছাকাছি এসে বলল,
___ ” চলুন না আমার হাসপাতালে ভাল লাগবে খুব ”
___ ” অন্য একদিন আসবো ” এই বলেই চলে গেল আহসান গাড়ি নিয়ে। স্নেহাও তার কাজ করতে লাগল। দুপুরের লাঞ্চ টাইমে হঠাৎই পিয়ন এসে বলল ” ম্যাডাম আপনার সাথে একজন দেখা কর‍তে চায়”। স্নেহার চোখ কুঁচকে উঠলো মনে মনে ভাবল এই ভর দুপুরে কে দেখা করতে আসলো তাও আবার হসপিটালে। ” কে এসেছে মজিদ ভাই ” স্নেহা প্রশ্ন করল। মজিদ উওর দিল “ম্যাডাম কে এটা তো চিনিতে পারি নাই তয় নাম কইল…………

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here