গল্প – হারিয়ে খুঁজবে আমায়
পর্ব – ০৪
লেখিকা – সানজিদা ইসলাম
তারপর সে বাসায় রওনা দেন অনু সাথে কথা বলতে হবে। মানুষ তো দুটো বিয়ে করে সংসারও করে। হয়তো আগের মত ভালবাসতে পারবে না কিন্তু চেষ্টা করবে।
ইরা এবং সে আলাদা আলাদা থাকবে। তাদের সব চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করবে। সে দুজনের সাথে সুখে থাকবে। তাহলে ইরাকে পাবে আর কোন অনু অন্য কারো কাছে যেতে পারবেনা তার হয়েই থাকবে।
কথাটা ভেবেই শাফিনের ভালো লাগছে।আগে অনুকে মানাতে হবে। তারপর সে ইরার সাথে কথা বলবে এই বিষয়ে। তার বিশ্বাস অনু মেনে নেবে তার সব শর্তে। কারণ অনু তাকে ভীষন ভালবাসে। এখন চিন্তা শুধু ইরাকে নিয়ে।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সে ঘরে ঢুকে যায় দরজা যেভাবে খোলা ছিল সেভাবেই খোলা আছে তাই ঘরে ঢুকতে সমস্যা হয়নি।
তারপর সে অনুকে খুঁজতে থাকে ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে হয়তো অনু শাওয়ার নিচ্ছে। তাই সে অপেক্ষা করতে থাকে অনুর।
অপরদিকে অনু এক ঘন্টা যাবত শাওয়ারের নিচে কান্না করছে আর ভাবছে তার জীবনটা তো অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল তাহলে কেন এমন করল শাফিন তার সাথে।সব প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হবে তারপর সে যাবে।
আর বেশিক্ষণ থাকল না সে কারণ এতে তার বাচ্চার সমস্যা হতে পারে বাচ্চাটার তো কোন দোষ নেই তবে সে কেন কষ্ট পাবে।
আর কাঁদবে না সে। এই তার শেষ কান্না বাচ্চাটার জন্য হলেও তাকে বাঁচতে হবে। বাচ্চাটা না থাকলে হয়তো সে এতক্ষণ মরেই যেত। বাচ্চাটাই হচ্ছে বাঁচার একমাত্র অবলম্বন সে তাকে আঁকড়ে ধরে সারা জীবন থাকতে পারবে তাকে মানুষ করার জন্য শাফিনের মত বাবার দরকার নেই কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো শাফিন খাটের উপর বসে তার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সে তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আয়নার সামনে বসে চুল মোছায় মনোযোগ দিল।
বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ এ সেদিকে তাকায় শাফিন ,অনু মাত্র গোসল থেকে বের হয়েছে চুল দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে মলিন চেহারাটা স্নিগ্ধ হয়ে আছে। ঘোরের মাঝেই সে উঠে এসে অনুকে পিছন থেকে আকরে ধরে ওর ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
আচমকা এমন স্পর্শে অনু থ বনে গেল দেখল শাফিন তার চুলে মুখ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে দ্রুত উল্টো দিকে ঘুরে শাফিনকে বেশ জোরে ধাক্কা দিলো আর বলতে লাগলো,
অনু: লজ্জা করে না আপনার এতকিছুর পরেও আপনি আমাকে স্পর্শ করছেন। মেয়ে মানুষের শরীর দেখলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেন না তাইতো?
অন্যর ধাক্কাতে শাফিনের হুশ ফিরে। আর তার কথাতে শাফিনের রাগ উঠে যায় তারপরেও নিজেকে যথেষ্ট সংযত রেখে সে অনুকে বলে,
শাফিন: দেখো অনু কালকের জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ভুলটা আমারই ছিল। ইরার কথা তোমাকে আগে বলা উচিত ছিল আর আমার মনে হয় আমি এখন আর তোমাকে ভালোবাসি না। আমি ইরাকে ভালোবাসি তাই জোর করে সম্পর্ক রাখার কোনো মানেই হয় না।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি না” কথাটা শুনে অনু কান্নায় ভেঙে পড়ল আর শাফিনকে প্রশ্ন করল।
অনু:কি দোষ ছিল আমার যার কারণে আপনি আমার সাথে এমন করলেন।কি কমতি রেখেছিলাম আমি। সব সময় আপনার চাওয়া-পাওয়াকে প্রধান্য দিয়েছি
আপনার ভালোলাগা খারাপ লাগা নজরে রেখেছি। আপনার সব কাজে আপনাকে একজন ভালো বন্ধুর মতো সাপোর্ট করেছি। তাহলে কেন আপনি এমন করলেন? কেন শাফিন কেন আমাকে এত বড় শাস্তি দিলেন?
আপনার এক কথায় আপনাকে বিশ্বাস করে নিজের বাবা মায়ের ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে আপনার হাত ধরে আপনার সাথে চলে এসেছি বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলেন?
ভাববেন না কালকে আপনার ওইসব কথা শুনেও আপনার সাথে সংসার করবো বলে পরে আছি শুধুমাত্র প্রশ্নের উত্তরগুলো জন্যই এখানে থাকা।
একবার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে দিন আর কখনোই আপনার সামনে আসব না চিরদিনের জন্য চলে যাব আপনার জীবন থেকে।
শেষ কথাটা শুনে শাফিন মাথা উঁচু করে অনুর দিকে তাকাল।
শাফিন: আমার পুরো কথা টা তো একবার শোন..
অনু: না আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে,
এবার শাফিন রেগে যায় অনু কখনোই তার কথা আগে পুরোটা শুনতে চায় না কথার মাঝে কথা তোকে বলতেই হবে। আগে পুরো কথাটা তো শুনবে তা না আগে তার প্রশ্নের জবাব দাও।তাই শাফিন রাগের মাথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে দেয়,
শাফিন: কি আছে তোমার না চেহারা না কোন যোগ্যতা শুধু পারো কতগুলো অখাদ্য রান্না করতে।সারাদিন শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়াও।কোন বড় পার্টিতে নিয়ে গেলে বুড়ো সেজে বসে থাক। আমার বন্ধুদের সাথে ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলোনা কতটা বিব্রত হতে হয় আমাকে তোমার জন্য জান। যখন আমার বন্ধুরা বলে তোর বউটা বড্ড সেকেলে।You don’t even know how much I feel embarrassed because of you.
আমার বিষয়ে খেয়াল রাখা কথা বলছো তো?তোমার আর সারাদিন বাসায় কাজই বা কি থাকে তাইতো আমার ভালো লাগা খারাপ লাগার বিষয়ে নজর রাখো। সারাদিন বাসায় থাক আর আমার অন্ন ধংস কর। প্রতিদিন রাত্রে বাসায় আসলে কানের সামনে মশা মাছির মত ভন ভন করতে থাকো। আজকে একটা হয়েছে সেটা করেছে হ্যান ত্যান। ফ্রাইডে হলে ঘুরতে যাবো রিকশায় চড়ব যত লো ক্লাস মেন্টালিটির আদিখ্যেতা।
দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে চাও না সামান্য রোমান্স করতে গেলে পালাই পালাই করো। ইউ ডোন্ট এভেন স্যাটিস্ফাইড মি ইন্টু বেড। তোমার বেড পারফরম্যান্সও অতো ভালো না।আর ইরাকে দেখো যেন সাক্ষাৎ একজন মডেল যেমন রূপ তেমনি গুন একজন স্বাধীন নারী এমন মেয়ে আমি সবসময় চাইতাম আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে। ইভেন তার বেড পারফরম্যান্স তোমার থেকে হাজার গুণ ভালো। বেডে সে আমাকে তোমার থেকে ভালো সাপোর্ট করে।ঠিক এইসব কারণে , এসব কারণে আমি তোমার কাছ থেকে মুক্তি চাই শুনতে পেরেছ তুমি এখন আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও তোমার ওই মুখ কখনো আমাকে দেখাবে না। ডিসকাস্টিং..
বলেই শাফিন কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায়। তার মাথা ঠান্ডা করতে হবে কি বলতে চেয়েছিল আর কি কি হয়ে গেল।উফফফ,
অন্যদিকে অনু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি বলে গেল শাফিন তাকে ছি ছি । সে বসে বসে অন্ন ধংস করছে। সে শাড়ি পড়ে তাই সে সেকেলে।সে শাফিন কে বিছানায় সুখ দিতে পারেনি? নিজের ওপর ঘৃনা হচ্ছে এই লোকটাকে সে এতদিন ভালবেসেছিল। একসাথে থেকেছে আর এত বিশ্বাস করেছে আর সে কিনা তাকে এসব কথা বলে গেল। অনুর ভালোবাসাগুলো তার কাছে আদিখ্যেতা মনে হয়।
তার চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়ছে। চোখের পানি বাধ মানছে না সে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে আর এক মুহূর্ত থাকবে না সে এখানে।
কোন কিছু না নিয়ে সে বাসা থেকে বের……
………….
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]
#হারিয়ে_খুঁজবে_আমায় #সানজিদা_ইসলাম #গল্পের_ডায়েরি #Sanjida_Islam #GolperDiaryOfficial