হারিয়ে খুঁজবে আমায় পর্ব ৩

0
669

গল্প – হারিয়ে খুঁজবে আমায়
পর্ব – ০৩
লেখিকা – সানজিদা ইসলাম

তারপর অনু কে কোলে নেয় শাফিন।অনুর গায়ে হাত দিয়ে শফিন বুঝতে পারে ওর গা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে।সে তাড়াতাড়ি তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় তারপর একটি পাত্রে হালকা গরম পানি এনে ঘা গুলো মুছে দিয়ে সেখানে ওষুধ লাগিয়ে দেয় ও আরেকটি বাটিতে পানি নিয়ে জলপট্টী দিতে থাকে।

বেশ কিছুক্ষণ জলপট্টি দেওয়ার পর অনু মিটমিট করে চোখ খুলে তাকায়। আর অনুর তাকানো দেখে শাফিন খাবার নিয়ে আসে আনুকে খাওয়ানোর জন্য। শাফিন অনুকে ডাকতে থাকে,

শাফিন:অনু এই অনু খাবার টা খেয়ে নাও। তারপর মেডিসিন নিতে হবে তো রে বাবা।অনু উঠো সোনা।

অনু:না না না অনু সোনা খাবে না। তুই পচা তুই ভাল না।এএএ.. আব্বু আমারে শাফিন্নায় মারছে এএএ..। তোর সাথে কথা নাই আরি।হুহ। আমি আমার বাবু কে বলে দিবো তার বাবা পচা।হুহ।

শাফিন জানে জ্বরের ঘোরে অনু নানান ধরনের কথা বলে। কিন্তু পরের দিন সকালে কিছু মনে থাকে না। কথাটা ভেবেই শাফিন মুচকি হাসল। এমনিতে আরো বেশি পাগলামি করে। কিন্তু আজকে হয়ত শরীর খারাপ থাকায় আস্তে আস্তে কথা বলছে।

শাফিন: ওকে এই দেখ আমি কান ধরে ক্ষমা চাচ্ছি।আর কখনো তোমাকে মারবো না। এবার খাবারটা খেয়ে নাও। খাবার খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে নইলে তো জ্বর কমবে না।

অনু: আমরা তোকে কখনো ক্ষমা করব না। না না না। তুই পচা এমন পচা বাবুর পাপা আমাদের লাগবে না।

হঠাৎ অনু কান্না করতে লাগলো, অনুর কান্না দেখে শাফিন ব্যস্ত হয়ে পরলো।অনুর কান্নায় জেন শাফিনের বুক ফেটে যাচ্ছে।

শাফিন: কি হয়েছ কান্না করছ কেন আমি সরি বললাম তো। প্লিজ কান্না করে না তুমি আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও কিন্তু কান্না করো না। তোমার কান্না সহ্য করতে পারিনা।

কথাটা বলেই শাফিন অনুকে বুকে টেনে নিল।অনুও তাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।আর বলে

অনু: আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা করব না শাফিন। সারা জীবনের জন্য দূরে চলে যাব আমরা। হারিয়ে খুঁজবেন আমায়। কিন্তু তখন খুব দেরি হয়ে যাবে। তারপর শাফিনকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।

আমার শরীর খুব ব্যাথা করছে শাফিন। আমি সহ্য করতে পারছি না।(কান্না করতে করতে)

অনুর প্রত্যেকটা কথা শাফিনের বুকে তীরের মত বিদল”সারা জীবনের জন্য দূরে চলে যাব আমরা” কথাটা শাফিনের কানে বার বার বাজছে।

অনু কেন নিজেকে বার বার আমরা আমাদের বলছে? কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল জ্বরের ঘোরে হয়তো আবল তাবল বকছে।

তারপর সে অনুকে শান্ত করল,

শাফিন:ওকে চল..চলে যেও কিন্তু আগে খাবার টা খেয়ে নাও। খাবার খেয়ে মেডিসিন নিলে ব্যথা কমে যাবে।এই দিকে এসো আমি খাইয়ে দি।হা কর,

শাফিনের কথা শুনে অনু বাধ্য মেয়ের মতো খাবার খেয়ে নিল। তারপর মেডিসিন নিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো।

শাফিন প্লেটগুলো রেখে রুমে এসে দেখে অনু ঘুমিয়ে আছে তাই সেও কি যেন মনে করে অনুকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। হয়তো এইটা শেষ জরিয়ে ধরা।আর শেষ ঘুম তার মায়াবতীর সাথে।

সারা জীবনের জন্য দূরে চলে যাবো কথাটা বার বার কানে বাজছে তার কেন জানি কথাটা সহ্য হচ্ছে না।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল সে নিজেও জানে না।

সকালে,

সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু নিজেকে ভারি ভারি অনুভব করল।পাশে ফিরে দেখা শাফিন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে ছেলেটাকে কত নিষ্পাপ দেখায়।হঠাৎই কালকের ঘটনা কথা মনে পরল অনুর।

ধাক্কা দিয়ে শাফিরকে নিজের থেকে সরিয়ে দিল। মাথাটা ঝিমঝিম করছে, শরীর টা ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। সারারাত সে শাফিন এর সাথে ছিল কথাটা ভাবতেই অনুর গা গুলিয়ে উঠলো।

সে কোনরকম দৌড়ে ওয়াশরুমে গেল আর গরগর করে বমি করে দিল।অনুর ধাক্কায় শাফিনের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল।অনুর ধাক্কায় শাফিন অপমানিত বোধ করলো। আগে তো প্রত্যেকদিন সে অনুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে তখন ধাক্কা দেয়নি।

অনুর বমি করা দেখে সে ভাবল হয়তো জ্বরের কারণে বমি হচ্ছে।তাই সে উঠে ওয়াশরুমে গেল অনুকে ধরতে কিন্তু তার আগেই আনু তাকে হাত উঠিয়ে ধরতে মানা করে দেয়। তাই সে সেখান থেকে বাড়ির বাইরে চলে যায়।

অনু ইগনোরেন্স সহ্য হচ্ছেনা শাফিনের। হঠাৎ সে ভাবতে লাগবো সে কি অনুকে ছাড়া থাকতে পারবে? একবার অনুর সাথে কথা বলতে হবে। সে অনুকে ডিভোর্স দিবে না সেও থাকবে ইরাও থাকবে। কিন্তু সে থাকবে বন্ধু হয়ে। কিন্তু ইরা কি ব্যাপারটা মেনে নেবে? আর অনুই বা মানবে কেন বন্ধু হয়ে থাকতে। সেও তো একজন লাইফ পার্টনার চায়।

তাহলে ডিভোর্স এর পরে কি আবার বিয়ে করবে।অন্য কেউ অনুর উপর অধিকার খাটাবে কথাটা ভাবতেই কেন জানো শাফিনের রাগ উঠে গেলে। জেন কেও তার ভেতর থেকে বলছে অনু শুধু তার অনুর উপর অধিকার শুধুই তার।

তারপর সে বাসায় রওনা দেয় তার অনুর সাথে কথা বলতে হবে…….
………….
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]

#হারিয়ে_খুঁজবে_আমায় #সানজিদা_ইসলাম #গল্পের_ডায়েরি #Sanjida_Islam #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here