#Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ২৭
লেখাঃ Israt Jahan
.
.
মেহেরঃ সকালে ওনার মুখটা দেখে ঘুম থেকে উঠতে চাইলাম আর উনি এতো জলদি শয্যা ছেড়ে উঠে গেছে?
মেহের শয্যা থেকে ওঠার সময় শরীরে একটু ব্যথা অনুভব করলো।যদিও গতরাত্রে মেহের ঘুমিয়ে যাওয়ার পরও ফালাক আরো একবার শরীরে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছিল।তারপর জ্বরটাও হালকা ছিল। মেহের ঘুম থেকে জেগে যাওয়ার আরো অনেক আগে যখন ফজরের আজান ওর কানে আসে তখন নিজেকে পবিত্র করে নামাজ আদায় করে ফালাক কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।মেহের আস্তে আস্তে গোসলাগারে হেঁটে গিয়ে গোসল করে নিয়ে কক্ষে আসতেই ফালাক কক্ষে প্রবেশ করে।ওর দিকে তাকিয়ে কিছুসময় ওর মাথা থেকে পা অবদি দেখে কিছু না বলে কিছু একটা খুঁজতে শুরু করলো কক্ষে।
তারপর না পেয়ে আবার বেরিয়ে গেলো।মেহের নামাজ পড়ে কিছুসময় জায়নামাজে বসে থাকলো।ভাবছে পাকঘরে যাবে কিনা।শরীরটা এখনো দুর্বল মনে হচ্ছে।এসব ভাবতে ভাবতেই জায়নামাজের উপরেই ঘুমিয়ে পড়েছে।গোসল করার পর শরীরে জ্বরটা আবার চলে এসেছে।
ফালাক আজ দূরের কোনো রাজ্যে যাবে তাই দ্রুত প্রাতঃভোজন সেড়ে কক্ষে এসে দেখে মেহের জায়নামাজের উপর ঘুমিয়ে আছে।প্রথমে ভাবে যে ডেকে দেবে যাতে বিছানাতে গিয়ে শোয়।তারপর আবার অন্যকিছু ভেবে আর ডাকলোনা।পোশাক পরিবর্তন করে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আবার পিছু ফিরে আসে মেহেরের কাছে।
ফালাকঃ মেহের?শুনতে পাচ্ছো?মেহের?
মেহেরের গায়ে গাত দিতেই ফালাক বুঝতে পারলো যে আবার শরীরে জ্বর এসেছে।তারপর ওর গালে হাত দিয়ে ওকে ডাকতে থাকল-” মেহের এখান উঠো।”
মেহের চোখ খুলে তাকিয়ে ওকে বলল-” কিছু বলবেন?”
ফালাকঃ বিছানাতে গিয়ে ঘুমাও।
মেহেরঃ না আমি আর ঘুমাবনা।চোখটা লেগে এসেছিল একটু এই আর কি।
ফালাক আর কোনো কথা বাড়ালোনা।শুধু যাওয়ার সময় বলে গেল-” খাওয়া শেষে পথ্যগুলো সেবন করলে জ্বর কমে যাবে।”
ফালাক যাওয়ার পর দুজন দাসী খাওয়ার নিয়ে কক্ষে এল।
১ম দাসীঃ কেমন বোধ করছেন রানীসাহেবা?
মেহেরঃ এইতো আছি বেশ।
১ম দাসীঃ সম্রাট বলল যে আপনার নাকি জ্বর আছে শরীরে।তাই কবিরাজের থেকে আমাদের পথ্য নিয়ে আসতে বলল।আর খাওয়ারটা ও আপনাকে কক্ষে দিয়ে যেতে বলল।
মেহেরঃ তাই?
২য় দাসীঃ জ্বী রানীসাহেবা। সম্রাটের মনে আর সেই আগের মত কোনো রাগ অভিমান নেই হয়তো।না হলে……
মেহের ওর কথা থামিয়ে দিয়ে বলল-” না হলে সে নিজে আমাকে খাইয়ে দিয়ে যেতো।তার মনে এখনো অভিমান জমে আছে।তাই সে আগের মত আর আমার সাথে কথাও বলেনা।”
২য় দাসীঃ আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে রানীসাহেবা।আমাদের সম্রাট সত্যি আপনাকে খুব ভালোবাসেন।
মেহেরঃ সত্যি?
২য় দাসীঃ হ্যা রানীসাহেবা সত্যি।
মেহেরঃ উনি কি আজও গ্রামে গেলেন?
১ম দাসীঃ না রানীসাহেবা।আজ অন্য এক রাজ্যে গেছেন ওই রাজ্যের রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।
মেহেরঃ কি জন্য গেছেন জানো কিছু?
১ম দাসীঃ না রানীসাহেবা।এগুলো আমরা জানব কি করে?আপনি আসুন খেয়ে নিন।
মেহের সকালের খাওয়া শেষে দুপুরের দিকে পাকঘরে গেলো।আজকাল ইরানি বড্ড সময় দেয় দাসীদের সঙ্গে পাকঘরে এসে।কিন্তু মেহেরের সঙ্গে কোনো কথা বলেনা।আর দাসীসের সঙ্গে কথা বলার একটামাত্র বিষয় হচ্ছে ফালাক।ফালাকের পছন্দ অপছন্দ এসব ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয় ও। আবার ফালাক আর মেহেরের সম্পর্ক ঠিক কেমন এখন সেইসব সম্পর্কে ও জানতে চাই।প্রাসাদের অতিথি বলে দাসীগুলো ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারেনা।না হলে ওরা বলে দিতো” সম্রাট আর রানীসাহেবার সম্পর্ক নিয়ে আপনার এত মাথা ব্যথা কিসের?”দুপুরের পর ফালাক প্রাসাদে ফিরল।কিন্তু চোখ মুখের অবস্থা খুব খারাপ দেখা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে আছে আর কিছুটা হতাশ ও।মেহের কক্ষে ছিল।ফালাক কে কক্ষে আসতে দেখে দ্রুত লেবু চিনির শরবত নিয়ে এসে ওর সামনে রাখল।ফালাকের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।বাহিরের জামা কাপড় খুলে গোসলাগারে চলে গেলো।গোসল শেষ করে কক্ষে এসেও মেহেরের সঙ্গে কোনো কথা বললোনা। মেহের দাসীদের খাবার নিয়ে আসতে বলেছে। খাবারগুলো ওর সামনে রাখতেই ফালাক দাসীদের বলল-” আমি কি তোমাদের খাওয়ার আনতে বলেছি?এগুলো নিয়ে যাও।আমি খেয়ে এসেছি।”
দাসীগুলোর সঙ্গে মেহের ও কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো।ও বের হতেই মিরাজ কক্ষে ঢুকল।ওকে দেখে মেহের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল।
মিরাজঃ সম্রাট?
ফালাকঃ হ্যা মিরাজ বসো।
মিরাজঃ আপনি এত দুশ্চিন্তা না করে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করুন।তারপর না হয় চিন্তাভাবনা করবেন।
ফালাকঃ আমার বিশ্রাম নেওয়া হবেনা এই চিন্তাগুলো থেকে মুক্ত হতে না পারলে।
মিরাজঃ আপনি কি কিছু ভেবেছেন?
ফালাকঃ ভাববার সময় পেলাম কই?সম্রাট শাহজাহানের তো কোনো কথায় যুক্তিসংগত নয়। নদীপথ যদি উনি এভাবে ভাগাভাগি করে রাখেন তাহলে আমার রাজ্যের প্রজারা যে অনেক অসুবিধাতে পড়ে যাবে।আর নদীপথ কি ভাগাভাগি করার মত কিছু?
মিরাজঃ ওটা যে সীমানার মাঝে পড়েছে।যার জন্য উনি এমন কথা বলছেন।আর উনি জানেন যে এই নদীপথ ভাগাভাগি হলে সব থেকে বেশি সমস্যাতে পড়বে প্রজারা।আর আপনার বাণিজ্যতেও সমস্যার সৃষ্টি হবে।
ফালাকঃ উনি আমাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই যুদ্ধে নামার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
মিরাজঃ অন্য একটি শর্ত ও আপনার জন্য উনি খোলা রেখেছেন।সেটা তো আপনি শুনলেন-ই।
ফালাকঃ এখানেই তো সমস্যা।নতুন করে আবার বিবাহ আমি আর করতে চাইছিনা।আর উনি আমার সাথে ওনার কন্যার বিবাহ দিতে চান কি করে আমি সেই কথায় ভাবছি।উনি কি আমার সম্পর্কে অবগত নন।
মিরাজঃ অবগত বলেই উনি আপনার সঙ্গে ওনার কন্যার বিবাহ দিতে চাইছেন।কারণ পাশ্ববর্তী প্রায় সকল রাজ্যের রাজা জানেন আপনার বর্তমান সম্পর্কে।এবং সকলের কাছে আপনি খুব প্রশংসিত।আর তাছাড়া ওনার এই প্রস্তাব একদম অযৌক্তিক নয় কিন্তু।আপনার রাজ্য আর তার প্রজাদের জন্য হয় আপনাকে যুদ্ধে নামতে হবে নয়তোবা ওনার কন্যাকে বিবাহ।
ফালাক একদম চুপ হয়ে গেল।অনেকবড় চিন্তা ওর মনে গেড়ে বসেছে।কোনো সিদ্ধান্তে আসা খুবই দুষ্কর।মেহের সবথকথায় শুনলো।চোখের কোণ থেকে পানি পড়তে ও শুরু করেছে।ওখান থেকে দাসীদের কক্ষে চলে এল।দাসীরাও সবটা শুনে এখন হতাশার মাঝে সবাই।মেহের বলল-” আমি সবটা আমার সৃষ্টিকর্তার উপরেই ছেড়ে দিয়েছি।কারণ আমি এটা বিশ্বাস করি যে উনি যা করেন তা অবশ্যই আমাদের কোনো মঙ্গলের জন্য করেন।” মিরাজ ও ওর স্ত্রী আর বোনের কাছে এই কথাগুলো গল্পের মধ্যে বলে ফেলল।বিকালে ফালাক রাজসভাতে বসে সবার সঙ্গে পরামর্শ করল কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য।কিন্তু কেউ কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারলোনা।রাত্রে ফালাক বিছানার উপর বসে রাজসভাতে সকলের বলা সিদ্ধান্তে কথা চিন্তা করছে।প্রায় সবাই এক কথা বলেছে যে সম্রাট শাহজাহানের কন্যাকে বিবাহ করার কথা।কিন্তু ফালাকের সেই সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি।আর এদিকে যুদ্ধে নামলে একবার হেরে গেলে নদীপথে যাতায়াত-ই বন্ধ হয়ে যাবে।এমন সময় কক্ষে মেহের প্রবেশ করল।ফালাক ওর পায়ের আওয়াজ পেয়ে ওর দিকে তাকাল।কিছুটা পলকহীন চাহনিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।অনেকটা ভাবনা ও আছে তার মাঝে।কিছু চিন্তা করছে ওর দিকে তাকিয়ে।মেহের প্রশ্ন করল-” কোনো সমস্যা সম্রাট?”ফালাক ওর কন্ঠ শুনে দ্রুত চোখের পলক সরিয়ে নিয়ে উত্তর দিলো-” না।” মেহের কিছুসময় চুপ থেকে মনে সাহস জুগিয়ে কথা বলা শুরু করল-” যদি অনুমতি দেন তো কিছু কথা বলতে পারি?” ফালাক গম্ভীরস্বরে বলল-” হুম।”
মেহেরঃ আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনার আর সেনাপতির কথা শুনে নিয়েছি দুপুরে।যার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।আপনি এখন একজন আদর্শ রাজা এই রাজ্যের।আপনার উপর এখন সকল প্রজারা নির্ভর করে।তাই তাদের জীবিকা নির্বাহে কোনো অসুবিধা হোক আপনি নিশ্চই এমন কিছু চাইবেন না।সম্রাট শাহজাহান অন্যায়ভাবে নদীপথ বন্ধ করে রেখেছে।নদী প্রাকৃতিক সৃষ্টির উপাদান।যার উপর প্রত্যেকেরই সমান অধিকার আছে।আর উনি এখন এই মুহূর্তে আপনার পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ নিয়ে এমন কিছু অযৌক্তিক প্রস্তাব রেখেছে আপনার কাছে।আপনি তার এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আপনার শুভাকাংখী কিছু প্রতিবেশী রাজ্যের রাজাদের এ বিষয়ে অবগত করে তাদের সঙ্গে নিয়ে সম্রাট শাহজাহানের সঙ্গে কথা বলেন।সবার বলা কথা উনি মেনে নিতে বাধ্য।অগ্রাহ্য করতে পারবেন না। আর যদি আপনি তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সমঝোতা করতে চান তাহলে উত্তম হবে ওনার কন্যাকে বিবাহ করা।কিন্তু যুদ্ধ কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
ফালাক নিরব থাকল মেহেরের কথা শুনে।কোনো জবাব দিলোনা।কারণ মেহের যা বলেছে তা সত্যিই ভেবে দেখার মত।ফালাক যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে নিয়েছে।কথাগুলো বলে নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়ল।ফালাক শুধু তাকিয়ে রইলো ওকে নিচে শুয়ে পড়তে দেখে।তারপর মনেমনে বলছে-” অভ্যাসটা ভালোই আয়ত্তে চলে এসেছে দেখছি।খুবই ভালো।”
মেহের সকালে পাকঘরে বসে খাবার তৈরি করছে। একজন দাসী পাকঘরে এসে মেহেরকে বলল-” রানীসাহেবা আপনি কিছু দেখেছেন?”
মেহেরঃ কি দেখব?
দাসীঃ বাগানে সম্রাট ওনার পিতান কবর জিয়ারত করছিলেন।কিছুসময় পর সেনাপতির সঙ্গে ওনার বোন ইরানি আসল।ইরানি ওনাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো।তারপর সেনাপতিকে সম্রাট একটি কাজে পাঠিয়ে দিলে ইরানির সঙ্গে বেশে হেসে হেসে কথা বলছেন সম্রাট।মনে হচ্ছে আজ খুব খুশি সম্রাট।এমনকি এখন পর্যন্ত দুজনে গল্প করছে।সম্রাট বাগানের ছোট গাছগুলোতে নিজে পানি দিচ্ছে আর ইরানি ওনার সঙ্গে গল্প করছে।
মেহেরঃ তো কি হয়েছে?গল্পই তো করছে।
দাসীঃ তাই বলে এতসময় ধরে?
ইরানিঃ সম্রাট আপনি সদ্য ফোট লাল গোলাপ খুব পছন্দ করেন তাইনা?
ফালাক গাছে পানি দিচ্ছে আর উত্তর দিচ্ছে-” হুম। তুমি জানলে কি করে?”
ইরানিঃ প্রিয় মানুষদের অনেক কিছুই জানতে হয়।
ফালাকঃ প্রিয় মানুষ?
ইরানিঃ হ্যা।আপনি তো আমাদের সবার প্রিয়।
ফালাকঃ সবার প্রিয় কিনা জানিনা।তবে কোনো নারীলোকের প্রিয় নই তা আমি জানি।
ইরানিঃ কে বলেছে আপনাকে? আমার তো আপনাকে খুব পছন্দ হয়।
ফালাক কিছুটা অবাক আর প্রশ্নসূচক ভঙ্গীতে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-” তুমি আমাকে চিনো? আমার সম্পর্কে সবটা জানো? জানলে হয়তো আমার সামনে আসতেও ভয় পেতে।”
ইরানিঃ আমি আপনার সম্পর্কে সবটাই জানি। ওগুলো আপনার অতীত।আমি আপনার বর্তমানকে চিনি আর বর্তমানকেই বিশ্বাস করি। তবে হ্যা আমি আপনাকে সত্যি খুব ভয় পেতাম কিছুদিন আগেও তবে এখন আর পাচ্ছিনা।
ফালাকঃ এখন কি এমন দেখলে যে ভয় পাচ্ছোনা?
ইরানিঃ এই যে এখন আপনি আমার সঙ্গে কি সুন্দর কথা বলছেন।
ফালাকঃ আমার মাঝেও সুন্দর বলে কোনো বস্তু আছে?না থাকলেও শুনে একটু শান্তনা পেলাম।
ইরানিঃ আমি মোটেও শান্তনা দিচ্ছিনা।আচ্ছা যাই হোক আপনার তো খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
ফালাকঃ তাই তো,ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার সঙ্গে গল্প করতে করতে।
ইরানিঃ হুম।দেখেছেন আমি একজন সম্রাটকেও কতোটা চিন্তামুক্ত রাখতে পারি?
ফালাকঃ হ্যা, তাই তো দেখছি।খুব ভালো গুণ এটা তোমার।
ফালাক ইরানির সঙ্গে কথা বলতে বলতে কক্ষে প্রাসাদে ঢুকল।মেহের দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথাই শুনেছে আর ওদের দেখেছে।ওর ভেতরটাও কেমন রাগে জ্বলে যাচ্ছে।কিন্তু কোনোভাবে প্রকাশ করতে পারছেনা।সকালের খাবার শেষে ফালাক মেহেরকে বলছে-” মধ্যাহ্নভোজে আজ কিছু সুস্বাদু খাওয়ারের আয়োজন করতে হবে।দাসীদের বলে দিও।ওরা জানে আজ প্রাসাদের অতিথি আসবে। আর অতিথিদের কি কি খাওয়ার দেওয়া হয় তা ওদের বলে দিচ্ছি।কাউকে ডেকে পাঠাও। আমি এখন বাহিরে যাবো।”
মেহেরঃ আমাকে বলে দিন।আমি পাক কাজ করবো।
ফালাকঃ পাক কাজ করো আর যাই করো।খাওয়ার নিয়ে ওদের সামনে যেতে হবেনা।
ফালাক মেহেরকে বলে দিচ্ছে দুপুরে কি কি রান্না হবে।এর মধ্যে কক্ষের দ্বারে কড়া পড়ল।
ফালাকঃ কে?
ইরানিঃ সম্রাট আমি ইরানি।
ফালাকঃ কি প্রয়োজন?
ইরানিঃ কিছু দেওয়ার ছিল আপনাকে।
ফালাকঃ আচ্ছা ভেতরে এসো।
ইরানি হাতে কয়েকগুচ্ছ তাজা লাল গোলাপ নিয়ে এল।
ইরানিঃ সম্রাট এই ফুল গুলো আপনাকে দিতে এসেছিলাম।আপনার খুব পছন্দ তাই।
ফালাক এক গাল হেসে বলল-” বাহ্ একদম তাজা ফুলের সুবাস পাচ্ছি।খুব ভালো লাগছে দেখতে। মনটাই আনন্দে ভরে উঠল।”
ফালাক ইরানির সামনে গিয়ে ওর হাত থেকেই ফুল গুলোর সুবাস নিচ্ছে।মেহের দাঁড়িয়ে দেখছে আর মনেমনে ইরানিকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগাল দিচ্ছে।
মেহেরঃ কি বেহায়া মেয়ে।সম্রাটের পছন্দের ফুল বলে একা গাদা ফুল নিয়ে কক্ষে চলে এলো।দেখছে যে এখানে স্বামী-স্ত্রী কথা বলছে তবুও দাঁড়িয়ে বকবক করতেই আছে।অসভ্য একটা।
ইরানিঃ সম্রাট আপনি অনুমতি দিলে আমি রোজ সকালে আপনার কক্ষে তাজা গোলাপ দিয়ে যাবো।
ফালাকঃ হ্যা।সকাল সকাল তাজা গোলাপের সুবাস আমার খুব ভালো লাগে।তুমি রেখে যেয়ো।
ইরানিঃ ঠিক আছে।এগুলো এখন কোথায় রাখবো?
ফালাকঃ অনেক গুলো দানি ফাঁকা আছে।তুমি যেটাতে খুশি রেখে যাও।
ইরানি ফুলগুলো জানালার সামনে আসবাব রাখা তার উপর ফুলদানিতে রাখতে গেল।মেহের ফুলগুলো ধরে বলল-” ফুলগুলো জানালার সামনে রাখলে সুবাস জানালা দিয়ে খুব শিঘ্রই বের হয়ে যাবে।আমাকে দাও আমি ঠিক জায়গায় রেখে দিচ্ছি।”
এই বলে মেহের ফুলগুলো বিছানার পাশে রাখা আসবাবের উপর যে ফুলদানিটি আছে সেটাতে রাখল।
মেহেরঃ এখানে রাখলে দেখতেও ভীষণ ভালো লাগবে আর সম্রাট ও যখন খুশি তখন নাকের মাঝে ধরে যতখুশি সুবাস নিতে পারবে।এমনকি ঘুমিয়ে পড়লেও নাকের মধ্যে সুবাস চলে যাবে।
কথাগুলো মেহের দাঁতে দাঁত চেঁপে ধরে বলে দ্রুত গতিতে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।ওরা দুজনেই খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে যে মেহের রেগে গেছে। ফালাক ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর নিজেও কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।
দুপুরের পর ফালাক সম্রাট শাহজাহান সমেত আরো কিছু রাজ্যের রাজাদের সঙ্গে আলোচনাসভাতে বসলেন।বেশকিছুক্ষণ পর মিমাংসা বের হলো।ফালাক অনায়াসে নদীপথে যাতায়াত করতে পারবে।নচেৎ সকল রাজা সম্রাট শাহজাহানের বিপক্ষে চলে যাবে।ফালাক বেশ খুশি।কোনো শর্ত আর কোনো যুদ্ধ ছাড়াই ও মিমাংসা পেয়ে গেছে।যার সকল প্রশংসা সবাই ফালাককে করলেও ফালাক মনেমনে মেহেরের বুদ্ধির প্রশংসাই করে চলেছে।ও ভেবে রেখেছে কক্ষে গেলে মেহেরকে একটি ধন্যবাদ জানাবে।ফালাক কক্ষে ঢুকে দেখে কক্ষ অন্ধকার করে মেহের নিচে শুয়ে পড়েছে।ফালাক ওর মুখের সামনে বসে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ও ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা।হঠাৎ করেই মেহের চোখদুটো খুলে ফালাকের দিকে তাকায়।ফালাক কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করে-” তুমি ঘুমাওনি?”
মেহের রাগীস্বরে বলে-” আপনি কি দেখছিলেন?” অপ্রস্তুত স্বরে উত্তর দিলো-” এটাই যে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো কিনা।”
মেহের আর কোনো কথা না বলে অন্যপাশ ঘুরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ফালাকঃ একটা কথা বলার ছিল।
মেহেরঃ বলে ফেলুন।
ফালাকঃ ধন্যবাদ।
মেহেরঃ হুম।
ফালাকঃ হুম কি?
মেহের কাত হয়েই ওর দিকে ঘুরে বলল-” শুকরিয়া”।তারপর আবার ঘার ঘুড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।ফালাক মনেমনে বলছে-” অদ্ভুত! জানতে চাইলোনা কি জন্য ধন্যবাদ জানালাম? অবাক হওয়ার কি আছে।ও তো সবসময় অদ্ভুত।
ফালাক উঠে দাঁড়িয়ে বিছানার পাশে রাখা আসবাবের উপর হাতড়ে হাতড়ে মোমবাতি খুঁজছে।হঠাৎ করেই ফুলদানিটা ধাক্কা খেয়ে পড়ে ওর পায়ের উপর পড়ল।ফালাক কিছুটা আস্তে স্বরে আর্তনাদ করল-” আহ্।”
মেহের ওর আর্তনাদ শুনে দ্রুত উঠে মোম জ্বালিয়ে দেখল ফুলগুলো নিচে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।আর ফালাক ডানপায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি হাতের মাঝে নিয়ে ধরে বিছানায় বসে আছে।
মেহেরঃ হায় হায়! কি হলো?এবার আপনি ঘুমের মধ্যে সুবাস নিবেন কি করে?ফুলগুলো যে নষ্ট হয়ে গেল মাটিতে পড়ে।
ফালাক রেগে গিয়ে চোখ বড় করে বলল-” রসিকতা করছো?এতবড় স্পর্ধা?আমার সঙ্গে রসিকতা করার শাস্তি কি তুমি জানো?আমি ব্যথায় কুকড়ে আছি আর তুমি সেদিকে খেয়াল না করে আমার সঙ্গে মস্কারা করছো।
ফালাক রেগে গিয়ে ওকে শাস্তি দিলো। আজ সারারাত ওর আঙ্গুলে ঔষধ আর তেল মালিশ করতে হবে।মেহের সেটাই করতে শুরু করেছে। ওর সব আঙ্গুলগুলোতে মালিশ করছে।
ফালাকঃ কি করছো?তেল মালিশ করতে জানোনা?ফোলাটা আরো বেরে গেছে তোমার মালিশে।ভালো করে মালিশ করো।আজ রাতের মধ্যেই যেনো ব্যথা আর ফোলাটা কমে যায়।
মেহের ওর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ব্যথা কমানোর। আবার ফালাক উচ্চস্বরে বলে উঠল-” আরামবোধ করছিনা কেনো আমি?”মেহের চেষ্টা করেই চলেছে ওকে আরাম দেওয়ার,ব্যথা কমানোর আর ফোলা কমানোর।ফালাক পা ঝারি দিয়ে বলল-” আমার সত্যিই এবার খুব রাগ হচ্ছে।কিভাবে সেবা দিচ্ছো যে আমি ঘুমাতে পারছিনা?বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে।ভালো করে মালিশ করো না হলে কিন্তু সত্যি…..
কথাটা শেষ করলোনা ফালাক মেহেরের অসহায় মুখখানা দেখে।কপালে হাত রেখে চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল।এগুলো ফালাক ইচ্ছা করেই করছে ওর সঙ্গে।শুধুমাত্র ওকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।হঠাৎ করে মেহের পা টা কোলের মাঝে নিয়ে নিচু হয়ে আঙ্গুলগুলোতে আলতোভাবে চুমু খেতে শুরু করল। মেহেরের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে ফালাল চমকে গিয়ে ওর দিকে তাকাল।মেহেরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আর মেহের অনবরত চুমু খেয়েই চলেছে।ফালাক আর কিছু না বলতে পেরে উঠে বসে ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়েলো।
ফালাকঃ কি করছো এগুলো?
মেহেরঃ সেবা দিচ্ছি।হাতের মালিশে আপনার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে তাই ঠোঁটের উষ্ণ পরশ দিচ্ছি যাতে ঘুমের ব্যাঘাদ না ঘটায়।
Continue…….