#জোনাকিরা ভীড় করেছে
#পর্ব-২১
সুন্দর ভাবে ঘরটা সাজানো হয়েছে।বিছানার ওপর কিছু কাঠগোলাপ রাখা।মেঘলা কখনো আদিবকে বলেনি তার কাঠগোলাপ গোলাপ পছন্দ! আদিব আজ তাকে আর কত সারপ্রাইজ করবে? মেঘলা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকলো আদিবের দিকে।আদিব হেসে মেঘলার কপালে অধর স্পর্শ করলো। কেঁপে উঠলো মেঘলা।আদিব সরে গিয়ে লাইট বন্ধ করলো। আবার ঘরটা অন্ধকারে ছেয়ে গেল।মেঘলা বুঝতে পারলোনা আদিব কি করতে চাইছে?শুধু তার হৃৎস্পন্দনের গতি দ্বিগুণ হচ্ছে। আদিব একটা ছোট কৌটা এনে মেঘলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
খুলে দেখো।
মেঘলা কৌটো টা খুলতেই কিছু জোনাকির পোকা উড়তে লাগলো।ঘরময় ছড়িয়ে পরলো।মিটিমিটি জ্বলতে লাগলো নিভতে লাগলো। মেঘলার চোখ জোড়া পানিতে টইটম্বুর হলো।সে আদিবকেএই প্রথম নিজে থেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো।এত সুন্দর দৃশ্য হয়ত সে কখনো দেখেনি।ভালো লাগায় ভরপুর হয়ে গেছে তার ভেরতটা।আদিব হাসে মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে।ফিসফিসিয়ে বললো,
“আমি তো সন্ধ্যা হয়ে নেমেছি তুমি জোনাকি হয়ে ইচ্ছে মতো বিচরণ করো,ভীড় করো আমার হৃদয়ে!”
মেঘলা আরো ঘনিষ্ঠ হলো,মিশে যেতে চাইলো আদিবের বুকের ভেতরে।
৪৬.
আমরিন আনোয়ারার কাছ থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে এগোলো ঘুমোনোর জন্য। রাত অনেক হয়েছে। মন ভালো না থাকলে সে ফুপির সাথে সময় কাটালে,গল্প করলে মনটা একটু হলেও ফুরফুরে হয়।ঘরে ঢুকে চমকে গেল সে।আদিব তার পড়ার টেবিলের চেয়ারটায় বসে আছে।আমরিন কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থাকলো এরপর এগিয়ে এসে বললো,
তুমি আমার ঘরে কেন আনাফ ভাই,আমার মত বেয়াদব মেয়ের ঘরে আসতে তোমার খারাপ লাগেনি?
আমরিনের কথা গুলো তীরের মতো এসে বিঁধলো আনাফের বুকে।আনাফ খুব ধীরে ধীরে বললো,
তুই আমায় এভাবে এড়িয়ে চলিস কেন?সেদিনের ওই ব্যাপারে ভুলটা নাহয় আমারই বেশি হয়েছে।তাই বলে এরকম ব্যবহার করবি?
জানোই তো আনাফ ভাই, আমার ব্যবহার খুব খারাপ তাহলে কি করে আমার কাছে ভালো ব্যবহার আশা করো তুমি?
আমরিন প্লিজ তুই বোঝার চেষ্টা কর।সেদিন রাগে আমি সত্যি কি করে ফেলেছি বুঝতে পারিনি।তুই জেরিনের কাজিনের বাড়িতে গিয়ে ওরই সাথে ও রকম ব্যবহার করেছিস শোনার পর আমি লজ্জায় পরে গিয়েছি।তুই তো।আমার বোন তোর কাছ থেকে ব্যবহার আমি আশা করিনা?মানছি তোর গায়ে হাত তোলাটা আমার উচিত হয়নি।কিন্তু তুই একবার ভেবে দ্যাখ তো তোর কি ওরকম আচরণ করা ঠিক হয়েছে কিনা?
আমার ঠিক ভুল নতুন করে বিচার নাহয় নাই করলে।তোমার যেটা করার দরকার হয়েছে তুমি তো করেছ।তাহলে আর এসব নিয়ে এত ভাবতে হবে না তোমায়।তুমি আমাকে আমার মতো থাকতে দাও প্লিজ!
আমরিন বেরিয়ে যেতে গিয়েও থেমে গেল।আনাফের চোখের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো,
আমার বাবা আমায় ভালো শিক্ষায়ই দিয়েছে আনাফ ভাই।তোমার কাছ থেকেও আমি এমন আচরণ কখনো আশা করিনি।আমি জানতাম তুমি একটু বোকা কিন্তু সেদিনের পর থেকে বুঝতে পেরেছি বোকা বা সহজ সরল নও।তুমি এমনই অহংকারী। ভেবেছিলাম তোমার একটা সুন্দর মন আছে কিন্তু না সে ধারণা আমার ভেঙে গেছে।তুমি জানতে চেয়েছিলে না সেদিন আমার ওই আচরণ করা ঠিক হয়েছে কিনা? আমি আবারও বলছি ভালো ভাবে শোনা, আমি সেদিন যা করেছি একদম ঠিক করেছি।সেটা আমায় করতেই হতো।যখন শুনেছি আমার আনাফ ভাই কে একটা ফালতু বাজে মেয়ে ব্যববহার করছে নিজের স্বার্থে।তখন নিজকে ঠিক রাখতে পারিনি।কিন্তু সেটা বোধহয় আমারই ভুল হয়েছে।কারণ জেরিনের মতো মেয়েকেই তুমি ডিজার্ভ করো আমাকে নয়।
কথা গুলো বলে আমরিন চোখ বন্ধ করে নিলো।কান্না গুলো গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠছে তার।
আনাফ বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আমরিনের দিকে।শুধু আমরিনের বলা শেষ কথাটা তার কানে বাজছে।
আমরিন জোরে নিশ্বাস নিলো।আবার বললো,
তুমি এতটাই বোকা যে কে তোমায় বান্দরবানে এক্সিডেন্টে রক্ত দিলো সেটাই ভালো ভাবে জানো না।
আমরিন হতভম্ব আনাফ রেখে বেরিয়ে গেল।কথা গুলো অনেকদিন ধরে চাপা পরে ছিলো।
সেদিন জেরিনের ফুপাত বোনের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছিলো সেই আনাফকে রক্ত দিয়েছে কিন্তু জেরিন আনাফ পছন্দ করায় নিজের নাম বলেছে যাতে আনাফের মনে ওর জন্য জায়গা তৈরী হয়।জেরিন ওর বোনকে অনুরোধ করেছে যেন সত্যি কথাটা আনাফ না জানতে পারে।সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে আনাফকে কখনো সত্যি কথা জানায়নি মেয়েটা।জেরিন একটু অন্য ধরনের হওয়ায়।আজ আনাফের ফুপাতো আমরিন এটা জানার পর মেয়েটা নিজে থেকেই সব বলেছে যাতে আনাফ একদিন হলেও সত্যিটা জানতে পারে।এসব শুনে আমরিন চুপ থাকতে পারে না।জেরিনকে সরাসরি
প্রশ্ন করে সে কেন আনাফকে এভাবে মিথ্যায় ডুবিয়ে রেখেছে।
জেরিন খুব রেগে যায় আমরিনের ওপর।আমরিনের সাথে কথা কাটাকাটি হয় জেরিনের।আমরিন এক পর্যায়ে বলে সে আনাফ ভাই কে ভালোবাসে।দুজনের পরিবার থেকে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।জেরিন সে কথা বিশ্বাস করেনা।বরং উল্টো সে আমরিন চড় মারতে উদ্যত হয়েছিলো।আমরিন শুরু মাত্র জেরিনের হাতটা আটকিয়ে মুচড়ে দিয়েছিলো।কোনো খারাপ গালি বা চুল ধরে টানাটানি এসব কিছুই করেনি।জেরিন আনাফের কাছে মিথ্যা বলেছিলো।আনাফ সবকিছু না শুনেই আমরিনকে চড় মেরে বসে।সেই থেকে সবকিছু অন্য রকম হয়ে গেছে।
৪৭.
সকালের নাস্তা খাওয়ার পর আনোয়ারা বেগমকে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে আদিব এগিয়ে এসে ফুপির পাশে বসলো।আপেলে কামড় দিয়ে বললো,
কি চিন্তা করছো গো ফুপি?
ভাবছি বিয়েটাও কি ছোঁয়াচে বিষয় হয়ে গেল কিনা?
মানে কি বলছো?
আনাফ আমায় বললো,
এক সপ্তাহের মধ্যে নাকি বিয়ে করবে।
আরে তাই নাকি?আনাফ দেখছি আমার থেকেও ফাস্ট! আমিও তো তোমায় এই কথায়ই বলতে এসেছি।
তুইও কিছু জানিস নাকি,ছেলেটা কাকে বিয়ে করতে চায় বলতো?আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমি কত শখ করে আমার ছেলের বড় পছন্দ করে রেখেছি আর ছেলে এখন হঠাৎ কাকে বিয়ে করবে?
তুমি যাকে পছন্দ করে রেখেছ তাকেই।
কিহ!
হুম,তোমার ছেলে আর তোমার আদরের ভাতিজির কান গুলো ছিঁড়ে দেব যখন ঠিক সব বুঝতে পারবে।
আনোয়ারা বেগম নড়েচড়ে বসলেন।ওমা ! তার ছেলে তলে তলে এত সেয়ানা হলো কখন?দেখলে তো আবাল মনে হয়।
ফুপি এখন তোমার এখানে বসে থাকলে তো হবে না।চলো তোমার ভাই ভাবীর সাথে কথা বলে শয়তান দুটোর ভালো শাস্তির ব্যবস্থা করি।
শাস্তি আবার ভালো হয় কেমনে?
চলো বুঝতে পারবে।
আদিব মেঘলাকে ডেকে বললো,দিলারা কে নিয়ে বাবার ঘরে আসতে।
মেঘলা আজ শাড়ী পরেছে।শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে গুঁজে কাজ করছে।বড্ড আদুরে লাগছে দেখতে।আদিব একটু হেসে পা বাড়ালো বাবার ঘরের দিকে।আগে আমরিন আর আনাফের একটা ব্যবস্থা করা যাক।আনাফ গতকাল তাকে সব খুলে বলেছে।আদিব ভাই হিসেবে বোনকে আনাফের হাতে তুলে দিতে কখনো দুবার ভাববে না।নিজেদের মাঝেই বোনের ভবিষ্যত হলে মন্দ হয়না।
এরপর ঘটনা গুলো পরপর ঘটে গেল।আনাফ ডেকে আনা হলো রাতে।আনোয়ারা বেগম আমরিনকে আংটি পরিয়ে দিলেন।এক সপ্তাহের মাঝে কাবিন হবে।বিয়ের আগে ছেলে মেয়ের মেলামেশা ঠিক নয় জন্য কাবিন টা করা।আমরিনের কলেজ শেষ হলে অনুষ্ঠান করে ধুমধাম করে আবার বিয়ে হবে।এবার মেঘলার আর আদিবের মতো হুট করেই সব করবেন না আনোয়ার সাহেব।আত্মীয় স্বজদের কাছে লজ্জিত হতে হয়।আনাফ আমরিন দুজনেই একদম চুপচাপ। মুখ ফুটে না বারণ করেছে না হ্যাঁ বলেছে।দুজনের অবস্থা দেখে সবাই লুকিয়ে হাসে।আনাফ লজ্জায় কাবু হয়ে গেছে।আমরিন তো পারে মাটির সাথে মিশে যায়।বাবা মায়ের কাছে কেমন লজ্জায় পরতে হলো তাকে।তবে এত সহজে সে আনাফকে ছেড়ে দেবে না।আগে বউ হয়ে যাক তারপর দেখাবে জেরিন পেত্নীর কথা শুনে তাকে চড় মারার কত মজা,হু!
চলবে..