#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ৬
চাঁদ ঘুম থেকে উঠেই দেখে সোফায় রাহা আর রাহার মা বসে আছে।রাহা হলো তেজের ফুফাতো বোন।চাঁদের জনম কালের শত্রু।
চাঁদ হৃদিকে ধাক্কা দিয়ে বলল-
এই শাঁকচুন্নি কি দেখানোর জিনিস গাঁধি!আমার এত সুন্দর ঘুম ভাঙ্গালি পেত্নি দেখানোর জন্য। সারারাত পর সকালে ঘুমালাম তাও তোর সহ্য হলো না।এটা বলে চাঁদ মুখ চেঁপে ধরলো।মুখ ফসকে রাত জাগার কথা টা বলে ফেলেছে সে এবার হৃদি তাকে ছাড়বে না।
হৃদিও রাত জাগার কথা শুনে চাঁদের দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে-
“কিরে তুই রাত জেগেছিস কেনো?কি ব্যাপার বলতো?
চাঁদ পড়ে গেলো মহা মুশকিলে।তার এখনই মুখ ফসকাতে হলো।চাঁদ কথা কাটানোর জন্য বলল
-আরে তুই ও না কি বলছিস।জানিস না আমি ঘুম থেকে উঠলে উল্টাপাল্টা বকি।বাদ দে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
হৃদি কিছু বলার জন্য উদ্যত হলেই চাঁদ তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে যায়।
চাঁদ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে হৃদি ঘরে নেই।সে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।তাড়াতাড়ি চুল না আঁচড়ে বাহিরে গেলো না হয় রাহার মা কথা শুনাতে পিছপা হবেন না।
চাঁদ বাহিরে এসেই রাহার মাকে সালাম দিলো।রাহার মা সালামের উত্তর না দিয়েই চাঁদের মা নীলিমা বেগমকে বললেন
– আজকাল কার মেয়েরা কেমন হচ্ছে।এত বেলা করে কেউ ঘুম থেকে উঠে।এত বড় মেয়ে কেমন একটা গেঞ্জি আর প্যান্ট পড়ে আছে।এত বড় মানুষ কি চুলে দুই বেনী করে কখনো।আপা মেয়েকে শাসন করুন।আরো কিছু বলতো কিন্তু এর মাঝেই হাজির হয় তেজ যার জন্য চুপ হন রাহার মা।
তেজ বাহির থেকেই রাহার মায়ের কথা গুলো শুনে চাঁদের ফ্লাটে আসে।কারণ জানে সে না আসলে এ মহিলা আরো শুনাবে কয়েকটা কথা চাঁদকে।
চাঁদ তেজকে আড় চোখে দেখেই ডাইনিং টেবিলের দিকে চলে যায়।কারণ সে জানে এখন আর রাহার মায়ের মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হবে না।
চাঁদের মা চাঁদকে দুটো পরোটা প্লেটে বেড়ে দিতেই চাঁদের চিৎকার। কারণ সে এত পরোটা খেতে পারবে না।তেজ দেয় এক ধমক তাই সে দুটো পরোটা নিয়েই নিজের ঘরে চলে যায়।এখানে থাকলে রাহার মা হয়তো আরো কথা শুনাবে আবার তেজ ভাইয়া ও পরোটা সব গিলাবে তাই সব কিছু ভেবেই সে রুমে চলে যায়।
আর অন্যদিকে তেজের চাঁদকে এ রুপে দেখে হুশ চলে গেছে। বরাবরই সে চাঁদের এই ঘুুমু ঘুমু মুখ আর ঢোলা জামা প্যান্ট আর দুই বেনীতে ঘায়েল হয়।তবে চাঁদের এ রূপ কমই দেখা যায়। শুধু সকাল আর রাত বাদে।
তেজ তার ফুপু আর খালামনিকে কথা বলতে দেখে চাঁদের রুমে চলে যায়।
আর এদিকে চাঁদ খাবারের প্লেট টেবিলের উপর রেখে সোফায় হেলান দিয়েই ঘুম।তেজ যে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তার খবরই নেই।
আর অন্য দিকে তেজ চাঁদকে এ অবস্থায় দেখে হেসে ফেলে।চাঁদের সামনে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকে- জান ওঠো,খাবার কমপ্লিট করে আবার ঘুমিয়ো।
নিজের মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম হালকা হয়ে এলো চাঁদের।পাশ ফিরে দেখে তেজ বসে আছে তার থেকে একটু দূরে আর ফোন হাতে।চাঁদ মনে মনে বললোঃ আমি কি স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ? তেজ ভাইয়া তো জীবনেও মাথায় হাত বুলাবে না জান তো দূরে থাক।
অন্য দিকে তেজ চাঁদকে নড়তে দেখেই একটু দূরে গিয়ে বসলো। যা চাঁদ বুঝেও নি।চাঁদকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তেজ মনে মনে হেসে উঠলো ভাবলো এবার চাঁদকে একটু লজ্জা দেওয়া যাক।যেমন ভাবনা তেমন কাজ।সে চাঁদকে বললোঃ
-আমাকে দেখা হলে খাবারটা ফিনিশ কর চাঁদ।
– আপনাকে আমি দেখছি কোথায় আমি তো এমনি তাকিয়ে ছিলাম, থতমত খেয়ে বললল চাঁদ।
– এমনি তাকাছ আর যেমনি তাকাছ তাকিয়ে তো ছিলি।
– না তো।মানে ইয়ে,
– আচ্ছা হয়েছে এবার থাম আর খাবার খা।
– আমি ঘুমাব এখন।পরে উঠে খাবো।
– আর একটা কথা বলবি তো চড় পরবে।এখানে আসো। এটা বলেই তেজ পরোটার একটু ছিড়ে চাঁদের মুখের সামনে ধরলো।
-চাঁদও কিছু না বলে মুখে পুরে নিলো।
একটা পরোটা খাওয়ার পরই চাঁদ আর খাবে না বলেই শুয়ে পরে।তেজও আর জোড় করে নি।
চাঁদ আবারো তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে। কত দিন পর সে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর সুযোগ পেলো।
____________________
এখন বিকেল নেমেছে আকাশে,,চাঁদ দুপুরে আর খেতে উঠে নি।সবাই তেজেদের বাসায় আড্ডা দিচ্ছে।চাঁদ আর তেজ শুধু চাঁদদের বাসায়।তেজও আজ অফিস যায় নি।ওদের বাসায় অতিরিক্ত মানুষ দেখে সে আহানের রুমে এসে ঘুমিয়েছে।
চাঁদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। এখন এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না।তাই সে রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হলো।যাওয়ার পথে আহানের রুমে তেজকে দেখে তার আর বুঝতে বাকি নেই যে তেজ ও ঘুমাতেই আসছে এ বাসায়। কিন্তু আজ তেজ ভাইয়া অফিস গেলো না কেনো?
সব ভাবনা বাদ দিয়ে চাঁদ দুকাপ চা বানিয়ে তেজের রুমে গেলো।ততক্ষনে তেজও ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে বের হয়েছে।চাঁদকে দেখেই মিষ্টি হাসি উপহার দিলো চাঁদও এর পরিবর্তে হাসলো।
চাঁদ তেজের দিকে চা এগিয়ে দিলো।তেজ খুশিই হলো।দুজনই চা এ চুমুক দিলো।তখনই চাঁদের ফোন সশব্দে বেজে উঠলো।চাঁদ ফোন আনতে রুমে গেলো।
প্রায় পনেরো মিনিট পর ফিরলো।একবারে রেডি হয়ে।বাসার জামা বদলানো চুল গুলো কাঠি দিয়ে বাধাঁ।তেজ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ কোথায় যাচ্ছিস এই বিকালে?
– আসলে ভাইয়া নীলের সাথে একটু শপিং এ যাবো। নীল ওর আম্মুর জন্য শাড়ি কিনবে তো তাই।
– নীল কে?ওহ্ ঐ যে তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড টা।তো তোর ওর সাথে গিয়ে কী কাজ।খালামনি জানে যে তার মেয়ে এই বিকেলে এক ছেলের সাথে ঘুরতে যাবে।
– হ্যাঁ ভাইয়া জানে। মুখ ভেংচি দিয়ে বললো চাঁদ।
তেজ ভ্রু কুচকে বলে উঠে,- আমিও যেতাম কিন্তু আমার আজ বাসায় কাজ আছে।
– ভালো হইছে কাজ আছে।এই বলে ভৌ দৌড় চাঁদ।
তেজও হেসে ফেলে।তারপরই কাকে জেনো একটা কল লাগায় আর চাঁদের খেয়াল রাখতে বলে।
______________________________
শপিং করে ফিরেছে চাঁদ।নিজের বাসা ফাঁকা দেখে অবাক হয় সে।এতক্ষণ তো ঐ বাসায় থাকার কথা না।সে ফ্রেশ না হয়েই খালাদের ফ্লাটে যায়।
সেখানে গিয়ে চাঁদ অবাক। পুরো বাসা মানুষে গিজগিজ করছে।খাবার দাবারের আয়োজন চলছে।সে তো অবাক।আজ কোনো অনুষ্ঠান আছে সেটাই সে জানে না।
তার মায়ের কাছে যায় দৌড়ে কি অনুষ্ঠান জানার জন্য। কিন্তু যা শুনে তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না চাঁদ।আজ ছেলে পক্ষ আসবে দেখতে পছন্দ হলে আংটি পরিয়ে যাবে।
চাঁদ অবাক হয়ে বলল- তোমরা একবারও কেউ আমাকে বলার প্রয়োজন বোধ করলে না।আর তেজ ভাইয়া জানে সব?
চাঁদের মা – হ্যাঁ তেজ জানে বলেই তো অফিস গেলো না।সব ব্যবস্থা তো ও ই করছে।আর আজ তোর আব্বু ও আসবে ওনার কাজ শেষ।
চাঁদের অভিমান জমলো সবার উপর। এত বড় খবর কেউ তাকে জানালো না এমনকি তেজও।তাহলে কি তেজ,,,,,,
চলবে,,,,,,