#আরোহী
#পর্ব_০৫
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
______
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টার উপর। খুবই ভয়ানক সেই চাহনি চোখ দু’টো রাগে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। এই মুহুর্তে যে এই চোখের দিকে তাকাবে সেই জেনো ভয়তে নিজেকে গুটিয়ে নিবে৷ মিতার বেলায় ও উল্টো টি হয়নি৷ ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাত পা কাপছে তার চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। মিতা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
‘ আরো… ‘
আরোহীর হাতে পানির বোতল ছিল। সেটা সে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে বলল, ‘ কি আরো? ‘
মিতা ভয় পেয়ে ছিল এখন আরোহীর হুংকার শুনে আতঙ্কে আঁতকে উঠে দু পা পিছিয়ে গেলো। ক্রোধ যথাযথ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছিল তবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে তা শুধু মিতার চুপসে থাকার কারণে। কয়েকবার জিজ্ঞেস করা হয় তাকে সে কেনো এমন করেছে? কিন্তু ঠাই দাঁড়িয়ে রয় মিতা মুখ দিয়ে টু শব্দটিও বের করেনি।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে তা দেখছে আরাফ। সে কাল ভুল বুঝেছিল আরোহী কে, আরোহী কলেজ আজ একাই আসে সাথে অবশ্য নিপা ছিল তবে প্রতিবারের মতো আরাফকে নিয়ে আসেনি। রাতে জেগে থাকার কারণে সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠে, ঘুম ভাঙলে মোবাইলে টাইম দেখে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠে, তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে আরোহীর কক্ষের দিকে যাচ্ছিল। এ্যানি দেখে আরাফকে জানায় আরোহী ম্যাম কলেজ চলে গেছে। আরাফ এ্যানির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে বাড়ি থেকে বের হলো। কলেজ পৌঁছাতে দেখতে পেলো তারা তিনজন কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানেই আসছিলো ধুপধাপ পা ফেলে, কিছুটা কাছাকাছি আসতে পা থমকে যায়। আরোহীর কথা শুনে, তখনই সে উপলব্ধি করতে পারে সে ভুল ছিল তার ধারণা ভুল ছিল। আইডি মিতার ছিল আরোহীর নয়।
মিতা আরোহীর সামনে এসে মাথা তুলে চোখেচোখ রেখে বলল, ‘ আরু আমি বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা এমন হয়ে যাবে। তাছাড়া আমি… ‘
মিতা আর কিছু বলার আগে আরোহী কষে এক চড় বসালো মিতার গালে। মিতা ভাবেনি আরোহী এমন করবে৷ এর আগে শত অন্যায় আরোহী ক্ষমা করে দিয়েছে। কখনো এতটা কঠোর হয়নি কারো সাথে আরোহী। আজ আরোহীর এই রূপের সাথে প্রথম বার পরিচিত হচ্ছে তারা। আশে পাশে ও ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে সকলে উঁকি দিয়ে দেখছে। আরোহী আঙুল তুলে আঙুল নাচিয়ে তেজি কন্ঠে বলল, ‘ ফ্রেন্ড বলে ক্ষমা করছি আর নয়তো এখুনি পুলিশের হাতে তুলে দিতাম। নেক্সট টাইম আমার চার পাশেও জেনো তোর মতো বিশ্বাসঘাতক কে আমি না দেখি। বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি কোন আক্কেলে একটা ছেলেকে তুই আমার ছবি দিলি তাকে বললি ওটা তুই এতেও তুই সীমাবদ্ধ থাকিসনি ছেলেটাকে আমার নাম্বার পর্যন্ত দিয়েছিলি। ছিহ কত নোংরা এসএমএস। ভাবতেও আমার ঘৃণা লাগছে। তোর জন্য আরাফ আমাকে ভুল বুঝেছে যা আমি করিনি তার মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। যদি এতটুকুও লজ্জাবোধ থাকে আমার সামনে আসবি না। তুই মরে গেছিস আমার জন্য ‘
বলে মিতার সামনে থেকে চলে যায়। মিতা এতক্ষণ দাঁত দিয়ে ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে রেখেছিল। নিজের কান্না কন্ট্রোল করার জন্য কিন্তু আরোহীর বলা শেষ কথাগুলো তাকে অনেক পোড়াচ্ছে সহ্য করতে না পেরে। ধপ করে বসে পরল সে মাটিতে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল।
_______
এমনিতেই ম্যাজাজ বিগড়ে ছিল আরও বিগড়ে গেলো আরোহীর। বাড়ি তে ঢুকেই তার ফুপা ও ফুপিকে দেখে। আরোহী জানে তার ফুপা ফুপি অতন্ত্য লোভী প্রকৃতির মানুষ সব কিছু তে শুধু নিজেদের সার্থ খুঁজে। নিজেদের সার্থ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো কিছুই বুঝে না তারা স্বামী স্ত্রী তাদের কোনো সন্তান নেই। এখানে এসেছে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। আরোহী তাদের দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিল। তখনই সামনে এসে দাড়ালো তার ফুপা। হাতে তার তরমুজ ফল এক প্লেট পুরো সে হাতে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরে ফিরে খাচ্ছে। আরোহীকে দেখে সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখে এক পিছ তরমুজ পুড়ে দিলেন। মুখ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘ কেমন আছাও ছেড়ি? এ কেভা হাল বানাইয়াছ এত হুগাই তাছো কেলা? তোর বাপের তো সম্পত্তির অভাব নাই কা তো তুমি এত শুকাইতাছ কেন? ‘
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম। এই লোকটার সম্পত্তি ছাড়া আর কোনো কিছুই বলার নেই। যে কোনো কথার মাঝে বাবার সম্পত্তি টানবেই টানবে। আব্বু আম্মু স্বাভাবিক ভাবে নিলেও আমি নিতে পারি না। আমি ভালোই বুঝতে পারি উনি আমার বাবার সম্পত্তির উপরে শকুনির মতো নজর দিয়ে বসে আছেন। কিন্তু আমি একথা তাদের বললে না বিশ্বাস করবে না উল্টো আমাকে চুপ করিয়ে দিবে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলল,
‘ ও ছেড়ি রাগিস কেলা? নে হা কর তরমুজ খা মাথা ঠান্ডা হইবো নে। ‘
কাটা চামচে একটা তরমুজের পিছ তুলে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। আমি কর্কশকন্ঠে বললাম।
‘ আমি তরমুজ খাইনা ফুপা আপনিই খান। আমি কলেজ থেকে এসেছি রেস্ট নিবো। ‘
তার পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলাম। ত্রিশ মিনিট ধরে শাওয়ার নেওয়ার পর মাত্র বের হলাম। চোখদুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। এ্যানি রুমে এসে গরম গরম কফির মগ রেখে গেছে। কফির মগটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। মন জুড়ে শত অভিমান। কেমন বন্ধু হু? বিপদের সময় অবিশ্বাস করে চলে গেছে। আর কাল থেকে এই পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি তার সাথে এটাকে কি বন্ধুত্ব বলে? উঁহু, বলে না। সত্যিই যদি বন্ধু হতো তাহলে অন্তত তার সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা করতো তাও করেনি। তুমি আমার বন্ধু নও আরাফ। সত্যিই কি বন্ধু নও? নিজেই ঘুরে ফিরে নিজেকে প্রশ্ন ছুড়ছিল। হারিয়ে গিয়েছিল তার অবান্তর ভাবনায়। হুঁশশ ফিরল গরম কফির উপরে হাত পরতে হাত জ্বলে উঠল৷ কফির মগের উপর আঙুল দিয়ে ঘোরাচ্ছিল। অন্য মনস্ক হওয়ায় আঙুলটা মগের ভেতরে একটু পরে তাতেই লাফিয়ে উঠে আরোহী। বিড়বিড় করে যা তা বলে বকছে আরাফ কে, তার জন্যই তো হাত টা সরি আঙুল টা পুড়ে গেলো। পেছনে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরাফ। আরোহীর বাচ্চামো ও অভিমানী স্বরে বলা কথা গুলো শুনে সে শব্দহীন ভাবে হাসছে,
কিছুক্ষণ বাদ নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য আরাফ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের চোয়াল শক্ত করে মিষ্টি গলায় বলল,
‘ সরি আরু ‘
বুকের মধ্যে হঠাৎ করে হার্টবিট তীব্র গতিতে বিট করতে লাগল। পেছনে ঘুরে দেখল আরাফ।
এক হাতে তার কফির মগ, গরম কফি হওয়ায় মগের উপর দিয়ে ধোঁয়া উড়ছে। অন্য হাত দিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরাফকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনে মনে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে আরোহীর। তবুও উপরে উপরে নিজেকে সংযত রেখে অভিমানী স্বরে বলল, ‘ মিস্টার আরাফ আপনি আমার রুমে। বিশেষ কোনো কারণে এসেছেন নাকি? ‘
আরোহীর অভিমানী কথা শুনে আরাফ সশব্দে হেঁসে উঠল। চোখ দু’টো ছোটছোট করে কপাল ভাজ করল ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে তাকিয়ে রইল আরাফের হাসি মাখা মুখখানির উপরে। হাসতে তাকে দারুণ লাগে, আরাফ যখন হাসে তখন তার চোখ দু’টো গোল ও ছোটছোট হয়ে যায়। দুই গালে টোল পরে অনেক মিষ্টি লাগে তাকে দেখতে যে কোনো মেয়েকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য তার হাসিটাই যথেষ্ট। আরোহী মুখ ভেংচি কেটে পেছনে ঘুরে গেলো। আরাফ বেলকনিতে প্রবেশ করল। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কফির মগে মৃদু আওয়াজ তুলে শাণিতকন্ঠে বলল, ‘ আরু…… ‘
চলবে?
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)
‘ আসসালামু আলাইকুম রিডার্স ‘