আরোহী পর্ব ৬+৭

0
231

#আরোহী
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_০৬
______
আরাফ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আনি ওর যাওয়ার দিকে দৃষ্টি সংযত রাখলাম। কেনো জানি ইচ্ছে করছিল ওকে বলি আমি এতটা নিষ্ঠুর নির্দয়া নই। আরাফ চলে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ আরোহী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। তার মধ্যে সে ছিল না। কোনো এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পরে। পেছন থেকে কারো গুরু গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে। সে কন্ঠ যে আরোহীর ভড্ড চেনা অনেক আপন একজনের। আরোহী চটজলদি পেছনে ঘুরে তাকালো৷ তার বাবা আরমান খান দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরোহী নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণের জন্য সে ঘোরে চলে গেছে। হুঁশশ ফিরে আসে তার বাবা যখন মিষ্টি কন্ঠে তার নাম উচ্চারণ করে দ্বিতীয় বার। এতদিন পর নিজের বাবাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৌঁড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পরে তার বাবার বুকে। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। কত যে মিস করেছে তার কোনো হিসাব নেই। একদিনের কথা বলে আজ পাঁচ দিন পর বাড়িতে ফিরেছে। এই পাঁচ দিনে একটা ফোন কল অব্ধি পর্যন্ত দেয়নি। আরোহী কত কল দিয়েছিল। তবে বারবার তাকে শুনতে হতো সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল আদুলি কন্ঠে বলল, ‘ দেখ আমি তোর সামনে বসে আছি। যেভাবে কাঁদছিস মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি। ‘

‘ বাবাহহহ ‘ বুকের উপর থেকে মাথা সরিয়ে নিলো। ধমকের স্বরে বলল,

‘ বাবা এমন কথা আর বলবা না। তুমি আমার সূর্যের প্রথম কিরণ তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বাঁচবো হু? তোমার কিচ্ছু হবে না! উঁহু, আমি হতেই দিবো না। সব সময় জড়িয়ে ধরে রাখবো এক মিনিটের জন্য ও ছাড়বো না। ‘

‘আচ্ছা বাবা। আমার কিচ্ছু হবে না এবার খুশি? ‘

‘ অনেক খুশি। এত্তো এত্তো খুশি। ‘

মেয়ের কথায় সশব্দে হেঁসে উঠলেন আরমান।

সে মেয়ের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলল,’ শুনলাম। তুমি নাকি সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই খাওনি। রুম থেকেই নাকি বের হওনি কিন্তু কেনো? ‘

‘ ইচ্ছে হয়নি বাবা। ‘

‘ আচ্ছা? আমি যদি এখন খাইয়ে দেই তাহলে কি খেতে ইচ্ছে হবে? ‘

‘ আলবাদ হবে। হতেই হবে। ‘

বাপ মেয়ে দুজনেই মত্ত হাসিতে মেতে উঠল। আরমান দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,’ ভেতরে নিয়ে আসে। ‘

এ্যানি ট্রে ভোড়ে আরোহীর জন্য খাবার নিয়ে আসল। এতগুলে খাবার দেখে ভ্রু কুঁচকালো কপালের চামড়া ভাজ পরেছে। আরোহী সংশয় প্রকাশ করে বলল, ‘ আমি এই এত্তো গুলো খাবার কিছুতেই খাবো না। ‘

‘ তোকে একা খেতে কে বলছে তোর সাথে আমিও তো খাবো নাকি? আয় আমার পাশে বস। ‘

আরোহী তার বাবার পাশে বসলে, তাকে নোলা তুলে এক লোকমা এক লোকমা করে খাইয়ে দিতে লাগলেন। মুখে খাবার চিবাতে চিবাতে বকবক করছে আরোহী তৎপর্যায়ে খাবার তার গলায় আঁটকে যায়। গলায় হাত রেখে জোরে জোরে কাশতে লাগল আরোহী। হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকল আরাফ, পানির গ্লাস আরোহীর দিকে বাড়িয়ে দিলো। আরহাম খান মেয়ের পিঠে বার বার চাপড়াচ্ছেন। আরোহীর চোখ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরল। তা দেখে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল উপস্থিত দু’জন ব্যক্তির।

‘ আ’ম ফাইন, বাবা। ‘

‘ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি মামুনি। কতবার বলবো খাবার খাওয়ার সময় কথা না বলতে৷ কিন্তু তুমি কোনো কথাই শুনো না। ‘

‘ বাবা ‘ আহ্লাদী স্বরে ডেকে গলা জড়িয়ে ধরলাম।
আমি কলেজ থেকে ফিরার পর আর রুম থেকে বের হয়নি। বের হলেই আমার ফুপা ফুপির মুখোমুখি হতে হবে।

অর্ধেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে ঘুমিয়ে পরি। সকালে যখন আমি কলেজ যাচ্ছিলাম তখনও আমার ফুপিরা ঘুমাচ্ছিলেন। আমি আর আরাফ নাস্তা করে বের হয়ে পরি। কলেজে এসেই আমি একদফা অবাক হই, মিতা একা একা বট গাছের নিচে বসে আছে। আমাদের কলেজের এক দম শেষ প্রান্তে একটা বড় বটগাছ আছে। গাছের নিচে বসলে ঠান্ডা শীতল বাতাসে গা ফুরফুরে হয়ে যায়। আমাকে দেখে ছুটে আসল নিপা। দু’জনে তাকিয়ে রইলাম মিতার দিকে, সে হাতে কলম নিয়ে মাটিতে হয়তো খাতা রেখে কিছু একটা লিখছে বা করছে। বেস্ট ফ্রেন্ড কে এরকম দেখতে কারই বা ভালো লাগে। হ্যাঁ সে একটা ভূল করেছে ঠিক তাই বলে কি তাকে দূরে সরিয়ে রাখবো? উঁহু, একটুও না।
নিপা সহ আমি পা টিপে টিপে গিয়ে দাঁড়ালাম। মিতা ওর খাতায় তিনটা পেত্নী এ্যাকেছে দেখতে পুরো পেত্নীদের মতোই লাগছে। তবে একটা মিতা নিজে আর একটা নিপা তারপর আমি। আমাদের কি পেত্নী দের মতো দেখতে নাকি আজব। খাতার নিচে ইংলিশ ওয়ার্ডে লিখছে সরি।

আমি আর নিপা পেছনে থেকে ‘ব’ করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণের জন্য ‘থ’ মেরে বসে রয় মিতা৷ পরক্ষণে পেছনে ঘুরে আমাদের দুজনকে দেখে কুমিরের কান্না শুরু করে।

কাঁদতে কাঁদতে দুই হাতে আমাদের দু’জনকে জড়িয়ে ধরে বলে,’ আমি ভেবেছিলাম তোরা সত্যি আর আমার সাথে কথা বলবি না ‘

‘ তা কি করো হয়, যতই হোক আমরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড, ‘

#চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

#আরোহী
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_০৭
___________
‘ আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি- তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার
কাছে চেয়ে নিলাম।

হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
তাকেই কাছে ডেকে, মনের
আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তবু ফিরিয়ে দিলাম।

তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে,
চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম।

কালো মেঘে ঢেকে গেছে আকাশে ঘনঘটা অন্ধকার। তারাদের উপস্থিতি নেই। মাঝে মাঝে গুড়ুম গুড়ুম শব্দে ডেকে চলেছে। মেঘেরা গলে বৃষ্টি রূপে পৃথিবীতে আসতে চলেছে। ‘

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গ্রিলের ফাঁকায় হাত রেখে ছন্দ পতন করছিল আরাফ৷ পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠ স্বর ভেসে আসল,

‘ বাহ! তুমি যে এত ভালো কবিতা পারো তা তো জানা ছিল না৷ ‘

‘ আরোহী হঠাৎ আমার রুমে তা কিসের জন্যে আসা হলো? ‘ পেছনে ঘুরে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল আরাফ।

‘ এটা কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না আরাফ। ‘

‘ হুম জানি। ‘

‘ তাহলে উত্তর কেনো দিলে না? ‘

‘ মাঝেমধ্যে ছোটছোট কবিতা মনের মধ্যে ফুটে উঠে ওই আরকি তেমন কিছু না। এখন তুমি বলো এমনি এসেছো নাকি কোনো কাজ আছে? ‘

‘ এমনি এসেছি। আজ আমি অনেক খুশি তাই। ‘

‘ এত খুশি কিসের জন্য ম্যাডাম? ‘

‘কেনো আবার কি জানো না নাকি? আজ আমার ফুপা ফুপি চলে গেছে তাই আমি অনেক খুশি বুঝেছো? ‘

‘ হুম বুঝেছি। চলো ডিনারের সময় হয়ে গেছে একসাথে নিচে যাই ‘

‘ হুম চলো। ‘
_______

ডাইনিং টেবিলে সকলে একত্রিত হয়েছে। জেনো এইসময় টার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন আরমান খান। সকলে আসতে সকলের উদ্দেশ্য বলেন,

‘ আরোহী শোনো, কাল আমাকে অফিসের কাজে কক্সবাজার যেতে হবে। এখন তোমার আম্মু ও আমার সাথে যাওয়ার বায়না ধরেছে। বাধ্য হয়ে আমিও যাওয়ার সম্মতি দিয়েছি। আমরা দুইদিন পর ফিরে আসবো তোমরা দু’জন সাবধানে থাকতে পারবে তো? ‘

‘ আরাফ তুমি আরোহী কে দেখে রাখতে পারবে যতদিন আমরা না ফিরে আসি? ‘

‘ জি আঙ্কেল আমি পারবো। ‘

‘ আব্বু না গেলে হয় না? ‘ করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল আরোহী।

‘ চেষ্টা করেছি মা,সম্ভব না যেতেই হবে। ‘

আরোহী রাতে আর কিছু খেলো না। অভিমান করে রুমে চলে গেলো। সকলে খাওয়া শেষ করে একসাথে আরোহীর রুমে যায়। আরমান খান অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে মেয়েকে খাইয়ে দেয়। রাতে ঘুম পারিয়ে রুমে লাইট অফ করে চলে যায়।

সকালে ভোরের আলো ফুটতেই আরমান খান ও উনার স্ত্রী বের হয়ে যায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। আরোহী উদাসীন থাকলেও তার মন ভালো করার দায়িত্ব আরাফের।
রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে আরোহী পেছন থেকে আরাফ হুট করে এসে লাফিয়ে সামনে দাঁড়ায় মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে চেঁচিয়ে বলে,’ আরু আমি ভূত আমাকে ভয় পাও। ‘

আরোহী আরাফকে দেখে সশব্দে হেসে উঠল। আরোহীকে হাসতে দেখে আরাফ ও হাসতে লাগল।

*

কিছুক্ষণ বাদ আরাফ ও আরোহী, সাথে মিতা ও নিপা একসাথে ঘুরতে বের হয়।

আরোহী ও মিতা দু’জনেরই মাথা ঘুরছে মাথায় হাত দিয়ে বলল, তা শুনে নিপা বলল, ‘ তোদের কফি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে এখন তাইতো। তাই ঢং না করে সোজাসুজি বললেই তো পারিস। ‘

‘হু হইছে বুঝতে পারছিস তো এখন চল ক্যাফেতে যাই ‘ মিতা বলল।

‘ হুম হুম আরাফ নিপু চল প্লিজ। ‘ আরোহী বলল।

আরাফ ও নিপা যাওয়ার জন্য রাজি হলে চারজনে একটা কফি শপে এসে বসে। একটা ঘন্টা হয়েছে চারজনে ঘুরছে। ওয়েটার এসে চার কাপ কফি দিয়ে চলে যায়। কফি মগ থেকে গরম গরম ধোঁয়া উড়ছে। আরোহী আরাফকে বলল,’ আরাফ তুমি এমন কেনো? ‘

‘এমন কেমন? ‘ আরাফ জানতে চাইলো।

মিতা বলল, ‘ একটু অন্য রকম। ‘

‘ একটু না পুরো টাই ভিন্ন। ‘ নিপা বলল।

‘ তোমরা তিনজন মেয়ে একলা আমি নিরীহ পুরুষ কনফিউজড হচ্ছি৷ ‘

আরোহী ধুরাম করে আরাফের পিঠে কিল মেরে বসে। আরাফ বলে উঠে,’ আরু দিস ইজ টু মাচ ‘

হাসতে হাসতে গাল ব্যাথা হয়ে যায়। চারজনের সাথে থেকে সময় ভালো কাটতে ছিল আরোহীর। তবে আরোহীর দুনিয়া উল্টেপাল্টে গেলো টিভির খবর চ্যানেলের একটা সংবাদে আরোহীর জীবন ধুলোয় মিশিয়ে দেয়।
নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে থাকে টিভির পর্দার দিকে। চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে পুরো ক্যাফে জুড়ে। আরোহী কান্না জুড়ে দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে, ‘ আব্বু-আম্মুওওওও ‘

আরোহীর রিয়াকশনে সকলে আরোহীর দিকে তাকালো। চেয়ার থেকে উঠে ক্যাফে থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে পরল। তার পেছনে বাকিরাও বের হলো। আরোহী জ্ঞানশূণ্য হয়ে ছুটতে লাগল চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুকোণা জড়ে যাচ্ছে। পাগলের মতো ছুটছে, পেছন থেকে দৌঁড়ে এসে আরাফ আরোহীর হাত ধরে টান মেরে বাহু চেপে ধরে নিজের সামনে দাঁড় করায়। আরোহী নিজের মধ্যে নেই তার দুইচোখে এখন শুধু তার মা বাবার রক্তাক্ত মুখটা ভেসে উঠছে। মস্তিষ্ক বলছে যেভাবেই হোক তাকে এখন তার মা বাবার কাছে পৌঁছাতে হবে। আরোহী নির্বাক, বাক্যশূন্য, আকস্মিক চাহনি ফেলে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে কাঁদছে আরোহী। আরাফ আরোহীর গালে ল্যাপ্টে থাকা অশ্রুকোণা গুলো মুছে দিতে দিতে মলিন কন্ঠে বলল, ‘ আরু নিজেকে সংযত করো প্লিজ। এভাবে ভেঙে পরো না প্লিজ আমরা এখনই সেখানে যাওয়ার জন্য বের হবো৷ আমরা আঙ্কেল আন্টির কাছে পৌঁছে যাবো৷
আরোহী উনারা ঠিক আছে তাদের কিচ্ছু হয়নি আরু প্লিজ এভাবে ভেঙে পোরো না। উনারা ঠিক আছেন৷ কিচ্ছু হয়নি তাদের আমরা এখনই হসপিটালে পৌঁছে যাবো। চলো আমার সাথে চলো। ‘

আরোহীর হাত ধরে টেনে গাড়ির সামনের সিটে উঠিয়ে বসালো। পেছন থেকে মিতা ও নিপা কাঁপা গলায় বলল,’ আমরাও যাবো তোমাদের সাথে ‘

আরাফ দ্বিমত করেনি মিতা ও নিপা কে যেতে। সাথে নিয়ে চলল। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আরোহী বারবার কেঁদে কেঁদে উঠছে। পেছন থেকে আরোহীকে সান্ত্বনা স্বরূপ মিতা নিপা নানান কথা বলছে এতে আরোহীর কান্নার গতি আরও বাড়ছে। আরাফ হঠাৎ করেই ব্রেক কষলো। সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে পরল। ফ্রন্ট সিটে বসে আছে আরোহী। দরজা খুলে আরোহীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিলো আরাফ। হাত শক্ত করে ধরে আরোহীকে গাড়ির পেছনের সিটে মিতা ও নিপার মাঝখানে বসিয়ে দিয়ে আবারও গাড়ি স্টার্ট দিলো। আরাফের ভাবনা এতে করে আরোহীকে সামলাতে সুবিধা হবে ওদের। গাড়ি চলছে তীব্র গতিতে, তবে এ রাস্তা জেনো শেষ হওয়ার নয়৷ মন বিচলিত হয়ে উঠেছে আরাফের। সংবাদে দেখানো খবর যদি সত্যি হয় তাহলে আরোহীর কি হবে? আরাফ আরোহীকে কিভাবে সামলাবে? শতশত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আরাফের মাথায়। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড় হয়েছে৷ বুকের বা পাশটায় হৃদপিণ্ড জোরে জোরে বিট করছে। ভয় হচ্ছে, সাংঘাতিক ভয় হচ্ছে। দুশ্চিন্তা হচ্ছে হাসপাতালে যাওয়ার পর না জানি কি মর্মান্তিক ঘটনার সাথে তাদের মুলাকাত হয়?

সবশেষ থেকেই শুরু সব কিছুর উর্ধ্বে আরোহী। কিভাবে সামলাবে আরাফ তাকে? মস্তিষ্ক কাজ করা জেনো বন্ধ করে দিচ্ছে। সব কিছু তার গুলিয়ে যাচ্ছে পেছন থেকে আরোহীর মরা কান্না আরাফ কে বিস্ময়ে ঠেলে দিচ্ছে। আরাফের আজ নিজেকে সব থেকে অসহায় লাগছে, ইচ্ছে করছে সব কিছু তছনছ করে দিতে সব কিছু অগোছালো হয়ে গেলো। আরাফের বুক চিড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। চিৎকার করে বুকের উপর থেকে পাথর চাপা কষ্ট গুঁজতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তা সম্ভব নয়৷ এখন এই মূহুর্তে আরাফকে শক্ত হতে হবে। আরাফ ভেঙে পরলে আরোহীকে আর কেউই সামলাতে পারবে না। মেয়েটা যে বড্ড বেশি ইমোশনাল আর এখন সে ভেঙে পরেছে৷ ভেঙে গুড়িয়ে গেছে মাটির সাথে। কষ্ট সইতে না পেরে চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু কোণা গড়িয়ে পরল আরাফের।

#চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here