আমায় ডেকো একা বিকেলে পর্ব ৪

0
811

#আমায়_ডেকো_একা_বিকেলে?
#লামিয়া_সুলতানা_সিলভী ( লেখিনীতে)
#পর্বঃ_৪

আজ সাতদিন হয়েছে সবাই চলে গিয়েছে, আবার সেই আমি আর সামিয়া একা পড়ে আছি! আমরা সব কাজিনরা এক হলে সারাদিন আমাদের হৈ-হুল্লর করতেই যায়! সবাইকে খুব মিস করছিলাম, এমন সময় আয়াশের কল আসলো! আয়াশ এতো রাতে? অবাক হয়ে ফোন রিসিভড করতেই,,,

আয়াশঃ কি সমস্যা, কখন থেকে কল দিয়ে যাচ্ছি ধরছো না কেনো?

লামিঃ কোথায় মাত্রই তো কল আসলো!

আয়াশঃ তাকিয়ে দেখো, এনিওয়ে একটু বেলকোনিতে আসো আমি নিচে দাড়িয়ে আছি!

লামিঃ মানে? কেনো!

আয়াশঃ চুপচাপ আসো, কোন কথা বলবে না!

বেলকোনিতে গিয়ে দেখি সাহেব আমার বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আমার বেলকোনির দিকে তাকিয়ে আছে,,,

লামিঃ কেনো এসেছো এতোদূর?

আয়াশঃ অনেক দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই চলে এসেছি, এবার সুন্দর করে নিচে আসো!

লামিঃ এখন, মানে কি এসবের? (অবাক হয়ে)

আয়াশঃ মানে হলো,, তোমার বাসা থেকে বের হয়ে এসে মেইন ডোর খুলে তারপর বাহিরে আসো, আমি রাস্তায় অনেক্ষন হলো দাঁড়িয়ে আছি!

লামিঃ এতো রাতে এখানে তুমি কি করো?

আয়াশঃ মশাদের সাথে আড্ডা দেই, ষ্টুপিড! এতো কথা কেন? নিচে নামতে বলছি নিচে নামবে ব্যাস, বেশি বুঝবে না!

লামিঃ আমি এখন নিচে যেতে পারবো না, দেখা তো হয়েছে তুমি এবার বাসায় চলে যাও! রাত অনেক হয়েছে এখন নিচে যাওয়া ইম্পসিবল!

আয়াশঃ সবই পসিবল, এক মিনিটের মধ্যে নিচে আসবে তুমি!

লামিঃ পারবো না!

আয়াশঃ তুমি পারবে না মানে, তোমার চৌদ্দ গুষ্টিসহ পারবে!

লামিঃ তাইলে আমার চৌদ্দ গুষ্টিকেই বলো, বাই!

আয়াশঃ খবরদার লামি, এক মিনিটের মধ্যে নিচে না আসলে খুব খারাপ হয়ে যাবে! আগামী একমাস আমাদের যোগাযোগ বন্ধ থাকবে মনে রেখো!

লামিঃ লাগবে না আমার! ( গাল ফুলিয়ে)

আয়াশঃ তোমার না লাগলেও আমার লাগবে, ফাস্ট নিচে আসো নাইলে আজকে সুনামি বয়ে যাবে!

কথাটা বলেই ফোনটা কেঁটে দিলো! পাষাণ লোক,, একটুও সিচুয়েশন বোঝে না! এখন কি করবো? এরে আমি যথেষ্ট পরিমাণের ভয় পাই, আর আম্মু- আব্বুকে তো দ্বিগুণ বেশি ভয় পাই! আবার দেখা গেলো ডিরেক্ট বাড়ির ভেতরেই এতো রাতে চলে আসলো তখন ব্যাপারটা,আরো বিশ্রী হবে! আব্বু যা কখনোই মেনে নিবে না, ওকে কিছু না বললেও আমার অবস্থা খারাপ করবে! এখন আমাকে সামিয়াই সাহায্য করতে পারবে তাই ওর রুমে গিয়ে ওকে সব বললাম! মেয়েটার বুদ্ধি আমার চেয়েও ডাবল, তাই ও সব শুনে বললো,,,

সামিয়াঃ ঠিক আছে, আমি মিশমি আপুর কাছে ফিজিক্স বোঝার কথা বলে তোকে নিয়ে বের হবো! আমি সাইডে থাকবোনি, তুই ভাইয়ার সাথে তাড়াতাড়ি দেখা করে আসবি!

লামিঃ আচ্ছা, আমার লক্ষী বোন!

সামিয়াঃ হইছে আর বলতে হবে না, অন্যসময় তো দেখতেই পারিস না! (মুখ বাকিয়ে) চল এবার আম্মুর কাছে যাই দেখ কি বলে!

ভয়ে ভয়ে আম্মুর রুমে গেলাম, আম্মু এখনো সজাগ! আব্বু শুয়ে পড়েছে তবে ঘুমায় নি! কি করবো এখন? অনেক ভেবে সামিয়াকে আম্মুর কাছে পাঠালাম,,,

সামিয়াঃ আম্মু, আমি ফিজিক্সের একটা ম্যাথ বুঝতে পারছি না, পাশের বাসার মিশিমি আপুর কাছে বুঝে নিতে যাচ্ছি! আমাকে এটা হোমওয়ার্ক দিয়েছে, না করলে স্যার বকবে খুব দরকার! লামি আপুও সাথে যাচ্ছে, ভয় নেই!

আম্মু কিছুক্ষণ আমার আর সামিয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে বললো,,,

আম্মুঃ লামি থাকতে নিচে কেনো যেতে হবে তোর?

সামিয়াঃ লামি আপু তো হিউম্যানেটিসের, আম্মু যাইনা প্লিজ?

আম্মু আর কিছু না বলে নিজের কাজে মন দিলো, আমিও সামিয়ার সাথে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়! ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্পষ্টই দেখতে পেলাম তাকে অগোছালো ভাবে,, একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আয়াশ! আমাকে দেখে হাসি দিয়েই বলে উঠলেন,,

আয়াশঃ এসেছো তাহলে? মেডিসিন কাজে দিয়েছে?

লামিঃ জীবনেও ভালো হবে না!

আয়াশঃ দরকার নেই!

লামিঃ কোনো ডেকেছো? কত কষ্ট করে আসলাম যানো?

আয়াশঃ কষ্ট না করলে কেষ্ট মিলবে কি করে?

এটা বলেই একগুচ্ছ কদম আমার হাতে ধরিয়ে দিলো, আর শিউলি ফুলের একটা মালা হাতে নিয়ে বললেন,,,

আয়াশঃ চুল খোঁপা করো, আমি করতে পারি না নাইলে আমিই করে দিতাম!

তার দিকে কিছুটা বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে অগত্যা চুল হাতখোপা করতেই আমাকে ঘুরিয়ে খোপায় শিউলি ফুলের মালা গুজে দিলো! কোনো সংকোচ না করেই কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন,,

আয়াশঃ ভালোবাসি তোমাকে, এটা বুঝতে পারো না? তাইতো যখন তখন তোমাকে জ্বালাতন করতে চলে আসি, তোমাকে জ্বালাতে আমার ভালো লাগে! তুমি আমাকে ভালোবাসো না?

শুনে দুই সেকেন্ড স্ট্যাচু হয়ে বলে উঠলাম,,

লামিঃ প্রোপোজ করলে আমায়?

আমার কথাটা আমলে নিতেই একরাশ বিরক্ত নিয়ে দিলো এক ধমক,,,

আয়াশঃ দেখো লামি, সাত ঘন্টা আজকে মিটিং করেছি! মেজাজ আমার পুরো খারাপ, বাসায় না গিয়ে ডিরেক্ট তোমার চলে কাছে আসছি! তোমার এসব খাপছাড়া কথা-বার্তা তে আরো বেশি মেজাজ খারাপ হচ্ছে! আমার সাথে তেড়ামি কেনো করো বলোতো, আমি নিচে আসতে বলেছি মানে তুমি আসবে! কেনো, সেটা তো তোমার জানতে হবে না! আর হ্যা এখন বাসায় যাও, আমিও এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবো কাল আবারো অফিস আছে! সারাদিন তো তোমায় সময় দিতে পারিনা! সো কাহিনী না করে আমি যা বলবো তাই শুনবে, ঠিক আছে? এবার ডিরেক্ট বাসায় যাও!

আমিও আর কিছু না বলে ঘুরে দাঁড়ালাম, দুই কদম ফেলতেই পিছে থেকে আবার ডাক পড়লো,,

আয়াশঃ লামি?

আমি পিছে ঘুরতেই একটা চকলেটের বক্স বের করে দিয়ে,,,

আয়াশঃ এটা সামিয়াকে দিয়ো, ও তো মেবি ওখানে দাঁড়িয়ে আছে! আজকে দেখা করতে পারলাম না, ওকে বইলো কাল-পরশু ফ্রী হলে তোমাদের নিয়ে বের হবো! এখন যাও (গাল টেনে)

আমিও সুন্দর করে চলে আসলাম, পিছে ফিরতেই দেখি আয়াশ আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো! আমি তাকাতেই আবার চোখের ইশারায় ভেতরে যেতে বললো! আমি একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে সামিয়া কে নিয়ে ভেতরে আসলাম! সামিয়া আমাকে পর্যবেক্ষন করে বলে,,

সামিয়াঃ এই আপু দাড়া, তুই কি এভাবেই বাসায় যাবি?

আমি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে,,

লামিঃ হ্যা, তো প্রবলেম কি? আমাকে কি উল্লুক দেখাচ্ছে?

সামিয়াঃ খোপায় বেলী ফুল, হাতে কদম, চকলেটের বক্স? পাশের বাড়ির আপুর থেকে ফিজিক্সের ম্যাথ বুঝতে এসে এগুলো?

আমার তো খেয়ালই নেই এসব, সামিয়ার কথা খেয়াল হলো! এখন আমি কি করবো? নখ খেতে খেতে বললাম,,

লামিঃ কি করবো তাইলে?

সামিয়াঃ আমি আগে যেয়ে দেখি আম্মু যদি রুমে থাকে তাইলে তো হলোই, আর যদি হলরুমে থাকে তাইলে মাথার থেকে ফুলের মালা খুলে আমার বইয়ের ভেতর দে আর কদম গুলো ওড়নার নিচে সামলা+ চকলেটের বক্স আমার কাছে দে আমি ম্যানেজ করে নিবোনি! ওয়েট আগে দেখি, আম্মু কোথায় আছে!

লামিঃ যা দেখ!

তারপর সামিয়া ভেতরে গিয়ে দেখে আম্মু নিজের রুমেই আছে, আমি যেনো এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম! আমি সব নিয়ে আমার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম সকালে ভার্সিটি আছে বলে! কিন্তু ঘুম বাবাজি আমার কাছে ধরা দিলো না, হঠাৎ করেই সেদিনের কথা আবার মনে পড়ে গেলো! কি ভালো মুহূর্তই ছিলো সেদিন, সব আত্নীয়রা চলে যেতেই আমি বিকালে আয়াশের সাথে বের হয়ে পড়লাম! আর সে আমাকে নিয়ে গেলো একটা রেস্টুরেন্টে ভিতরে, আমি ভিতরে যেতেই গোলাপ আর গাঁদা ফুলের বর্ষন আমার ওপর পড়তে লাগলো! পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা, মাঝখানে জাস্ট একটা টেবিল! টেবিলে হাজারো গিফট সাথে ফুলের তোড়া রাখে! টেবিলের আগে শুভ্র টাইলসের ফ্লোরে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে “আয়াশ+লামি” লেখা! আমি তো পুরো অবাক কারণ আমার সাথে এমন টা ঘটতে পারে আমার কল্পনারও বাইরে ছিলো! আমি চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছি, খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে! এবার আমি আয়াশের দিকে তাকাতেই দেখি সে পকেটে দুই হাত গুজে আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে! তার মানে সব ডেকোরেট মেবি আয়াশ করেছে,,,

লামিঃ আচ্ছা এখানে কেও নেই কেনো?

আয়াশঃ সব কেনোর উত্তর হয়না, তুমি বলো এবাত হ্যাপি তো?

মুখে কিছু না বলে মুচকি হেসে মাথা নাড়লাম!

আয়াশঃ ধন্য হলাম মিসেস শিকদার !

লামিঃ এই সব ডেকোরেশন আপনি করেছেন ?

আয়াশঃ জ্বি আপু আমি করেছি!

লামিঃ আমার জন্য?

আয়াশঃ জ্বি না, আমার বউয়ের জন্য!

উফফ,,, এই লোকটার কথা বার্তার সাইজ আমার এতো অসহ্য লাগে, যা বলার মতো না! আমি খুশি হবো না মুড খারাপ করবো নিজেই বুঝতে পারছিলাম না! যাই হোক, সে যে আমাকে খুব পছন্দ করে এটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন! আমি ক্ষণিকের জন্য বাস্তবে ফিরে আবার চোখ বন্ধ করে ভাবনার জগৎে ডুব দিলাম,,,

সেদিন সে আমাকে আরেক দফা অবাক করে ফেলে,, আমার সামনে হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে আমার দুহাত নিজের হাতে নিয়ে এক নাগারে বলতে থাকে,,,

আয়াশঃ জানো লামি, আমার জীবন টা এতো সহজ ছিলো না! ছোট থেকে অনেক কষ্ট জমিয়ে এমন তিক্ত হয়েছি, আমি আগে এতোটা রগচটা ছিলাম না! আমার লাইফে অনেক কষ্ট জমিয়ে আছে, আমি সবই তোমাকে বলবো কিন্তু সেটা আজকে না, আমি চাইনা আজকে এমন সময় দু’জনের মুহূর্ত টা অন্যরকম হোক! আমাকে যদি তুমি নিজের করে নাও তাহলে বিশ্বাস করো, আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে তোমায় ভালোবাসবো, কিন্তু শর্ত একটাই আমাকে কখনো ছেড়ে যাওয়া যাবে না! ছেড়ে যাওয়ার কষ্টটা আমি খুব কাছে থেকে দেখিছি, তাই আমি চাইনা তুমি আমাকে কখনো কষ্ট দিয়ে ছেড়ে যাও আমি তাহলে সইতে পারবো না! আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসতে পারিনি কারণ দুইদিনেই কাওকে ভালোবাসা যায় না, তবে এটা কথা দিচ্ছি জীবনেও কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না! সব সময় তোমাকে আগলে রাখবো, নিজের করে রাখবো,, তুমি কি আমার এই তিক্ত হৃদয়টা মেনে নিয়ে আমাকে ভালোবাসতে পারবে?

আয়াশের প্রতিটি কথায় মায়ার প্রভাব ছিলো! আমি নিজেও কেমন তার মায়ায় জরিয়ে গিয়েছি, চাইলেও এর থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাবো না!

লামিঃ উঠেন!

আয়াশঃ আমাকে তুমি মেনে নিবে না?

লামিঃ,,,,,,

আয়াশঃ প্লিজ বলোনা লামি, ভয় লাগছে ভীষণ! দেখো আমি অযথা কাওকে প্লিজ বলা পছন্দ করি না তবুও তোমাকে বলছি!

লামিঃ উঠতে বলেছি না?

আয়াশঃ আগে বলো!

লামিঃ আমি যদি মেনে না নেই? পরশু তো বিয়ে ঠিক হলো, আমি যদি এখন ভেঙে দেই বিয়ে?

আয়াশঃ আমি জানি দেবেনা!

লামিঃ কেনো দিবোনা?

আয়াশঃ কারণ আমার মতো তুমিও আমার মায়ায় পড়ে গিয়েছো!

লামিঃ কে বলেছে?

আয়াশঃ আমি জানি!

লামিঃ ভুল জানেন!

আয়াশঃ সঠিক জানি আর এটাও জানি এ্যান্সার পজিটিভ আসবে!

লামিঃ তাহলে আমি বলার অপেক্ষায় আছেন কেনো?

আয়াশঃ তোমার থেকে জানতে চাই!

আমি ওকে টেনে তুলে ওর হাত টা শক্ত করে ধরে বললাম,,,

লামিঃ জীবনে চলার পথে সব-সময় এভাবেই হাতে হাত রেখে চলবো, আল্লাহ না চাইলে কখনো ছাড়বো না!

আয়াশঃ লামি?

লামিঃ হুম?

আয়াশঃ সত্যি আমাকে বিয়ে করবে?

লামিঃ বিয়ে করবো বলিনি, হাত ছাড়বো না বলেছি!

আয়াশঃ তারমানে বিয়ে করবে না?

লামিঃ না!

আয়াশঃ আমাদের বিয়ে কিন্তু ঠিক হয়েছে!

লামিঃ ভেঙে দিবো!

আয়াশঃ খুন করে ফেলবো তোমাকে!

আমি মুচকি হাসলাম ওর কথায়,,,

আয়াশঃ তুমি জানোনা তুমি আজ আমাকে কি দিলে, সারাজীবন চলার সাথী দিয়েছো! আমি অনেক খুশি অনেক, এই খুশীতে একটু জরিয়ে ধরি?

আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই,,,

আয়াশঃ জাস্ট একবার!

আমি আর কিছু বলিনি ও আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরেছে, আমার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে! মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ এইভাবে থাকলে আমি হার্ট ফেল করবো! আয়াশ আমাকে বসার জন্য ইশারা করলো, আমি বসতেই সে অপর সাইডে বসলো! খুব বুঝতে পরছি মহাশয় আমার দিকেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে! এসব ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আমি নিজেও জানিনা!
__________________

সকাল সকাল আমার শ্রদ্ধেয় মা জননী আমাকে ডাকতে ডাকতে হয়রান,,,

আম্মুঃ লামি, এই লামি,,, উফ এই মেয়েটা এত অলস কেন? একে নিয়ে তো আর পারিনা, দুদিন পর যাবে অন্যের ঘরে সেখানে বলবে মা কিছু শিখায় নি! এই তুই সারা রাত কী করিস বলতো? আয়াশ কখন থেকে কল দিয়ে যাচ্ছে, তোকে না পেয়ে আমাকেও দিলো, আর তুই সকাল সকাল ঘুমে পড়ে থাকিস, উঠতেই চাস না! তোর না আজকে ইউনিভার্সিটি যেতে হবে, উঠ তাড়াতাড়ি!

আমার মায়ের ক্যাসেট বাজলে আর থামাথামির নাম নেই, তাই আর বিছানায় শুয়ে না থেকে উঠে পারলাম! আড়মোড়া ভেঙ্গে হাই তুলতে তুলতে শোয়া থেকে উঠে বসলাম, ঘুম ঘুম কন্ঠেই আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,

লামিঃ সকাল সকাল কেন এত ডাকা ডাকি করো আম্মু? তোমার কি গলা শুকিয়ে যায় না? বলছি কি মা জননী, দু’দিন পরে তো চলেই যাবো পরের ঘরে এই কয়েকদিন না হয় একটু আরাম-আয়েশ করতে দাও!

আম্মু গায়ের কাথা ভাজ করতে করতে বললো,,,

আম্মুঃ মা ১৯ বছর হলো অনেক আরাম করেছো, অতো আরাম করতে নেই! সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে থাকতে মোটা হয়ে যাবি!

আমি আম্মুর কথায় তেমন পাত্তা না দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি ১৫ টা মিসডকল ওঠে আছে! লও ঠ্যালা, এখন কি হবে? আমি তো ভয়ে শেষ, না জানি আজকে কি আছে কপালে! সাথে সাথেই ফোন দিলাম কিন্তু রিং বেজেই যাচ্ছে কেও তুলছে না! “ও কি তাহলে রাগ করলো আমার ওপর?” আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

লামিঃ আম্মু, আয়াশ কি বললো?

আম্মুঃ কি আর বলবে, তুই ঠিক আছিস নাকি? আর বললো ওঠলে কল দিতে! এখন ধুম ধরে বসে না থেকে ফ্রেশ হতে যা, আমি বিছানা তুলবো! জীবনেও তো বাড়ির কাজ করবি না, সেটা তোর কুষ্ঠিতেও লেখা নেই!

আমি আর কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে আবার কল দিলাম কিন্তু এবারও রিং বেজে কেটে গেলো! আমার এখন প্রচন্ড মন খারাপ লাগছে, মন খারাপ নিয়েই রেডি হয়ে নিচে গেলাম ব্রেকফাস্টের জন্য! খাবার খেয়েই একবারে সেখান থেকে চলে যাবো ভার্সিটি! কিন্তু খাবার মাঝেই আয়াশের ফোন, এমন সময় দিলো এখানে আব্বু- আম্মু আছে ওদের সামনে কিভাবে ধরবো! আম্মু থাকলে তাও হতো, কিন্তু আব্বু? আর সে তো অনেকবার কল দিচ্ছে, হয়তো আমার মতো আয়াশও ভাবছে আমি রাগ করেছি! আমি কোনমতে খেয়ে বাহিরে গিয়ে কল দিলাম,,,

লামিঃ সরি তখন খাবার টেবিলে সবাই ছিলাম, তাই ধরতে পারিনি!

আয়াশঃ তুমি ভার্সিটি যাওনি?

লামিঃ যাচ্ছি, রাস্তায় বের হয়েছি!

আয়াশঃ ওকে, রাতে কথা হবে! আমি এখন বিজি আছি, তুমি সাবধানে যেও!

লামিঃ আচ্ছা!

#চলবে…

[ ভুলগুলো মেনশন করে দিবেন, হ্যাপি রিডিং❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here