#Senior_life_partner
পর্ব—-20
Afrin Ayoni
ইসুয়া এতক্ষণ আশেপাশের লোকজনের চেঁচামেচি তে খেলাটা উপভোগ করেছে দ্বিগুণ।কিন্তু এখন সবার চিল্লাপাল্লা ইসুয়ার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। চা সিঙ্গারা খেতে খেতে তারপর ও অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খেলাটা দেখতে থাকে।
তারেক সাহেব হট্টগোল শুনে বাইরে যান। ততক্ষণে রবিন তার প্রাপ্ত ওভার শেষ করে।খেলা শেষে রবিন শুভ আর নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইসুয়া কে নিয়ে ই কিছু একটা আলোচনা করছিলো।তারেক সাহেব বাইরে গিয়ে রবিন দের দেখে খুব অবাক হন। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন,,
তারেক সাহেব– আরে রবিন বাবা তুমি এখানে?
রবিন ও হাসিমুখে এগিয়ে গেল, “এইদিক দিয়ে ই যাচ্ছিলাম আঙ্কেল, খেলা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি।”
তারেক সাহেব– তোমার বয়সে আমি ও এমন ছিলাম।
রবিন– তাহলে চলুন আরেক ম্যাচ হয়ে যাক।
তারেক সাহেব– আগের মত আর জোর নেই বাবা।
রবিন– আচ্ছা, থাক তাহলে।তা কেমন আছেন আপনি?
তারেক সাহেব — ভালো।আরে কথা বলতে বলতে একেবারেই ভুলে গেছি। বাসায় এসো বাবা।
রবিন একটু ভান ধরে,”না আঙ্কেল আজ না।অন্য একদিন।”
তারেক সাহেব– তা বললে তো হবে না। তোমার আন্টির হাতের সিঙ্গারা খেয়ে তো যাও।
শুভ তারেক সাহেবের দিকে তাকিয়ে– I love সিঙ্গারা।
নয়ন — আঙ্কেল চলুন আমরা যাই।আমরা মিস করছি না আন্টির হাতের সিঙ্গারা।রবিন বরং থাক।
রবিন নয়ন আর শুভর দিকে তাকিয়ে– আমাকে রেখে তোরা যাবি??
শুভ — আমাদের কি দোষ?তুই ই তো যাবি না বলছিস।
তারেক সাহেব ওদের দুষ্টুমি দেখে হাসতে থাকে। তারপর বলে উঠলো, “তোমরা তিনজন ই চলো তো।”
তারেক সাহেব ওদের নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো। এদিকে ইসুয়া তার বারান্দায় বসে এতক্ষণ সব দেখছিলো। এখন সে তার বাবার উপর প্রচন্ড বিরক্ত। কি দরকার এদের বাড়িতে আনার….just Disgusting
রবিন দের দেখে খুব অবাক হন ঝুমা বেগম। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, “আরে তোমরা!”
রবিন– হুম আন্টি চলে এলাম।
শুভ — আপনার হাতের সিঙ্গারা খেতে।
ঝুমা বেগম– বেশ করেছো।
রবিন– কেমন আছেন আন্টি?
ঝুমা বেগম– ভালো।কিন্তু আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।
রবিন– কেন আন্টি?
ঝুমা বেগম– সে ই যে গেলে আর এসেছো এ বাড়িতে।
শুভ রবিনকে চোখ মেরে বলে, “আপনি চাইলে রোজ আসবো আন্টি আমরা।”
ঝুমা বেগম– তা তোমাদের যখন খুশি আসতে পারো, নিষেধ করেছে কে?
রবিন এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো– নিশুয়া বাড়িতে নেই আন্টি?
ঝুমা বেগম– আছে তো।স্কুল থেকে বাসায় ফিরে হয়তো ঘুমাচ্ছে। দাঁড়াও আমি ডেকে দিচ্ছি।
ঝুমা বেগম নিশুয়া কে ডাকতে থাকেন।মায়ের ডাকে নিশুয়া আর ইসুয়া একসঙ্গে তাদের রুম থেকে বের হয়ে আসে। রবিন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ মারে। ইসুয়া তখন সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে রবিনকেই পর্যবেক্ষণ করছিলো। রবিনের এহেন কান্ডে ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গায়। রবিন মিটিমিটি হাসছে।
নিশুয়া তো ওদের দেখে খুব excited…. দৌড়ে এসে গল্প জুড়ে দেয়। এদিকে ইসুয়া ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হতেই রবিন শুভ আর নয়ন দুষ্টু হাসি দিয়ে একসঙ্গে বলে উঠলো, “আসসালামু ওয়ালাইকুম ম্যাম।”???
ইসুয়া যেন অস্বস্তি তে পড়ে গেল। তারা যে মজা নিচ্ছে সেটা ইসুয়া ভালো ই বুঝতে পারে।তারা সবাই মিলে চা সিঙ্গারা খেতে খেতে অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়। হঠাৎ নিশুয়া রবিনের হাত ধরে বললো,”চলো ভাইয়া ছাদে যাই।”
তারেক সাহেব– যাও বাবা,আমার ইসুয়া মামণি ছাদে একেবারে বাগান করে বসে আছে।
রবিন ইসুয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে– Ohh প্রকৃতি প্রেমী??
ঝুমা বেগম– সে তো গাছ লাগিয়ে ই খালাস। দিনে দুবেলা বাটি ঘটি টেনে আমাকেই পানি দিতে হয়।
শুভ আর নয়ন ও উঠে দাঁড়ায়।শুভ বললো,”তাহলে আমরা ও বরং ছাদ থেকে ঘুরে আসি।”
নিশুয়া এবার আরেক হাতে ইসুয়া কে ধরলো,”চল আপু।”
ইসুয়া– তোরা যা,আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
নিশুয়া– তা বললে তো হবে না, চলো তো।
নিশুয়া এক প্রকার টেনে ইসুয়া কে নিয়ে আসলো ছাদে। ছাদে এসে রবিনরা তো হা করে আছে।সত্যিই অসাধারণ পরিবেশ। এমন একটা জায়গায় ই যথেষ্ট মন ভালো করার জন্য।
নয়ন — just awesome
নিশুয়া– আমার আপুর হাতের যাদু।
শুভ — সত্যি অনেক সুন্দর।
রবিন এখনো কোনো কমপ্লিমেন্ট করেনি দেখে নিশুয়া তার দিকে তাকালো।রবিন তখন ও ঘুরে ঘুরে বাগানটা দেখছিলো। ছাদের একপাশে পুরো গোলাপের সারি। বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুল একপাশ জুড়ে।লাল, গোলাপি,সাদা,হলুদ,লাল সাদা,এমনকি আরো কয়েকটি প্রজাতির গোলাপ।
মাঝের সারিতে নয়নতারার সমাহার। লাল,সাদা আর হলুদ এই তিন প্রজাতির নয়নতারা ফুল।
আর শেষের সারিতে সন্ধ্যামালতী ফুলের আকর্ষণীয় গাছ গুলো ঝুপড়ির মত হয়ে আছে।
রবিন নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে– আমার মনে হয় না কোনো আনরোমান্টিক হাতের ছোঁয়া এই বাগানে আছে?
নিশুয়া– মানে?
শুভ মুচকি হেসে, “তুই কিভাবে জানলি উনি আনরোমান্টিক?”
নিশুয়া ও এবার ব্যপার টা ধরতে পারে।রবিন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার ফিরতি কিস খানা এখনো বাকি!”
ইসুয়া চোখ বড় বড় করে তাকায় রবিনের দিকে। রবিন সেদিকে তোয়াক্কা না করে নিশুয়া কে বলে,”শালিসাহেবা বিয়ের পর আমরা বেড়াতে এলে আমি আর তুমি এখানেই সময় কাটাবো।”
নিশুয়া— Done????
ইসুয়া নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, “তোকে আমি জবাই করবো কুত্তি।”
নিশুয়া অবুঝের মত তাকিয়ে– কেন?আমি কি করলাম? আমরা কি তোমাকে নিয়ে কিছু বলেছি?
ইসুয়া হা করে রইলো।রবিন নিশুয়ার কথায় তাল মিলিয়ে বললো — সত্যিই তো আমরা কি আপনার নাম নিয়ে কিছু বলেছি?আমি বিয়ের পর বউয়ের সাথে আমার বাবার বন্ধুর বাড়িতে আসতে পারি না?
ইসুয়া এবার ভালোভাবেই ফেঁসেছে বুঝতে পারে। রবিন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,”নাকি আপনার মনে হয় আপনি ই আমার ……”
ইসুয়া রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো– Shut up… আমি যে আপনার teacher ভুলে যাবেন না।
রবিন– আমি এইখানে আমার বাবার বন্ধুর দুইটা beautiful রাজকন্যা ছাড়া কাউকে দেখছি না। তার মধ্যে একজন আমার বাবার ছেলের বউ, আমার মায়ের নাতি নাতনি দের মা, আমার বোনের ছোট ভাইয়ের বউ, আমার দাদীমার একমাত্র ছেলের ঘরের দুইমাত্র সন্তানের ছোটজনের কলিজা???
ইসুয়া রবিনের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তার মাথা ঘুরছে।মুখ ভার করে সে ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। নিশুয়া ইসুয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রবিন কে বললো — You r great ভাইয়া ??
তারপর চারজন মিলে সে কি অট্টহাসি!!!
—————————————————-
স্বাদ ফোনটা কানে ধরলো, ততক্ষণে অপর পাশ থেকে রিসিভ হয়…..
Hlw রিদ।
রিদীমা– হ্যাঁ বল ডাক্তার।
স্বাদ– দেখা করতে পারবি একটু?
রিদীমা– আমি ফ্লাইটে ডাক্তার,দেশে ফিরছি।
স্বাদ– হঠাৎ! Any problem?
রিদীমা– দাদীমার শরীর অসুস্থ।????
স্বাদ– কবে ফিরবি?
রিদীমা– জানি না,long time থাকতে হবে হয়তো।
স্বাদ– ওহ আচ্ছা।
রিদীমা– আন্টির কি খবর,ওনার শরীর কেমন আছে?
স্বাদ– মাকে নিয়ে একটু বাইরে হাঁটতে বেরিয়েছি।
রিদীমা– ওকে,ওনার দিকে খেয়াল রাখিস ডাক্তার।
স্বাদ– ok take care….bye
রিদীমা– Bye
ফোনটা কেটে দিল রিদীমা। মুখ মলিন করে ফোনটা কান থেকে নামায় স্বাদ। পাশেই রেহানা বেগম বসা ছিলো। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে কি বললো?”
স্বাদ মায়ের দিকে তাকিয়ে– ও দেশে ফিরছে মা।
রেহানা বেগম– হুট করে দেশে কেন?
স্বাদ– ওর দাদীমা অসুস্থ। ????
রেহানা বেগম– ওহ তাহলে ওর যাওয়া খুব জরুরী।
স্বাদ– হুম।
রেহানা বেগম ছেলের মন খারাপ দেখে তার হাতটা শক্ত করে ধরে। স্বাদ ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে,,
স্বাদ– জানো মা, তুমি যখন বললে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখতে তখন থেকেই আবার আমার মনটা লোভী হতে শুরু করেছে। কিন্তু……..
রেহানা বেগম– কিন্তু কি?
স্বাদ– সেটা আর হওয়ার নয়।
রেহানা বেগম– কেন হবার নয়?
স্বাদ– রিদ খুব জরুরী কিছু না হলে দেশে যায় না,আর গেলেও কখনো একঘন্টা দুঘণ্টার জন্য যায়। সে থাকে না।আর তার একমাত্র কারণ হচ্ছে শাহেদ।শাহেদের প্রতি দুর্বলতা সৃষ্টি হবে বলেই দেশ আর পরিবারের থেকে দূরে থাকে।কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই।হয়তো……….
রেহানা বেগম ছেলে কে থামিয়ে দিয়ে বললো, “তোর গোবর মার্কা বুদ্ধি থেকে কথা কম বল।”
স্বাদ– মা তুমি রিদ কে চিনো না।
রেহানা বেগম– চেনার প্রয়োজন ও নেই।
স্বাদ– মানে।
রেহানা বেগম– তুই তোর দিক থেকে চেষ্টা করবি, বাকিটা যা হবার দেখা যাবে।
স্বাদ– কিন্তু মা …………
রেহানা বেগম– দুটো টিকিট কেটে ফেল জলদি,আমরা ও দেশে ফিরছি।
স্বাদ– এটা কখনো ই সম্ভব না মা।
রেহানা বেগম– কি সম্ভব কি সম্ভব না,তা পরে দেখা যাবে। এখন যা বলছি কর।
স্বাদ– এমনিতেই তোমার অসুস্থতার জন্য এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছি।এখন……..
রেহানা বেগম– আমাকে বোকা বানাস না,চাইলেই তুই এক বছরের ছুটি ও কাটাতে পারিস হসপিটাল থেকে। তোর সেই সুযোগ আছে।
স্বাদ– মা বোঝার চেষ্টা কর।
রেহানা বেগম– আমি কিচ্ছু জানি না, তুই এক মাসের ছুটি নিয়ে নে, আমি ও আমাদের ঢাকার বাড়িটা থাকার উপযুক্ত করার জন্য লোক ঠিক করছি।
স্বাদ– আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়।
রেহানা বেগম একদিকে খুশি হন অপরদিকে অবাক হন ছেলের সম্মতি জ্ঞাপনে।সত্যিই তার ছেলে টা রিদীমা কে কতটা ভালোবাসে। ব্যাপার টা জানার পর রিদীমা কি করবে দেখা যাক।
ফ্লাইটে বসে আছে রিদীমা। আফজাল সাহেব একের পর এক ট্রাই করছে তাকে কলে পাওয়ার জন্য। কিন্তু রিদীমা বাবার কল কেটে মেসেজ করে।
আফজাল সাহেব ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে রিদীমার মেসেজ চেক করেন।যাতে স্পষ্ট লেখা — “আমি ফ্লাইটে dad …. কল করো না। দেশে ফিরছি।”
আফজাল সাহেব মেয়ের মেসেজ পড়ে স্বস্তি বোধ করলেন।
……………………………………………………………
রবিন ইসুয়া দের ছাদে থাকাকালীন সময়েই রবিনের ফোনে কল আসে তার মায়ের। কলটা রিসিভ করে,,
রবিন– মা বল।
দিতী বেগম — জলদি বাড়িতে আয়।
রবিন– কি হয়েছে মা?
দিতী বেগম– তোর দাদীমার………..???
বেশি কিছু বলতে পারলেন না আর।ডুকরে কেঁদে উঠলো রবিনের মা।ততক্ষণে যা বোঝার বুঝে গিয়েছে রবিন।দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে হন্যে হয়ে বেরিয়ে যায় ইসুয়া দের বাড়ি থেকে।রবিন কে এভাবে বেরুতে দেখে ইসুয়া আর তার মা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে।
শুভ নয়ন আর নিশুয়া কে জিজ্ঞেস করে ঝুমা বেগম,,
ঝুমা বেগম– কি হয়েছে?এভাবে কই গেল?
নয়ন — ওর দাদীমা হয়তো গুরুতর অসুস্থ। বাড়ি থেকে কল এসেছে।
ঝুমা বেগম– ওহ।
ইসুয়া আর নিশুয়ার মনটাও খারাপ হয়ে গেল।নয়ন ঝুমা বেগমের দিকে তাকিয়ে– আন্টি আমরাও বরং ওর সাথে যাই।দেখি কি অবস্থা??
ঝুমা বেগম– আচ্ছা বাবা যাও।ছেলেটা যেভাবে ছুটলো…….???
নয়ন আর শুভ ও দেরি করলো না। রবিনের পিছু পিছু গেল।ইসুয়ার রবিনের জন্য মায়া হতে থাকে। ইস!একটু আগে না কত হাসি খুশি ছিলো ঐ মুখ টা।
______________________(চলবে)