#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [১৪]
#Sadiya_Jannat_Sormi (লেখিকা)
হালকা ডিম লাইটের নীল আলোর নিচে বসে আছে ইশতিয়াক। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা তার কিচ্ছু না। অহনার সাথে ওর বাসায় যাওয়ার পর মেঘার সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝতে পারলো মেঘা ড. মাহদী কে আগে থেকেই ভালোবাসে, এখানে ওর মেঘার মনে জায়গা পাওয়ার কোনো চান্স নেই। কিন্তু ওর অবাধ্য মন তো মেঘা কেই চাইছে, যদিও ভুল করে ভুল মানুষের কাছে চিরকুট টা এসেছিল ভুল মানুষের থেকে তারপরও সেই চিরকুট টা পড়ে এক অবাধ্য মায়ায় জড়িয়ে পড়েছে ইশতিয়াক।কেউ হয়তো কোন সামান্য একটা চিরকুট পড়ে কারো প্রেমে/মায়ায় পড়ে না কিন্তু ইশতিয়াকের তার উল্টো টা হয়েছে।সে এটা পড়েই মেঘার মায়ায় পড়েছে যদিও সে জানে এটা মেঘা দেইইনি ওকে। অহনাদের বাসায় গিয়ে সবকিছু শুনে ও কি মনে করে মেঘা কে উৎসাহিত করলো ড. মাহদীর প্রতি ও নিজেও বুঝতে পারছে না, শুধু এটুকু বুঝতে পারছে যে ও ঝোঁকের বশে মেঘা কে ওসব কথা বলে চিরকুট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে। এখন নিজের মাথার চুল নিজেকেই ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে ইশতিয়াকের,যাও একটা উপায় ছিল মেঘা কে পাওয়ার কিন্তু সেটাও ও নিজের হাতেই নষ্ট করে এসেছে।মেঘার সম্পর্কে এমন কিছু জেনেছে অহনার থেকে যেগুলো শুনে ওর প্রতি আরো মায়া বাড়ছে তার, ভয়ঙ্কর এক কালো অতীত কে সাথে নিয়ে মেঘা স্বাভাবিক ভাবেই চলছে সেটা ভাবতেই ওর ভালো লাগছে। কোনো মেয়েই পারবে না যার জন্য তার মা’কে হারাতে হয়েছে তার মেয়ে কে নিজের বোন হিসেবে মানতে, কিন্তু মেঘা ঠিক তার বিপরীত। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সে লিরা কে নিজের বোন হিসেবে মেনে নিয়েছে এমনকি ওকে কোনো রকম দোষারোপ ও করেনি। এমন একটা মানুষকেই তো তার চাই,যে সবসময় স্থান কাল পাত্র বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, জীবনের সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার মতো স্ট্রং মনোভাবের হবে, সেরকম একজনকেই তার দরকার।
মাথায় আর কাজ করছে না ইশতিয়াকের, কপালের বাম সাইডে এক অসহ্য কর সুক্ষ যন্ত্রনা শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে বেডের দিকে এগিয়ে গেল ইশতিয়াক,বেডের কাছে গিয়ে পুরো শরীর এলিয়ে দিল বেডে।
__________________________________
হসপিটালে মাহদীর অবস্থা হয়েছে করুণ।লাবীব রহমান নামের একজন পেশেন্ট ওর সিনিয়র ডক্টরের পেশেন্ট ছিলেন, কিন্তু এখন সিনিয়র ডক্টর নিজেই হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার দায়িত্ব মাহদীর উপর পড়েছে।আই সি ইউ তে লাবীব রহমানের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাহদী লাবীব রহমানের পাগলামি দেখছে, বেচারা একটু পর পর সাইরেন বাজিয়ে চলেছে। শুধু একটা কথাই বলছে,ও আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার মেয়েটাকে নিয়ে গেল রে,কেউ আমার মেয়েকে এনে দাও তাড়াতাড়ি। ওকে দেখলে আমি শান্তি পাবো, কেউ আমার কথা শুনো দয়া করে। মাহদী ওনা কথা শুনে একবার নার্স কে জিজ্ঞেস করেছিল যে ওনার মেয়ে কোথায়, কিন্তু নার্স লিরার মানা শুনে মাহদী কে বলেছে ওনার কোন মেয়েই নেই, উনি শুধু শুধু পাগলামি করছেন। মানসিক অবস্থা ঠিক নেই।লাবীব রহমান কে মেন্টাল হসপিটালে চিকিৎসা করার কথা ভাবছে এখন মাহদী। যেহেতু ওনার কোন মেয়েই নেই তার পরেও উনি মেয়ের জন্য চেঁচামেচি করছেন তার মানে এটা তো শিওর যে উনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। এক্সিডেন্টের জন্য হয়তো ওনার ব্রেইনে আঘাত লেগেছে তাই উনি এইরকম পাগলামি করছেন।
একটু পরে মাহদী হসপিটাল কর্তিপক্ষের সাথে কথা বলে মেন্টাল হসপিটালে লাবীব রহমান কে নিয়ে যাওয়ার সমস্ত ব্যাবস্থা করে ফেললো, এরকম একটা হসপিটালে মানসিক রোগীকে রাখার কোনো মানেই হয় না।আধ ঘন্টা পরেই লাবীব রহমান কে মেন্টাল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো, এইরকম একটা অসুস্থ মানুষ কে দেখে মাহদীর করুণা হলো, আহ্ বেচারা। মেন্টাল হসপিটালে লাবীব রহমানের যা কিছু খরচ লাগবে সবকিছু মাহদী নিজেই বহন করবে ভাবলো, তারপরেই হঠাৎ ভাবলো শুধু শুধু এটা করে কি হবে? মেন্টাল হসপিটাল তো মানসিক রোগীদের জন্য ফ্রি,কেউ যদি স্বেচ্ছায় খরচ চালাতে চায় তাহলে চালাতে পারে। মাহদী অহেতুক ভাবনা বাদ দিয়ে বাসায় ফেরার জন্য হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো। অনেক ধকল গেছে আজ তার উপর দিয়ে, এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট না নিলেই নয়।
______________________________________
মেঘা আর লিরা দু’জনে মিলে অহনাকে জেরা করতে বসলো। অহনার মনে মনে কি চলছে সেটা আজকে ওরা জেনেই ছাড়বে, ইশতিয়াকের দেওয়া চিরকুট টা অহনার কাছে দেখে খানিকটা সন্দেহ হয়েছিল মেঘার তাই এই জেরা। কঠিন মুখ করে অহনার সামনে বসে আছে মেঘা আর তার সামনেই অহনা কাচুমাচু মুখ করে বসে।
তো অহনা, তুই এবার সরাসরি বলবি নাকি অন্য কোনো ব্যাবস্থা নিতে হবে তোর মুখ থেকে সত্যি টা বের করার জন্য?(মেঘা)
আরে, কি সত্যি, কোন সত্যি, সত্যি কি আমি তো কিছুই জানি না মেঘু। তুই এসব কি বলছিস বলতো?(অহনা)
তুমি আর নাটক করিয়ো না অহনাপু, আমরা সবাই সবকিছু জেনে গেছি বুঝতে পেরেছো। তোমার কাছে ঐ ইশতিয়াকের দেওয়া চিরকুট টা কি করছে বলোতো, ওটা তো মেঘাপু পুড়িয়ে ফেলার জন্য দিয়েছিল তোমাকে।আর কালকে যখন আমরা সবাই গল্প করছিলাম তখন আমি আর মেঘাপু খেয়াল করেছি তুমি বারবার ইশতিয়াকের দিকে তাকাচ্ছিলে। কেন বলো বলো বলো, নাহলে আজকে তোমার রেহাই নেই।(লিরা)
তোরা সত্যিই সব কিছু শুনবি,পরে আবার আমাকে কিছু বলবি না তো?(অহনা)
না আমরা কিছু বলবো না, তুমি খুলে বলো সবকিছু আমাদের কে।(লিরা)
অহনা ওদের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর আস্তে আস্তে বলা শুরু করলো,
আসলে তোরা সবাই যেটা ভাবছিস সেটা নয়।তোরা সবাই এটাই ভাবছিস তো যে আমি ইশতিয়াকের প্রেমে পড়েছি তাই এসব কিছু কিন্তু বাস্তবিকে তা নয়। আমার ইশতিয়াক কে প্রথমদিন ভালো লেগেছিল তবে সেটা প্রেমিক হিসেবে ভালো লাগা নয়, আমার তো ওকে মেঘার জন্য ভালো লেগেছিল আর তাইতো আমি ওকে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই মেঘার রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছিলাম। তবে আমার বিহেবিয়ার এমন ছিল যে যে কেউই ভাববে আমি ইশতিয়াকের প্রেমে পড়েছি, আমি ইচ্ছে করেই এমন বিহেবিয়ার করেছি। কারণ আমি ইশতিয়াকের দেওয়া চিরকুট টা পড়েছি,মেঘু তুই যদি ওর চিরকুট টা পড়তি তাহলে তোর মনটা এক মুহুর্তের জন্য হলেও ওর দিকে আটকে যেতো।ও বাইরের জীবনে যতো স্ট্রং হোক না কেন ভিতরের জীবনে একেবারে অসহায়, বদমাইশ একটা মেয়ে যার নাম আয়শি সে ওর জীবন টা শেষ করে দিচ্ছে যেটাকে ও চাইলেও ওর জীবন থেকে সরাতে পারছে না। তুই জানিস মেঘু ও তোকে ওর জীবনে চেয়েছিলো যেন তুই এসে ওর জীবন টা সুন্দর করে দিস, ওর জীবন থেকে আয়শি নামের মেয়েটিকে দূর করে দিয়ে তোর জায়গাটা বুঝে নিস। কিন্তু তুই তো সেই চিরকুট টা পড়লি না তাই বুঝতে ও পারলি না ওর কথা গুলো। আমি যখন ওই চিরকুট টা পড়লাম তখন ভাবলাম ওকে আমি ই না হয় সাহায্য করি, ওর প্রেমিকা হওয়ার নাটক করে আমিই না হয় ওর জীবন থেকে আয়শি বস্তু টাকে দূর করে দেই।তাই আমি ওইরকম করেছি ওর প্রতি।আর আরেক টা কথা, মেঘু ড. মাহদী তোর ভালোবাসা নয় ভালো লাগা। তুই যদি ওকে ভালোবাসতিস তাহলে তুই অনেক রকম পাগলামিই করতিস যেরকমটি মাহদী নিজে করেছে।ও তোকে ভালোবাসে বলেই কিন্তু তোকে চিরকুট টা দিয়েছে কিন্তু ও তোর ভালো লাগা বলেই তুই ওকে কিছু বলতে পারিস নি,ও তোকে মেনে নিবে না এটার ভয় পেয়েছিস, নিজের অতীত কে ভয় পেয়েছিস। আর হ্যা,আমার ইশতিয়াকের প্রেমে পড়ার কোনো দরকার নেই। আমার জন্য আছে অন্য কেউ একজন, ইশতিয়াক কে আমি আমার মেঘুর জন্য সিলেক্ট করেছিলাম।(অহনা)
মেঘা অহনার কথা শুনে কোনো রকম রিয়েকশন করতে পারলো না।
#চলবে
[আসসালামুয়ালাইকুম। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়]