উপন্যাসের সারাংশ প্রহর পর্ব ১৩

0
653

#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [১৩]
#Sadiya_Jannat_Sormi (লেখিকা)

রুম থেকে বের হয়ে মাহদী নিজের গাড়ি টা নিয়ে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে।মা আজকে তার প্রতি সমস্ত সম্মান ভালোবাসা সব কিছু নিজের হাতে নষ্ট করে দিয়েছে। এখন যদি মা’কে দেখে তাহলে ওর ক্ষনে ক্ষনে রাগ বাড়বে তার থেকে ভালো এখন বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়া।

?

পাথরের মুর্তির মতো বসে আছেন আফরোজা চৌধুরী।মাহদীর বলা কথা গুলো এখনো কানে বাজছে তার, নিজের কান কে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি।যেই মাহদী মায়ের ভয়ে থরথর করে কাঁপে সেই মাহদী কিনা আজ তাকে এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিয়ে গেল তাও আবার একটা এতিম মেয়ের জন্য।মাহদীর বাবার সাথে ওনার ডির্ভোস হয়ে যায় যখন মাহদী ক্লাস ফাইভে পড়ে তখনই। আফরোজা চৌধুরীর ডক্টরের পেশা টা মাহদীর বাবা ঠিক পছন্দ করতেন না তাই নিত্য তাদের মাঝে ঝগড়া হতো।আর সেই ঝগড়ার অবসান ঘটে তাদের ডির্ভোসের মধ্য দিয়ে।ডির্ভোসের পর মাহদী কে নিজের কাছেই রেখে দেন তিনি, যদিও আইনি ভাবে মাহদীর তার বাবার কাছে থাকার কথা ছিল কিন্তু তার পরেও তিনি তাকে ছাড়েন নি। ওনার একটাই জেদ ছিল তার ছেলেকেও তিনি ডক্টর বানাবেন, ওনাকে দেখিয়ে দেবেন ওনার ছেলে ও ডক্টর হয়ে ওর মায়ের মতই হয়েছে। বলা যায় একরকম জেদের বশেই ছেলে কে ডক্টর বানিয়েছেন তিনি। মাহদী আজ অব্দি এই কথা গুলো কখনো বলেনি তাহলে আজ হঠাৎ করে ওর কি হলো যে এই কথা গুলো বললো? সামান্য একটা মেয়ের জন্য মাহদী নিজের মা’কে এতো গুলো কথা শোনাবে এটা কখনো হতে পারে না, নিশ্চয়ই অন্য কোন ব্যাপার আছে। কিন্তু কি সেটা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলেন আফরোজা চৌধুরী।

রাত এখন এগারোটা বাজছে কিন্তু ইশতিয়াকের বাসায় ফেরার কোনো নাম গন্ধ নেই।সে লিরা,মেঘা আর অহনার সাথে গল্পে ব্যাস্ত হয়ে আছে, রাত যে কখন এগারোটা বেজে গেছে সেটা কারোরই খেয়াল নেই। অহনা দের ছাদে মাদুর বিছিয়ে ওরা চারজন আড্ডা দিতে বসেছে। ইশতিয়াক মেঘা কে সরি বলে ওর রাগটা কে কমিয়েছে যদিও সেটা খুব সহজ ছিল না কিন্তু লিরা আর অহনা মিলে বোঝানোর পর সে মেনেছে। এখন ওদের আড্ডার টপিক হচ্ছে ডক্টর সাহেব যিনি কিনা বর্তমানে মেঘার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। চিরকুট টা একে একে সবাই পড়েছে আবার, চিরকুট টা পড়ে সবাই হাসাহাসি করছে শুধু মাত্র একজন ছাড়া আর সেটা হচ্ছে মেঘা।সে যতো বার চিরকুট টা পড়ে তত বার লজ্জায় লাল নীল হয়, কেন জানি তার খুব লজ্জা লাগে চিরকুট টা পড়ার সময়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে ইশতিয়াক বললো,,

তো রাগি ম্যাডাম এখন আপনি কি ভাবছেন,ফিরতি চিরকুট দিবেন নাকি দিবেন না? চিরকুট টা আমি পড়ার পর তো একটা ফিরতি চিরকুট দিয়েছিলাম সেটা তো আর ফিরতি চিরকুট হলো না কজ চিরকুট টা আপনি আমাকে দেন নি। এখন দয়া করে আপনি ড. মাহদী কে একটা ফিরতি চিরকুট দিয়ে দিন কোনো ভাবনা চিন্তা ছাড়া। নাহলে আমরা সবাই এখানে রাগ করবো আপনার উপর,কি বলো সবাই?(ইশতিয়াক)

হ্যা তাই।মেঘু তুই চুপচাপ একটা চিরকুট লিখে ফেল এখন আর কালকে হসপিটালে গিয়ে ডক্টর কে দিয়ে আসবি। তবে হ্যা, সেই চিরকুট টা ভালোবাসা এক্সেপ্টের চিরকুট হবে, রিজেক্ট চিরকুট না। বুঝতে পেরেছিস তুই আমার কথা?(অহনা)

মেঘা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। সবাই যখন বলছে তখন একটা চিরকুট লিখে ডক্টর সাহেব কে দেওয়াই যায়, তার উপর ও নিজেও আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলো একটা চিরকুট লিখবে। এখন তো আর কোনো সমস্যাই রইল না তাহলে, সবাই ওর পাশে আছে তো। ওদের মাঝখান থেকে মেঘা উঠে চলে গেল, ওর পিছু পিছু লিরা ও উঠে গেল। এখন ছাদে বসে আছে দুটো প্রানি, একটা অহনা আরেক টা ইশতিয়াক। ইশতিয়াক যাবে না কি যাবে না ভাবছে তখন অহনা বলল,, আপনি তাহলে এখন বাসায় চলে যান, অনেক রাত হয়ে গেছে তো।

ওহ হ্যা, আমি তো বাসায় যাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আসলে এতো দিন পরে আপনাদের মতো এতো ভালো মানুষদের সাথে মিশে গিয়ে আমি সব কিছু ভুলে বসেছি। বাসায় অশান্তি, কোথাও আর ভালো লাগে না আমার তাই একটু শান্তি খুঁজে বেড়াই আমি।(ইশতিয়াক)

অহনা ইশতিয়াকের কথার প্রতি উত্তরে কিছুই বললো না। চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো, ইশতিয়াক ও উঠে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করেই ইশতিয়াক অহনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,থ্যাংকস এ লট। আপনার জন্যই আজ এতদিন পর আমি প্রান খুলে কারো সাথে মিশতে পারলাম, অনেকদিন পর শান্তির একটা ঠিকানা খুঁজে পেলাম আমি। ইশতিয়াক কে হাত বাড়াতে দেখে অহনা ও ইশতিয়াকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক করলো। ইশতিয়াক অহনার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলো তারপর বাই বলে ছাদ থেকে নেমে গেল। অহনা ইশতিয়াকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,, তোমার অশান্তির কারণ ওই আয়শি সেটা আমি তোমার দেওয়া চিরকুট পড়ে বুঝে গেছি। তুমি চিন্তা করো না প্রিয়, ওই অশান্তির কারণ টাকে আমি তোমার জীবন থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেবো। ঠোঁটে একটু হাসির রেখা টেনে অহনা ছাদ থেকে নেমে এলো।

?

তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই
তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই
———————————————-
বাঁধন হারা মনটা আমার শাসন বারন মানে না
তোমার প্রেমে পাগল পারা আর কিছু তো জানে না

গুনগুন করে গান গাইছে মাহদী, তার ঠোঁটে বিশ্ব জয় করা হাসির রেখা। একটু আগেই মেঘ পাখি এসে তাড়াহুড়ো করে কিছু একটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেছে, কিছু বলার সুযোগ ও দেয় নি। হাতের দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখে একটা চিরকুট ওর হাতে। বুঝতে অসুবিধা হয় নি মাহদীর যে এটাই ফিরতি চিরকুট মেঘ পাখির তরফ থেকে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চিরকুট টা পড়ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে মাহদী। মনে আনন্দ আর ধরছে না তার, ইচ্ছে হচ্ছে ডিগবাজী দেওয়ার কিন্তু হসপিটালে ডিগ বাজী দিলে হসপিটাল কর্তিপক্ষ ওকে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে। এটা ভাববে যে তরুণ ডক্টর মাহদী চৌধুরী পাগল হয়ে গেছেন। কিভাবে আনন্দ প্রকাশ করা যায় এটাই ভাবছে মাহদী। কারন মেঘ পাখি তাকে গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছে,মেঘ পাখি তাকে ভালোবাসে ঠিক তার মতোই চুপি চুপি। চিরকুট এ এটাই লিখা আছে এবং এটাও লিখা আছে যে মাহদী মেঘ পাখির জীবনের প্রথম ভালোবাসা,প্রথম কাউকে মেঘ পাখি ভালোবেসেছে আর সেটাও মাহদী। উফ্ কি যে করবে এখন মাহদী, বাসায় মায়ের সাথে যা যা ঝামেলা হয়েছে সবকিছু এই চিরকুট টা পেয়ে ভুলে গেছে সে, সে ভুলে গেছে যে তার মা তার মেঘ পাখি কে মেনে নিবেন না। হঠাৎই গিটার নিয়ে গান গাওয়ার কথা মনে হলো মাহদীর। কলেজ লাইফে গিটার বাজানো শিখেছিল মাহদী, দুয়েক বার বন্ধুদের কে শুনিয়েওছে ওর গান। যদিও ভালো করে গাইতে পারে না সে তারপরও গিটার নিয়ে গান গাওয়ার মজাই আলাদা ওর কাছে। কেবিনের এক কোণে রাখা গিটার টা নিয়ে মাহদী কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো, হসপিটালের সামনেই একটা গ্রাউন্ড আছে। মাহদী গিটার নিয়ে ধীর পায়ে গ্রাউন্ডের দিকে এগিয়ে গেল, গ্রাউন্ডের এক পাশে একটা বেঞ্চে বসলো মাহদী।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here