উপন্যাসের সারাংশ প্রহর শেষ পর্ব

0
1249

#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [অন্তিম পাতা]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)

রাত এগারোটার দিকে হোস্টেলের বাইরে চুপিসারে বেরিয়ে এলো মেঘা। আফরোজা চৌধুরী আর মাহদী ওর জন্য অপেক্ষা করছে এখানে দাঁড়িয়ে,মেঘা আসার পর ওকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে ওরা কাজি অফিসের দিকে গাড়ি ছুটিয়ে দিলো।

আজকে মাহদী আর মেঘ বিয়ে করছে তাও আবার লুকিয়ে।এটা আফরোজা চৌধুরীর জন্যই হচ্ছে, প্রথমে তিনি মেঘা কে মাহদীর জীবনে আসতেই দিতে চাইছিলেন না আর এখন লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন ওদের দুজনকে। ওদের বিয়ে টা হয়ে গেলেই ওদের দু’জনকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবেন তিনি। মাহদী আর মেঘা এদের দুজনের জীবনই হু/ম/কি/র মুখে পড়েছে,কেউ একজন প্রতিনিয়ত ফোন করে মাহদী আর মেঘা কে পৃথিবী থেকে স/রি/য়ে দেওয়ার হু/ম/কি দিচ্ছে।

এক ঘন্টা পর ওদের বিয়ের কার্যক্রম সব শেষ হলো। একেবারে অনারম্বর ভাবে ওদের বিয়ে টা সম্পন্ন হলো,মেঘার এমন ভাগ্য যার কাছে সে ছোট থেকে বড় হলো বিয়ের সময় সেই রইলো না। বিয়ের কিছুক্ষণ পরেই মেঘা আর মাহদী দু’জনেই এয়ারপোর্টের দিকে পা বাড়ালো, সোজা ইংল্যান্ড এর ফ্লাইট।এয়ার্পোটে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর ওরা দুজনে আফরোজা চৌধুরী কে বিদায় জানিয়ে ফ্লাইটে উঠে গেল। রাত সাড়ে বারোটার দিকে ফ্লাইট টেক অফ করে গেলো যখন, তখন ওইদিকে তাকিয়ে চোখ মুছলেন আফরোজা চৌধুরী। ইংল্যান্ড এর পথে চলছে মেঘা আর মাহদী,আর ওদের পিছনে পড়ে রয়েছে বাংলাদেশ আর তার মানুষজন।

?

অহনা কে গ্যাং রে/পে/র দায়ে পুলিশ মোট পাঁচজন কে এ্যারেস্ট করেছে, তাদের মধ্যে আয়শি একজন। ইশতিয়াকের কানে যখন পৌঁছাল যে অহনা গ্যাং রেপড হয়েছে তখন ওর মনে একটা ক্ষীণ সন্দেহ জাগে আর সেটা আয়শি কে নিয়েই। কয়েকদিন ধরেই আয়শির চালচলন কিছু টা অদ্ভুত লাগছিল ইশতিয়াকের তাই সে পুলিশ কে ইনফর্ম করে এই ব্যাপারে আর বলে যে আয়শির উপর নজর রাখার জন্য। পুলিশ ইশতিয়াকের কথা মতো কাজ করে ঠিক ঠিকই বুঝতে পারে এই কাজ টা আয়শিই করিয়েছে, তার পর ওর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ বের করে এ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট দেখিয়ে এ্যারেস্ট করে তাকে।আয়শির বাবার পলিটিক্যাল পাওয়ার থাকা সত্ত্বেও ওর বাবা ওকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে পারে নি, যেখানে আয়শির বিরুদ্ধে সব প্রমান সেখানে ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করা টা বৃথা। আয়শি কে এ্যারেস্ট করিয়ে দিয়ে ইশতিয়াক দুদিন পর হসপিটালে অহনা কে দেখতে গেলো, নিজেকে কেমন যেন অপরাধী অপরাধী লাগছে তার কাছে। আয়শির জবানবন্দি শুনে চমকে উঠেছিলো ইশতিয়াক, অহনা ওর জন্যই আয়শির কথা শুনে এইভাবে বাসা থেকে চলে এসেছিল আর ও কিছু জানতেও পারে নি। অহনা ইশতিয়াক কে ভালোবাসে সেজন্যই আয়শি ওকে এইভাবে গ্যাং রেপড করিয়েছে ভাবতেই কেমন লাগছে তার, মেয়ে টা তো কোনো দোষ করে নি তাহলে শুধু শুধু ওকে এইভাবে শাস্তি পেতে হবে কেন?ও যেমন ওর রাগি ম্যাডাম কে ভালোবেসেছে তেমনি অহনা ও ওকে ভালোবেসেছে। ভালো মানুষ বাসতেই পারে কিন্তু তার জন্য এইভাবে শাস্তি পাওয়া টা মানায় না, সেজন্য ইশতিয়াক একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতে নিতে হসপিটালে গেলো। হসপিটালে গিয়ে দেখে, অহনা হসপিটালের নীল পোশাকে সাদা বেডে শুয়ে আছে।পাংশুর বির্বর্ন ওর মুখের রং, গালে হালকা একটু ব্যান্ডেজ করা। হাতে ক্যানুলা লাগানো রয়েছে অহনার,স্যালাইন চলছে। এইসব দেখে ইশতিয়াকের বুকের বাম সাইডে কেমন জানি একটা ব্যাথা করতে শুরু করলো,অতিসুক্ষ সেই ব্যাথা টা। কিন্তু অসহনীয়,আই সি ইউ থেকে বেরিয়ে এলো ইশতিয়াক। বাইরে বেরিয়ে এসে শায়লা বেগমের সাথে কথা বললো সে,কথার এক পর্যায়ে লজ্জা শরম সব ভুলে বলে বসলো আন্টি আমি অহনা কে বিয়ে করতে চাই। শায়লা বেগম ইশতিয়াকের কথা শুনে একটু নয় বেশ অনেটাই অবাক হয়ে গেলেন।কারণ যেই মেয়ে কে রেপ করা হয়েছে সেই মেয়ে কে কেউ বিয়ে করতে চাইবে এযে ধারণাতীত। শায়লা বেগম কে কোন রেসপন্স করতে না দেখে ইশতিয়াক আবার বলল, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আন্টি, আমি অহনার সব রকম খেয়াল রাখবো। ওকে এতো টুকুও কষ্ট পেতে দেবো না, ঝিনুক যেভাবে মুক্তা কে আগলে রাখে ঠিক সে ভাবে আমি অহনাকে আগলে রাখবো। ইশতিয়াকের এমন কথা শুনে শায়লা বেগম আর কথা বাড়ালেন না,মত দিয়ে দিলেন ইশতিয়াকের কথায়।

আধ ঘন্টা পরে কাজি সাহেব সহ ইলিনা আহমেদ হসপিটালে পৌঁছে গেলেন। ইশতিয়াক ফোন করে সবকিছু বলেছে ওনাকে,সব শুনে ইলিনা আহমেদ এতো টুকু ও রাগ করেন নি বরং খুশি হয়েছেন কারণ ছেলে কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছে শেষ পর্যন্ত। আয়শির জন্য জীবন টা শেষ হতে গিয়েও হয় নি সেখানে এই মেয়ে টা এসে ছেলেটার জীবন টাকে বাঁচাবে,এটা তো আনন্দের কথা। হসপিটালে নীল পোশাকেই বিয়ে টা হলো অহনার, বুকের ভেতর যতোগুলো কষ্ট চাঁপা দেওয়া ছিল সবকিছু যেন ইশতিয়াক কে দেখে মিলিয়ে গেছে অহনার।তিন কবুল বলার সময় যদিও একটু কষ্ট হচ্ছিল তার কিন্তু তার পাশাপাশি এক আকাশ সম আনন্দ ঘিরে ধরেছিল তাকে। ওদের বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর সবাই একে একে আই সি ইউ থেকে বেরিয়ে গেল শুধু ইশতিয়াক ছাড়া।বেডের পাশে বসে ইশতিয়াক অহনার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বললো,, আমাকে ভালোবাসে তুমি কোনো ভুল করোনি অহনা, ভুল তো আয়শি করেছিল যে ও তোমার ক্ষতি করেছে। কিন্তু আমি সেই ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে নেবো ওর কাছ থেকে শুধু তুমি এরপর থেকে সবসময় আমার হয়ে থেকো।

ইশতিয়াকের কথা শুনে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় উত্তর দিলো অহনা,যতোদিন জীবন থাকবে আমার, ঠিক ততোদিন তোমার হয়ে থাকবো আমি। অহনার কথা শুনে ওর হাতে একটা মিষ্টি করে চুমু একে দিল ইশতিয়াক।
_____________________________________________________

ভোর হতে আর বেশি বাকি নেই। ছয়তলা বিল্ডিং এর একটা ফ্লাটের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভোর হওয়ার অপেক্ষা করছে এক দম্পতি।তারা আর কেউ নয়, মাহদী আর মেঘা। ইংল্যান্ড এ আসার আগেই আফরোজা চৌধুরী ওদের এখানকার সমস্ত বন্দোবস্ত করে রেখেছিলেন যার দরুন এখানে এসে তাদের আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় নি। পিছন থেকে মেঘা কে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো মাহদী, আচমকা এইভাবে জড়িয়ে ধরায় লজ্জা পেয়ে গেল মেঘা। লাজুক গলায় বললো, কি করছো কি,ছাড়ো আমাকে। সঙ্গে সঙ্গে মেঘা কে ছেড়ে দিয়ে মাহদী পাশের কাউচে বসে পড়লো,মেঘা মাহদীর এই আচরণ টা ঠিক হজম করতে পারলো না।সে মুখ কালো করে পাশে বসে বললো, তুমি এরকম টা করতে পারলে আমার সাথে?

মেঘার কথা শুনে মাহদী মুচকি হেসে ওকে আবার জড়িয়ে ধরে বললো,নো মেঘ পাখি। আমি এরকম টা করতে পারি না তাই তো আবার ধরলাম,আজ আমাদের জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। আমি তোমাকে সারাজীবনের জন্য পেয়ে গেছি মেঘ পাখি,আর কখনো তোমাকে হারানোর ভয় পেতে হবে না আমাকে।মেঘ পাখি, তুমি একটা গান শুনবে, শোনাবো একটা গান?
মেঘা প্রথম আবেশে মাহদীর বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে বলল,শোনাও।

তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই
তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই
———————————————-
বাঁধন হারা মনটা আমার শাসন বারন মানে না
তোমার প্রেমে পাগল পরান আর কিছু তো জানে না

চোখের স্বপন তুমি
বুকের কাঁপন তুমি
কতো আপন তুমি
জানা নাই নাই
তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই
তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই

সমাপ্ত………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here