ভালোবাসার ফোড়ন ২ পর্ব ৫১

0
948

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫১

রাতে মা আর বাবা অনেক রাত করে ফিরলেন যার কারনে আর দেখা হলো না। অতঃপর সকালে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে সবার সাথে দেখা। আপু আর ইয়ান দুজনেই আছে আমাদের সাথে। খাবার শেষে আমরা ভার্সিটির জন্য রওনা হতে যাবো এর আগেই মা আমাকে ডাকলেন। আমি তার সাথে কথা বলতে গেলাম। অতঃপর তিনি আমাকে আহিয়ানের নানু সাথে দেখা করতে বলেন। তার নানু নাকি দেখতে চায় আমাকে। অনেকটা বয়স হয়েছে উনার। তাই মা আর বাবা চান আমরা তাদের সাথে গিয়ে দেখা করি। মা আমাকে এতোটুকু জানানোর পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যাবো কি না।‌ আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানিয়ে চলে এলাম!

ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাইরে এসে দেখি উনি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম উনাকে দেখার পর আমার অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। আমি চোখ বন্ধ করেই স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করতেই গত রাতের ঘটনা মনে পড়ল। অস্থিরতার কারনে পড়ে যেতে নিলে দরজা আঁকড়ে ধরলাম। উনি পিছনে ফিরে বলেন,

“আরে ভূতনি! ঠিক আছো তো!

বলেই উনি কাছে আসতে নিলেন। আমি সাথে সাথেই চোখ বড় বড় করে মাথা নাড়লাম। অতঃপর উনার পাশ কাটিয়ে দ্রুত গিয়ে গাড়িতে বসলাম। উনি এসে আমার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসলেন। গাড়ির সামনে থাকা আয়নাটা বাঁকা করে আমার দিকে দিলেন। আমি ভ্রু কুঁচকে সেখানে তাকিয়ে দেখি উনি তাকিয়ে আছেন। চোখ সরিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম।

কিছুক্ষণ পর উনি বলে উঠেন,
“মা কে কি বললে?

“কোন ব্যাপারে?

“নানু বাড়িদের যাবার ব্যাপারে। এভাবে তুমি কমফোর্টেবল ফিল না করলে যাবো না।

“আমি আনকমফোর্টেবল এটা আপনাকে কে বলল।

” তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে!
বলেই গাড়ির আয়নাতে আমাকে দেখলেন। আমার ও চোখ গেল তাতে। আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললাম!
.
ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই ইতি আমাকে ছাড়ছে না। গতকাল এমন কি হলো সেটা তার জানা চাই। জ্বালিয়ে মারছে আমাকে। আমি ওকে বলছি, তেমন কিছু হয় নি। উনি আবারো নিতির সাথে কথা বলছিলেন বলেই আমি চলে এলাম।

ইতি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তাই বলে ওতো রাতে তুই আমাদের না বলে এভাবে চলে আসবি। জানিস পুরো বাড়িতে শুধু তোকে খুঁজেই যাচ্ছিলাম। কাল আমার এনগেজমেন্ট ছিল। জানতি না তুই!

“সরি ইতি।‌ সত্যি অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে

ইতি কিছু বলতে যাবে এর আগেই সামনে থেকে কেউ বলে উঠে,

“ভুল করা তো তোমার অভ্যাস নিহা!

আমি আর ইতি সামনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি নিতি, টিনা আর আনিকা। নিতি আবারো বলে উঠে,
“ভুল করেই বিয়ে টা করে ফেললে তুমি আর সবকিছু উলোট পালোট করে দিলে।

নিতির কথা শুনে বেশ রাগ হলো আমার। তবুও আমি তাদের কিছু না বলে এড়িয়ে চলতে চাইলাম। হঠাৎ করেই নিতি বলে উঠে,

“আরে পালিয়ে যাচ্ছো নাকি।

ইতি বলে উঠে,
“পালাবে কেন? শুধু তোমাদের মতো নিচু মানুষের সাথে কথা বলে রুচি নষ্ট করতে চাই না তাই চলে যাচ্ছি।

টিনা চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“ইতি! মুখ সামলে কথা বলো।

“আমার মুখ আমার ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা কথা বলবো।

“তোমাকে তো আমি!

বলেই ইতির কাছে তেড়ে আসতে নিলে নিতি আর আনিকা ওকে আটকে দিল। আনিকা বলে উঠে,
“সময় ভালো না টিনা, চুপ থাক। বাড়াবাড়ি করিস না।

ওদের কথায় ইতি মুখ ভেংচি দিল। আমি ইতির হাত ধরে চলে যেতে নিলাম। তখন’ই নিতি আবারো আমাকে ডাক দিল। আমি ওর দিকে দাঁড়িয়ে আছি।‌ ওর আর আমার দূরত্ব অনেক। নিতি হেঁটে এগিয়ে আসতে লাগল। আমিও আগালাম। দুজনেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। নিতি’র চোখের দিকে তাকাতেই গতরাতের ঘটনা ভেসে উঠছে।

নিতি বাঁকা হেসে বলে উঠে,
“আমার‌ ধারনা গত রাতের ঘটনা দেখেছিলে তুমি।

“কি বলতে চাও।

নিতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“দেখো নিহা, আমি এতোটুকু আন্দাজ করতে পারি তোমার আর আহির মাঝে কিছুই হয় নি আর না হবে। কারন তোমাদের মাঝে কিছুই নেই। গতকাল আহি নিজে এসেছিল আমার কাছে।

আমি হেসে বলি,
“তোমার কাছে কেন আসলো, কিভাবে আসলো, আসার পর কি হলো সব’ই জানি আমি। আহিয়ান নিজেই আমাকে সব বলেছে। কিন্তু তোমার একটা ভুল ধারণা আমি ভাঙিয়ে দিচ্ছি। আহিয়ান আর আমার মাঝে যে কিছুই হয় নি এটা ভুল। এমনকি গতকাল রাতেও… আচ্ছা বাদ দাও। তোমার মতো মেয়েরা যে কতো নিচে নামতে পারো সেটা আমার জানা হয়ে গেছে। আগেও বলেছি এখনো বলছি আমার স্বামী থেকে দূরে থাকো। বাই দ্যা ওয়ে, তোমাকে একটা ইন্টারেস্টিং খবর দেই!

বলেই নিতির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলি,
“আমি আর আহিয়ান হানিমুনে যাচ্ছি। ( বলেই ওর মুখের দিকে তাকালাম। ওর মুখের রং উড়ে গেছে। আমি হেসে বলি ) তুমি না আমার বান্ধবী, কনগ্রেস করবে না।

নিতি রেগে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। পারছে না এখন’ই আমাকে খেয়ে ফেলতে। সে আমার দিকে এগিয়ে কিছু বলার আগেই ইতি বলে উঠে

“আহি ভাইয়া !

আহিয়ানের নাম শুনে নিতি সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়। দুজনেই মুখ ফিরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান দাঁড়ানো। আহিয়ান কে দেখেই নিতি আমার থেকে সরে যায়। অতঃপর তারা তিন জন’ই আহিয়ানের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ভিতুদের মতো তাদের চলে যাওয়া দেখে আমি জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। আহিয়ান অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

উনি হাটতে হাঁটতে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,
“এমন ভাবে হাসছো কেন?

“জব্দ করেছি, মোক্ষম জব্দ!

“কেন এসেছিল ওরা?

“কাঁটা গায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার জন্য। উল্টো আমি মরিচ লাগিয়ে দিয়েছি!
বলেই হাসতে হাসতে ইতি কে নিয়ে উনার পাশ দিয়ে চলে এলাম!
.
বাসায় এসে শুনি আগামীকাল’ই যেতে হবে, নানু তার নাত বউ কে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। নানুদের বাড়ি হলো সিলেটে। আমরা গাড়ি দিয়েই যাবো। খুব ইচ্ছে ছিল ইয়ান কে নেবার। কিন্তু মা দিতে চাইলো না। মা বলেন,
“তোমরা দুজন চলে গেলে আমার পুরো বাড়ি খালি থাকবে, এখানে ইয়ান না থাকলে যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে মা!

মায়ের কথায় আমি হাসি মুখে চলে আসি সেখান থেকে। সত্যি’ই বলেছে এতো বড় একটা বাড়িতে তারা দুজন তো মনমরা হয়েই থাকবে। এর চেয়ে ইয়ান থাক না এখানে। সে থাকলেই তো বাড়িটা একটু হইচই থাকবে মা আর বাবা’র ও ভালো লাগবে।

রাতেই ব্যাগ প্যাক করে রেখেছিলাম। অতঃপর ভোরে উঠে তৈরি হয়ে নিলাম। আজ উনি আমার আগেই তৈরি হয়ে নিচে চলে গেছে। আমি ঝটপট তৈরি হয়ে নিচে এলাম। সবার সাথে দেখা করলাম। বাবা গম্ভীর স্বরেই বলেন,
“সাবধানে যেও!

আমিও মাথা নাড়লাম। কিন্তু আমাদের ইয়ান বাবু কে এতো ভোরে ঘুম থেকে উঠায় কার সাধ্যি। সে যে এখন ঘুমে বিভোর। আমি ঘুমের মাঝেই তার কপালে একটু চুমূ খেলাম। এই ছোট্ট বাচ্চা টা এখন আমার চোখের মনি। গতকাল রাতেও আমার বিছানার উপর লাফিয়ে লাফিয়ে বলে গেছিল ভোরে তাড়াতাড়ি উঠে আমাদের সাথে যাবে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে আমাদের না দেখতে পেয়েও বেশ কাঁদবে বলে মনে হচ্ছে! ইশ কতোদিন ওর মুখে ভূতনি আম্মু ডাকটা শুনতে পারবো না। কিন্তু ভূতনি ডাকটা উনি পূরন করে দেবে। আচ্ছা যদি ওখানে সবার সামনে এই নামে ডাকে তখন! শুনেছি উনার মামা মামী, আর খালা খালু নিয়ে নাকি বিশাল পরিবার। এদের মাঝে এই নামে ডাকলে আমার মান সম্মান থাকবে তো!

আমি আপুর সাথে কথা বলছিলাম। এর মাঝেই উনার ফোন এলো। উনি ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেলেন। অতঃপর আমি বাইরে এসে দেখি উনি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখটা কেমন গম্ভীর! তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে আমার উপর। উনার চাহনিতে নিজেকে কেমন জানি অপরাধী অপরাধী বলে মনে হলো।

আমি চুপচাপ এসে গাড়িতে বসলাম। আমার পিছু পিছু মা বাবা ও এলেন। উনি গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করলেন।
অনেকক্ষণ যাবত ড্রাইভ করছেন। এতো ভোরে রাস্তা সচরাচর ফাঁকাই থাকে। উনি দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি বসে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। কিন্তু মাঝে মাঝেই খেয়াল করছি উনি গাড়ির আয়নার দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখছেন। আমি একটু হালকা কেশে বলে উঠি,

“আমি কি কিছু করেছি নাকি!

উনি সামনের দিকে তাকিয়ে,
“তোমার কি মনে হয়।

“কিছুই মনে হচ্ছে না। কারন আমি কিছু করে নি।

“তাহলে জিজ্ঞেস কেন করছো?

“আপনি কেন বার বার এভাবে তাকাচ্ছেন তাই।

হঠাৎ করেই এর মাঝে উনার ফোনে কল এলো। ফোনটা সামনেই রাখা ছিল। উনি ফোনটা কেটে আমার দিকে তাকালেন। এর মাঝেই মেসেজ আসার টুং টুং শব্দ হলো। আমি বলে উঠি,

“কি হয়েছে বলুন তো!

“তুমি হতে কি বাকি রেখেছো বলো

“কি করেছি সেটা বলুন।

“দিনে এতো অকাজ করো যে হিসাব ও রাখো না।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আহিয়ান সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,

“তুমি আর আমি হানিমুনে যাচ্ছি!

“কিহহ! কি বলছেন এসব।

“আমি কোথাও বললাম? এসব তো তুমি বললে

“এই কি বললেন আপনি, আমি! আমি বলেছি এসব।

“না হলে কে? আমি বলেছি। আকাশ ফোন করে বলছে তুমি ইতি কে বলেছ আমি তাকে কেন বলে নি। এরপর থেকেই আমার ফোনে আকাশ, নাহান আর আনাফ মিলে ঝড় তুলে দিচ্ছে।

আমি বেকুব’র মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি। সেটা তো গতকাল নিতি কে বলেছি। ইতি’র‌ কান যে এতো খাড়া সেটা তো জানতাম না। বেয়াদব মেয়ে এসব শুনে ফেলল!

উনি আমাকে কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। তার আগে ফোনটাও বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে আমি নিজের ফোন টা ব্যাগ থেকে বের করে চমকে উঠলাম। ফোনটা সাইলেন্ট ছিল বলে ইতির এতো মেসেজ খেয়াল করি নি। সেদিন ফোন আছাড় মারার পরও এটা ঠিক আছে। শুধু ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছিল। এর এভাবেও আমার মনে হয় না আমি জোরে আছাড় মেরেছিলাম! যাই হোক ইতির মেসেজ গুলো বলার কোন মানে হয় নাই। শুধুই আজাইরা কথা লেখা তাতে। আমি ফোনটা জায়গা মতো রেখে দিয়ে সিটে আরাম করে বসলাম। কেমন জানি ঘুমঘুম পাচ্ছে আমার। এর মাঝেই উনি গান ছাড়লেন। গান বাজছে,

“তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙ্গেচুরে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদূরে আমাকে রেখে ছলনায়…
.
নানু বাড়ি আসার পর থেকেই বাড়িতে যেন একটা হইচই লেগে গেছে। তাদের বাড়িটা অবশ্য অনেক বড় আর সাজানো গোছানো। তাদের বাড়িটাও পুরোনো বাড়ির মতো কিন্তু বাড়িতে ঢোকার পর আমি হতবাক হয়ে গেছি। আমার কোন ধারনা ছিল না বাড়িতে এতো মানুষ থাকবে। আহিয়ানের ৩ মামা! ৩ জন’ই বিবাহিত আর তিন জনের’ই ছেলে মেয়ে আছে। এটা স্বাভাবিক থাকতেই পারে। কিন্তু সেই ছেলেমেদের ছেলেমেয়ে মানেই যেন বিশাল কিছু। হ্যাঁ ৩ মামার মোট ছেলেমেয়ে ৫ জন। মেয়ে দুটি অবিবাহিত আর তারা আমার থেকে ছোট। তবে তিন ছেলেই বিবাহিত। সেই তিন ছেলের মাঝে দুই ছেলের দুই মেয়ে বাকি এক ছেলের যময দুই ছেলে। এতো বড় পরিবার এযুগে খুব কম’ই দেখা যায়। আর মাঝে আহিয়ানের একজন খালা এসেছে। তার খালা এই একজন’ই। তার একটা ছেলে আছে সেই ছেলে আমার বয়সী। তবে খালামনি নাকি খুলনা থাকেন। তিনি সেখান থেকেই এখানে এসেছে। আর তাদের সবার মাঝে মাথায় ঘোমটা দিয়ে এক কোনে বসে আছি আমি।

আমার ধারনা ছিল নানু হয়তো অনেকটা বুড়ো হবেন। আসলে এতো ছেলেমেয়ে দেখেই আমার সেই ধারনা হয়েছিল। কিন্তু না নানু কে দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। উনার চেহারায় বয়সের ছাপ এলেও উনার সৌন্দর্য কমেনি। এখনো বেশ সুন্দরী তিনি। শুধু তাই নয় তার শরীরেও বয়সের কোন ছাপ নেই। এতোক্ষণ আমাকে দেখে যারা এতো এতো কথা বলছিল তারা সবাই এখন চুপ। তার মানে এরা সবাই নানু কে বেশ মানে। তার পরনে একটা বাঙালি শাড়ি। পুরোন দিনের মতো শাড়ির আঁচলে একটা চাবি’র গোছা। নিজেকে পুরোন বাংলা ছবির একটা পার্ট বলে মনে হচ্ছে। যেখানে বাড়ির কর্তি এসে বউ মা কে দেখে আর বউ ও বেশ সুন্দর ভাবেই গুছিয়ে বসে থাকে।

নানু কে দেখে আমার পাশ থেকে আহিয়ান উঠে তার কাছে গেলেন। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। গুটিগুটি পায়ে হেঁটে উনার পাশে এসে দাঁড়ালাম। নানু আহিয়ানের মাথায় হাত রেখে হেসে হেসে বলল,

“এতোদিন পর এই বুড়ির কথা মনে পড়ল লা তোর!

“আরে বুড়ি তোমার কথা তো প্রতিদিনই মনে পরে কিন্তু আসতে পারি না।

“কেন আসতে পারিস না কেন।

“তোমার মেয়ে আসতে দেয় না। তোমার তো এখানে মানুষের অভাব নেই কিন্তু আমার বাড়িতে অভাব আছে।

নানু হেসে উনার কান ধরে বলে,
“ভালোই কথা বলতে শিখেছিস। তা তোর বউ কোথায়?

উনি চোখের ইশারায় আমাকে যেতে বলেন। আমি নানুর সামনে দাঁড়িয়ে তাকে একটা সালাম দিলাম। নানু ছোট ছোট চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার হাত ধরে বলেন,

“মেয়ের গায়ের রঙ যে একটু ময়লা আহিয়ান। তোর মতো ফর্সা মেয়ে পেলি না তুই!

আমার মনটা হুট করেই যেন নানুর কথা শুনে খারাপ হয়ে গেল। আমি চোখ নামিয়ে পায়ের আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছি। আহিয়ান হেসে বলে,

“এই যুগে গায়ের রঙ নিয়ে কথা বলছো বুড়ি। আর শোন আমার তো ইচ্ছে ছিল তোমার মতো মেয়ে বিয়ে করার কিন্তু তোমার মতো মেয়ে নাহ একটাই ছিল আর তা আমার নানা নিয়ে গেছে এখন আমি এমন মেয়ে কিভাবে পাবো বলো।

“ভালোই কথা ঘুরাতে পারিস। তা তোর বউ রান্না বান্না জানে।

“জানবেনা কেন? অনেক ভালো রান্না জানে। বিশ্বাস না হলে আজকের রান্না তাকে দিয়ে করাও।

উনার কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। মারার প্ল্যান করছে নাকি। এতো মানুষের রান্না আমি করবো। নানু বলে উঠে,

“পাগল হলি নাকি, তোর নানু তার নতুন নাতবউ কে দিয়ে রান্না করাবে। আমার ঘরে কি মানুষের অভাব নাকি। নে তোরা হাত মুখ ধুয়ে বস। আমি নাস্তা পাঠাচ্ছি!
আর তোরাও সব বের হ এখান থেকে। আঠার মতো লেগে আছিস কেন? ওদের এখন বিশ্রাম নিতে দে!

অতঃপর নানু চলে গেলেন। নানুর পিছনে পিছনে পুরো বড়যাত্রীও তার পিছন পিছন গেল। আমি একটা হাঁফ ছেড়ে বিছানায় বসলাম। হঠাৎ আহিয়ান আমাকে গুঁতো মেরে বলেন,

“এভাবে এখানে বসে থেকো না। নানু কি বলেছে শুনেছ তো, হাত মুখ ধুয়ে নাও। দেখলে তো কতোটা রাগী তিনি।

আমি মাথা নেড়ে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেলাম। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে বসলাম। এর মাঝেই একজন এসে নাস্তা রেখে গেছেন। আমি বের হতেই উনি ফ্রেস হয়ে এসে বসলেন। আমি চায়ের কাপ আর বিস্কুট নিয়ে বসলাম। খুব ক্ষিদে পেয়েছে। উনি এসে বলেন,

“আমাকে ছাড়াই শুরু করে দিলে ভূতনি!

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম। উনি পাশে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন,

“নানুর কথায় কিছু মনে করেছ!

“কোন কথা?

“এড়িয়ে যাচ্ছো।

“না এড়ানোর কিছু নেই। উনি যা বলেছেন তা সত্য, আর সত্য কখনো পাল্টানো যায় না।

“ঠিক বলেছ সত্য কখনো পাল্টানো যায় না। তুমি আমার বিবাহিতা ভূতনি বউ! আর এই সত্য কখনো পাল্টাবে না। তোমার গায়ের রঙের জন্য ও না!

বলেই আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। উনার হাসি দেখে মুচকি হাসি দিলাম আমি।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here