#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৯ ( #বোর্নাস_পার্ট )
আংটি বদল! সেও এক বিশাল আয়োজন। দুই পরিবার’ই বিশেষ আয়োজন করছে তার। তাদের পদক্ষেপ দেখে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না তাদের বিয়ে হচ্ছে না তার আংটি বদল!
আংটি বদলের অনুষ্ঠান আকাশ ভাইয়া’র বাড়িতে হবে। আহিয়ান খুব খাটছে এজন্য। এর মাঝেই একদিন আমরা চারজন একসাথে শপিং করতে গিয়েছিলাম। তাদের আংটি কেনা থেকে শুরু করে সব কিছুই কিনতে হলো সেদিন। আমি শুধু ইতির শপিং নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম নিজের তেমন কিছু কেনা হয়। তবুও বাড়িতে ফেরার সময় গাড়িতে অনেক শপিং দেখলাম। প্রথমে ভাবলাম এগুলো সব’ই উনার! কিন্তু না উনি আমাকে বলেন আমার জন্য ও শপিং করেছেন উনি!
কিন্তু আগ্রহ করে কিছুই দেখে নি আমি। অতঃপর যেদিন অনুষ্ঠান ছিল সেদিন এক এক করে ব্যাগ থেকে সব বের করছি। কিন্তু মনে হচ্ছে পুরো দোকান উঠিয়ে এনেছেন। এতোগুলো শাড়ি কেন এনেছেন। অনুষ্ঠান তো একদিনের শাড়ি একটাই হলেই তো চলতো। কিন্তু এখানে ৫ টা শাড়ি আর প্রত্যেক শাড়ির রঙের সাথেই মিলিয়ে টি শার্ট! এই টি শার্ট কেন? উনি কি টি শার্ট পড়ে যাবেন নাকি, কি অদ্ভুত লোক! এসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে এর মাঝে শুধু একটা শাড়ি খুলে দেখলাম। যাক এতোটুকু বুঝতে পরেছেন উনি বেশি কাজ করা শাড়ি আমি পরি না। তাই সব শাড়ির কাজ অনেকটা হালকা দেখতেও সুন্দর। উনার পছন্দ সুন্দর!
হঠাৎ করেই পায়ের কাছে নরম কিছু ছিল। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি পিকু। এর মান এখন’ই ইয়ান আসছে। বলতে বলতে সে চলেও এলো। বিছানার উপর এতো শাড়ি দেখে সে হা করে তাকিয়ে রইল। বলে উঠে,
“ভূতনি আম্মু! এতো শাড়ি তুমি কি করবে?
“পড়বো মানে এখান থেকেই একটা পড়বো।
“তোমরা কোথাও যাবে।
“হুম! কেন তুমি জানো না তোমাকে না বললাম। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর এনগেজমেন্ট এ যাবো। তুমি যাবে আমাদের সাথে।
“কিন্তু আমি তো নানা আর নানুর সাথে দাদা দাদী’র কাছে যাবো। তুমি জানো দাদী ফোন করে বলেছে তাদের কাছে যেতে।
“ওহ আচ্ছা!
এর মাঝেই আয়ানা আপু এলো আমার ঘরে। আমি তাকে দেখে দাঁড়িয়ে রইলাম। আপু হেসে বলল,
“কখন যাবে তোমরা।
“দু ঘন্টা পর আপু।
“আচ্ছা আমরা তোমাদের পরে বের হবো তাহলে। ইয়ানের দাদী ফোন করে বলেছিল সবাই কে যেতে। আহিয়ান আর তোমাকেও বলেছিল কিন্তু তোমরা তো আজ আকাশের বাসায় যাবে।
“যেতে তো হবে আপু।
“আচ্ছা সমস্যা নেই, আরেকদিন ও যাওয়া যাবে। ইয়ান বাবা তুমি আমার সাথে আসো। ছোট আম্মু কে তৈরি হতে দাও।
“ছোট আম্মু না বলো ভূতনি আম্মু!
আপু হেসে বলে,
“আহি তোমার মাথা টা পুরো বিগড়ে দিয়েছে।
ইয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভূতনি আম্মু তুমি ওই লাল শাড়িটা পড়বে। দেখবে তোমাকে অনেনননক সুন্দর লাগবে।
আমি ছোট ছোট চোখ করে বলি,
“ভূতনি লাগবে নাহ!
“না না ভূতনিদের রানি লাগবে তোমাকে,দেখো!
ইয়ানের কথা শুনে আমি আর দুজনেই হেসে দিলাম। ইয়ান ও খিলখিলিয়ে হাসল আমাদের সাথে। তার হাসিটা আহিয়ানের মতোই!
ইয়ান আপুর সাথে চলে গেল। আমি লাল রঙের শাড়িটা রেখে বাকি সব কিছু ভাজ করে হাতে নিলাম। এর মাঝেই উনি রুমে এলেন। এসেই চট করে আমার হাত থেকে শাড়ি গুলো নিয়ে এলোমেলো করে ফেলল। বিছানায় সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখতে লাগল। আমি হা করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে। কি করছেন উনি এসব! এতো কষ্ট করে এসব গুছালাম আর উনি এসে নিমিষেই সব এলোমেলো করে ফেলছেন। এসব কি!
কোমরে হাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে কোনটা পড়বে। অনেক বাচাইয়ের পর উনি একটা টি শার্ট হাতে নিলেন। লাল রঙের টি শার্ট ! অতঃপর সেই লাল রঙের শাড়িটাই আমার হাতে দিয়ে বলেন,
“তুমি এটা পড়বে।
“আমি জানি!
“তুমি জানলে কিভাবে আমি তো মাত্র পছন্দ করলাম।
“ইয়ান এটা পছন্দ করে দিয়েছিল পরার জন্য
“তাই বলো, নাহলে আমিও ভাবি তোমার আর আমার পছন্দ কবে এক হলো!
আমি রেগে শাড়ি দিয়েই উনার মাথায় বাড়ি মারলাম। উনি শাড়িটা খপ করে ধরে বলেন,
“শাড়ি টা নষ্ট করো না, যাও তৈরি হয়ে আসো।
“আপনি জানেন আমার ইচ্ছে করছে আপনার মাথা ফাটিয়ে দিতে
“কেন?
“পুরো ঘরের কি অবস্থা করেছেন সেটা দেখেছেন
“কি করেছি।
“বাজার বানিয়ে ফেলেছেন। সবজি, মাছ, আলু সব কিছু মনে হচ্ছে একসাথে।
“মানে!
“ধুর! আপনার মাথা।
বলেই চলে এলাম। এই লোকটা শুধু পারে আমাকে খাটাতে।
শাড়ি পড়ে এসে আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলাম। এর মাঝেই উনি চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসলেন। কালো রঙের একটা জ্যাকেট পরা তবে জ্যাকেটের ভেতর লাল রঙের টি শার্ট। এর সাথে কালো জিন্স। এগুলো পড়ে কি যাবে নাকি উনি। আমি তৈরি হয়ে একপাশে এসে দাঁড়িয়েছি। উনি কিছু চুড়ি এনেছিলেন আমার জন্য। সেগুলোই দেখতে লাগলাম। উনি হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলেন,
“শোন! আমার ঘড়ির সাথে মিলিয়ে তুমি কিন্তু চুড়ি আর কানের দুল পড়বে।
আমি উনার কথা শুনে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম। এ্যা মা উনার হাতের ঘড়ি দেখি কালো রঙের! লাল শাড়ির সাথে কি কালো রঙের চুড়ি পড়বো নাকি। আমি বলে উঠি,
“কিন্তু আপনার ঘড়ি তো কালো রঙের!
“তো! তুমিও কালো রঙের চুড়ি পড়বে। দেখো আমি বোধহয় এনেছিলাম।
“সেটা তো এনেছেন কিন্তু লালের সাথে কালো।
“কথা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিচে আসো। আমি গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছি। যেতেও অনেক সময় লাগবে। আর জ্যাম হলে তো দেখা লাগবে না।
বলেই উনি চলে গেলেন। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে কালো আর লাল রঙের চুড়ি গুলো একত্র করে পড়লাম। কালো রঙের দুল না থাকায় ধূসর রঙের ঝুমকা পড়লাম। অতঃপর চোখে কাজল টেনে নিচে এলে এলাম। দেখি স্যার গাড়ি সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে একটা সানগ্লাস! সানগ্লাস টা আমার মন কাড়ল। আমার উনার চেয়ে বেশি উনার সানগ্লাস গুলো কে ভালো লাগে।
আমাকে দেখে গাড়ি ভেতর বসলেন। আমি এসে পাশে বসলাম। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই যেতে হবে আমাদের। আমি বার বার উনার দিকে তাকাচ্ছি। বেশ সুন্দর লাগছে উনাকে। একটু বেশিই সুন্দর লাগছে, কিন্তু ব্যাপারটা কি?
হঠাৎ উনি বলে উঠেন,
“তোমাকে কালো রঙের চুড়ি পড়তে বলেছিলাম।
“পড়েছি পড়েছি, লালের সাথে কালোও পড়েছি।
“আচ্ছা ঠিক আছে।
অতঃপর আর কোন কথা হলো না। একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো উনার কেন হঠাৎ এই ইচ্ছে হলো, কিন্তু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলাম না।
.
আকাশ ভাইয়ার বাড়িতে বেশ জমজমাট আয়োজন। বাড়িতে ঢোকার পথেই আকাশ ভাইয়ার বাবা’র সাথে দেখা। তার সাথে কুশল বিনিময় করার পর আহিয়ান কে তিনি রেখে দিলেন। আমিও চলে এলাম উপরে ইতির ঘরে। তবে ইতির ঘরে আসার পথে বাড়ির লোকজন দেখে আমি খানিক ভড়কে গেলাম। সবাইকে বেশ সুন্দর লাগছে, ভারী ভারী সাজ গয়না গাটি দেখে আমি নিজেই অবাক। কে জানে এতো ভার তারা কীভাবে সহ্য করছে। আকাশ ভাইয়া’র মা কে দেখে আমি তো আরো বেশি অবাক হলাম, সাজ শাড়ি সব’ই চোখ ধাধানোর মতো। চুল গুলো খোঁপা করে তাতে ফুল আটকানো। শুধু তার নয় সবার চুলে খোঁপা করে চুল গুঁজে দেওয়া হয়েছে। তবে এদের সবার মাঝে নিজেকে একজন সাদামাটা বলেই মনে হলো।
ইতিকে দেখে অবাট হলাম না। তার সাজ বেশ হালকা। এমনেতেও সে সুন্দর বিধায় এতো সাজ সে না সাজলেও হবে। তবে আমাকে দেখে ভারী অবাক হলো। ভেবেছিল আজ হয়তো আমি ওর থেকেও বেশি সাজবো যার কিছূই হলো না।
ইতি তৈরি করে একবারে নিচে এলাম। ওর পড়নে লেহেঙ্গা। বেশ লাগছে ওকে দেখতে। ভাইয়া কে আগে থেকেই নিয়ে আসা হয়েছে। আমি ভাইয়ার পাশে তাকে বসিয়ে দেবার পর একে একে সবাই আসছে দেখা করতে। আমিও একটু সরেই দাঁড়ালাম। উনার সব বন্ধুবান্ধব কে এখন দেখতে পারছি। এর মাঝে নিতি, টিনা আর আনিকাকেও দেখতে পারছি, সাথে সিফাত। বাহ পুরো দল এখানে। কিন্তু আমার স্বামী মহাশয় কে দেখতে পারছি না। অনেক খোঁজাখুঁজি’র পর দেখা পেলাম। তাকে দেখেই আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
কয়েকটা মেয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। মেয়েরা একে একে বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু উনি যে বেশ বিরক্ত তা বোঝাই যাচ্ছে তবুও হেসে হেসে সব সহ্য করছে কিন্তু এই মেয়ে গুলো কারা আর উনি এদের মাঝেই বা কি করছেন। হঠাৎ করেই আকাশ ভাইয়া’র মা কে দেখলাম। উনি এসে আমার থিতুনি তে হাত রেখে কথা বললেন। জিজ্ঞেস ও করলেন এমন সাদামাটা কেন। আমি হেসে বলি, সাদামাটা থাকতেই আমার বেশ লাগে।
উনি হেসে আমার মাথায় হাত রাখেন। আমি বলে উঠি,
“আচ্ছা আন্টি এই মেয়ে গুলো কারা।
আন্টি হেসে বলে,
“আরে এরা! এরা তো আকাশের কাজিন। আহিয়ান তো চিনে ওদের তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় নি।
“না আন্টি দেই নি।
“আচ্ছা দাঁড়াও আমি করিয়ে দিচ্ছি..
বলার সাথে সাথেই আংকেল এর আওয়াজ এলো বিধায় তাকে চলে যেতে হলো। আমি টেবিলের সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে উনাকে দেখছি। অবশেষে মহাশয়ের চোখ পড়ল আমার উপর। উনি আমাকে দেখেই বলেন,
“এই ভূত মানে নিহা আমাকে এক গ্লাস পানি দাও তো!
আমি টেবিলের পাশ থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে যাবার আগেই একটা মেয়ে উনার সামনে শরবতের গ্লাস ধরলেন। উনি বলে উঠে,
“আপু, আমি পানি খাবো।
“সমস্যা নেই শরবত খাও, ঠান্ডা শরবত খেলে ভালো লাগবে।
ততোক্ষণে আমি সামনে চলে এসেছি। উনি ঢোক গিলে বলেন,
“আসলে আপু!
এর মাঝেই আরেকটা মেয়ে উনার চুলে হাত দিয়ে বলেন,
“কি ব্যাপার বলো তো আহি, সবসময় এতো কুল কেন লাগে তোমাকে।
আমি পাশ থেকে বলে উঠি,
“নিয়মিত গোসল করে বলে!
মেয়েরা সব থমতম খেয়ে আমার দিকে তাকাল। উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই একটা মেয়ে বলে উঠে,
“এ কে আহি!
আরেকজন বলে উঠে,
“তোমার কাজিন নাকি!
সেই মেয়ের কথায় আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। আহিয়ান হেসে বলে,
“সি ইজ মাই ওয়াইফ! আইমিন মিসেস আহিয়ান চৌধুরী!
উনার এই কথায় সব মেয়েদের মুখে অন্ধকার নেমে এলো। আমি দাঁড়িয়ে গ্লাসে পানি খেতে খেতে সবার কান্ড দেখছি। মেয়ে গুলো একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার উনার দিকে। একজন বলে উঠে,
“ও সত্যি তোমার বউ।
“তোমাকে আমি মিথ্যে মিথ্যে কেন বলব বলো।
“তুমি বিয়ে করলে কবে?
“এই কয়েকমাস হলো তবে পালিয়ে বিয়ে করেছি তো তাই তোমাদের ইনভাইট করতে পারি নি। সরি হ্যাঁ!
“না না ঠিক আছে। আমরা যাই তোমরা বরং কথা বলো।
বলেই বিরহ নিয়ে মেয়ে গুলো চলে গেল। আমি হাসছিলাম কারন তাদের মন ভেঙ্গে যাবার শব্দ আমি পেয়েছিলাম! উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কাছে এসে বলেন,
“থ্যাংকু ভূতনি! তুমি আসায় আজ বেঁচে গেলাম।
বলেই আমার হাত থেকে পানির গ্লাস নিতে এলেন। আমি গ্লাস টা হুট করে সরিয়ে ফেলি। উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। আমি হেসে বলি,
“শরবত খান, ঠান্ডা শরবত! খেলে ভালো লাগবে।
বলেই পানি খেতে খেতে চলে এলাম। উনার মুখ দেখার মতো ছিল।
.
ইতির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নিতি ওরা ঠিক আমার সামনে বিপরীত দিকে দাঁড়ানো। ইতি আমাকে বার বার সরি বলছিল। আহিয়ানের এসব ঘটনা আকাশ ভাইয়া কে বলে নি তাই আকাশ ভাইয়া নিতিদের ইনভাইট করেছে। ভালোই করেছে বলে নি। এসব না জানাই ভালো।
হঠাৎ মনে হলো আমার পাশে কেউ দাঁড়ানো। আমি তাকিয়ে দেখি উনি আমার পাশে দাঁড়ানো। তার হাত দুটো পিছনে মুখে স্নিগ্ধ হাসি। আমি ভ্রু কুঁচকে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম। উনি হেসে আমার কানে লাল সূর্যমুখী গুঁজে দিলেন। অতঃপর আমার নাক টেনে বলেন,
“একদম ভয়ংকর সুন্দরী লাগছে!
আমি উনার কথায় মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে তাকালাম। নিতি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আহিয়ান চলে গেল আকাশ ভাইয়ার কাছে। ইতি আমাকে খোঁচা মেরে বলে,
“এতোক্ষণে বুঝলাম লাল শাড়ির সাথে কালো চুড়ি!
“মানে!
“ম্যাচিং ম্যাচিং বাহ!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“এটা ম্যাচিং!
.
কিছুক্ষণ পর’ই আংটি বদলের অনুষ্ঠান শুরু হলো। আকাশ ভাইয়া ইতির অনামিকা আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দিলেন। অতঃপর গান বাজনা শুরু হলো। আমি তাকিয়ে
দেখি উনি হাতে গিটার নিয়ে বাজাতে শুরু করলেন। অতঃপর আমার চারপাশে এসে ঘুরে বলেন,
কৃঞ্চ আইলা রাধার কুঞ্জে
ফুলে পাইলা ভ্রমরা
কৃঞ্চ আইলা রাধার কুঞ্জে
ফুলে পাইলা ভ্রমরা
ময়ুর বেশেতে সাজুইন রাধিকা
ময়ুর বেশেতে সাজুইন রাধিকা।
( অতঃপর উনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে দেন। আমি বলে উঠি… )
সোয়া চন্দন ফুলের মালা
সখিগণে লইয়া আইলা
সোয়া চন্দন ফুলের মালা
সখিগণে লইয়া আইলা
কৃঞ্চ দিলাই রাধার গলে
বাসর হইল উজালা….
বাসর হইল উজালা গো
বাসর হইল উজালা
ময়ুর বেশেতে সাজুইন রাধিকা
ময়ুর বেশেতে সাজুইন রাধিকা…
গান নাচ শেষ হলো। আবারো আরেক গান বাজতে লাগলো। আমি একপাশে দাঁড়িয়ে দেখছি। কিন্তু উনাকে আর চোখে পড়ল না। কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন। আমি এসে ইতির পাশে দাঁড়ালাম। ওকে আহিয়ানের কথা জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু সেও কিছু বলতে পারল না। অতঃপর আমি সবার মাঝে থেকে একটু বাইরে চলে এলাম।
আশপাশ উনাকে খুঁজছি। হঠাৎ মনে পড়ল ফোনের কথা। বোকার মতো না খুঁজে ফোন করলেই তো হয়। এই হচ্ছে ফোন একটা যার কথা আমার মাথায় কখনো আসে না। সেদিন ভার্সিটির অনুষ্ঠানের মাঝেও ফোনের কথা মনে এলো না। যদিও আমি খুঁজে পেয়েছিলাম।
ফোন করলাম উনাকে। ফোন বাজছে কিন্তু কেউ তুলছে না। হঠাৎ করেই আমার কানের কাছে কেউ বলে উঠে,
“ফোন করছো?
আমি লাফিয়ে উঠি, পিছনে তাকিয়ে দেখি সিফাত। তার দিকে তাকাতেই সে ফোনটা আমার দিকে ঘুরাল। আমি তাকিয়ে দেখি আহিয়ানের ফোন। এজন্য’ই ফোন ধরেছিল না উনি।
“তোমার কাছে উনার ফোন কেন?
“ভাইয়া দিয়ে গেছে,জরুরি কাজে গেছে তো যাতে ফোন ডিস্টার্ব করতে না পারে তাই আমার কাছে রেখে গেছে।
“কি জরুরী কাজ।
“জানতে চাও!
আমি সিফাতের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। সে আমাকে বাড়ির পিছনের বাগানের দিকে ইশারা করল।
আমি হাঁটা ধরলাম বাগানের দিকে। কি কাজে গেছেন উনি সেখানে। অতঃপর সেখানেই যেতেই আমি থমকে গেলাম। আমার কাছে মনে হলো আমার সময় সেখানেই থমকে গেছে। আমার হাত পা সব কাঁপতে লাগালো। বুকের মাঝে একধরনের ব্যাথা অনুভব করছি। আমার’ই চোখের সামনে নিতি আহিয়ানকে কিস করছে! মনে হলো মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। অতঃপর…
#চলবে….
#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫০
আমি সেখানে এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে এলাম। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। আমি কাঁদছি, খুব কাঁদছি! কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির বাইরে চলে এলাম। অতঃপর দৌড়াতে লাগলাম। কি করছি কেন করছি কিছুই জানি না তবে এতো টুকু জানি আমি পালিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছি!
অনেকদূর অবদি আসার পর এখন হাঁটতে লাগলাম। দেখতে দেখতে মাঝরাস্তায় চলে এসেছি। চারদিক খুটখুটে অন্ধকার! কত রাত হয়েছে কে জানে? আমি নিশ্চুপ ভাবে গাড়ির চলে যাওয়া দেখছি। হঠাৎ করেই একটা সিএনজি এসে থামল আমার সামনে। জিজ্ঞেস করল..
“আফা কোথায় যাবেন!
আমি স্থির চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে। লোকটা আবারো জিজ্ঞেস করল। আমি আহিয়ানের বাড়ির ঠিকানা বলি। লোকটা বলে,
“আচ্ছা উঠেন!
অতঃপর আমি তার সিএনজিতে চড়ি। কিন্তু এতো রাতে লোকটা আমার কাছেই কেন এলো। অতঃপর পেছনে তাকিয়ে দেখি আমি বাসস্ট্যান্ড এর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
লোকটা গাড়ি চালাচ্ছে আর আমি পিছনে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি। এখন আর কাঁদতে ইচ্ছে করছে না। মন শান্ত হয়ে গেছে, সব নিশ্চুপ! সিএনজি চলছে দ্রুত গতিতে, বাতাসও দ্রুত গতিতে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায়। চোখ বন্ধ করতেই সেই দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। অস্বস্তি হতে লাগলা। কানে একটা কথাই বাজতে লাগাল, “আহিয়ান আমাকে ঠকিয়েছে, উনি বলেছিলেন আমার সাথেই তার বাকিটা জীবন কাটাবে। কিন্তু উনি উনার কথা রাখে নি। আমাকে ঠকিয়েছেন উনি।
এসব ভেবে চোখ বন্ধ করতেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। চোখের অশ্রু ও বড় অদ্ভুত জিনিস। সে তার মন মতোই চলে। কেন কাঁদছি আমি, কেন কষ্ট হচ্ছে আমার সেসব কিছুই জানি না। শুধু জানি আমাকে কাঁদতে হবে! হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান! কলটা কেটে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
সিএনজি এসে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিল। আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে তাকে দিলাম। সদর দরজা বন্ধ। কড়া নাড়তেই দাড়োয়ান গেট খুলে দিল। আমাকে দেখে একটা বড় সালাম দিল। আমি মাথা নেড়ে ভিতরে এলাম।
বাড়ির দরজায় কলিং বেল চাপতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিল। পুরো বাড়ি আজ খালি। কেউ নেই বাড়িতে। সবাই গেছে আপুর শশুড় বাড়িতে। সার্ভেন্ট আমাকে দেখেই অনেক কথা জিজ্ঞেস করতে লাগল। বলল,
“ম্যাম, আপনারা চলে এসেছেন।
বলেই বাইরে তাকাল। আমি হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ি বেয়ে উঠছি। সে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি একা এসেছেন, স্যার আসে নি।
আমি কিছু বলি নি। সে আবারো জিজ্ঞেস করল,
“ম্যাম আপনার জন্য চা বানাবো!
আমি কোন উত্তর না দিয়ে ঘরে চলে এলাম। বিছানায় ব্যাগ টা রেখে বেলকনির দিকে গেলাম। বেলকনির সামনে পর্দা টানা ছিল। আমি পর্দা সরিয়ে দরজা খুলে বেলকনির দিকে যাবো তখন’ই ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। আমি ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখি আহিয়ানের নাম্বার! আমি তার ফোন কেটে দিতেই ইতির নাম স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। তার কল’টা কেটেও করে যেই বিছনাতে রাখতে যাবো ওমনি ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। এর আগেও উপরে অনেক মেসেজ জমা আছে। সব গুলোই আহিয়ানের! আমি রেগে ফোনটাকে একটা আছাড় মারলাম। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেলকনিতে এলাম। সেখান স্নিগ্ধতা দেখে চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায়। বুকের ভেতর কোথাও বেশ কষ্ট হচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছে জোরে জোরে কাঁদতে। কিন্তু আমি যে অপারগ!
আমার অশ্রু আবারো বেইমানি করল। তারা নিজ ইচ্ছেমত গড়িয়ে পড়তে লাগালো। আমার হাত পা সব কাপতে লাগলো। সেখানেই হাঁটু ভেঙ্গে বসে কাঁদতে লাগলাম। মন বার বার এক কথাই বলছে,
“আহিয়ান কেন করল আমার সাথে এমন! কেন করলেন উনি এরকম। নিতি কে ভালোবেসে থাকলে তার সাথেই থাকতেন। আমাকে বিয়ে করতে গেলেন কেন। উনি আমাকে বাঁচাতে বিয়ে গিয়ে নরক যন্ত্রণা’র মাঝে ফেলে দিলেন।
.
নিচ থেকে গাড়ির আওয়াজ এলো। আহিয়ান এসেছে! গাড়ি থেকে উনার নামার আওয়াজ পেলাম। তড়িখড়ি করে নামছেন উনি। দৌড়াতে দৌড়াতে উপরে আসছেন। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই ঠাঁই বসে আছি। শুধু দু চোখের অশ্রু মুছে নিয়েছি।
উনি ঘরের ভেতর আসার পর’ই সব শান্ত হয়ে গেল। নিশ্চুপ হয়ে গেল সবকিছু। উনি ধীরে ধীরে আমার দিকে আগাচ্ছেন। অতঃপর আমার কাছে আসতেই পাশে বসে পড়লেন। দু’জনেই চুপ, কেউই কোন কথা বলছি না। আচ্ছা উনি কি আদৌও কিছু বলবেন। হঠাৎ করেই উনি বলে উঠেন,
“তুমি আমাকে না বলে কেন চলে এসেছ, জানো পাগলের মতো খুঁজছিলাম তোমায়। ইতিকেও বলে আসো নি। পুরো বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে আমি শেষ! তার উপর ফোন! এতো গুলো কল করলাম ধরলে না কেন তুমি!
আমি কিছু না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি বলে উঠেন,
“নিহা, ঠিক আছো তুমি!
উনার মুখে নিহা নামটা শুনে এই প্রথমবার যেন খুব কষ্ট পেলাম। কেন ডাকছে এই নামে। পর করে দিচ্ছে আমায়। আমি আর উনার কাছে বসে থাকার ধৈর্য্য হলো না। কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলাম। তখনই হুট করে আমার হাত ধরে নিজের দিকে টানলেন উনি।
আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। উনার চোখে আমার জন্য চিন্তা দেখতে পাচ্ছি এসব কি আদৌও সত্যি। আমার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। উনি সেই অশ্রু মুছে দিয়ে বলেন,
“কাঁদছো কেন তুমি!
আমি উনার থেকে সরিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলি,
“কিছু না, আমাকে যেতে দিন।
“নিহা একটু শোন!
“কি শুনবো আহিয়ান, কি শুনাবেন আপনি।
বলতে বলতে দু চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল। উনি আবারো মুছতে নিলে আমি উনার হাত ধরে বলে,
“যে কাঁদায় তার হাতে অশ্রু মুছিয়ে দেওয়া মানায় না আহিয়ান।
“তুমিও কি এটাই ভাবো।
“কেন ভাববো না, আমি নিজের চোখে দেখেছি, আপনি কি বলতে চান আমি ভুল দেখেছি
“আমি তা বলছি না।
“তাহলে,তাহলে তো হয়েই গেল। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, কেন আনলেন এসবের মাঝে আমাকে।
“নিহা আমার কথা শোন..
উনাকে থামিয়ে দিয়ে উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বলি,
“রাখুন এসব, শুধু এতটুকু বলুন! আপনি ভালোবাসেন নিতি কে।
উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। খানিকটা বিরক্ত স্বরে বলেন,
“নিহা, এসব কি বলছো। পাগল হয়ে গেছ তুমি।
“পাগল তো আপনারা আমাকে বানিয়ে দিচ্ছেন আহিয়ান।
“নিহা, আমার কথা শোন! তুমি যা দেখছ…
“ভুল দেখেছি আমি।
“না ভুল দেখোনি কিন্তু ভুল বুঝেছ!
“তাহলে সঠিক না কি আহিয়ান। আপনিই তো বলেছিলেন, কেউ কাউকে ভালোবাসলেই তাকে কিস করে! বলেন নি আপনি।
“হ্যাঁ আমিই বলেছি, কিন্তু…
“আবারো কিন্তু! নিতি কে ভালোবাসেন বলেই তো তাকে কিস করেছেন। আচ্ছা আহিয়ান একটা কথা বলুন। নিতি কে যদি ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেছেন।
“নিহা আমি নিতি কে ভালোবাসি না।
আমি চেঁচিয়ে বলি,
“তাহলে তাকে কিস কেন করেছেন! ( আহিয়ান কলার ধরে বলি ) কেন ছিলেন ওর এতো কাছে। কেন?
আহিয়ান আমার হাতে হাত রেখে বলে,
“তুমি একটু শান্ত হও, আমি সব বলছি।
“আহিয়ান আপনি কি বলবেন এখন আমায়। কি বলবেন, নিতি..নিতি আপনাকে… ( আর বলার সাহস হলো না। মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। অতঃপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি… ) আচ্ছা আহিয়ান! আপনার কিছু যায় আসেনা নাহ! কোন মেয়ে আপনার গালে হাত রাখল, কোন মেয়ে আপনাকে কিস করল, কোন মেয়েরা আপনার আশেপাশে ঘুরঘুর করে এতে আপনার কিছু যায় আসে না বলুন!
“নিহা হাইপার হয়ো না। তুমি আগে শান্ত হও আমি সব বলছি।
আমি আবারো জোরে বলে উঠি,
“আপনি আমাকে বার বার নিহা নিহা বলে কেন ডাকছেন!
বলেই উনার থেকে দূরে সরে যাই। আহিয়ান স্থির হয়ে দেখছে আমাকে। আমি খুব অস্বাভাবিক আচরণ করছি।
আমি কেঁদে কেঁদে আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে বলি,
“আহিয়ান আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন!
“না নিহা.. তুমি শোন তো একটু।
“না আহিয়ান! আপনি ঠকিয়েছেন আমায়, ঠকিয়েছেন । আপনি আমাকে সব মিথ্যে কথা বলছেন সব মিথ্যে।
“নিহা দুটো মিনিটেরও জন্য একটু শান্ত হয়ে আমার কথা শোন।
“আমি কিছুই শুনতে চাই না আহিয়ান, কিছু না।
বলেই সেখান থেকে বের হয়ে যেতে নিলাম, হুট করেই আহিয়ান আমার দুই বাহু ধরে ফেলে। আমি তার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছি কিন্তু সে আমাকে ততোই জোরে ধরে রেখেছে। এক পর্যায়ে আহিয়ান আমাকে ধমক দিলেন। তার ধমকের আওয়াজে আমি চুপ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি ছেড়ে দিলেন আমায়। আমি উনার দিকে তাকিয়ে কাঁদছি। উনি উনার এক হাত আমার গালে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“একটু শান্ত হও, আমাকে কিছু বলার সুযোগ দাও।
আমি একটু শ্বাস নিয়ে বলি,
“আহিয়ান আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন, ( উনার চোখের দিকে তাকিয়ে.. ) ঠকিয়েছেন আমা…
বলার আগেই হঠাৎ উনি কিছু সেকেন্ড’র জন্য আমার ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরেন। আমি হতভম্বিত হয়ে গেলাম। ঘটনা একদম সময় সাপেক্ষ ছিল। উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে আবারো মাথা নিচু করছি। কেন জানি মনে হচ্ছে যা হয়েছে সেটা একটা স্বপ্ন ছিল।
উনি নিহা বলেই আমার কাছে আসতেই আমি পিছিয়ে গেলাম। আমাকে পিছুতে দেখে উনি নিজেও পিছিয়ে গেলেন। আমি এখন নিশ্চুপ হয়ে গেছি। আহিয়ান বলতে শুরু করেন,
“এখন তোমার সাথে যা ঘটল আমার সাথে সেটাই ঘটেছে। এমন কথা বলার মাঝেই নিতি হুট করে আমাকে কিস করে। আমি ব্যাপারটা তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারি না। তবে এটা সত্যি আমি সেটার কোন সুযোগ নিই নি। হয়তো তুমি সেখানে কিছু সেকেন্ড দাড়ালেই ব্যাপারটা বুঝতে পারতে। বলছি না তুমি যা দেখেছ তা ভুল। স্বীকার করছি যা দেখেছ সব সত্যি কিছু বুঝেছ ভুল। আমার জীবনে তুমি থাকতে আমি অন্য কোন মেয়ের কথা ভাবি নি আর না ভাববো।
আমি শীতল গলায় বলে উঠি,
“আপনার ফোন! আমি কেন গেলেন সেখানে। জানতেন না নিতি কি করতে পারে। সেদিনের কথা ভুলে গেছিলেন আপনি।
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বেলকনির গ্রিলের সাথে দাঁড়িয়ে বলেন,
“আমার ফোন সিফাতের কাছে ছিল। ও বলেছিল তা ফোনে চার্জ নেই আমার ফোনটা একটু দরকার তাই আমি তাকে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ও মিথ্যে বলেছিল। আসার সময় ওর হাতে আমি ওর ফোন দেখি। আমাকে আনিকা এসে বলছিল তারা সবাই আমাকে আর তোমাকে সরি বলতে চায়। যা কিছু হয়েছে এজন্য তারা সরি বলবে। আমি ওদের বিশ্বাস করেছিলাম। আমি তোমাকে ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আনিকা বলল সে তোমাকে ডেকে আনছে। টিনা’র সাথে গিয়ে নিতি কে দেখার পর যখন দেখি টিনা নেই তখন’ই বুঝতে পারি ওরা সবাই আমাকে মিথ্যে বলেছে। আমি সেখান থেকে তখন’ই চলে আসতাম কিন্তু নিতি এসে আমার পথ আটকে দিল। তর্ক শুরু হয়ে গেল আমাদের মাঝে আর এমন সময়ই হুট করে…
বলেই নিঃশ্বাস নিলেন উনি। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“এতো ভালো টাইমিং তোমার জানতাম না। ঠিক তখনই এলে তুমি আর চলেও গেল। এরপর কি হলো আর জানলে না। আমি নিতি কে ছেড়ে দিয়ে ভিতরে এসে তোমাকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না। বুঝতে আর বাকি রইল না তুমি সব দেখেছ আর ভুল বুঝছো। পাগলের মতো পুরো বাড়িতে তোমাকে খুঁজেছি। ইতি কে জিজ্ঞেস করছি সেও কিছু বলতে পারছে না। চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। কোথাও না পেয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম। ড্রাইভ করতে করতে তোমাকে খুঁজছি, ফোন করছি কিন্তু তুমি ফোন তুলছো না। বাসায় আসতেই সার্ভেন্ট বলল তুমি এসেছ!
আমি তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো কি না বা করবে কি না জানি না কিন্তু যা ঘটেছে তাই বলেছি। আর হ্যাঁ নিতি কে আমি ভালোবাসি না।
বলেই উনি চলে যেতে নিলেন। আমি দেওয়ালের সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে বলে উঠি,
“আর আমাকে!
উনি থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। পিছনে আমার দিকে ফিরলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“আমাকে ভালোবাসেন আপনি!
আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। উনি চোখ নামিয়ে নিলেন। চলে গেলেন। উনি যেতেই আমি নিচে স্থির হয়ে বসে পড়লাম। হয়তো উনার মুখ থেকে হ্যাঁ শুনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন চাইলাম জানি না। তবুও ভেবেছিলাম উনি হ্যাঁ বলবে।
খানিকক্ষণ এভাবেই বসে রইলাম। উনি ঘর থেকে চলে গেছেন। আবারো এলেন। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। হঠাৎ করেই মনে হল আমি কারো কোলে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমি উনার কোলে। উনি কোলে তুলেছেন আমাকে। উনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। চোখ নামিয়ে রেখেছেন।
আমাকে এসে খাটে বসিয়ে দিলেন। আমি এখনো তাকেই আছি উনার দিকে। উনি হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে আমার সামনে বসলেন। আমার মুখে ভাতের লোকমা তুলে বলেন,
“খেয়ে নাও, কাঁদতে কাঁদতে আর চেঁচিয়ে তোমার সব এনার্জি চলে গেছে। বাকি রাত ও ঝগড়া করতে হবে। এনার্জি লাগবে খেয়ে নাও।
উনার কোন কথায় আমার রাগ কমছে না। খুব রাগ হচ্ছে নিতি ওদের উপর। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে ভাতের লোকমা মুখে দিলাম। উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। আমি খেতে খেতে বলি,
“আপনি খাবেন না
“হুম তুমি খাও আমি পরে খাবো।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। কথা বাড়ানোর কোন ইচ্ছাও নেই। খাবার খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবে এর মাঝেই উনার ফোন বেজে উঠল। উনি ফোনের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“ইতি ফোন করেছে!
অতঃপর আমি ফোনটা নিয়ে রিসিভ করি। উনি চলে যান বেলকনির দিকে। আমি ফোন তুলতেই ইতি কথা শুরু করে দিল। আমি বলে উঠি,
“আমি নিহা!
“নিহা! তুই! বেয়াদব মেয়ে তোর ফোন কেন তুলছিস না। কখন থেকে ফোন করেই যাচ্ছি আগে তো তাও ফোন যাচ্ছিল এখন তো তাও যাচ্ছে না।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি ফোনটা নিচে পড়ে আছে। আমি বলে উঠি,
“ফোন আছে ঠিকঠাক।
“বুঝলাম। তুই আছিস তো ঠিকঠাক
“হুম আছি। বল কি হয়েছে?
“সেটা তো তুই বলবি, আমাদের কাউকে কিছু না বলে চলে গেলি। কখন গেলি টের ও পেলাম না।
“সরি, আসলে খুব খারাপ লাগছিল তাই চলে এলাম!
“মিথ্যে কেন বলছিস সেটা কাল জানবো। আগে শোন তুই চলে যাবার পর কি হয়েছে?
“কি হয়েছে?
“তুই যেতেই আহিয়ান ভাইয়া হঠাৎ করে এসেই সিফাত কে সবার সামনে চড় মারল। আর তার পেছন পেছন নিতি কে আসতে দেখেছিলাম। বেচারি কাঁদতে কাঁদতে এসেছে। ভাইয়া নিশ্চিত ওকে বকেছে। এছাড়া আনিকা আর টিনা কেও সাইলেন্ট ভাবেই চোখ রাঙিয়ে গেল। কেন এমন হলো সেই সম্পর্কে তুই জানিস কিছু!
ইতির কথা এতটুকুই আমার কানে এলো। আমি খাটে বসে দেখছি উনি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। ফোনটা কেটে বেলকনিতে গিয়ে উনার পাশে দাঁড়ালাম। উনি সিগারেটে টান দিচ্ছে আর তার ধোঁয়া আকাশের দিকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি শীতল গলায় বলে উঠি,
“আপনি কি সিফাত কে মেরেছিলেন
“চড় দিয়েছি আর কিছু বলি নি। সেখানে অনুষ্ঠান চলছিল বলে তেমন কিছুই বলতে পারি নি।
“আর নিতি!
“আমি ওকে ধমক দিয়েছি। কিন্তু এমন কান্ড হবার পর শুধু ধাক্কা দিয়েছিলাম যার কারনে ও পড়ে গেছিল। ওকে না তুলে এসে পড়েছি। মেয়েদের গায়ে কখনো হাত তুলিনি আমি। নিতিকেও আজ ফেলতাম না কিন্তু রাগের মাথায় ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি।
“টিনা আর আনিকা।
“ওদের বলেছি আর কখনো আমার সামনে আসতে না। সম্পর্ক শেষ ওদের চার জনের সাথে আমার!
#চলবে….