#কাঁটা_মুকুট ||৬ষ্ঠ পর্ব||
-ঈপ্সিতা শিকদার
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি সম্মুখের সবুজের মায়ায় মাখা বিশালাকার দালানটির দিকে। নতুন এক মোড় নিয়ে এসেছে আমার জীবনে এই দালানটি। আমার দাদুর মনের খুব কাছের এই চারতলা পনেরো কামরার বাড়িটা, নাম রেখেছিলেন দাদী সাহেরা বৃষ্টির নামে, বৃষ্টি ভিলা। পুরান ঢাকার কোলাহল পরিবেশ থেকে দূরে যেয়ে বুড়িগঙ্গার অপরপাশে এই বাড়ি।
মূলত মোমিন ভাই ও তরী ভাবীর তেলাই (হলুদ), রঙ খেলা, আইবুড় অনুষ্ঠান, শাদি (বিয়ে) এখানে করার ইচ্ছে বাড়ির ছোটদের। ঐ যে আজকাল শুধুমাত্র পরিবার-পরিজন একত্রিত হয়ে ডেস্টিনেশন ম্যারেজ করার ট্রেন্ড বের হয়েছে না, তা তো সম্পূর্নরুপে করার অর্থ নেই, তাই নিজেদের বিচ্ছিন্ন বাড়িতেই রিসোর্টের মতোন ব্যবহার করতে চাচ্ছে সবাই।
এই দালানে যেহেতু অনেক বছর কারো যাওয়া-আসা নেই, শুধু দাদুর এক দুঃসম্পর্কের বোন থাকে এই বাড়িতে, তাই একবারে এসে পড়লেই তো হয় না৷ থাকার মতোন ব্যবস্থা করারও তো একটা বিষয় আছে। তাই আমাদের তথা অর্ক, নিবিড়, আনিসা আর আমাকে পাঠানো হয় সবকিছু সামলে নিতে। আর এখানে এসেই অর্ক তার নাম জুড়ে দেয় আমার সাথে।।
আমি আমগাছটার নিচে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছি, এর মাঝেই কোনো পুরুষ হুট করেই ঝাপটে ধরে আমায়। চমকে উঠে ঝাড়া দিয়ে সরে এসে পিছনে তাকাই। অর্ক বদমাশটা দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
আমি রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে আছি, তাতে তার কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই। বরং, এক পা এক পা করে এগিয়ে আসে আমার পানে, আমিও কোনো এক সম্মোহনেই এক পা এক পা করে পিছাচ্ছিলাম। অসতর্কতা ও অন্যমনস্ক থাকায় পায়ে কিছু একটা বেজে পড়ে যেতে যাচ্ছিলাম, সে এসে কোমড় আঁকড়ে ধরে ফেলল।
তার দুই চোখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলাম।
“কন্যা যত দূরে যাবে, যাও। কারণ যত কদম দূরে যাবে, ততই আমাদের দূরত্ব হ্রাস পাবে। প্রমাণ দেখে নেও।”
আমার ছাব্বিশ বছর বয়সী মনের আকাশে আবারও কিশোরির ন্যায় ঘুরি উড়তে শুরু করেছিল। হুট করেই মনে পড়ে গেল নিজের বাস্তবতা। সেই সাথে দেখলাম এই বাড়িতে থাকা দিদা আসছে।
“ছাড়েন, দিদা আসছে।”
সে নিচের ঠোঁট কামড়ে এক পলক সেদিকে তাকায়। শুধায়,
“তাতে সমস্যা কী? বুড়ি তো অন্ধ!”
“ছিঃ ছিঃ একজন বিদেশে পড়ুয়া ছেলের এমন ভাষা! নূন্যতম লজ্জা, ভদ্রতা নেই।”
কথাগুলো রাগানোর উদ্দেশ্যেই কপট রাগ মিশিয়ে বলা। তবে অসফল হলো আমার প্রচেষ্টা। সে রাগলো না-ই, শব্দহীন এক চওড়া হাসি হাসলো বটে। তার গজদাঁত বেড়িয়ে এল। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তা উপভোগ করতে যেয়েও এক অদৃশ্য বাধায় করলাম না। ছাড়িয়ে নিলাম নিজেকে।
মনে মনে বললাম,
“একদিন খুব করে চাইতাম কেউ জীবনে আসুক। হৃদয়টা উষ্ণ ভালোবাসায় ভরিয়ে দিক, বর্ষণ হোক হৃদয়ে। আজ যখন আমি নিস্তব্ধ, আবেগহীন, চাই না কাউকেই; তখন কেন কেউ এসেছে? আবার আমাকে ভাঙা কি খুব বেশি দরকার?”
কিছু একটা ভেবেই তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“শুনুন, আজ সবাই আসবে। আমাদের বিয়ে…? কেউ জানলে এর ফলাফল খারাব বৈকী ভালো হবে না। এর প্রভাবটা পড়বে সোজা মোমিন ভাই আর তরী ভাবীর বিয়েতে। তাই আমি চাচ্ছিলাম…”
একটু ইতস্তত হয়ে নিচে তাকাই। সে আকস্মাৎ আমাকে বুকে মিশিয়ে নিয়ে আত্মস্থ করে বলে,
“ডোন্ট ওয়ারি, কিচ্ছু হবে না। আপাদত কাউকে জানতে না দেয়াই ভালো। একবার এই বিয়েটা শেষ হোক, তারপর আমিই যা করার করব।”
“কিছু করার নেই, শুধুই তালাক।”
কথাটা আপন মনেই বললাম। তার সামনে বলে কথা বাড়ানোর ইচ্ছে আপাদত নেই, এতে আপদ বাড়ার সু্যোগ আছে।
“কী রে? মনু তুই কি এইহানে? সবার না আজ আইবার কথা?”
তার ডাক শুনে দুজনেই তড়িৎগতিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। আনিসা ও নিবিড়ও এসে পড়ল জানাল তারা কয়েক মিনিটেই পৌঁছাবে।
ইতিমধ্যে সবাই আসতে শুরু করেছে এই ভিলায়। নিবিড়ের মা রেয়ানা চাচী, মোমিন ভাইয়ের মা রোদেলা চাচী, আবিদা ফুপি এসেই আমায় জড়িয়ে ধরলেন।
“আহারে আমার মাইয়ার চেহারা কয়দিনেই কেমন হইয়া গেছে গা! কী রে নিবিড় দেইখা রাখোছ নাই মন রে?”
“তা যা কইছো নিবিড়ের আম্মা। খাওয়ানোর মনে হয় ভালোই কষ্ট হইছে। না কি সব কাম আমার মাইয়াটাই করছে কে জানে।”
অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললেন ফুপি।
“হ, মাইয়া আমগো বাঁশের লাহান (মতোন) শুকনা, এখন দেখতাছি কাঠিই হইয়া গেছে। তয় সমস্যা নাইক্কা, এখন জেঠি আইয়া পড়ছি না? দুই দিনেই ঠিক কইরা ফেলমু।”
জেঠির শেষ কথায় আমি মৃদু হাসলাম। সবসময় বন্ধুবান্ধবদের নিকট শুনেছি চাচী-ফুপিরা না কি হিংসা করে, মারধর করে। অথচ, আমার চাচী-ফুপিরা, চাচা-ফুপারা সবসময় সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবেসে এসেছে। বলতে গেলে যেখানে বাবা-মা মেতে থাকত মাহিনকে নিয়ে জেঠা-জেঠি, চাচা-চাচী, এমন কি ফুপি-ফুপাও আমার আবদার মেটাতে তৎপর থাকত বটে। এর এক কারণ হয়তো, আমার গোটা পরিবারে আমি একাই মেয়ে বলে। আমার চাচীর জমজ দুই ছেলে নিবিড় ও রেয়ান, জেঠির একমাত্র সন্তান মোমিন, আর ফুপির একটাই ছেলে মেঘ।
“আমি ভালোই আছি। তোমরা এত উত্তেজিত হইয়ো না। মাত্র আসছো। যাও, যাও, রেস্ট নাও। আনিসা পাখি সবাইকে নিজের ঘর দেখিয়ে দেও।”
জেঠি, চাচী, ফুপিকে কোনোরকম বুঝিয়ে ভিতরে পাঠালাম। তারা ভিতরে বাড়ির বিশাল সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন আমার মা আর অর্কের মা পেয়েরা বানু। উভয়েই মুখটা বাংলার পাঁচের মতোন করে রেখেছে মুখটা। কী জন্য কে জানে।
যাকগে আমার কাজ শেষ। পেয়ারা আন্টি আমাকে খুব একটা পছন্দ করে না, আর আমি গত আটেক বছর ধরে মা কিংবা বাবার সাথে দরকার ছাড়া কথা বলি না। তাই এনাদের দুজনার একজনারও মুখোমুখি হওয়ার আমার ইচ্ছে নেই।
“অর্ক সাহেব, আপনার মাকে আর আন্টিকে তাদের জন্য নির্ধারিত রুমগুলো দেখিয়ে দিয়েন।”
“কেন তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
“সেটা আপনাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করছি না বর্তমানে। নিজের কাজে ধ্যান দিন।”
বলেই গুরুগম্ভীর চেহারায় সেখান থেকে সরে আসলাম।
অর্কের মন ভেঙে গেল। গতকালে সকালে বলা হাদিসগুলো তার প্রেয়সীর মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। বেশ নমনীয়তাও এসেছিল তরুণীর অঙ্গভঙ্গিমা এবং আচারণে। এমন কী তার ছোঁয়াতেও বা জড়িয়ে ধরাতেও কিছু বলেন। আর এখন আবার…
দূর থেকে মনকে অর্কের সাথে কথা বলতে দেখে বিচলিত হলেন পেয়ারা বানু। তবে কী সত্যিই ছেলে তার! মন মেয়েটাকে এমনিতেই তার পছন্দ নয়, এটুকু বয়সে কেমন পটাসপটাস কথা বলে। বেশ দুঃখের সহিত সখীকে বলেন,
“দেখেছিস, দেখেছিস তার মেয়ে কীভাবে ফিসফিসালো আমার ছেলের সাথে! খুব তো বলছিলি এমন কিছুই না দেখলি তো এখন… ওরে আমার পুড়ো কপাল রে! বুড়ো বয়সে শাশুড়ির মার খাব!”
“ধুরু! এমন কিছু না। চল তো।”
___
তরীদের পরিবার মানে আজাদ পরিবারের অনেক মানুষ এসেছে, একদম অচেনা তারা। তবে ভাগ্যিস বজ্জাত বুড়িটা মানে অর্কের দাদী আসেনি, সে আসলে নির্ঘাত আমার দাদী আর তার একচোট ঝগড়া এতক্ষণ এসেছে। ভেবেই চাপা হাসলাম। যাকগে বড়রা সবাই উঠানে চৌকিতে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আর আগামীকাল হলুদ বলে ছাদে বাকি সবাই নাচের প্র্যাকটিস করছে, কেউ বা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
আমি, নিবিড়, অর্ক, মেঘ, রেয়ান খেয়াল করছি কার কী লাগবে। আর একেকজনের চাহিদা কী সুবিশাল! এই একটু আগে নম্রতা এসে জিজ্ঞেস করল,
“আপু গরম লাগছে, এসি নাই?”
মানে কী যা তা কথা! খোলামেলা ছাদে কী এসি থাকে! বড়লোকদের বাসায় বুঝি থাকে? কী যানি, আজব আজব কারবার সব। তবুও তাকে বুঝিয়ে পাঠালাম। এখন আবার একজন এসে বলছে,
“আপু ল্যায়লা ম্যা ল্যায়লা গানটা দেও তো স্পিকারে?”
কেমনটা লাগে! তারপর ডাউনলোড করে ছাড়লাম। আরেকজন এসে বলছে জ্যুস লাগবে, কারো পাখা লাগবে, কারো হেডফোনস্, কারো স্যান্ডেল, এটা সেটা কত কী! বাব্বাহ্! অবিলম্বেই আমি ছাদের এক নির্জন পাশে ক্লান্ত হয়ে গা এলিয়ে বসে পড়লাম দৌড়াদৌড়িতে। ঠিক তখনই কেউ একজন এসে দাঁড়াল, আমি চোখ বন্ধ অবস্থায়ই বিরক্তির সুরে বললাম,
“আরে ভাই, কিছু লাগলে নিবিড়, রেয়ান ওদের বলো। আমি প্রচুর টায়ার্ড।”
“না, না, আমার কিছু লাগবে না।”
চোখ খুলে তাকালাম। অচেনা এক পুরুষ আগে কখনো দেখিনি। বয়সে আমার সমান বা একটু বড় হবে। ভালো ভাবে বসে প্রশ্ন করলাম
“ঠিক চিনলাম না?”
“আমি অর্কের কাজিন ভাবতে পারেন। দূর থেকে দেখলাম আপনাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে, তাই এই অরেঞ্জ জ্যুসটা নিয়ে আসলাম। ভালো লাগবে খেলে।”
সে জ্যুসের গ্লাসটা এগিয়ে ধরল। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম তার এমন আচারণে। কী বলব বুঝার বাইরে ছিল। তবে ফিরিয়ে দিলেও কি না মনে করে ভেবে নিয়ে “থ্যাংক ইউ” বললাম। ছেলেটাও মুচকি এক হাসি দিয়ে চলে গেল।
এদিকে অর্ক তার মনপাখিকে ক্লান্ত দেখে তার জন্য একটা কোকাকোলার বোতল আর চিপস্ নিয়ে এসে এই দৃশ্য দেখতে পায়। ছেলেটার কথা শুনে যতটা তার রাগ উঠে যাচ্ছিল, ততটা রাগ উঠছিল মনের ওড়না পড়ে যেয়ে চুল, গলা, ঘাড়, কাঁধ অনেকটাই দৃশ্যমান হয়ে যাওয়ায়। প্রথমে সে নিজে যেয়ে কিছু করতে চাইলেও পরে থেমে যায়। সে দেখতে চেয়েছিল মন কী করে! মনের কর্মে অনেকটাই রাগান্বিত হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
___
“আপু তোমাকে নিবিড় দুই তলায় ডেকেছে।”
মিনমিন করে বলে চলে গেল আনিসা। আমি ভাবলাম এই ছেলে এই সময়ে ওখানে কী করে। যাকগে দেখে আসি।
যেই তিনতলায় নিবিড়ের জন্য নির্ধারিত ঘরের সামনে পা রেখেছি ঠিক তখনই কেউ একজন নিজের সর্বশক্তি দিয়ে হ্যাঁচকা টানে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দেয়। আমি নিজেকে সামলে ব্যক্তিটির দিকে তাকাতেই দেখি অর্ক। রাগ উঠে যায়।
“আর ইউ ইনসেন! এমন কোন মানুষ করে? যত্তসব!” বলেই তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেই। সে আমার হাত ধরে টেনে সামনে আনে। ঝুঁকতে শুরু করে আমার দিকে।
“কী, করছেনটা কী?”
ধাক্কা দিয়ে বেশ রেগেই চেঁচিয়ে উঠি তার দিকে তাকিয়ে। তার চোখজোড়ার চাহনি আজ অন্যরকম। কেন যেন ভালো ঠেঁকছে না আমার নিকট।
“আমার সাথেই কেন তোর সকল তিক্ততা, রাগ? ঐ ছেলের সাথে তো হেসেখেলেই কথা বলছিলি। তার হাত থেকে কী সুন্দর জুসটাও তো নিলে…”
আমি অবাক ছেলে বলে কী! সামান্য একটা ঘটনা নিয়ে এত বড় কাহিনী করে ফেলল।
“পাগল না কি আপনি? আমি কখন হাসলাম। সে জুস অফার করেছে, না নিলে অপমানবোধ করত তাই নিয়েছি। আজাইরা কাহিনী করবেন না যেতে দিন।”
পাশ কাটিয়ে নিলে সে আবার আটকায়। বাহু ধরে খাটে নিয়ে বসতে ইশারা করে।
“আজ জুস অফার করেছে নিসোস যাতে অপমান না বোধ করে, এখন আমি অফার করছি খা।”
“মানে কী?” বলতে বলতেই চোখ পড়ল আমার পাশে। চারটার দুই লিটারের মিরিন্ডার বোতল। আমি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলল,
“সবগুলো খাবি। নাহলে আজ এই রুম থেকে তোর বের হওয়া লাগবে তো নাই। এখনই বের হয়ে সবাই ঢোল পিটিয়ে জানাব তোর আর আমার সম্পর্ক”
প্রচণ্ড রাগ উঠা সত্ত্বেও নিজেকে শান্ত রেখে তার কথা মানতে বাধ্য হলাম। এক বোতল শেষ করতেই আমার অবস্থা বাজে। পেটে ফুলে ঢোল! পেটে হাত রেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। সে গা জ্বলানো হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলছে, “এখন কেমন লাগে?”
রাগ উঠে গেল “সালা ছাগল!” বলে পুরো একটা মিরিন্ডা সমাপ্ত করলাম তার মোটা মাথায়। সেও আরেক বোতল ঢালে আমার উপর। অতঃপর শুরু হলো আমাদের মারামারি, আর আজেবাজে বকা।
দরজা খোলার শব্দে আমরা দুজনেই স্তব্ধ হয়ে ভীতু চোখে সেদিকে তাকাল। নিবিড় দাঁড়িয়ে, শব্দ করে স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। ঝগড়াঝাঁটি আবারও চলল পুরো দমে। খুব কষ্টে নিবিড় আমাকে ছাড়িয়ে পাশের কামড়ায় পাঠাল। পাশের ঘরটাই আমার।
এই রাতের বেলা গোসল করে আমার মেজাজের বারোটা বেজে গেছে। বের হয়ে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখে “ইয়া আল্লাহ” বলে চেঁচিয়ে উঠলাম।
চিবুকের কামড়ের দাগটা কত কষ্টে বরফ ডলে ডলে কমিয়ে কন্সিলর দিয়ে লুকিয়েছিলাম। এখন সারা গলায়, কাঁধে কামড়ের দাগ। আল্লাহ কী একটা অবস্থা খাটাশটার জন্য! কেউ দেখলে কী মনে করবে! আজ রাতে আর বের হওয়া যাবে না।
এর মধ্যেই আনিসা প্রবেশ করল। আমাকে চোখ বড় বড় করে দেখে মিটমিট হেসে লজ্জা পাওয়ার ন্যায় বলল,
“লাভ বাইটস্?”
“লাভ বাইটস্ না ছাঁই! ফাইট বাইটস্ এগুলা। ঐ সালা কুত্তারে তো আমি টুকরা টুকরা কইরা বুড়িগঙ্গা ভাসায় দিমু! আমারে জ্বালাইয়া কিছু আর রাখল না শয়তানটায়!”
___
রাতের খাওয়া শেষে অর্ক হাঁটাহাঁটি করছিল নিচতলায়। আচমকাই মনের বাবা-মায়ের ঘরের সামনে এসে তাদের কথা শুনে থমকে যায়।
“মনের জন্য একটা প্রস্তাব এসেছে। ছেলেটা দেখতে-শুনতে বেশ ভালোই, অবিবাহিত, অর্কের বাবার বন্ধুর ছেলে। আমি ভাবছিলাম অনেক তো সময় হলো এখন মনের বিয়েটা…”
“একবার বাবা হয়ে মেয়ের জীবনে হস্তক্ষেপ করতে যেয়ে নরকে ফেলেছি। আর না। ও যদি রাজি থাকে ভালো, না থাকলে বাদ।”
“সে তুমি যা-ই বলো। এবার আমি বিয়েটা পাঁকা করবই।”
আজাদ শিকদার কানে তুললেন না স্ত্রীর কথা। ঘুমানোতে মন দিলেন। মেয়ে যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সামলে আসছে, তীক্ষ্ণা বুদ্ধিমতি, তার ভালোটা সে-ই বুঝে নিবে।
অর্ক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্কের বাবার বন্ধুর ছেলে মানে ঐ জুস দেওয়া ছেলেটাই। যত যাই হোক এখন বিয়ের কথা জানানো কোনো ভাবেই সম্ভব না, নাহলে যে মোমিন আর তরীর ভালোবাসার নৌকো তীরে এসে ডুবে যাবে। তবে এবার কীভাবে নিজের করে রাখবে সে মনকে সবার আড়ালে?
চলবে…