#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি
#লেখিকা_সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি
পর্ব-৮
ফাহিমাকে এই সময় এখানে দেখে বেশ অবাক হয় সাফরান
—কি’রে এই অবেলায় ছাদে কি?
—তোমাকেই খুজছিলাম,রুমে নেই তাই ভাবলাম ছাদেই হবে।এই অবেলায় তো ছাদে তোমার আসতেই হবে।
—আচ্ছা কেনো খুজছিস বল।
—বাবা ব্যবসায়ের জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছিলো।আর এ নিয়েই বাবা সকাল থেকে টেনশন করছে।ব্যবসায়ে লস হওয়ায় ব্যাংকের লোন দিতে পারছে না।এদিকে কাউকে বলছে না বাবা।আমি তোমার কথা বলেছি কিন্তু বাবা বলছে কারো থেকে হেল্প নিবে না।
—এই ব্যাপার তোরা তো আমাদের পর মনে করিস।আচ্ছা যা চিন্তা করিস না।আমি অন্যভাবে চাচাকে সাহায্য করবো।বুঝতে পারবে না চাচা।
—- Thank you vaiya
you are so sweet.
ফাহিমা আবেগে সাফরান কে জড়িয়ে ধরে। সাফরান বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে যায়,ইতস্তত করে,ফাহিমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিতে যায়। আর তখনি স্নিগ্ধা ছাদে আসে।দুজনকে এই অবস্থায় দেখে স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে তাকায়।তারপর সাথে সাথেই নিচে চলে আসে।সাফরান হাত উচিয়ে স্নিগ্ধা কে ডাকতে যাবে তার আগেই স্নিগ্ধা হনহন করে নেমে যায়।সাফরান ফাহিমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,
—নিচে যা।মেয়ে মানুষ এই সময় ছাদে থাকা ঠিক না।
সাফরান মনে মনে ভাবতে থাকে এ নিয়ে দু’দিন স্নিগ্ধা তাদের এভাবে দেখেছে।কেনো যে এমন পরিস্থিতি ক্রিয়েট হয়।স্নিগ্ধা যা পাগলী অন্যদের বলে দিয়ে মজা নিতে সময় লাগবে না।ফাহিমা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সাফরান নিচে আসলো।স্নিগ্ধা কে কোথাও দেখতে পেলো না। সারা বাড়ি খুজেও যখন স্নিগ্ধা কে পেলো না তখন সাফরান সাহিল থেকে স্নিগ্ধার কথা জিজ্ঞেস করলো।
—স্নিগ্ধা কে দেখেছিস?
—না ভাইয়া। আমাকে ম্যাথ বুঝিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়েছে অনেক্ক্ষণ হয়েছে।
সাফরান স্নিগ্ধার নাম্বারে কল দেয় কিন্তু স্নিগ্ধা কল রিসিভ করে না। এই সন্ধ্যাবেলায় মেয়েটা যাবে কোথায়।আশে পাশের বাড়ি গুলো তে খোজ নেয়।কোথাও নেই স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধার বাসায় কল দেয় সাফরান।সেখানেও নেই স্নিগ্ধা। হঠাৎ কাউকে না বলে মেয়েটা গেলো কোথায়।সাফরান বাইক নিয়ে বের হয় স্নিগ্ধা কে খুজতে। কয়েক ঘন্টা খোজার পরও স্নিগ্ধা কে কোথাও পায় না। স্নিগ্ধার সব বান্ধবীদের থেকেও খোজ নেওয়া হয়ে গেছে কিন্তু স্নিগ্ধা কোথাও নেই।সাফরানের মনে এক অজানা ভয় এসে ঘিরে ধরে।সাফরান রাহাতের ঠিকানা বের করে রাহাতের বাড়িতে যায়।রাহাতের বাড়িতে যেয়ে রাহতকে তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখতে পায়।সাফরান তেড়ে এসে রাহাতের কলার ধরে বলে ” Tell me,Where is Snigdha?কোথায় রেখেছিস স্নিগ্ধা কে”
—ভাইয়া কী বলছো তুমি?স্নিগ্ধা কোথায় কিভাবে বলবো?
—নাটক বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি বল,আমার স্নিগ্ধা কোথায়?
—I do not understand what you are saying
রাহাত সাফরানকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,,,সাফরান আবারো রাহাতের কাছে এসে,হাত উচিয়ে রাহাতকে ঘুশি দিতে উদ্দ্যোত হয় আর তখনি রাহাতের গার্লফ্রেন্ড নাদিয়া সাফরানকে থামিয়ে দেয়।
—ভাইয়া ও সত্যিই বলছে ও জানেনা স্নিগ্ধা কোথায় আছে।আমি রাহাতের সাথে আজ সারাদিন থেকে ছিলাম।
সাফরান নাদিয়ার কথায় শান্ত হয়ে তারপর রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলে ” স্নিগ্ধার নিখোজ হওয়ার পিছনে তোর হাত থাকলে,By Allah, I will finish you with my own hand. সাফরান বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরে এখন রাত এগারোটা বাজে।স্নিগ্ধার খোজ নেই।সাফরানের মা রাফিয়া আহমেদ ও স্নিগ্ধার খোজ করছে,,,।
—স্নিগ্ধা কে দেখছিনা সেই সন্ধ্যা থেকে। কোথায় গেছে মেয়েটা?বাড়িতে চলে গেলো নাকি?
সাফরান তার মা’কে মিথ্যা বললো।
–মা ও ফারজানার বাড়িতে আছে।আজ ওর বার্থডে।আমি দোকানে যাই আসতে লেট হবে।তুমি ঘুমিয়ে যেও।
সাফরান বাইক নিয়ে আবারো স্নিগ্ধা কে খুজতে বের হলো।সাফরান কিছুতেই কান্না রোধ করতে পারছে না।বুকের বা পাশ’টা খালি খালি লাগছে।কোথায় আছে স্নিগ্ধা। কোনো বিপদ হলো না তো,,,।সাফরান ব্রিজের নিচে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধার নাম ধরে চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো,,,,,,এখন রাত ১২ঃ৩০ এখনো কোনো খবর নেই স্নিগ্ধার মোবাইল বন্ধ এখন।সাফরান ফুপিয়ে কাদতে লাগলো “কোথায় তুই স্নিগ্ধা,বল কোথায় খুজি তোকে,কেনো আমাকে এতাও জ্বালাতন করিস।তোর চিন্তায় পাগল হয়ে যাবো আমি,তোর কিছু হয়ে গেলে আমি আমাকে মাফ করতে পারবো না,তোকে ছাড়া থাকতেও পারবো না” সাফরান একা একা নদীর পাড়ে বসে কথা বলছে ঠিক সেই সময় সাফরান একটা অস্পষ্ট চিৎকার শুনতে পেলো।কান্না থামিয়ে কান খাড়া করে বোঝার চেষ্টা করলো। ঠিক কয়েক সেকেন্ড পর আবারো চিৎকার ভেসে আসলো।এবার একেবারে স্পষ্ট। চিৎকার শুনে কেপে উঠলো সাফরান।” এ তো স্নিগ্ধার কন্ঠস্বর” সাফরান হন্তদন্ত হয়ে চারোদিকে তাকালো। নদীর পাড়ের এই দিকটায় বিশাল মাঠ।এখানে দিনের বেলায় ছেলেরা ক্রিকেট, ফুটবল খেলে।রাতের বেলা এদিকটা অন্ধকার থাকে।মোবাইলের ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।চিৎকার’টা ঠিক এদিক থেকেই আসছিলো।এদিকে ঘন গাছ পালায় পরিপূর্ণ।কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।নাকি সাফরান ভুল শুনেছে।অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার জন্যেই হয়তো ভুল শুনেছে।সাফরান তারপরেও সামনে যেতে লাগলো।কিছুদুর যেতেই একটা কুরেঘর দেখতে পেলো সাফরান।এইদিকে এই ঘরটা কখন হলো।সাফরান দ্রুত দৌড়াতে লাগলো।আর তখনি আবারো স্নিগ্ধার চিৎকার শুনতে পেলো।সাফরান ঘরটির সামনে আসতেই পরপর অনেকগুলো চিৎকার শুনতে পেলো।এখনের চিৎকার অনেক জোড়ালো।সাফরান দরজা ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে যা দেখলো তাতে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো মনে হলো। ফারজানার এক্স সাইফ স্নিগ্ধার সাথে জোড়াজুড়ি করছে।সাফরানের মাথায় খুন চড়ে যায় এক ঝটকায় সাইফ কে টেনে এনে পেটে ক্রমাগত ঘুষি দিতে থাকে। সাইফ কিছু বুঝে উঠার আগেই সাফরান সাইফের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সাইফ পকেট থেকে চাকু বের করে সাফরানের বাহুতে আঘাত করে।ব্যাথায় সাফরান কয়েক সেকেন্ড এর জন্য স্থির হয়ে থাকলেও স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধার অবস্থা দেখে আবারো সাইফ কে আক্রমণ করে।সাইফের পেটে লাথি দিতেই সাইফ মুখ থুবড়ে মাটিতে পরে যায়।হাতের চাকুটাও পরে যায়।ক্রমাগত লাথি দিতে থাকে সাইফের পেটে।আর তখনি স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। সাইফের অবস্থা অনেক খারাপ,রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ সাইফকে এরেস্ট করে নিয়ে যায়।স্নিগ্ধা ভয়ার্ত চোখে এতক্ষণ দেখছিলো সব।সবাই চলে যেতেই স্নিগ্ধা দৌড়ে এসে সাফরানকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে।সাফরানও দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধাকে।এভাবেই কেটে যায় অনেক্ষন।স্নিগ্ধা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
—আজ যদি তুমি ঠিক সময়ে না আসতে ভাইয়া,তাহলে কী যে হয়ে যেত।
—কিছু হবে না তোর পাগলী।এভাবে না বলে কেউ বাড়ি থেকে বের হয়।জানিস কতো ভয় পেয়েছিলাম আমি।ভেবেছি তোকে হয়তো হারিয়ে ফেলেছি।
স্নিগ্ধা সাফরানকে জড়িয়ে ধরে আছে এটা বুঝতেই তাড়াতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।তারপর সাফরানের দিকে তাকাতেই দেখে সাফরান কান্না করছে।এই প্রথম সাফরানকে কাদতে দেখছে স্নিগ্ধা। সাফরান নিজের জ্যাকেট খুলে স্নিগ্ধাকে পরিয়ে দিয়েছে।স্নিগ্ধার গায়ের জামা অনেকটা ছিড়ে গেছে।সাফরান নিজেকে সামনে নিয়ে বলে “কী হয়েছিলো খুলে বল আমাকে”
স্নিগ্ধা হেচকি টানতে টানতে বলে ” বাড়িতে ভালো লাগছিলো না এজন্য নদীর পাড়ে এসেছিলাম।হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন আমার মুখ চেপে ধরে।তারপর আমাকে এই কুড়েঘর টায় এনে আটকে রাখে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার হাত মুখ বেধে ফেলে।আমাকে এই ঘরটায় একা রেখে যায়।যখন রাত গভীর হয় তখন দেখতে পাই ফারজানার এক্স সাইফ রুমের মধ্যে আসে।সাইফ কে দেখে আমি ঘাবড়ে যাই।সাইফ আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে চায় আমার জন্যেই ও সেদিন ফারজানার কাছ থেকে টাকা স্বর্ণ কিছুই নিতে পারেনি।আর তাই ও আমাকে শিক্ষা দিতে চায় আমাকে ধর্ষণ করতে চায়।কথাগুলো বলে স্নিগ্ধা ডুকরে কেদে উঠে। সাফরান স্নিগ্ধা কে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে।
——Thank God তুই ঠিক আচিস।তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বেচে থাকবো।কী জবাব দিবো সবাইকে,কী জবাব দিবো ফুপাকে,যে তার মেয়ের দায়িত্ব আমি নিতে পারিনি। রক্ষা করতে পারিনি।প্লীজ স্নিগ্ধা কথা দে আর কখনো আমাকে না বলে কোথাও যাবি না।
—ঠিক আছে কথা দিলাম।তোমাকে না বলে আমি কোথাও যাবো না।বাথরুমে গেলেও আমি তোমাকে বলে যাবো।এবার তো ছাড়ো নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে যেভাবে চেপে ধরেছো।
স্নিগ্ধার কথায় সাফরান বেশ লজ্জা পায়।স্নিগ্ধা সাফরানের বাহুতে নিজের ওড়না দিয়ে বেধে দেয়।অনেক রক্ত পরছে।সাফরান স্নিগ্ধা কে বলে “এ তেমন কিছু না,হাল্কা লেগেছে,ব্যাথা নেই একদম,তুই বাইকে উঠ। স্নিগ্ধা বাইকে বসে নিঃশব্দে কাদতে থাকে।আজ সাফরান ঠিক সময়ে না আসলে,সাইফ স্নিগ্ধার অনেক বড় সর্বনাশ করতো।
স্নিগ্ধা বাইকে বসতেই সাফরান বাইক উড়িয়ে বাড়ির দিকে ছুটে,,,পথে সাফরান স্নিগ্ধা কে জিজ্ঞেস করে, “হঠাৎ বাড়িতে ভালো না লাগার কারণ কী?আর বাড়িতে ভালো লাগছিলো না আমাকে বললেই পারতিস, আমি তো তোকে রাতেও বাহির থেকে ঘুড়িয়ে আনি”
স্নিগ্ধা অভিমানের সুরে বললো
–তুমি তো তখন ফাহিমা আপুর সাথে ব্যস্ত ছিলে।
সাফরান স্নিগ্ধার অভিমানের কারনটা বুঝতে পারে।মনে মনে খুশি হয় সাফরান।স্নিগ্ধা জেলাস ফিল করছে।
এখন রাত ২ঃ৩০ বাজছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনে বাড়ি পৌছায়। বাড়ির অন্যরা গভীর ঘুমে এখন। সাফরান স্নিগ্ধা কে বলে বাড়িতে মিথ্যা বলেছিলো।বাড়ির কেউ জিগ্যেস করলে যেন বলে ফারজানার বাড়িতে ছিলো। স্নিগ্ধা সাফরানের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।আর সেদিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকে সাফরান।,,,,,
(চলবে)
গল্পটা সবার কেমন লাগছে কমেন্টস করে জানাবেন।