#চন্দ্রাক্ষী
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ৫
বাসন্তী এখন সদ্য যৌবনে পা রেখেছে। তার সৌরভে প্রকৃতি নেশায় ডুবেছে।
সামনে বিভৎস লাশ দেখে আরীকাহ্ যখন খুব শক্ত করে এশাদের হাত খামছে ধরেছে! এশাদ মুচকি হেসে আরীকাহ্-এর হাত বুকের বা পাশে শক্ত করে ধরে।
না চাইতেও আরীকাহ্ ওদিকেই তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর দেখতে পেলো একজন লোক হাতে ছুড়ি নিয়ে এলেন। এবং খুব অবলীলায় মেয়েটার গলা কাটতে লাগলেন। মেয়েটা যেনো হঠাৎ জীবন্ত হয়ে উঠেছে৷
বাঁচার জন্য ছটফট করছে কিন্তু কোনো শব্দই করতে পারছে না।
গলার মধ্যে ছুড়ি দিয়ে একটা ফ্যাস দেওয়ার সাথে সাথেই রক্ত গলগলিয়ে পড়তে লাগলো।
মেয়েটা উল্টো করে ঝুলানো ছিল।রক্তের ধারা উল্টো পথে এসে মেয়েটার ঠোঁট, মুখ,কপালের দিকটায় লাল করে দিচ্ছে।
আরীকাহ্ আর সহ্য করতে পারলো না। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো এশাদ কে।
দুহাতে খামছে ধরেছে এশাদের শার্ট।ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে সে।
এশাদ কিছুটা বুঝতে পেরে দ্রুত ফোনকলে কথা শেষ করে নিজের বা হাতে আবদ্ধ করে নেয় আরীকাহ্কে। ডান হাত আরীকাহ্-এর মাথায় রেখে
আলতো স্বরে জিজ্ঞেস করেন,
“আরু! কী হয়েছে?”
কাঁপা কাঁপা হাতে আরীকাহ্ শিমুল গাছের দিকে ইশারা করে।
এশাদ তাকিয়ে দেখে শিমুলগাছের ডালে ঝুলছে একটা সাদা বস্তা।
হয়তো ওটা দেখেই আরীকাহ্ ভয় পেয়েছে!
“ওটা কিছুই নয়। ওটা একটা বস্তা। সারের বস্তা। দেখো!”
কিন্তু ততক্ষণে আরীকাহ্-এর হাত শিথিল হয়ে এশাদের পিঠ থেকে সরে নেমেছে।
এশাদের বুঝতে বাকী নেই যে আরীকাহ্ অত্যাধিক ভয়ের কারণে জ্ঞান হারিয়েছে।
আরীকাহ্ বেশ ভয় পেয়েছে এটা বুঝতে বাকী নেই। তবে ভয় পাওয়ার মেয়ে সে নয়। অন্তত এসব দেখে, সামান্যতম একটা চটের বস্তা দেখে তো নয়ই।
ঘুমন্ত আরীকাহ-এর পাশে বসে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো এশাদ।
নানা চিন্তা থেকে খেয়াল হলো আরীকাহ্ নতুন লেখা শুরু করেছে।
কী সম্পর্কে লিখছে এটা অবশ্য বলেছিল কিন্তু আপাতত তার মনে পড়ছে।
পাশেই আরীকাহ্-এর ফোন। আরীকাহ্ ফোনে কোনো লক দেয় না।
স্ক্রিনে হাস্যজ্বল দুইজন ব্যক্তি ছবি দেখা যাচ্ছে।
একটি তার বাবা অন্যটি তার ভাইয়ের।
তাদের কথা ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো এশাদের।
নোট প্যাডের লেখা গুলো চেক করলেন।
ছোট ছোট উক্তি টাইপের লেখা এবং ছোট গল্প ব্যতীত কিছুই নেই।
তারপর হোয়াটসঅ্যাপ চেক করেই তেমন লেখা পেলো না।
বাধ্য হয়েই উঠে ল্যাপটপ চেক করতে বসে সে।
ল্যাপটপে ওয়ার্ড ফাইলে চেক করে ধারণা সত্যি হয়।
আরীকাহ্ নতুন গল্প লিখছে। সাইকো থ্রিলার জনরার লেখা।
গুগল সার্চবারের হিস্ট্রি দেখে আরেকদফা ঘাম ছুটলো তার।
নারকীয়তার শীর্ষে থাকা কিছু ভিডিও। যেখানে খুন করা হচ্ছে অবলীলায় মানুষকে।
হিস্ট্রি ডিলিট করে এশাদ আরীকাহ্-এর পাশে এসে বসে। মাথার কাছের লাইট বন্ধ করে দুহাতে আরীকাহ্-এর হাত ধরে নানান চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
হঠাৎ বাহির থেকে তীব্র চিৎকারের শব্দ ভেসে আসছে৷
মনে হচ্ছে কাউকে কেউ ভিতর থেকে খুবলে খাচ্ছে।
চোখ বন্ধ করেই হাতড়িয়ে এশাদ কে খুঁজতে চেষ্টা করে আরীকাহ্। না এশাদ তো পাশে নেই। ঘরের জানালা সব বন্ধ। তবে দরজা খোলা।দরজা দিয়ে আসছে ক্ষীণ আলো।
পরণের শাড়ির আঁচলটা বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আঁচল ঠিক করে হালকা পায়ে আরীকাহ্ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। গোঙানির আওয়াজ তীব্র। চারপাশে পিনপতন নীরবতা।
চুলে হাত খোপা করতে করতে যখন বসার ঘরে এলো।
চোখের সামনে দেখতে পেলো এক ক্ষতবিক্ষত মেয়ে আর্তনাদ করছে।মেয়েটা আরীকাহ্-এর থেকে হাত দশেক দূরে হবে।
আর পাশের আরাম কেদারাটা খানিকক্ষণ পর পর দুলে উঠছে।
মনে হচ্ছে এবাড়িতে কেউ নেই। সবাই আরীকাহ্কে রেখে চলে গিয়েছে। এশাদ কে বার দুই ডাকতেই নিজ কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করে আরীকাহ্। ঠান্ডা সে হাতের স্পর্শ, খানিকটা ভেজাও। দূর থেকে নয়! বড্ড কাছ থেকে আসছে পোড়ার গন্ধ।ঠিক সে সময় কোথাও উচ্চস্বরে শেয়াল ডাকতে শুরু করলো। আরীকাহ্-এর সামনে থাকা মেয়েটার আর্তনাদ যেন এই মূহুর্তে তিনগুণ বেশি হয়ে গেলো।মেয়েটার জীব ধীরে ধীরে খসে পড়ছে। তাও টুকরো টুকরো হয়ে। চোখ দুটো কী রক্তিম! নাহ্, হাতের স্পর্শের পর আরীকাহ্ আর কিছু ভাবতে পারছে না।মাথা শূন্য লাগছে।
অতিরিক্ত উত্তেজনায় পুনরায় জ্ঞান হারায় আরীকাহ্। ঢুলে পড়ে ঠান্ডা, হিমশীতল, ভেজা হাতদ্বয়ের ভরসায়।
চলবে
#ছবিয়ালঃমি.সিম্পল