চন্দ্রাক্ষী পর্ব ৯

0
726

#চন্দ্রাক্ষী
#পর্বঃ৯
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

গ্রামে মেয়েদের মধ্যে এক ধরণের চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। শুধু মেয়ে নয়, সবার মাঝেই এই উত্তেজনা।
গতকাল রাতে কেউ একজন চেয়ারম্যানের শালাকে মেরে ফেলেছে।
লাশ দেখতে ভীর করছে শত মানুষ।
লাশের পা দুটো নাইলনের দড়ি দিয়ে গাছের ডালে বাধা।গলার এডাম’স আপেল কেটে ফেলেছে।
রক্ত ঝড়ে পড়েছে মাটিতে। গাঢ় রঙের দাগ ফেলছে সে জায়গায়। জিহ্বা,
পুরুষঅঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে। চোখ দুটো উপড়ে ফেলা পাশের বালিতে।মনে হচ্ছে দুটো মার্বেল। হাত,পায়ের নার্ভ সব কেটে ফেলেছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে
খুনী কয়েকভাবে তার মৃত্যুকে নিশ্চিত করেছে।
এইতো কাল বিকেল বেলাতেই চায়ের দোকানে আড্ডা বসিয়েছিল।কত রঙ্গ তামাশা। বকুলকে নিয়ে কত বাজে মন্তব্য, মেয়েরটার শরীরের বর্ণনা দেওয়া জিহ্বা এখন মাটিতে পড়ে আছে। তার চারপাশে মাছি ভনভন করছে। আশেপাশে থাকা
তার সহচরীরা বেশ ভয়ে আছে। তার চোখ,মুখ তো তাই বলছে। আর এদিকে
চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী বিলাপ করছে অথচ সবার দৃষ্টি তো সামনে ঝুলে থাকা গাছে।

পুলিশ এসে লাশ নামালেও তাদের নিতে দেওয়া হলো না।মূলত চেয়ারম্যান এর পরিবার জমিদার পরিবারের লতায় পাতায় প্যাঁচানো আত্নীয়। তাদের প্রভাবশালী মনোভাব এবং অবিচারে মানুষ হত্যা সবাইকে ভয় পেতে বাধ্য করে। তবে এত ভয়ের মাঝেও জান-প্রাণ হাতে নিয়ে কে এমন কাজ করতে পারে?সরাসরি চেয়ারম্যানের ডান হাত কে মেরে দিলো?

গ্রামের স্কুলের পাশটা দিয়ে হেটে আসছিল আরীকাহ্। সাথে তাহার আফতাব সাহেবের স্ত্রী। দুজনে বেরিয়েছিল হাঁটতে। নদীর ধারে এসে বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছে দুজনে।
তারপর ফিরে আসার সময় দাড়ায় স্কুলের সামনে।
বাচ্চারা জোরে জোরে কবিতা পড়ছে।
কার থেকে কে বেশি শব্দ করে পড়তে পারে। এ যেনো এক অঘোষিত যুদ্ধ চলছে,

“ঝুমকো জবা বনের দুল
উঠল ফুটে বনের ফুল।
সবুজ পাতা ঘোমটা খোলে,
ঝুমকো জবা হাওয়ায় দোলে।
সেই দুলুনির তালে তালে,
মন উড়ে যায় ডালে ডালে।”

তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে আরীকাহ্।বাচ্চারা পবিত্রতার প্রতীক।তাদের কেনো কষ্ট দেয় মানুষ?
স্কুলের মাঠের সামনে থাকা গাছ থেকে ফুল ছিড়ে আফতাব সাহেবের স্ত্রী। জবা ফুল। লাল ফুল হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতেই আরীকাহ্ দেখে এশাদ-নূরী বসে আছে। নূরী অনেকটা গা ঘেঁষে বসেছে।তারা সবাই কিছু নিয়ে কথা বলছে।
আরীকাহ্ কোনো কথা বলে ভিতরে চলে যায়।

আরীকাহ্ এখন বসে আছে ঝুল বারান্দায়। গতকাল বিকেলেও সে নূরী- এশাদকে সাথে দেখেছে।
এশাদকে মানানোর জন্য ব্যস্ত নূরী। এশাদের জন্য নূরীর চোখেমুখে একপ্রকার ভালোবাসা ছলকে উঠে, এটা সবাই না বুঝলেও আরীকাহ্ বুঝে। তবে এশাদ তো নূরী কে চায় না।
যেদিন এশাদ নূরী কে চাইবে সেদিন টুপ করে ডুব দিয়ে আরীকাহ্ ভাইয়ের কাছে চলে যাবে।
পাঁচটা বছর হয়ে এলো মা কে মা ডাকা হয় না। বাবা ডাকে সাড়া দেয় না। আর ভাই? সে কোথায়?তার অস্তিত্ব সর্বত্র হলেও হারিয়েছে সে কোনো এক অজানায়।

এখান থেকেও দেখা যাচ্ছে শিমুল গাছের নিচে বসে আছে নূরী,এশাদ সহ কয়েকজন।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মৃদু কন্ঠে আরীকাহ্ বললে,

“কতটা ভালোবাসার কাঙাল হলে মানুষ বার বার ফিরে আসে?”
“যতটা আরক্তিম তুমি!”
“কতটা হিংস্র হলে মানুষ কারো সংসার ভাঙতে চায়?”
“যতটা কাঙাল আমি!”

“বসতে পারি?”

ঋক্ষের দিকে না তাকিয়েই সম্মতি দেয় আরীকাহ্।
বসতে বসতে ঋক্ষ বললেন,

“পা কী অনেকটা পুড়েছে?”
“আপনি কী জানেন আমার অসুখ টার কথা?”
“এই পৃথিবীতে আমরা সবাই অসুখী দেবী।”

দেবী ডাক শুনে চমকে উঠে আরীকাহ্। ত্রস্ত কন্ঠে বলল,

“দেবী কেন ডাকলেন?”
“ডাকতে ইচ্ছে হয়।”
“আপনি কী……”
“হ্যাঁ, আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী।”
“আমি ভেবেছিলাম…. ”
“আমার প্রাক্তনকে দেবী বলেই ডাকতাম।”
“প্রেয়সীর স্থান অন্য কাউকে দিতে নেই।”
” তবুও তোমার মাঝে আমি আমার দেবীকে দেখি।
যে শান্ত পার্বতীর মতোন সংসার সামলে চলে, সবাইকে এক সমান ভালোবাসে, দূর্গার মতোন প্রতিবাদী বা কালীর মতোন প্রলয়ঙ্কারী।”

উচ্চস্বরে হেসে আরীকাহ্ বলে,
“এরা তো আপনাদের আরাধ্যা দেবী। এদের পূজা করা হয়। এদের সাথে কাউকে তুলনা কী করা উচিৎ? ”
“জানি না।তবে এরা নারী। এদের এটাই কী যথেষ্ট নয়?”
“এটা সম্পূর্ণ আপনার ধারণা।আমি এমন কিছুই নই।”
“সত্যি কী তাই?”
“হুম।আমি আমার বাবার চঞ্চলতী কন্যা,ভাইয়ের ঝগড়ার সাথী এবং স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী।”

“আর আমি যদি বলি তুমি প্রলয়ঙ্কারী? ”
“আপনি তবে ভুল।”
“আচ্ছা বেশ আমি ভুল। তোমার হাতের নখের ভেতরটা এমন লাল লাল কেনো?”
“আমিও তাই ভাবছি।সকালবেলায় দেখি এমনটা। নখের অনেকটা ভিতর অবধি এসব।”

“কারণ তুমিও তো প্রলয়ঙ্কারী। না হলে কাল রাতে ওভাবে কী কারো দুচোখ উপড়ে ফেলতে পারতে?”

চলবে.

#ছবিয়ালঃইউসুফ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here