#চন্দ্রাক্ষী
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ৩
আরীকাহ্ নিজেকে ধাতস্থ করতে পেরেছে তখন, যখন তার হাত নিচের দিকে হেলে পড়েছে। খুব সম্ভবত কোলে থাকা ছোট্ট কুশন পড়ে গিয়েছে।
নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করলে খেয়াল হলো সে বাসের সিটে শুয়ে আছে। মাথার নিচে ছোট্ট কুশন। তবে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল?
তাই হবে হয়তো।
এশাদ! এশাদ কই? পুরো বাস অন্ধকারে আচ্ছাদিত হলেও সামনে ড্রাইভারের সাথে কথা বলে চলেছে হেল্পার। ক্ষীণ আলো আসছে সেদিক থেকে।
“তোমাকে বলেছিলাম আরীকাহ্ কে নিয়ে আসবে না। কেনো নিয়ে এলে?”
“ও আমার বিবাহিতা স্ত্রী।”
“চোখের সামনে আমি ওকে কীভাবে সহ্য করবো?”
“আশ্চর্য! এখানে সহ্যের কথা আসছে কেনো?”
“তুমি বুঝবে না এশাদ।
কাউকে ভালোবাসলে তাকে ভুলে থাকা যায় না।
সে সব সময় মাথার ভিতর থাকে। তার জন্য চোখে ঠোঁটে মুখে একটা আলাদা তৃষ্ণা অনুভব হয়।
বুকের ভিতর এক অজানা অনুভূতি! কেমন যেন জ্বলনময় অনুভূতি। মনে হয় সেই মানুষটার মাথা বুকের সাথে পিষে ফেলতে।
এক সমুদ্র তৃষ্ণা নিয়ে খানিকটা দূরত্বে থাকা যে বড্ড মুশকিল এশাদ।
তোমরা পুরুষ মানুষ, শরীর তো স্পর্শ করো অথচ মনকে কখনো স্পর্শ করো না।”
“নূরী কাঁদছো কেনো? আশ্চর্য কী হলো?”
“আরু কে কেন বিয়ে করলে? আমার মাঝে কী নেই যা ওর মাঝে আছে। ”
“আমাদের সম্পর্ক……. ”
“আমাদের সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্ব নয় এশাদ। এই যে দেখো! এই যে তুমি আমার ঠোঁটে, চোখে, মুখে, গালে লেগে আছো! এটা কী শুধুই বন্ধুত্ব?”
নূরীর কথায় কোনো জবাব দেয় না এশাদ। এখন তার আরীকাহ্-এর কাছে ফিরে যাওয়া উচিৎ। মেয়েটা বাসের সিট হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে। উঠে যেতে চাইলেই নূরী খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এশাদের হাত।
“দিনের আলোয় নয় এই রাতের অন্ধকারেই না হয় আমার একটু ভরসা হও।”
বলেই এশাদের কাধে মাথা রাখে নূরী। আর ওপাশে আরীকাহ্ প্রান পণে যেন নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। নিজের হাত খুব করে আঁকড়ে আছে।
নিজেই যেন নিজের ভরসা।বাবা ভাইয়ের পর এশাদ ওকে দারুণ উপহার দিলো।
একরাশ ভয়ে কুঁকড়ে থাকা আরীকাহ্-এর প্রচন্ড শীত লাগছে। গলার কাছে একটা দলা পাকানো কষ্ট ছিড়েখুঁড়ে খাচ্ছে গলার ভিতরটা।
তবুও যেন কাঁদতে ইচ্ছে করছে না।সব অনুভূতি যেন মৃত।
বাসের জানালায় কাঁচা হলুদ রঙের ছোঁয়া লেগেছে। প্রতিফলন হচ্ছে আরীকাহ্-এর চোখে মুখে। কিছুটা উঠে বসতেই খেয়াল হলো সে আবদ্ধ এখন এশাদের বাহুতে। গাড়ির হালকা ঝাকুনিতে এশাদের হাত উঠা-নামা করছে আরীকাহ্-এর পেট জুড়ে।
আরীকাহ্-এর খুব ধীরেধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। বাসের জানালা খুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো বাতাসের সমুদ্রে।
গ্রামের পথ ধরেছে বাস ততক্ষণে।
চোখ বন্ধ করে আরীকাহ্ তার সব থেকে প্রিয় মানুষকে মনে করতে চাইছে। যার সাথে কেটেছে জীবনের আঠারো বসন্ত।
মন খারাপ থাকলেই কই থেকে উড়ে এসে হাতটা মাথার উপর বসে যেত। অন্ধকারের রাতে সে হাতটা আলোর সন্ধান দিতো।
সে মুখটা ইদানীং ঝাপসা লাগে। বড্ড ঝাপসা৷
অস্ফুটস্বরে আরীকাহ্ ডেকে উঠলো,
“ভাই!”
এশাদদের জন্য পুরো একটা বাড়ি গুছিয়ে রাখা হয়েছে। গ্রামটা শহর থেকে বেশ দূরে তাই কোয়ার্টার বলতে কিছুই নেই।
গ্রাম্য পরিবেশে বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছে সবাই অথচ আরীকাহ্-এর দম বন্ধ লাগছে।
নূরী মেয়েটার দিকে সে তাকাতে পারছে না। তাই নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে এসেই হাতে হাতে সব গুছিয়ে নিচ্ছে। এশাদ বলেছিল পরে করতে এখন বিশ্রাম করতে কিন্তু আরীকাহ্ আধ ঘন্টার মধ্যে নিজ সুবিধে মতন সব গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
নিজ হাতে এক মগ স্ট্রং কফি বানিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো বিছানায়।
কপাল ভালো বলেই হয়তো এখানে নেট পাওয়া যাচ্ছে।
কফিতে চুমুক দিয়ে ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ আরীকাহ্-এর। চুল দিয়ে টপটপ পানি ঝড়ছে।
চোখেমুখে ক্লান্তি ভাব নিয়ে গুগলে সার্চ করে
“খুন করার অভিনব কৌশল।”
সাথে সাথেই স্ক্রিনে ভেসে উঠে কয়েকটি ভিডিও।
আরীকাহ্-এর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।
জেগে উঠেছে ধীরে তার আরেক স্বতঃস্ফূর্ত স্বত্ত্বা। পিশাচী ভয়ংকর স্বত্ত্বা৷
খুনের নেশায় পেয়েছে তাকে।অতৃপ্ততা কারো প্রাণ চাইছে যে
চলবে
#ছবিয়ালঃফারুক