হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২৬)

0
1672

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২৬)
#নাহার
·
·
·
সকাল থেকেই বাড়িতে প্রচুর হৈ চৈ। আজকে প্রচুর কেনাকাটা করতে হবে তাই। মিসেস তানজুম এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। সবাইকে রেডি হওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। রাফিন এসে নিরার ঘরে উঁকি দিলো। নিরা দরজার দিকে পিঠ করে বসে আছে। আবার নিচে চলে গেলো। নিচ থেকে রাফিনের মামী তাকে ডাকছে।

ভোর থেকে নিরার কোমড়ের নিচ থেকে প্রচুর ব্যাথা করছে। তাই এখনো পর্যন্ত ঘর থেকে বের হয়নি। বেডের এক পাশে মাথাটা হেলান দিয়ে বসে আছে সে।

সবাই রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো। নিসেস শায়েলা এলেন নিরার রুমে। নিরা চোখ বুজে ছিলো। মিসেস শায়েলা মেয়েকে ডাকলেন। নিরা হালকা চোখ খুললে তিনি বললেন,
— আমরা সবাই শলিং- এ যাচ্ছি। তুই যাবি না মা?

— না মা। আমার ভালো লাগছে না তোমারা যাও।

— সে কি কথা। তোর ভাইয়ের বিয়ে আর তোর ভালো লাগছে না। কৌশিক শুনলে কষ্ট পাবে মা। তুই রেডি হয়ে নে।

নিরা করুণ সুরে বললো,
— মা প্লিজ। আমার পেট ব্যাথা করছে। প্লিজ আমি যাবো না।

মিসেস শায়েলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে চলে গেলেন। নিরার বেশ মন খারাপ হলো। শপিং-এর ব্যপারটা নিয়ে অনেক এক্সাইটেড ছিলো সে। কিন্তু আজ সকালেই এমন হবে কে জানতো। আবার চোখ বুজে নিলো। এদিকে সবাই গাড়িতে উঠে বসেছে। মিসেস শায়েলাকে একা আসতে দেখে মিসেস তানজুম বললেন,
— কিরে মেঝো? নিরা আসেনি যে?

মিসেস শায়েলা বললেন,
— মেয়েটার শরীর খারাপ হয়েছে ভাবি তাই।

— আজকের দিনেই হতে হলো।

সবাই শলিংমলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। কৌশিক এবং রাফিন অন্য গাড়িতে যাবে তাই তারা পরে বের হবে। রাফিন নিরার রুমে গিয়ে নিরার সামনে বসলো। আস্তে করে বললো,
— নিরু তুমি যাবে না আমাদের সাথে?

নিরা চোখ মেলে রাফিনকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলো। তারপর করুণ সুরে বললো,
— না।

— কেনো?

— ভালো লাগছে না আমার।

— তুমি না গেলে আমিও যাবো না।

বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছে রাফিন। নিরা হাসলো। রাফিনের গাল টেনে বললো,
— প্লিজ ডাক্তার আমার পেট ব্যাথা করছে। সাথে কোমড় এবং পায়ের হাটু। তাই আমি যেতে চাচ্ছি না।

— তাহলে আমি থাকি তোমার সাথে। কৌশিককে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তোমাকে একা ঘরে রেখে যাবো না।

— কিচ্ছু হবে না আমার। আপনি ভাইয়ার সাথে যান। আর আপনি না গেলে আমার ড্রেস কে পছন্দ করবে বলুন?

রাফিন কিছু একটা ভাবলো। তারপর বললো,
— খুব চালাক হয়ে গেছো তুমি। আমি এক্ষুণি আসছি।

উঠে নিচে গেলো রফিন। নিরা ভাবছে গোসল করে নিবে তাহলে হয়ত একটু ফ্রেস লাগবে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো অন্য জায়গায়। এরমধ্যেই রাফিন এসে হাজির। নিরার সামনে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো,
— নাও।

— এটা কি?

— তোমার প্রয়োজনীয় জিনিস। আর এটা দিয়ে গোসল থেকে এসে পেটে হালকা ছেক দিবে তাহলে ব্যাথা কমবে ঠিকাছে।

— হুম।

রাফিন যেতে চাইছে না। কেমন যেনো মনটা ছটফট করছে। তাও গেলো নিরার জোরাজুরিতে। কৌশিককে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। নিরা কোনোরকমে নিচে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। দরজা লাগানোর সময় দুটো চোখ খেয়াল করলো নিরাকে। বুঝে গেছে সে আজ নিরা ঘরে একা। শয়তানি হেসে চলে গেলো।

——————————————————
রাফিন ড্রাইভ করছে কিন্তু মনটা বাড়িতে পরে আছে। কখনো তো এমন হয়না তাহলে আজ কেমন যেনো অশান্তি মনের মধ্যে। কৌশিক খেয়াল করলো রাফিন মনমরা হয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলো,
— কিরে তুই এমন চুপসে আছোস কেন?

— অশান্তি মনে।

— কেন?

— নিরাকে একা রেখে আসায় মনে অশান্তি লাগছে।

— তো না আসতি। আমাকে বললে আমি গাড়ি নিয়ে চলে আসতাম।

— আরে নিরাই তো জোর করে পাঠালো। বললো তার সব কাপড় আমাকে পছন্দ করে নিতে হবে তাই।

কৌশিক হাসলো। তখনই মনে হলো সে মোবাইল বাসায় রেখে এসেছে। করুণ কণ্ঠে বললো,
— ভাই মোবাইল তো আনি নাই। আফিয়া মনে হয় কল দিয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে। রিসিভ না করলেই কেলানি দিবে। গাড়িটা ঘুরাবি বাসার দিকে?

রাফিন কিছু বললো না। মনে মনে খুশি হয়েছে। একটাবার নিরাকে দেখে আসবে আবার। তাই গাড়ি ঘুরালো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

————————————————————
নিরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। ভেজা চুলগুলো তাওয়াল দিয়ে মুছে নিচ্ছে। তখনই মনে হলো কেউ শীষ বাজিয়ে তার ঘরের দিকে আসছে। একবার পেছন ফিরে তাকালো নিরা। মনে মনে বললো,
— ঘরে তো আমি ছাড়া কেউ নেই তাহলে শীষ কে বাজাচ্ছে।

আরেকটু ভালো করেই শুনতে চাইলো না এবার শুনা যাচ্ছে না। মনের ভুল ভেবে আবার আয়নায় তাকিয়ে চুল মুছছে। আবার শীষ বাজালো কেউ। নিরা মনে মনে বললো,
— ডাক্তার সাহেবকি চলে এসেছে? আসলেও এভাবে শীষ কেনো বাজাবে? উনিতো কখনো বখাটেদের মতো করেন না। তাহলে?

মনে মনে এসব ভাবতেই আয়নার দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো নিরা। মুখ থেকে হুট করে বের হয়ে গেলো “তুহিন”। নিরা তাড়াতাড়ি সামনে ঘুরলো। তুহিনের চাহনিতে অস্বস্তি হচ্ছে নিরার। তাই তাড়াতাড়ি করে বেড এর উপর থেকে উড়না নিয়ে ভালো করে গায়ে জড়িয়ে দিলো। তুহিনের ঠোঁটে বাকা হাসি। নিরা একটু সাহস নিয়েই বললো,
— আপনি এখানে কি করছেন? আর কিভাবে এসেছেন ঘরে?

তুহিন দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে। তার চাহনিতে নোংরামি। নিরাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখছে বারবার। নিরা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
— এখনি এখান থেকে বের হয়ে যান।
নিরার কথায় তুহিন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।

————————————————————–
মিসেস শায়েলা শপিং-এ এসেছেন কিন্তু তাঁর মনও বাসায় পড়ে আছে। মনে মনে বারবার বলছে,
— মেয়েটাকে এই অবস্থায় একা ফেলে আসা ঠিক হয়নি।

বারবার উসখুস করছেন তিনি। হাত কচলাচ্ছেন। মনে এক ধরনের ঝড় চলছে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিচ্ছেন না।

—————-
তুহিন নিরার সামনে এসে একটু নিচু হয়ে নিরার গায়ের ঘ্রাণ নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— কি মাখো গায়ে তুমি এতো মাতাল করা ঘ্রাণ কেনো? ইশ্ ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি। ওহ! ভুলে গেছি আমিতো খেতেই এসেছি।

নিরা ভয়ে কেঁপে উঠলো। বুকের ভেতরে হাতুড়ি পেটাচ্ছে। তুহিনের কথার রেস সে ভালোই বুঝতে পারছে। নিরা খুব সাহস নিয়ে বললো,
— দেখুন ছোবেন বা আমায়।

তুহিন বিছরি এক হাসি দিয়ে বললো,
— আমিতো তোমায় ছুয়েছি জান।

নিরা আতকে উঠে। মনে মনে আওড়াতে লাগলো,
— ওয়াশরুমের ঘটনার সাথে তুহিন জড়িত নয়তো?

নিরার ভাবনার টনক নড়লো যখন তুহিন নিরাকে এক ঝটকায় নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। নিরা বারবার ছোটার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। তুহিন নিরার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরেছে। নিরা ব্যাথায় নড়াচড়া বন্ধ করে দিলো। একেতো শরীর ব্যাথা এখন চুলের মুঠি ধরে রেখেছে তুহিন। নিরার ঘাড়ে গলায় ঠোঁট ছোয়াতে ছোয়াতে বললো,
— জানো সেদিন খুব মজা পেয়েছি। ওয়াশরুমের ঘটনা মনে আছে? সেটা আমিই ছিলাম। তুমি এতো হট ফিগারের তাই নিজেকে সামলাতে পারিনি। দেখো আমি মাতাল হয়ে এখানে চলে এসেছি।

নিরার চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে বললো,
— উম সেদিনের থাপ্পড়ের কথা মনে আছে? যেটা তুমি আমায় দিয়েছিলে। সেটাই ফিরিয়ে দিতে এসেছি তবে অন্যভাবে। তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কেড়ে নেবো। শুধু তোমার নয় প্রতিটা মেয়েরই তার স্বতিত্বটা খুব প্রিয়। সেটাই কেড়ে নেবো আজ।

আবারো বিছরি হাসলো তুহিন। নিরার হাত পা কাপছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তুহিনের কাছ থেকে যে করেই হোক ছুটতে হবে। নিরা এবার দাপাদাপি শুরু করলো। তুহিনের কাধে কামড় দিয়ে নিজেকে ছাড়য়ে নেয়। তুহিন একটু দূরে সরে যায়। নিরা দৌড়ে রুমের বাহিরে আসতেই তুহিন আবার ধরে ফেলে নিরাকে। খুব জোরে থাপ্পড় দেয় নিরার গালে। ফলস্বরূপ মেঝেতে আছড়ে পড়ে। পেটের ব্যাথা, কোমড়ের ব্যাথা, হাটু এবং গালে থাপ্পড়ের ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলো নিরা। দুইহাত দিয়ে পেট চেপে ধরে গুটিয়ে গেছে মেঝেতে। তুহিন নিরার ভেজা চুলের মুঠি ধরে টানতে শুরু করে। একহাতে পেট চেপে ধরে অন্যহাতে তুহিনের থেকে চুল ছাড়াতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। তুহিন হিংস্র পশুর মতো আচরণ করছে। নিরা কেদে কেদে বারবার বললো,
— প্লিজ ছাড়ুন আমাকে। আমি ব্যাথা পাচ্ছি।

কিন্তু তুহিন কিছুই শুনলো না। চুল ধরে টেনে নিরাকে রুমের ভেতরে নিয়ে এলো। নিরার মাথা আছড়ে ফেললো মেঝেতে। মাথায় আঘাত পেয়ে নিরা চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখের পানি বাধ মানছে না। তুহিন নিরার ওড়না টেনে নিয়ে ফেলে দেয়। ঠোঁট কামড়ে বললো,
— তোর এই ফিগার দিয়েই রাফিনকে তোর বসে নিয়ে গেছিস তাই না? তবে যাই বল আমিও কিন্তু ফিদা হয়ে গেছি এখন। ইশ্ আমার আর সইছে না।

নিরা থেমে থেমে বললো,
— প্লিজ তুহিন আমাকে ছেড়ে দিন। আ আমার পিরিয়ড চলছে। পেটে খুব ব্যাথা প্লিজ ছেড়ে দিন।

— তাহলে আরো জমবে আজ। তোর আর্তনাদ শুনতে চাই আমি। ব্যাথায় তুই যে চিৎকার এবং আর্তনাদ করবি সেটা শুনেই আমার রুহ ঠান্ডা করবো।

————————————————————
কৌশিক অনেকক্ষণ ধরে বেল দিচ্ছে কিন্তু দরজা খুলছে না। রাফিনের বুকে ঢিপঢিপ এবার আরো বেড়ে গেলো। সে ধরেই নিয়েছে নিরার কিছু হয়েছে। উত্তেজিত হয়ে গেছে রাফিন। কৌশিকের কলার খামছে ধরে বললো,
— দরজা খোল যেভাবে পারিস। নিরা, আমার নিরার কিছু হয়েছে।

রাফিনের এই উন্মাদনা দেখে কৌশিকও উত্তেজিত হয়ে উঠলো। কিছু একটা ভেবে নিজের পকেটে হাত দিয়ে বললো,
— আমার কাছে এক্সট্রা চাবি আছে।

রাফিন চাবি কেড়ে নিয়ে দরজা খুলে ছুট লাগালো নিরার রুমের দিকে।

এদিকে মেঝেতে নিরা পড়ে আছে। নিরার পেটের উপর তুহিন বসে আছে। ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। কিছু একটা ভেনে চোখ খুলে নিরা ছেক দেয়া ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
— ডাক্তার আপনি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছেন। সেটা এখন বুঝতে পারছি। আপনার সামনে ওড়না ছাড়া গেলেও কোনোদিন বাজে নজর দেননি। বাজে কথাও শুনাননি। ডাক্তার প্লিজ বাঁচাতে আসুন আমায়।

নিরা চোখ বন্ধ করে নেয়। বন্ধ চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিরার দুইহাত বেঁধে রেখেছে।কামিজের দুইহাতের অংশ ছিড়ে ফেলেছে। খুব বাজে ভাবে স্পর্শ করে কামিজটা ছিড়ে ফেলবে তার আগেই তুহিন ছিটকে পরে সামনের দেয়ালের সাথে বারি খায়।

রাগে, কষ্টে, ক্ষোভে রাফিনের চোখ লাল হয়ে গেছে। চোখ থেকে পানি পরছে। হাতের মুঠি শক্ত করে রেখেছে। চোয়াল শক্ত। কপালের রগ ফুলে উঠেছে। রাফিন একবার নিরার দিকে তাকিয়ে তুহিনের কাছে যায়। তুহিকে উথাল-পাতাল মারধর শুরু করে। কৌশিক নিরাকে উঠিয়ে হাতের বাঁধন খুলে দেয়। ওড়না দিয়ে ঢেকে দেয় পুরো শরীর। নিরার হাত পা এখনো কাপছে। ভয়ে এখনো কুড়ে আছে। কৌশিক একপাশে বসিয়ে পানি খাওয়ায় নিরাকে। এদিকে তুহিনকে মেরে ফাঠিয়ে দিয়েছে রাফিন। নাক মুখ থেকে রক্ত পরছে। একটা সময় তুহিন সেন্সলেস হয়ে যায়। কৌশিক গিয়ে রাফিনকে সামলায়। রাফিন নিরার সামনে এসে একটানে বুকের সাথে চেপে ধরে। রাফিনের পুরো শরীর কাপছে। চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে। নিরাকে ঝাকিয়ে বললো,
— ফোন করে বলোনি কেনো আমাকে?

নিরা দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পায়নি। একসময় লুটিয়ে পড়ে।

——————–
হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে তূর্য। সে এখনো বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার ভাই এমন কাজ করেছে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। রাফিন নিরার চিকিৎসা করছে। নিরার মাথায় আঘাত পেয়েছে আর ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে। রাফিন নিরার পাশে বসে একহাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখ থেকে পানি পড়ছে। বিড়বিড় করে বলছে,
— আমি আমার প্রমিজ রাখতে পারিনি নিরুপাখি। প্রমিজ করেছিলাম তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেবোনা। কিন্তু আজ হয়েই গেলো৷ আমি রাখতে পারিনি প্রমিজ।

কান্নায় ভেঙে পড়ে রাফিন। নিরার এখনো সেন্স ফেরেনি। একহাতে ক্যানেলা লাগানো হয়েছে।

—–
তুহিন সিটের সাথে বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে।হাতে, পায়ে,মুখে সব জায়গায় ব্যান্ডেজ। একহাতে ক্যানেলা। তূর্য ডানপাশে দাঁড়িয়ে এবং কৌশিক রাফিন বাম পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তূর্য বললো,
— তুই তো নিরাকে ভালোবাসতি তাহলে এমন কেন করলি?

— ভাই তুইও ওদের কথায় বিশ্বাস করছিস? আমি এমন কিছুই করিনি।

— কি করেছিস আর কি করিসনি সেটা তোর অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এখন বল এমন করার কারণ?

— ওহ ভালো। তাহলে শুনো। হ্যাঁ ভালোবেসে ফেলেছিলাম নিরাকে। কিন্তু দিনদিন ওর ভাবেলশহীনতা দেখে আমার রাগ উঠে। আমার প্রতি কেমন যেনো হয়ে গেছে। আগে সবসময় পেছনে পড়ে থাকতো যখন থেকে রাফিন এসেছি এরপর থেকে দূরে দূরে থাকতো। তাও ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে।

— তুই তো সবসময়ই ওকে তাড়িয়ে দিয়েছিস। ওকে তোর জীবনে চাসনি। তোর থেকে দূরে দূরে থাকায় তোর খারাপ লাগার কারণ তো দেখছি না।

— হ্যাঁ তাড়িয়ে দিয়েছি। আমি চেয়েছি ও সবসময় আমার পিছনেই ঘুরবে। আমি ওকে মারবো, অপমান করব আবার আদর করবো। কিন্তু ও রাফিনের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে সব উলোট পালোট করে দিয়েছে। ওকে বিয়ে করে সারাজীবন দাসী বানিয়ে রাখতাম। ইচ্ছা হলে ব্যবহার করতাম আবার ছুড়ে ফেলে দিতাম। সবই ঠিকই চলছিলো কিন্তু সেদিন রাফিনরা সবাই প্ল্যান করে তিশা আমার গার্লফ্রেন্ডকে এখানে নিয়ে আসে এবং নিরা দেখে ফেলে আর সব ভেস্তে গেছে।

রাফিন এবং কৌশিক অবাক তুহিনের কথা শুনে। তূর্য সপ্তম আসমান থেকে যেনো ধপাস করে জমিনে পড়েছে এসব কথায়। রাফিন রেগে মারতে যাওয়ার আগেই তূর্য কষিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় তুহিনকে। তুহিনের কলার ঝাকিয়ে বললো,
— তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিস? মাথা ঠিক আছে তোর? তোকে ছোট থেকে আমি এইসব শিখিয়েছি? নারীকে কিভাবে সম্যান করতে হয় সেটা শিখিয়েছি। আর তুই হয়েছিস সম্পূর্ণ বিকৃত মস্তিষ্কের। এসব কোথা থেকে শিখেছিস তুই?

তুহিনের কলার ছেড়ে তূর্য সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— ভালোই হয়েছে নিরার সাথে সেদিন তুই বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিস। তা নাহলে মেয়েটা সারাজীবন তোর মতো পশুর হাতে অত্যাচারিত হতো। আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে তোর কথায় আমি নিরাকে তোর সাথে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। ছিহ!

তূর্য রাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— ভাই তোমরা যদি ওকে জেলে দিতে চাও তো দাও। আমার কোনো আপত্তি নেই।

তূর্য কেনিন থেকে বেরিয়ে যেতে নিয়ে আবার তুহিনের দিকে ফিরে তাকায়। তুহিনকে বললো,
— বাসায় গিয়ে মাকে বললো তার ছেলের সাফল্যের কথা।

তুহিন বাকা হেসে বললো,
— বলিস। তুই জানিস তো মা সবসময় আমার কথাই শুনবে। আমি কাউকে খুন করলেও মা আমাকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে আনবে। কারণ সেই ক্ষমতা মায়ের আছে। আর ভালো করে শুনে রাখ সেটা শুধু আমার মা তোর না।

তূর্য বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে পানি ছলছল করছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়বে এমন অবস্থা। তাও সামলে নিয়ে মলিন হেসে শুধু একটা কথাই বললো,
— বুঝিয়ে দিয়েছিস ভাই,”পর কোনোদিন আপন হয়না।”

তূর্য আর দাড়ালো না। বের হয়ে গেলো হসপিটাল থেকে। রাফিন এবং কৌশিক কিছুই বুঝলো না। তাই তারাও বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। তূর্য রাস্তার একপাশে হাটছে আনমনে। চোখের পানি এখন আর আটকে রাখেনি। অনুমতি দিয়েছে গড়িয়ে পড়ার। হাটতে হাটতে মনে মনে একটা কথাই বললো,
— তোমাকে আর পাওয়া হবে না আমার।
·
·
·
চলবে……………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here