#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী
15
-ওগো শুনছো এটা আবার কি?
পরী- মা বাবাকে এভাবেই ডাকে!
ইজ্বা- পাগলী একটা!
দ্যা প্ল্যাসে থেকে বিকেলে ওরা রওনা দিল বিছানাকান্দি। আধখানি ডুবন্ত সূর্যের লাল আভা ঘিরে রেখেছে ওদের, পরী পাথরে বসে তার পা খানি ডুবিয়ে রেখেছে জলে, এত স্বচ্ছ জল আর কোথাও নেই বোধহয়। নিজেকে পুরোপুরি জলে ডুবিয়ে দিলেও দিব্যি দেখা যায়।
পরী পা দুটো দিয়ে জল আচঁড়াতে আচঁড়াতে ইজ্বার কাঁধে মাথা রাখে।
ইজ্বা- জানো তুমি পরী, এখানে আমি আরও এসেছি কিন্তু আজ যে ভালোলাগা অনুভব হচ্ছে এর আগে কখনো হয়নি। শুধু তোমার জন্য, তুমি থাকলে আমার পৃথিবীটাই অন্যরকম লাগে।
পরী- ওই দেখ চাঁদ উঠেছে, ধীরে ধীরে কেমন পাহাড়ের গায়ে কেমন রশ্মি ছড়াচ্ছে,
ইজ্বা- দ্যা প্ল্যাস এই বিজানাকান্দির কথা কখনো ভুলব না। বিশেষ করে তোর আর আমার কাটানো মূহুর্তগুলো।
পরী- হুম, ওই চাঁদের পাশে দেখ কি সুন্দর একটা শুকতারা।
ইজ্বা- হুম।
পরী- আমাদের দিকেই যেন তারাটা তাকিয়ে আছে। যদি আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে চলে যাই তুমি আমাকে ওই তারাটার মাঝে খুঁজো।
ইজ্বা পরীকে তার কাঁধ থেকে সরিয়ে নিয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
ইজ্বা- কি বলছিস এসব চলে যাবি মানে?
পরী- ও কিচ্ছু না। এমনি!
ইজ্বা- এসব আর বললে কাল মলে দেব।আর কখনো এগুলো বলবি না। বলে দিলাম কিন্তু।
পরী- এত রেগে যাচ্ছো কেন? আর বলব না। সরি, এবার তো হাসো।
ইজ্বা- আমাকে রাগিয়ে দিয়েছিস আর হাসতে পারব না।
পরী ঝাপটি মেড়ে ইজ্বার কোলে মাথা রেখে পাথরের উপর কাত হয়ে শুয়ে পড়ে বলে,
পরী-রাগ করেছো তো টিচার ওকে আমিও আর কথা বলব না ঘুমিয়ে পড়ছি। গুড নাইট
ইজ্বা- এখানে ঘুমাবি, হোটেলে চল?
পরী- না আমি এখানেই তোমার কোলে ঘুমাবো। আকাশ দেখতে দেখতে ঘুমাবো। জলের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমাবো, আর ঝিঁঝি পোকার দলের ডাক।
ইজ্বা- আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়।
গল্পকথক- ইজ্বা পরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মনে মনে পরীর কথাটা শোনে একটা শূন্যতা অনুভব করছে, এ শূন্যতা ভীষণ কষ্টের ! ভীষণ।
পরী ঘুম ঘুম চোখে বলে,
পরী- এ্যাই টিচার,
ইজ্বা- কি?
পরী- থাক, এখানে ঘুমাবো না।
ইজ্বা- কেন?
পরী- আমি যদি তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি তুমি ঘুমাবে কি করে? তোমার কষ্ট হবে তো।
ইজ্বা- পাগলিটা, আমার কষ্ট নিয়ে ভাবতে হবে না। তুই ঘুমা।
পরী ইজ্বার কোল থেকে মাথাটা একটু তোলে আবিরের দুগাল টেনে বলে,
পরী-আমার সোনা ভাইটা?
ইজ্বা- আবার ভাই বলছিস?
পরী- সরি সরি, মনে নেই। আমার সোনা জামাই।
ইজ্বা- থাক আদিখ্যেতা, ঘুমিয়ে পড়।
পরী শুয়ে পড়লে ইজ্বা পরীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আবার ভাবে,
পরী কেন হঠাৎ আকাশের তারা হওয়ার কথা বলল? সত্যি যদি এমনটা সে কি পরীকে ছাড়া থাকতে পারবে। পরীকে ছাড়া কখনো থাকতে হবে এই কথাটা ভেবে ইজ্বার বুক ধ্বক করে উঠে। পরীর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
ইজ্বা- আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবনা পাগলি। আই রিয়েলি লাভ ইউ, লাভ ইউ সো মাচ।
তারপর ইজ্বা পরীকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই কোলে তুলে হোটেলে নিয়ে যায়।
পরের দিন বিকেলে তারা যাওয়ার জন্যে রওয়ানা দেয়। ইজ্বা গাড়ি চালাচ্ছে তার পাশে বসে জানালায় মুখ বের করে চারদিক অবলোকন করছে পরী।।
ঢাকার কাছাকাছি চলে এসেছে তারা, প্রায় আরো চার কিলোমিটার। হঠাৎ সেদিনকার মতো আজও কতগুলো গুন্ডা তাদের পিছু নিয়েছে, ইজ্বা ওদের ওভারটেক করছির কিন্তু কেমন নিয়তি! ওদের চাকা ফ্রান্সার হয়ে যায়। গুন্ডা গুলো চারদিকে ওদের গাড়িকে ঘেরাও করে ফেলে। ইজ্বা পরীকে কাঁপা গলায় বলল,
ইজ্বা- পরী তুমি একদম গাড়ি থেকে বের হবে না, একদম না। চুপ করে এখানেই থাকবে।
পরী কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছিল না। চুপ হয়ে রইল। ইজ্বা গাড়ি থেকে নেমে বলল,
ইজ্বা- কি চাও তোমরা? প্রতিদিনই এরকম আামাকে অ্যাটাক করছো কেন কে তোমরা?
গুন্ডাগুলো বাইক থেকে নেমে বলে,
গুন্ডা- তোর জান চাই, জান
ইজ্বা- তোমরা আমাকে কেন মারতে চাও, কি ক্ষতি করেছি তোমাদের?
গুন্ডা- আরে শালা, আমাদের না। আমাদের বসের ক্ষতি তুই করেছিস!
ইজ্বা- বস! কে তোমাদের বস?
ইজ্বা প্রচণ্ডভাবে রেগে আঙ্গুলগুলো মুষ্টিমেয় করে বলে একথাটা। তখনই একটা লাল রঙের গাড়ি এসে থামে, এবং গাড়িতে থাকা লুকটা বের হতে হতে বলে,
– আমি ! আমি ওদের বস!
ইজ্বা লুকটাকে দেখে অবাক হয়, কে ওনি কিসের জন্য ইজ্বাকে মারতে চায়? কিছুই জানেনা ইজ্বা, তখন ইজ্বা বলে,
ইজ্বা- কে তুই?
– তোর যম! লোকটা বিকট হেসে বলে
ইজ্বা- কি করেছি আমি? আনসার মি?
গুন্ডা গুলো ইজ্বাকে ধরে রাখে, পরী পুলিশকে ইনফর্ম করে। লোকটা ইজ্বার পেটে ঘুসি দিয়ে বলে,
– ক্ষতি, হাহাহাহাহা ! তুই আমার ক্ষতি না আমার ছয় বছরের সাজানো স্বপ্নকে ভেঙে দিয়েছিস,
ইজ্বা- আমি! কিসের কথা বলতে চাইছো? কি করেছি আমি?
চলবে……
রেসপন্স প্লিজ