#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী
১১
তবে আমার বোনটা কিন্তু প্রচণ্ডভাবে নাক ডাকে রাত্রে ঘুমের ঘুরে।
রনি- হোয়াট ডু ইউ মিন?
ইজ্বা- আমি কিছুই মিন করছি না। বলছি পরী খুব নাক ডাকে। কাল রাত্রেও ডেকেছে।
রনি রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
রনি- পরী নাক ডাকে সেটা আপনি কি করে জানলেন?
কফির কাপে রাগ দেখিয়ে ঢাক্কা মেরে ফেলে দেয় ফ্লোরে। তারপর উঠে দাড়ায়,
আবির মনে মনে বিলিয়েন হাসি দিয়ে মুখে আশ্চর্যের ছাপ এনে বলে,
ইজ্বা- একি মিস্টার রনি উঠে দাড়ালেন যে?
রনি চোখ জোড়া লাল করে ইজ্বার দিকে তাকিয়ে মাইফোট বলে গটগট করে হেটে চলে যায়।
পরী ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে রনি নেই। ইজ্ব মনের সুখে চেয়ারে গা হেলিয়ে গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছে,
ইজ্বা-
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও
তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে
আর কিছু নাহি চায় গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
পরী ইজ্বার এত সুন্দর গলা শোনে একদম মুগ্ধ হয়ে আছে।। মন দিয়ে শুনছিল তার গান। কিন্তু হঠাৎ পরীর রনির চেয়ারে চোখ পড়তেই দেখে রনি নেই। আর ইজ্বার তো রনিকে দেখে রেগে ফেঁপে উঠা উচিত কিন্তু ইজ্বাতো মনের সুখে গান গাচ্ছে। সামথিং ইজ রং।
পরী ইজ্বাকে ডাকে কিন্তু ইজ্বা তার গানের মধ্যে হারিয়ে গেছে। পরী অবাক হয়। ভাবে,
পরী-এটা কি হলো, ইজ্বা ভাইয়াকে জ্বালানোর জন্যে রাগ তোলানোরর জন্যে এত কিছু করলাম। আর শেষে কিনা তিনিই মনের সুখে গান ধরেছেন। উফফফফ ভাল্লাগেনা। এখন আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।
পরী ইজ্বার চেয়ারের কাছে গিয়ে ইজ্বার কলার দুহাত দিয়ে ধরে বলে, রনি কোথায়?
ইজ্ব- ওহ তুই এসেগেছিস?
পরী- রনি কোথায় বল?
ইজ্বা- চলেগেছে।
পরী-চলেগেছে মানে?
ইজ্বা-আগেতো কলার ছাড়। গলায় লাগছেতো। আর তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেন?
পরী- রাগবো না বলছো। তোমাকে রাগানোর জন্যে এত কিছু করলাম আর এখন দেখি তুমি মনের সুখে গান ধরেছো?
ইজ্বা- কি আমাকে রাগানোর জন্যে এতো কিছু? মানেটা কি?
পরী ইজ্বার কলার ছেড়ে জিহ্বায় কামড় দিয়ে,
পরী- এই রে সব তো রাগের মাথায় বলে দিলাম। দূর বাবা, সব প্ল্যান এখানেই তো ডিশমিশ।
ইজ্বা-আমার সঙ্গে চালাকি? সাহস তোর প্রচণ্ড বেড়েছে।
পরী- আমি আবার কি করেছি? আগে বলো রনি কোথায়?
ইজ্বা- বললামতো চলে গেছে।
পরী-তুমি নিশ্চয় কিছু বলেছো, নইলে আমাকে না বলে তো যাবে না ও।
ইজ্বা- এই খানিকটা সময়ে দেখছি খুব চিনে গেছিস রনিকে।
পরী- হুঁ, চিনতে তো হবেই। আমার উড বি বর বলে কথা।
ইজ্বা-আমি বলেছি শুধু যে তুই রাতে প্রচণ্ড নাক ডাকিস একথা কিন্তু বলার পরেই তোর ঘাড় ত্যাড়া বর গটগট করে হেঁটে চলে গেছে। আমি কত বার ডাকলাম তবুও তোর বর চলে গেল,
পরী ইজ্বার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ইজ্বার গলা টিপে বলতে লাগল,
পরী- এটা তুমি বলতে পারলে? আমি এখন তোমাকে মেরেই দেব।
ইজ্বা-আমি কি করেছি বল? শুধু বলেছি তুই ঘুমালে নাক ডাকিস।
পরে- আমি নাক ডাকি, তুমি শুনেছো কখনো?
ইজ্বা- হ্যাঁ শুনেছি,
পরী রাগে কটমট করতে করতে ইজ্বার গলা আরো জুড়ে টিপে বলে,
পরী- কখন?
ইজ্বা-এখনো তো শুনতে পাচ্ছি। তোর নাকের নিশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ।
পরী- ওইদিন মনে হয় বিছুটি পাতার ডোজটা কম হয়েছে, এবার আরো কড়া ডোজ দিতে হবে দেখছি।
ইজ্বা-গলাটা ছাড় এবার। গলায় প্রচণ্ড লাগছে।
পরী- লাগুক, রনিকে তুমি কেন এসব বললে বল আগে?
ইজ্বা- ছাড় বলছি।পরীর হাত থেকে ইজ্বা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য পরীর হাত ধরবে তখনই আঘাতের স্হানে রক্ত পড়তে লাগল। এতক্ষণে রক্ত পড়া বন্ধ হয়েগিয়েল জাল বেঁধে হিমোগ্লিবোনের। কিন্তু পরীর হাত ধরতে রক্ত আবার পড়তে থাকে। পরী এতক্ষণ দেখতে পায়নি, হঠাৎ ইজ্বার হাতের দিকে নজর পড়তেই দেখে রক্ত অবিরত বের হচ্ছে। পরি তড়িঘড়ি করে ইজ্বাণ গলা ছেড়ে তার হাত ধরে বলল,
পরী- এতটা রক্ত বের হচ্ছে কেন? ব্যান্ডেজ করা আছে তারপরও রক্ত কেন পড়ছে। আমি সকালে দেখেছিলাম, ভেবেছিলাম সামান্য কিছু হয়েছে। কিন্তু এখনও রক্ত বের হচ্ছে কেন? কি হয়েছে হাতে? বল…
ইজ্বা হাতটা পিছনে লুকিয়ে বলে
ইজ্বা- ও কিছু না।
পরী- কিছু না মানে? হাতটা দাও বলছি।
ইজ্বা- না, যাতো তুই, বাসায় ফিরে যা।
পরী- আমি একা চলে যাব?
ইজ্বা- যার সঙ্গে এসেছিলি তার সঙ্গে চলে যা।
পরী- তাকে তো তুমি ভাগিয়ে দিয়েছো।
ইজ্বা- আমি মোটেও ভাগাইনি, শুধু একটা কথা বলেছিলাম।
নরী- এসব কথা রাখো, হাতটা দাও।
এই বলে পরী ইজ্বার হাত পিছন থেকে টেনে আলন। তারপর ইজ্বাকে চেয়ারে বসিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে ভালো ভাবে ব্যান্ডেজ করল। ইজ্বা পরীর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না পরী তাকে এত কেয়ার করে।
ইজ্বা পরীর মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনার জন্যে আকুল হয়ে আছে। যেভাবেই হোক চলকলে বলে কৌশলে পরীকে সে নিজের করে চায়।
ইজ্বা পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
ইজ্বা- এত ভালো করে ব্যন্ডেজ করতে হবে না? ছাড় তো আমি করে নিচ্ছি।
পরী- হ্যাঁ, করেছিলে তো তুমি। তার ফল এই যে এত রক্ত।
ইজ্বা- রক্ত পড়ুক আরো পড়ুক তাতে তোর কি?
পরী- আমার আবার কি?
ইজ্বা- তাহলে ব্যান্ডেজ করছিস কেন? আমি রক্ত পড়তে পড়তে রক্ত শূন্য হয়ে মরে গেলেই বা তোর কি?
পরীর মন এ কথা শুনে অজানা শঙ্কায় ঢক করে ওঠে। ইজ্বার মুখে হাত দিয়ে পরী বলে, একথা আর কখনো বলবে না ইজ্বা ভাইয়া।
চলবে….
আপনাদের রেসপন্স পেলে উৎসাহ পাই❤