#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী
৮
ইজ্বা লুকিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে চুপিচুপি পরীর জন্য স্যুপ রান্না করে।
ইজ্বা-পরী এই নে আমি নিজের হাতে বানিয়ে তোর জন্যে স্যুপ এনেছি।
পরী- খাব না।
ইজ্বা- কেন? এটা খেলে তো গলায় আর ব্যথা করবে না। জলের মতো খেয়ে নে।
পরী- তোমার হাতের কিছুই খাব না
ইজ্বা- হোয়াই?
পরি- কাল কলেজে গেলে সবাই আমাকে কত লেকফুল করবে জানেন, কিসের জন্যে আমাকে ওভাবে অক্সিজেন দিতে গেলেন? আমি ঠিক করেছি আমি আর কলেজে যাব না।
ইজ্বা- ও। ড্রামা হচ্ছে। আসলে গলা ব্যাথা একটা অজুহাত কলেজে না যাবার জন্য। দাড়া দেখাচ্ছি মজা,, মণিমা, মণণণি,,
পরী বিছানা থেকে ওঠে ইজ্বার মুখ চেপে ধরে বলে,
পরী- মাকে বলবেন না একদম। নইলে আপনাকে খুন করে ফেলব আপনাকে।
ইজ্বা পরীর হরিণ কালো চোখের গভীরে ঢুবে যেতে থাকে তখন। পরী নিজের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করে। কিন্তু পরী এরকম অনুভূতি, ভালোবাসার অনুভব চায়না। কারণ সে জানে ইজ্বা তার কখনই হবে না। পরী ইজ্বার মুখ থেকে হাত সরিয়ে আবার বলে,
পরী- আপনি মাকে ডাকবেন না একদম। আপনাকে…..
ইজ্বা- চুপ, সবসময় আপনি আঙ্গে করিস কেন রে?
পরী- আপনি বলব নাইতো কি বলব? আপনি তো আমার স্যার, আর আমি দুমুখো সাপ নইয়ে একবার কলেজে আপনি ডাকব আবার বাসায় তুমি।
ইজ্বা- ওহ রিয়েলি? কিন্তু আমার তো মনে হয় তুই দুমুখো সাপই। মনে আছে গোন্ডা গুলো যখন তোকেও অ্যাটাক করেছিল তখন তুই ‘ ইজ্বা, আমাকে বাঁচাও, ইজ্বা, উঠো তুমি। উঠো। ইজ্ববববা।’ বলেছিলিস। তখনতো দিব্যি তুমি বললি। ড্রামা কুইন একটা।
পরী- তখন তো আমি ভয়ের চুটে বলে ফেলেছি।
ইজ্বা- স্টপ ড্রামা। আমি এত কষ্ট করে স্যুপ করে এনেছি। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম তোর গলা ব্যথা তাই….। কিন্তু তুই তো নাটক করছিলি । এখন আমি নিজেই খেয়ে নেই।
পরী চট করে ইজ্বার হাত থেকে স্যুপের পিরিচটা নিয়ে বলে,
পরী- আমার জন্যে স্যুপ করেছো এখন আমি যদি না খাই তাহলেতো আপনার মন খারাপ করবে?
ইজ্বা- আবার ড্রামা, তার সঙ্গে আবার আপনিও বলা হচ্ছে। মণিমাকে এখনি ডাকছি,
পরী- না না। সরী এই দেখ কানে ধরছি। আর আপনি বলব না এখন থেকে অনলি তুমি।
ইজ্বা- হুম। খেয়ে নে।
পরী- যা খিয়ে পেয়েছিল পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করে দিয়েছিল।মনে মনে,
ইজ্বা- কি বলছিস ভীড় ভীড় করে?
পরী- ও কিছু না।
ইজ্বা পরীর দিকে তাকিয়ে ওর খাওয়ার স্টাইলটা দেখছিল। একদম বাচ্চাদের মতো পরী খাচ্ছে। ও যেন রীতু থেকেও ছোট। ইজ্বা হঠাৎ হাসতে হাসতে পকেট থেকে ফোন বের করে পরীর ছবি তোলে।
পরী তখন বিস্মিত মুখে বলে,
পরী- আমার ছবি তুললে কেন? আর হাসছো কেন তুমি?
ইজ্বা- দেখ ছবিটা।
গল্পকথক- ইজ্বা কোনোরকমে হাসি আটকে পরীকে ছবি দেখায়। পরী ছবি দেখে চোখ গোলগোল করে ইজ্বার দিকে তাকায়।
ইজ্বা- আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে কেন? আমাকে কি আস্ত খেয়ে পেলবি? তবে যাই করিস, আজকে কিন্তু তোকে একদম পেতনী লাগছে।
পরীর ঠোঁট জুড়ে সুপ লাগানো ছিল। পরী হাত দিয়ে স্যুপ মুছে তা আরো গালে লাগিয়ে দিল।
ইজ্বা হাসতে হাসতে বলে
ইজ্বা- পাগলী একটা। মণিমা এমনিতে বলেন না তোর মতো আর একটা মেয়ে হয়না।
ইজ্বা পকেট থেকে তার রুমাল বের করে পরীর ঠোঁট, গাল মুছে দেয়।
রুশেন আরা রিতুকে ঘুম পাড়ানোর জন্যে রিতুকে নিয়ে এসে দেখলেন ইজ্বা বিছানার একপাশে বসে ফোন গাটছে আর পরীও চুপচাপ বসে আছে।
এখানকার পরিস্থিতি কিছুই বুঝতে না পেরে রুশেন আরা বলেন,
রুশেন আরা- কিরে তোরা এতো চুপচাপ। মুখগুলো প্রেসার কুকারের মতো ক্যান? আচ্ছা এসব কথা থাক, ইজ্বাও যখন এখানে আছে কথাটা বলেই দেই।
ইজ্বাণ প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে বলল,
ইজ্বা-কি বলবেন মণিমা?
রুশেন আরা-শোনো ইজ্বা বাবা, আমার মেয়েটার তো দিন যত যাচ্ছে ততই দুষ্টুমি বাড়ছে। এবার দেখি স্বামীর ঘরে গিয়ে সংসারটুকু মন দিয়ে করতে পারে কিনা। একবার সংসারে মন বসে গেলে দুষ্টুমি আর করবে না এটা আমার বিশ্বাস।
পরী মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
পরী- হঠাৎ এসব কেন বলছ? আমি কি এতোই দুষ্টু নাকি। লোকে আমার সঙ্গে লাগতে আসলেই তো আমি শায়েস্তা করি। নইলে কি….
ইজ্বা- নাহ! তুই কিছুই করিস না। তুই তো একদম সাধু।
পরী- মা দেখ তোমার ইজ্বা সোনা আমার সঙ্গে ঝগড়া করতেছে।
রুশেন আরা- রাখতো তোদের ঝগড়া।কাজের কথা শোন? পরীর একটা বিয়ের আলাপ এসেছে, বর অনেক বড় রিপোর্টার। দেখতেও মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর। তুই কি বলিস পরী, তুই হ্যাঁ বললেই পাকা কথা বলে ফেলব?
কথাগুলো শুনে ইজ্বার বুক ধক করে উঠল অজানা কারণে। সে গুরুগম্ভীর হয়ে বসে আছে।
পরী মায়ের বুকে লজ্জায় মাথা গুঁজে কিছুক্ষণ ভাবল, ইজ্বা কি তাকে ভালোবাসে নাকি এখন পযর্ন্ত যা করেছে সবকিছুই ওর দায়িত্ববোধ থেকে। তার প্রতি কি
ইজ্বার অনুভূতি কাজ করে।
পরী মনে মনে বলে,
পরি- না না ভাইয়ার তো বিয়ে ঠিক, জারা আপু দেশে আসলেই বিয়ে হয়ে যাবে। দূর আমি কি ভাবছি এসব? আর আমি তো এরকমই একটা বর চেয়েছিলাম যার একটু কবি কবি ভাব থাকবে। আর সাংবাদিকরা তো কবিই একরকম।
পরী – মা আব্বু কি বলেছেন?
রুশেন আরা-কি আর বলবেন? বলেছেন ছেলেকে উনারও ভালো লেগেছে যদি তুই রাজি হস তাহলে এ বিয়ে হবে।
পরী-আমি আবার কি বলব তোমাদের যা ইচ্ছে তাই করো।
পরী-তার মানে তোর কোনো আপত্তি নেই!
পরী মাথা নাড়ল
রুশেন আরা ইজ্বার সম্মতি জানতে চাইলে ইজ্বা রুশেন আরার কথা শুনতে পায়নি একধ্যানে বসে কি যেন ভাবছিল,
ইজ্বা দু-তিনবার ডাকার পর থচমচিয়ে উঠে বলল,
ইজ্বা- আপনাদের ভালো মনে হয়েছে ছেলেটাকে নিশ্চয়ই ভালো হবে।
রুশেন আরা- হুঁ। তাহলে কালই আমি বলব ওদের আমাদের বাড়িতে আসতে।
রুশেন আরা মৃদ্যু হেসে রিতুর দিকে তাকিয়ে দেখেন রিতু কবেই ঘুমিয়ে গেছে। তাই তিনিও চলে যান।
ইজ্বা পরীর দিকে খানিকটা ক্ষণ তাকিয়ে চলে যায় নিজের রুমে চুপচাপ। তার মনটা যেন হঠাৎ শূন্যতায় ভরপুর। খাঁ খাঁ করছে সব কিছু। খোলা জানালার পর্দাটা সরিয়ে সে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে আকাশ ভরা ওই মায়াবী তারাগুলোর দিকে।
পরীর মনে ইজ্বাকে নিয়ে তখনো তেমন অনুভূতি জন্মায়নি কারণ ইজ্বার বিয়ে অন্যকারোর সঙ্গে হবে সেটা তার মনের মধ্যে গেঁথে রেখেছে। তাই অন্যকোনো কাঁটা তাকে বিধ্বস্ত করতে পারেনি। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে সে।
…..