পরী কলেজে এডমিশন হয়েছে প্রায় বছর খানেক। কিন্তু এই কম সময়েই চার-পাঁচ জন ছাড়া কলেজের ছোট বড় সবাই ওর বন্ধু। বন্ধুরা সব ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পরীর কাছে আসে।
যেমন; শিউলির পছন্দ রাহুলকে কিন্তু শিউলির স্বাথ্য বেশি হওয়ায় রাহুল শিউলিকে দুচোক্ষে সহ্য করতে পারে না। শিউলি পরীকে রিকোয়েস্ট করে রাহুলকে ম্যানেজ করে দিতে।
বেচারা রাহুল বিনা দোষেই কতগুলো কিল-ঘুসি খেল আর পরীর জন্য পাগল রাজ,রনি,যোবানের হাত থেকেও। শিউলিকে ভালোবাসে একথা স্বীকার না করা অবধি মার খেতে হয়েছে তাকে।
রাহুল বলেছিল পিন্সিপালকে সে নালিশ দেবে।
তখনই পরীকে মুখ বাকিয়ে বলে, পেন্সিপাল আমার চাচ্চু। আমার নামে নালিশ করবি তো সোজা রাজটিকিট।
কলেজের সবাই জানে পেন্সিপাল পরীর চাচ্চু। তাই ওর নামে নালিশ করার মতো সাহস কারোর নেই। পরীর বেস্টটু মৌমাতাও জানে না যে পেন্সিপাল স্যার আসলে ওর চাচ্চু নয়।
কেউ যদি জিঙ্গেস করে, পরী তুই কেন তোর চাচ্চুকে পেন্সিপাল স্যার ডাকিস, স্যারের সঙ্গে তোকে কোনদিন কথা বলতেই দেখিনি? আর কেনই বা তুই স্যারকে এত ভয় পাস?
পরী মুখ থুতা করে বলে,
পরী- আমার চাচ্চু পার্সনাল আর প্রপেশন লাইফ এক করা পছন্দ করেন না তাই আমি আব্বুকে স্যার ডাকি এবং কলেজে এসে কথা বলিনা। চাচ্চুকে ভয় পাবোনা তোরা বলছিস, জানিস চাচ্চু কি বলেছেন? বলেছেন যদি আমার নামে কেউ নালিশ করে তাহলে আমাকে সহ যে নালিশ করবে তাকেও রাজটিকিট করে দিবে। তাইতো আমি চাচ্চুকে দেখলে সভ্য মেয়ে হয়ে যায় ভয় পেয়ে। আর আমিতো চাইনা আমার জন্য তোরা কলেজ থেকে রাজটিকিট হোস।
পরী কলেজের একরকম ভালো ছাত্রী বটে। চেহারা গুলুমুলু নাদুসনুদুস। সবথেকে ওর গালে টোল পড়া হাসিটা সুন্দর। কলেজের প্রায় সব ছেলেই পরীর জন্য এক পায়ে খাড়া। কিন্তু পরীকে প্রপোজ করার সাহস আছে কয়জনের। সবাই শুধু ডুবে ডুবে জল খায়। রাজ,রনি,যোবান যারা কিনা একসময় কলেজের গোন্ডা ছিল তারা আজ পরীর কথায় কথায় উঠে আর বসে। পরী নামমাত্রই তারা পাগল। কিন্তু প্রপোজ করার মতো ভয়ংকর সাহস তারা আজও দেখায় নি।
একবার কলেজের নতুন ছাত্র শাওন পরীকে দেখে এতটা উন্মাদ হয় যে প্রথম দিনেই পরীকে হিরো স্টাইলে হাঁটু মোড়ে একটা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে। পরী বেচারা শাওনকে এই অবস্থাতেই গলায় রসি বেধে, রসি টেনে টেনে সারা কলেজ ঘুরিয়েছে শাওনকে। অপমানিত হয়ে লজ্জায় আর শাওন এই কলেজের নাম আর করেনি।
পরীর মা রুশেন আরা আর আব্বু মাহমুদ হোসেন অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ইজ্বার। ইজ্বা রুশেন আরার মেঝ বোন সুমিতা আরার ছেলে। ওনারা পুরো পরিবার সহ সবাই লন্ডনে স্যাটেল। কিন্তু সুমিতা আরার ছোট ছেলে ইজ্বা প্রায় ১৫ বছর পর আসছে আজ। সুমিতা আরা সহ পরিবারের সবাই থাকেন লন্ডনে। কিন্তু ইজ্বা দেশকে ভালোবেসে আর নিজের মনে থাকা এক রহস্যময় কারণে লন্ডন থেকে ফিরে আসছে বাংলাদেশে। সুমিতা আরা ঠিক করেছেন ইজ্বাকে তার বান্ধীর মেয়ে জারার সঙ্গে বিয়ে দিবেন। ইজ্বা মায়ের কথার অবাধ্য হয়না কখনো। দেখা যাক গল্পের গভীরে কি মোড় নেয় কাহিনি !
ওদিকে ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। পরী আর মৌমিতা তাড়াহুড়ো করে হাঁটছে। হঠাৎ ইজ্বার সঙ্গে পরীরর ধাক্কা লাগে। দুজন দুজনের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল। চোখের মোহ কাটার পর পরী কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
পরী- চোখে দেখতে পান না, চোখে কি কাঠের চশমা লাগানো?
ইজ্বা হঠাৎ এরকম কথা শোনে প্রথমে ভ্যাবাচেঁকা খেয়ে পরে গলা হেঁকি দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
ইজ্বা- আমি তো ফোনে ই-মেইল চেক করে আসছিলাম কিন্তু আপনি? আপনি কি করছিলেন, চোখে কি শাটার নামানো ছিল? স্টুপিড কোথাকার।
পরী রাগে হাঁসফাঁস করতে করতে বলে,
পরী- আমাকে স্টুপিড বলছেন সাহস কত? কলেজে তো নতুন স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে ?
গল্পকথক- এই বলে পরী ইজ্বার থুতনি হাতের আঙুল দিয়ে চেপে বাচ্চাদের মতো নাড়িয়ে বলে, বেচারা আমি কে এখনো চিনতে পারেনি।
তখন পরীর বেস্টটু মৌমিতা পরীর হাত টেনে পিছনে এনে বলে,
মৌমিতা- পরী ছেলেটা হয়তো নতুন ছেড়ে দেনা। ক্লাস শুরু হয়ে যাবেতো অলরেডি লেইট। পরে স্যার ক্লাসে ঢুকতে দিবেন না দেখিস?
পরী- ঠিক আছে আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। ফের এমন করলে একদম পা দুটো ভেঙ্গে খুঁড়া বানিয়ে দেব।
ইজ্বা রাগে একদম লাল হয়েগেছে। রাগে গজগজ করতে করতে যখন কিছু বলতে চাইল তখনই ফোন এসে গেল….
ইজ্বা ফোনে কথা বলতে বলতে পরীকে হাত দিয়ে এই ঘটনা মনে রাখার ইশারা করে গেল।
পরীর আরেকটা বেস্টটু মীরা এতক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে শুধু ইজ্বাকেই দেখে যাচ্ছিল। ইজ্বার চলে যাওয়ার দিকে মীরা গম্ভীরভাবে তাকিয়ে আছে। পরী মীরাকে মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
পরী- কি দেখছিস ওদিকে।
মীরা- ছেলেটাকি।
পরী আর মৌমিতা একসঙ্গে – কি?
মীরা- কী সুন্দর! হাসলে দেখেছিস ছেলেটার একগালে টুল পড়ে? বডি একদম সালমান খানের মতো। হী ইজ মাই ড্রিম বয়।
পরী একটা ঘুসি মীরার নাক বরাবর এগিয়ে বলে,
পরী- এই ছেলেটা আমার শত্রু মানে তোদেরও শত্রু। ফের এই ছেলেটার গুণগান করলে তোর নাক ভেঙ্গে দেব। মাইনডেড?
মীরা খুবই ইনুসেন্ট মেয়ে, পরীকে খানিকটা ভয় পেয়ে হলেও বা বন্ধুত্বের কাতিরে পরীর কথা শুনে চলে।
মৌমিতা খুবই গোছানো প্রকৃতির মেয়ে এবং কোনো ঝগড়া পছন্দ করে না। এত অমিল থাকা শর্তেও কি করে যে পরী আর মৌমিতার বন্ধুত্ব হলো কেউ বুঝতে পারেনা।
মৌমিতা- পরী পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া না করলেই পারতি ছেলেটার সঙ্গে। তুই-ই তো অখেয়ালে হাটছিলি।
পরী- ওই তুই আমার শত্রু না বন্ধু মাঝে মধ্যে ভুলে যাই। আমার তো মনে হয় তুই আমার চরম শত্রু। ওই এনাকন্ডার মতো ছেলেটার জন্যে আমাকে…..
অন্যকিছু বলার আগেই মৌমিতা পরীকে থামিয়ে বলে,
মৌমিতা- তাড়াতাড়ি চল তোরা। ক্লাস বোধহয় শুরু হয়েগেছে। অলরেডি লেইট। আজকে আবার শুনেছিলাম কলেজে নতুন টিচার আসবেন। নতুন স্যার নাকি খুব কড়া আর রাগী।
পরী- দেখলি, ভুলেই গিয়েছিলাম। সব ওই ছেলেটার দোষ। নতুন স্যার যদি আমাদের বাইরে দাড় করিয়ে রাখেন ওই ছেলেটার অবস্থা আমি রাখবনা।
মৌমিতা- ছেলেটার ব্যবস্থা পরে করবি আগে নিজেরাতো বাঁচি তাড়াতাড়ি চল।
পরী- দেখলি, ভুলেই গিয়েছিলাম। সব ওই ছেলেটার দোষ। নতুন স্যার যদি আমাদের বাইরে দাড় করিয়ে রাখেন ওই ছেলেটার অবস্থা আমি রাখবনা।
মৌমিতা- ছেলেটার ব্যবস্থা পরে করবি আগে নিজেরাতো বাঁচি তাড়াতাড়ি চল।
অন্যদিকে জারা ফারাবিকে বারবার কল করে বিজি দেখে রাগে ফুসচে আর পাইচারি করছে। হঠাৎ বেজে উঠে জারার ফোন।
ফারাবি- সরি সরি জারু, রাগ করোনা প্লিজজ
জারা- উহু, ইউ কান্ট রিমেম্ভার মি। ইউ কান্ট লাভ মি আই ফিল ইটস নাউ।
ফারাবি- জারু, তুমি তো জানো আমি ছোট্ট ব্যবসাটা নিয়ে কত বিজি থাকি। আমি তো আর তোমার ফ্যামিলির যোগ্য না। তাই তোমার ফ্যামিলির সবাই আমাকে মেনে নিবে না। তোমার ফ্যামিলির যোগ্য হতে আমাকে কত কষ্ট করতে হচ্ছে জানো?
জারা- আই আন্ডারস্টেন্ড ফারাবি।
জারা এই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা কেটে দেয়। ভাবতে থাকে ও কিভাবে ফারাবিকে নিজের করে পাবে, কি করে বাংলাদেশে গিয়ে ফারাবিকে চমকে দিবে? আধও কি তাদের কখনো দেখা হবে? নাকি জীবনের সমান্তরালে হারিয়ে পেলবে ও ফারাবিকে।
জারা ভাবতে থাকে,
জারা- আমি কি ডেড মমের অবাধ্য হবো? ওনাদের বলব আমি ইজ্বাকে বিয়ে করতে চাই না, আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি?
জারা এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে। আসলে জারা যতই লন্ডনে বড় হোক সুমিতা আরা কখনো ওকে লন্ডনের শিক্ষায় বড় করেননি। নিজের সবটুকু উজাড় করে জারাকে নিজের মতো তৈরি করেছেন। তাই জারা সুমিতা আরার মতোই লাজুক আর নম্রতা পেয়েছে।
অন্যদিকে দৌড়ে এসে পরী যেই পা ক্লাসে রাখবে তখন একটা শব্দ আসল, দাড়াও
পরী ক্লাসের ভিতরে থাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। হা করে তাকিয়ে রইল।
ইজ্বা- ইউ?
পরী- তুই এখানে?
ইজ্বা- হ্যায় ইউ। এত সাহস আমাকে তুই বলছো?
পরী- তোর সাহস হলো কি করে আমার পিছু নিতে নিতে একদম আমার ক্লাসে আসার?
ইজ্বা- এক্সুইয়ুজমি, আমি তোমার পিছু নেব। আমি !
ইজ্বা বিলেন হাসি দিয়ে বলে,
এখানে যেভাবে আছো সেভাবেই কান ধরে দাড়াও,
ইজ্বা মৌমিতা আর মীরাকে ক্লাশে ঢুকার ইঙ্গিত করে। পরী তখন ভীষণ রেগে বলে,
পরী- তোর সাহস হলো কি করে আমাকে ক্লাসে ঢুকতে নিষেধ করছিস?
পিছন থেকে ইশারা করে মৌমিতা আর অন্যান্যরা বোঝাতে চেষ্টা করল ইজ্বা ওদের নতুন স্যার।
পরী খুব কষ্ট করে যখন ওদের কথা বুঝতে পারল যে ইজ্বা তাদের নতুন স্যার তখনই পরী মাথা নুয়ে কানে ধরে। ইজ্বা পরীকে ওমনভাবে নাস্তানাবুদ করতে পেরে নিজের মনে প্রশান্তি পায় এবং মুচকি হেসে ক্লাস করাতে শুরু করল।
এভাবে প্রায় এক ঘন্টার মতো পরী কানে ধরে ধারিয়ে থাকার পর ইজ্বা থাকে ক্লাশে ঢুকার পারমিশন দেয়।
পরী ক্লাশে ঢুকে মৌমিতার কাছে বসে ভীড়ভীড় করে ইজ্বার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে পেলেছে। মৌমিতা ইজ্বাকে এদিকে আসতে দেখে বলে,
মৌমিতা- চুপ কর পরী চুপ।
পরী মৌমিতার কথা গুরুত্ব না দিয়ে বলতে থাকে
পরী- মৌ, তুই করতে বলছিস! কি করে! আমার মাথা গরম হয়েগেছে। এই ছেলেটা আমাদের স্যার মাইফোট। ক্যারেক্টার লস একটা। আমাকে কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে দিল। ঠিক আছে আমি সুন্দরী একটা মেয়ে আমাকে দেখলে যে কারোরই মাথা ঘুরে যায় তাই বলে ধাক্কা দিবে সিনেমার হিরোর স্টাইলে? এখন আবার আমাকে কানে ধরিয়েছে। ফাজি একটা, দেখ চেহারাটা একদম এনাকন্ডার মতো।
ইজ্বা- সব আমি শুনতে পাই। ইজ্বা নাকের উপর চশমাটা নামিয়ে এনে বলে। আমি এনাকন্ডা তাইনা। এক্ষুণি ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও।
বেচারি পরী কিছু বলতে বা করতে না পেরে কপট রাগ দেখিয়ে গটগট করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়।
মৌমিতাও পরীর পিছু পিছু বেরিয়ে যায়।
পরী- দেখিস মৌ ওই এনাকন্ডার আমি কি হাল করি। ও না ওর ঘাড় টের পাবে পরী কে?
এই বলে পরী বিলিয়েন হাসি দিল।
পরী তাদের বিল্ডিং এ এসে যখন লিপ্টে উঠে পাঁচ চাপে, তখনই ইজ্বা দৌড়ে এসে লিপ্টে ঢুকে যায়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
ইজ্বা – ওহ পাঁচেই দেওয়া আছে লিপ্ট।
পরী ইজ্বাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।বিকৃত কন্ঠে বলে,
পরী- আপনি এখানে?
(পর্ব- ০
#পদ্মরাগ পর্ব- ০১
নু ইসলাম রেনী)
পরবর্তী পর্ব ? এই পেইজে