#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®
উনচল্লিশ
( আগের অধ্যায়গুলোর লিংক অধ্যায়ের শেষে দেওয়া হল)
— তুই আমাকে ইমম্যাচিওরড্ ভাবিসনা তরুদি । আমি বুঝতে পারছি তোর এই কথাগুলো শুনতে একদম ভালো লাগছে না। আমার বলা হয়তো উচিত ছিল না। তবুও তোকে বললাম । যদিও শর্টকাটে বলেছি । আরো বেশকিছু কথাই বলেছিল ও সেদিন । সেগুলো আর তোর শুনে কাজ নেই। যেটুকু বললাম, সেটুকুও না বললেই ভাল হতো। কারন এটা তোর অনেকদিনের আগেকার একটা ‘পাস্ট’ । সেটাকে আর প্রেজেন্টে টেনে আনার কোনো প্রয়োজন ছিল না । তবুও বললাম । কেন বলতো ? কারণ সেই সময়টা তুই একমাত্র আমাকেই তোর সব কথা বলতিস । আমি তখন অনেকটাই ছোট ছিলাম । সে ভাবে বুঝতে পারতাম না । তবু তোর কথাগুলো শুনতে খুব ভাল লাগত । ওই বয়সে সকলেরই কমবেশি প্রেমঘটিত গল্প-স্বল্প শুনতে ভালো লাগে । আমারও লাগতো । তারপর তোদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে , আই মিন , সোনু দা আমাদের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে, আমি তোর অবস্থা দেখেছিলাম । সো মাচ প্যাথেটিক। এখনো আমার ভাবলে কষ্ট হয় । তুই কিছুই বুঝিস নি, না বুঝে সম্পর্কটায় নিজেকে ভীষণ ভাবে ইনভলভ করে ফেলেছিলি । তুই যে পরিমাণ কষ্টটা পেয়েছিলি , সেটা হয়তো নরমালি কেউ ব্রেকআপ হওয়ার পর পায়না । অন্তত আমি আমার জীবনে সেরকমভাবে আর কাউকে কষ্ট পেতে দেখিনি, শুনিওনি । ইমোশনাল ড্যামেজ তোর এতটাই হয়েছিল, তারপর থেকে তুই সেই এপিসোডটাকে জীবন থেকে আর বাদ দিতেই পারলিনা । ওভারকাম করে উঠতেই পারিস নি , দ্যাখ । প্রেমের ওপর বিতৃষ্ণা চলে এলো, বিয়ের ওপর এলো। একজন মহিলা সিঙ্গেল থাকার ডিসিশন নিতেই পারে , সেটা তার নিজস্ব ডিসিশন । একদম নিজস্ব । কারো সেখানে কিছু বলার নেই । থাকতে পারে না । আর আমি সেই ডিসিশনটাকে পার্সোনালি শ্রদ্ধা করি । কিন্তু সেটা তার ভালো থাকার জন্য হবে। প্রত্যেকটা মানুষ জীবনে ভালো থাকতে চায় , ভেবে দ্যাখ । তুই যদি ভাল থাকার জন্য সিঙ্গেল স্ট্যাটাসটাকে বেছে নিতিস, আমার কিচ্ছু বলার ছিল না । কিন্তু তুই একটা বিটার এক্সপেরিয়েন্স এর জন্য এরকম ডিসিশনটা নিলি । তোর কাছে ওই ব্যাপারগুলো সবই অর্থহীন হয়ে গেল। বিয়ে করে একবার দেখতে তো পারতিস , হয়তো কিছু অর্থ খুঁজে পেলেও পেতিস। সব মানুষ কি এক ধাঁচের হয় ? সোনুদার ধাঁচ সম্পূর্ণ আলাদা । তোর জন্য একদম অন্যরকম একটা ধাঁচের মানুষ চাই । হয়তো বিয়ে করে পেতিস সেটা । তারপরে এডজাস্টমেন্ট না হলে ডিভোর্স করে দিতিস । একটা এক্সপেরিমেন্টে লাইফে যদি রং আউটকাম চলে আসে, তাহলে মানুষ কি আর একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখবে না? বেশ, বিয়ের কথা না হয় বাদই দিলাম । সেটা করিস , না করিস, করলি না .. ঠিক আছে । সোনু দা , মানুষটাকে তোর মনের ভেতর থেকে ঘেন্না করা উচিত তরু দি। না , এজন্য নয় যে, ও তোর সাথে একটা ক্যাজুয়াল রিলেশনশিপে জড়িয়ে ছিল বা হি ডিসিভড্ ইউ । এক একজনের কাছে সম্পর্কের অর্থ এক এক রকম হয় । তার কাছে সম্পর্কের অর্থ ঐরকমই । সেটাকে আমি ভালো-মন্দ কিছুই বলছি না । সেটা ওর নিজস্ব পারসেপশন । কিন্তু তোর ওকে ঘেন্না করা উচিত একটা কারণেই যে , ও তোকে প্রতি পদে ছোট করেছে । তখন আমি ছোট ছিলাম । তাই অত কিছু বুঝতে পারতাম না । তবে তখনও তোর কাছে কিছু কিছু ঘটনা বা কথা শুনে আমার মনে হতো, ও তোকে তোর প্রাপ্য সম্মানটা একেবারেই দেয় না । আর এইখানেই তোর ওকে ঘেন্না করা উচিত। একটা মানুষ তোকে ছোট করেছে । ছোট চোখেই দেখে সে তোকে বরাবর । সে নিজেও , আ্যজ এ হিউম্যান বিং , যে খুব ভালো মানসিকতার পরিচয় রাখতে পেরেছে, তেমনটা নয় । অ্যারোগান্ট একটা সেল্ফ সেন্টার্ড মানুষ। তাহলে তুই তাকে ঘেন্না করতে পারবি না কেন ? মন খুলে ঘেন্না কর তো , তরুদি । সোনু দা হয়তো ওর কাছের মানুষদের কাছে, ওর ছেলের কাছে , সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তোর কাছ থেকে ও ঘেন্না ছাড়া আর অন্য কিছুই পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না । মন খুলে ঘেন্না কর । দেখবি, মনের মধ্যে ওই সোনু দা রিলেটেড যা যা গ্লানি বা আনইজি ফেনোমেনা মেমোরিতে রয়ে গেছে আজও, সেগুলো অনেক সহজে ডিলিট হয়ে যাবে । ফ্রি হয়ে যেতে পারবি অনেকটা তুই । সেই কারণেই এতগুলো কথা তোকে বলা ।”
বান্টি গুনগুন গুনগুন করে আরো অনেক কথাই বলে যেতে লাগলো । আমার মাথায় কিছু ঢুকছিল, কিছু ঢুকছিল না । ছেঁড়া ছেঁড়া অতীতের অনেকগুলো স্মৃতি ঘুরে ফিরে আসছিল সাইক্লিকাল অর্ডারে । সীমাহীন খারাপ লাগার মধ্যে ছেঁড়া ছেঁড়া ছবিগুলোকে ঠিক সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে পারছিলাম না । ঘন্টাখানেক ধরে বান্টি অনেক কথাই বলল । ওর নিজের কথা, হাজবেন্ডের কথা , ছেলেমেয়ের কথা । আমি ‘হ্যাঁ হুঁ’ করে শুধু সাড়া দিচ্ছিলাম । হয়তো ও এত বছর পর আমাকে পেয়ে কথা বলার ঝোঁকে এই কথাগুলো বলে যাচ্ছিল । তাই অতটা লক্ষ্য করেনি। নয়তো বুঝতো, আমি ওর কোনো কথাই শুনছি না । শুনেও না শোনা যাকে বলে। একটা সময় একটা সম্পূর্ণ হাই তিন-চারটে ইন্সটলমেন্টে তুলতে তুলতে মুখের সামনে ডানহাতটাকে নিয়ে গিয়ে জড়িয়ে জড়িয়ে বলল ,
— ঘুম পাচ্ছে রে তরু দি । আজ ঘুমোলাম । তুইতো এখানেই আছিস । দেখি আমাকেও হয়তো এখনো মাসখানেক থাকতে হবে । আবার একদিন জমিয়ে আড্ডা দেবো কেমন ?
বালিশে মাথা রেখে ও পাশ ফিরে শুলো। ইনস্টলমেন্টের শেষ দফাটা সেরে নিয়ে বলল , গুন্নাইট !
— গুড নাইট !
বান্টি ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার সামনে একটা অনন্ত রাত পড়ে রয়েছে । এইরকম ‘অনন্ত রাত’ আমার জীবনে বেশ কিছু এসেছে । এক সময় পরপর এইরকম না ঘুমানো ‘অনন্ত রাত’ আমি জেগে কাটিয়েছি। বান্টি ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাদা । আমিও ছেঁড়া ছেঁড়া ছবিগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছি । সোনুদার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে সেই অভিসারের রাত পর্যন্ত প্রতিটা দিন, প্রতিটা স্মৃতি, প্রতিটা ঘটনা, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রিক্যাপ করতে খুব ভালো লাগে । সারাজীবনে বহুবার করেছি , অগুন্তি । সময় পেলেই করেছি । এমনকি অসময়েও করেছি । যখনি করেছি মনের মাঝে কোকিল ডেকে উঠেছে , ভরা বসন্তকাল । কিন্তু সেই যে সেদিন রাতে , মাঝরাতের পরে আমি ফিরে এলাম ‘রায় ভিলা’য় মাথা নিচু করে , হাত দুটো ঠান্ডা , অসাড়.. পা কাঁপছে .. , তারপরের যে সমস্ত ঘটনা, সেগুলো মনে করা তো দূর , আপ্রাণ ভুলে থাকতে চেয়েছি । কিন্তু ভুলে যতই যেতে চেয়েছি , ঘটনাগুলো আমাকে অশরীরীর মতো তাড়া করেছে । পালাতে চেয়েছি , ভুলতে চেয়েছি , কিন্তু সেইসব দগদগে স্মৃতি আমাকে ছেড়ে যায়নি । মনে পড়লেই হিমশীতল ঠাণ্ডা অনুভূতি হয় । শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে যায় । ভয় করে রীতিমতো । যেন একটা হরর স্টোরি আমার লাইফের –
সেই সেদিন রাতে ফিরে আসার পর যখন জানতে পারলাম, বাড়িতে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে, সবাই জানতে পেরেছে আমি বাড়িতে নেই , তখন কাঠের মূর্তির মত নিশ্চল হয়ে যেতে চেয়েছিল পা দুটো । তবুও টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম । তখনই আমাকে দেখতে পেয়ে কাকু আর কাকিমাকে ডেকে বসেছিল পূর্ণিমা মাসি । আমি দাঁড়িয়ে আছি লজ্জা আর গ্লানির আল্পস্ মাথায় নিয়ে । ভিসুভিয়াসের লাভা উদগীরণের আশঙ্কায় একটা করে মুহূর্ত গুনছি । ভামিনী কাকিমা এগিয়ে আসছে আমার দিকে। একেবারে সামনে চলে এসেছে ।
গঙ্গোত্রীর সমস্ত শৈত্য ঝরে পড়ল কাকিমার গলায় ,
— এত রাতে কোত্থেকে ফিরলে ! কোথায় গেছিলে ?
আমার ভেতরের সমস্ত উষ্ণতা তখন আটলান্টিকের হিমবাহ হয়ে গেছে । বরফ .. শুধু বরফ ! সেই শীতলতা কাটিয়ে একটা বাক্যও মুখ ফুটে বলতে পারলাম না ।
এইবার ভামিনী কাকিমার চোখে থর মরুভূমির মধ্য গগনের সূর্য । গলে গলে পড়ছে তরল বালি । কোথাও কোন আশ্রয় নেই । চোখের দিকে তাকানো যায়না, ঝলসে যায় ।
আমার আলুথালু চেহারা, অগোছালো পোশাক-পরিচ্ছদের দিকে সেই ঝলসে যাওয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিয়ে ভামিনী কাকিমা আবার মুখ খুললেন । তবে গলায় সূর্যের গনগনে আগুনের ছিটেফোঁটাও নেই । ভিসুভিয়াসের লাভা উদগীরণও নেই । সেখানে শুধুই গঙ্গোত্রীর বরফ-কঠিন শীতলতা । এই মূর্তি আমি চিনি , খুউব চিনি । আর , পাহাড়ের দুর্গমতম খাদে নিশীথ রাতে, চাপ চাপ অন্ধকারের মধ্যে, পা ফস্কে পড়ে যাওয়ার চরমতম মুহূর্তের চেয়েও বেশি ভয় করি !
কাকিমা নিঃশব্দে তর্জনী দিয়ে সিঁড়ির পথ-নির্দেশ করলেন ।
বললেন , তুমি নিজের বেডরুমে যাও । আমি যাচ্ছি। সেখানে গিয়েই যা কথা হবার হবে ।
আমি উঠে এসেছিলাম নিজের বেডরুমে । ভামিনী কাকিমাও কিছুক্ষনের মধ্যেই এসেছিলেন সে ঘরে । গলার শীতলতা নামাতে নামাতে একসময় ক্রায়োপ্রিজার্ভেশনের কাছাকাছি টেম্পারেচারে নামিয়ে এনেছিলেন । তবুও না । আমিতো বলিনি । আমি কিছুতেই বলিনি, কোথায় গিয়েছিলাম । শুধু অবশ মাথার নিউরনগুলোকে কাজে লাগিয়ে ভাবার চেষ্টা করছিলাম , আমি যে ঘরে নেই , এটা এত তাড়াতাড়ি চাউর হয়ে পড়ল কি করে ? বান্টি কি ঘুম থেকে উঠে দেখেছিল আমি তার পাশে নেই ? খুব সম্ভবত তাই হবে। হয়তো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখেছিল , আমি যখন ফিরে আসিনি তখন খুঁজেছে আমায় । তারপরে হয়তো বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যেতে ঘাবড়ে গিয়ে কাকু কাকিমাকে বলেছে । কিংবা অন্য কিছুও হতে পারে । কি হয়েছে সেটা বড় কথা নয় । কি হতে চলেছে সেটাই বড় কথা ।
এবং, যা হল সেটা আমার জন্য সাংঘাতিক। বাবা-মাকে জরুরি তলব করে ডেকে পাঠানো হলো। আমি জানি , আমার কোন একটা সিক্সথ সেন্স বলছে, আমি না বললেও কাকু-কাকিমা জেনে গেছেন আমি কোথায় গিয়েছিলাম । কিভাবে জেনেছেন , আমি জানিনা । তবে জেনেছেন । ঠিক দু’দিনের মাথায় বাবা-মা এসে পৌঁছল । এই দুটো দিন লজ্জার মাথা খেয়ে কাউকে নিজের মুখটা দেখাতে পারিনি , কারোর মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারিনি । প্রথম দেখলাম, বাবার মুখটা লজ্জায় নিচু হয়ে আছে । আমার ভেতরের সমস্ত গ্লানি যেন বাবা নিজের মধ্যে শুষে নিয়ে কেমন একটা হয়ে গেছে ।
আমার চোখে চোখ পড়তে সেদিন বাবা একটাই প্রশ্ন করেছিল , এই করলে তুমি এখানে এসে !
সেই প্রথম বাবা আমাকে ‘তুমি’ করে বলেছিল । আর কিছুই বলেনি । তবে ওইটুকু কথার মধ্যে যা ছিল, তা মেপে শেষ করা যায় না । দূরত্ব ছিল , অন্তহীন দূরত্ব । আমি বুঝতে পেরেছিলাম , বাবা নিজেকে আমার থেকে এক ঝটকায় কত শত, হাজার, লক্ষ , কোটি মাইল দূরে সরিয়ে নিয়েছে , কিংবা আলোকবর্ষ !
আমি দোতলায় নিজের বেডরুমে ছিলাম । নিচের তলায় বসেছিল ইম্পর্টেন্ট মিটিং । মিটিং এর বিষয়বস্তু অবশ্যই আমি । আর একজনকেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল সেখানে , সোনু দা । সেখানে কি কথাবার্তা হয়েছিল আমি জানি না । তবে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলেছিল মিটিং । একটা সময় ভামিনী কাকিমা নিজে এসে আমাকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে গেলেন সেই ঘরে । একবারই ঢুকেছিলাম আমি কয়েক মিনিটের জন্য । বাবা সোফার ওপর বসেছিল। ঠিক তার সামনা সামনি রাখা একটা টুলের ওপর আমাকে বসতে বলা হলো । আমি দেখলাম, বাবার ঘাড় হেঁট ।
আমি বসতে, অজিত কাকু বাবাকে বললো ,
— নে ! তোর কি জানার আছে, জেনে নে মেয়ের কাছে।
বাবা আমার দিকে তাকালো । সে চাউনিতে কি ছিল আমি ঠিক বলতে পারব না । তবে এক পরাজিত বাবা হওয়ার গ্লানিবোধ অনেকখানি ছিল ।
বাবা বলল, সেদিন রাতে কি তুই ম্যানেজারের বাংলোয় গিয়েছিলি ?
পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল আমার প্রশ্ন শুনে। ঘরের মধ্যে অজিত কাকু রয়েছেন , ভামিনী কাকিমা আছেন, মা আছে, সোনু দা বসে রয়েছে ঠিক বাবার সোফার সঙ্গে সমকোণে রাখা অন্য একটা সোফায়, সবচেয়ে বড় কথা বাবা রয়েছে । বাবার সামনে এই চরম সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই । আবার , সোনু দা থাকতে এই সাংঘাতিক কথা আমি স্বীকার করি কী করে ? চুপ করে রইলাম । গা গুলাচ্ছে , মাথা ঝিমঝিম করছে। গা এতটাই গুলোচ্ছে যে , মনে হচ্ছে শরীরের ভেতর রক্তমাংস-অস্থিমজ্জা সবকিছু দ্রবীভূত হয়ে যাচ্ছে । কিছু বলতে পারছিনা আমি । গলা দিয়ে কোন স্বরই ফুটে বেরোচ্ছে না ।
বাবা আবার প্রশ্ন করল , আমার দিকে তাকা । মুখ তোল্ । বল্ , সেদিন রাতে কি তুই সেখানে গেছিলি ?
বাবার দিকে তাকাতে পারিনি । তবে ঘাড় হেঁট করেই মাথাটাকে ওপর-নিচে করে জানিয়েছিলাম , আমি গেছিলাম সেখানে । বাবা ঘাড়টাকে ঝুঁকিয়ে নিয়েছিল। আমি চাইনি বাবার দিকে একবারও, তবু বুঝেছিলাম বাবা মেয়ের গ্লানিতে গ্লানি-লিপ্ত ।
ঘাড় হেঁট করেই ভামিনী কাকিমার উদ্দেশ্যে বলেছিল , বৌদিমণি , ওকে এখান থেকে নিয়ে যান ।
ফিরে এসেছিলাম নিজের ঘরে । ঘরের তাপমাত্রা তখন হিমাঙ্কের নিচে । আর কেউ বুঝবে না , আমিই শুধু বুঝতে পারছিলাম । বরফ পড়ছিল । চাপ চাপ বরফ ! আমি সেই বরফের কফিনের নিচে শুয়েছিলাম । ওপর নিচে জমাট বরফ । আমার মৃতদেহে শ্বাস-প্রশ্বাস বইছিল । কফিন বুনছিল আমার সেই ঘরটা। ‘রায়ভিলা’র দোতলার আমার সেই বেডরুমটা –
সেদিনই সন্ধ্যার ট্রেনে বাবা-মা আমাকে নিয়ে ফিরে এসেছিল পুরুলিয়ায় । একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে ধরে ঘুরতে থাকা একটা গ্রহ কিংবা উপগ্রহ কিংবা অ্যাস্টেরয়েড .. তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অন্য একটা ব্রহ্মান্ডে । ফিরে এসেছিলাম আবার মাস তিনেক পরে । কলেজে ফলস মেডিকেল সার্টিফিকেট সাবমিট করা হয়েছিল , অ্যাবসেন্ট থাকার কারণ হিসেবে । ফিরে আমায় আসতেই হতো । ফাইনাল ইয়ার চলছিল তখন । পরীক্ষা বাকি ছিল । কিন্তু ফিরে যখন এসেছিলাম , তখন আমার সেই পরিচিত কক্ষপথ আর নেই। সব টালমাটাল অবস্থা । কোনো এক মহাশক্তিশালী ধুমকেতু এসে যেন পুচ্ছ সঞ্চালনে কেমন এলোমেলো করে দিয়েছে ।
আমি নিজের কক্ষপথটাই খুঁজে পেলাম না –
কিংবা নিজেকেই-
কে জানে – !
ক্রমশ..
©®copyright protected
এক-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/978775899579141/
দুই-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/980083989448332/
তিন-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/981378992652165/
চার-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/983543179102413/
পাঁচ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/986002805523117/
ছয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/987404668716264/
সাত-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/989485091841555/
আট-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/991102821679782/
নয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/993099491480115/
দশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/994279738028757/
এগারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/995634347893296/
বারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/998832147573516/
তেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1000733104050087/
চোদ্দো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1002718000518264/
পনেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1004549847001746/
ষোল-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1007202950069769&id=248680819255323
সতেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1009015169888547/
আঠারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1011129543010443/
উনিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1013312572792140/
কুড়ি-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1015118655944865/
একুশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1017814589008605/
বাইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1019125995544131/
তেইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1021798458610218/
চব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1024967944959936/
পঁচিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1031476470975750/
ছাব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1034632350660162/
সাতাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1038754843581246/
আঠাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1046967802759950/
উনত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1048831039240293/
ত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1051696202287110/
একত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1053606998762697/
বত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1060747584715305/
তেত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1064517157671681/
চৌত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1073169890139741/
পঁয়ত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1075303099926420/
ছত্রিশ-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1077175089739221&id=248680819255323
সাঁইত্রিশ-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=426810745740602&id=100052350402509
আটত্রিশ-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=431076141980729&id=100052350402509
ছবি : সংগৃহীত