#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®
একত্রিশ
( আগের অধ্যায়গুলোর লিংক অধ্যায়ের শেষে দেওয়া হল)
আমি সেদিন সমাজ , সংসার, সংস্কার, সবকিছুর বাধা অতিক্রম করে ছুটে গিয়েছিলাম। কিভাবে বাংলোর পিছনের দিকের খিড়কি গেট খুলে, ঝোপঝাড় পেরিয়ে ম্যানেজারের বাংলোয় এসে পৌঁছেছিলাম জানিনা । আজও সমস্ত স্মৃতি ভীষণরকম টাটকা । পেছনে তাকালে মনে হয়, এই তো কয়েক মাস আগে ঘটে যাওয়া , জীবন্ত । তবুও মনে করতে পারি না, সেইটুকু যাত্রাপথ । যদিও খুবই কাছে, তবুও সে যেন আমার সাগর-লঙ্ঘন । মাথার মধ্যে ঘন্টা বেজে চলেছে, ওই আলোর উৎসের ঘরটায় আমায় পা রাখতে হবে । সেখানে আমার সোনুদা আছে। সে আমায় ডাকছে । এ আমার নিশুতি রাতের অভিসার! আমি তখন আর আমার মাঝে নেই , শ্রীরাধিকায় রূপান্তরিত হয়েছি । পায়ে নুপুর বাজে, বাতাসের বেগে ওড়না ওড়ে, বুকের ভার অসহ্য লাগে..
সমস্ত শরীরটাই ভারে পরিণত হয়েছে । কখন আমার এই শরীরের ভার আমি তার ওপর ছেড়ে দেব? সে তার নিজের মতো করে বীণায় সুর তুলবে?
একসময় সেই সাগর-লঙ্ঘন সমাপ্ত হল । পৌঁছে গেলাম বাংলোর গেটে। নিঃশব্দে গেট খুললাম । বাতাসের উপর পা রেখে এগিয়ে চললাম সদর দরজার দিকে । ম্যানেজার কাকু নেই । উনি এই সময়ে দু তিনটে দিন থাকবেন না জেনেই আজকের দিনে আসতে বলেছে সোনুদা আমায় । কপাটের ওপর হাত রেখে লঘু হাতে কড়া নাড়লাম । কলিংবেল নয় , খুট খুট করে দরজার কড়া নড়ে উঠলো । শব্দ করা বারণ যে । দরজা খুলল না । বুক দুটো হাপরের মতো উঠছে নামছে , এক দেড় ইঞ্চি গতিপথে বিচরণ করছে । আবারও নাড়লাম কড়া। এবার ওদিক থেকে খুট করে একটা শব্দ হলো । বুঝলাম দরজা খুলছে। আমার অভিসার পথ আর মাত্র কয়েকটা পা’ বাকি রয়েছে। খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে যেতে হবে ওর বেডরুম পর্যন্ত। ওই ঘরটা, যেটার আলো জানলা দিয়ে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম।
দরজা খুলে গেল । দরজার ওপাশে সোনুদা । আমি ওর স্যান্ডেল পরা ফর্সা পায়ের আঙ্গুলগুলো দেখতে পাচ্ছি । ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা । লজ্জার ঝড় বয়ে যাচ্ছে যে । কিছুতেই আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারবো না ।
— এসো। কুইক-
কথা বলল ও, ফিসফিসিয়ে।
আমি চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম । পেছনে খুট করে শব্দ হলো। বুঝলাম ভেতর থেকে দরজা বন্ধ হল। ও ঘরে পরার স্যান্ডেলটায় হাল্কা শব্দ তুলে সামনে সামনে চললো । আমি এক হিমালয় লজ্জা আর সংকোচ নিয়ে ওর পেছন পেছন । পা দুটো অসম্ভব ভারী লাগছে। এগোতেই চাইছে না । টেনে টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে । এতক্ষণ তো বেশ হাওয়ায় ভাসছিল । হঠাৎ করে এত ভারী কেন হয়ে গেল ? অভিসার কক্ষ যত এগিয়ে আসছে ততোগুন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আমার ওপর কাজ করছে । শরীরের ওজন এখন যেন দশগুণ বেড়ে গেছে ।
কোথায় যাচ্ছিস তরু?
কি করছিস তুই ?
এটা কেন করছিস ?
এরপর কি হবে?
মুখ দেখাতে পারবি?
সমাজ-সংসারের সমস্ত কলঙ্ক এক রাতের মধ্যে মাথায় চাপিয়ে নিয়ে এরপর তুই বাঁচবি কি করে?
চলে এলাম ওর বেডরুমে। টেবিল ল্যাম্পটা ও বন্ধ করে দিয়েছিল । ঘরের মধ্যে এখন শুধু নীলচে একটা রাতপরীর দেশের আলো জ্বলছে । আমি ঢুকতে ও ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিল । এই ঘরে অনেকবার এসেছি সময়ে-অসময়ে। তবে আজকের মত অ-সময় কখনই ছিল না । আর আজকের মত অপরিচিতও কোনোদিন লাগেনি ঘরটা। ঘরের আনাচে-কানাচে সর্বত্র যেন অদ্ভুত এক অপরিচিত গন্ধ লেগে রয়েছে । সেই নীল আলোয় ও আমার সামনে এসে দাঁড়ালো ।
এতক্ষণে মনে হল , আমার জীবনের প্রথম অভিসারের রাত্রিতে কোনো সাজসজ্জাই করা হয়নি । ভেবে রেখেছিলাম অনেক কিছুই। নীল রংয়ের গাউন প্যাটার্নের অনেকটা ঘের দেওয়া একটা আনারকলি স্যুট আছে আমার , সেইটা পরে আসবো। কপালে টিপ , চুল খুলে রাখবো , ওর নিঃশ্বাসের গন্ধে চুল উড়বে । কিন্তু পরিকল্পনামাফিক কিছুই হয়না । মানুষ এক কল্পনা করে , বাস্তবে আর এক ঘটে। বান্টি আমার ঘরে শুতে চলে আসার সাথে সাথেই আমার মাথাটা গেছিল গুলিয়ে । কি করে ঘর থেকে বেরিয়ে এখান পর্যন্ত আসব, সেটাই মূল চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এতক্ষণে খেয়াল হলো , সেই অসাধ্যসাধন যখন করে ফেলেছি , তখন নিজেকে বড়ই সাদামাটা লাগছে । এই নীলচে মোহময় আলোয় আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ ভালোবাসার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে বড় দীনহীন মনে হল । পরনে একটা নাইট স্যুট , চুলটা পিছনে গার্ডার জড়ানো , সামনে অনেকগুলো চুল এলোমেলোভাবে খাপছাড়া ঝুলছে, গায়ে কোন সুগন্ধি লাগানো হয়নি । জীবনে প্রথম মিলনের জন্য কামনার বশেই কি শুধু নিশুতি রাতে ছুটে চলে এসেছি ? নিকট মিলন মুহূর্তগুলোকে সুন্দর করে তোলার কোন চেষ্টাই করিনি ।
ও খুব আস্তে করে বলল , ইস ! এভাবে চলে এলে ? আই এক্সপেক্টেড সামথিং এলস্ –
ইস ! দ্বিগুণ লজ্জা আর সংকোচে আমার আমার ঘাড়টা হেঁট হয়ে ঝুঁকে পড়ল বুকের ওপর ।
কোমরের কাছে বেল্টের ফাঁস । সেটায় একটা টান দিতেই ওপরের নাইট স্যুটটা খুলে গেল। ভেতরে একটা সুতির পাতলা নাইট গাউন । ও আমার কাছে এগিয়ে এসেছে । আমাকে জড়িয়ে ধরেছে সর্বশক্তি দিয়ে । আমি ওর ঝড়ের মত নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছি । ঘাড়ের কাছে ওর ঠোটের স্পর্শ, দাঁতের হালকা কামড়, কানের লতিতে চাপ । রাত পোশাকের আড়ালে থাকা বুকদুটো এখন ওর দু’হাতের তালুর ওপর । চাপ বাড়ছে, কমছে .. । ও আমার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে । আমি মাথাটা এলিয়ে দিয়েছি ওর কাঁধের ওপর । শরীরের ভার বহন করার ক্ষমতা আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই এতটুকুও। আস্তে আস্তে ওর হাতদুটো নিচের দিকে নেমে গিয়ে রাত পোশাকটাকে একটানে মাথা গলিয়ে খুলে ফেলল । এখন আমার শরীরে রয়েছে বলতে শুধু দুটো অন্তর্বাস । ওর নিঃশ্বাসের বেগ দ্রুত হচ্ছে । দ্রুত, আরো দ্রুত । ও নিজের পাতলা টি-শার্টটা খুলে ফেলেছে। সামনে চলে এসেছে এখন । ওর লোমশ বুকের ওপর আমি মাথা রেখেছি। পুরুষালী গন্ধটা আমাকে উন্মত্ত করে দিচ্ছে। ও আমার সমস্ত শরীরটাকে আপ্রাণ মিশিয়ে ফেলেছে নিজের শরীরের সাথে । আমি বুঝতে পারছি ও ভীষণভাবে উত্তেজিত । উত্তেজিত অঙ্গের ছোঁয়া পাচ্ছি যে । ও খুলে ফেলতে চাইলো আমার উর্ধাঙ্গের অন্তর্বাস । উত্তেজিত হাতে পারল না । আমি সাহায্য করলাম। এবার খুলেছে । ওর স্পর্শে, ওর উষ্ণতায়, ওর সান্নিধ্যে বেজে চলেছে আমার শরীর , আমার মন , আমার আত্মা । সুখ । এই কি তবে সুখ ? অবশ্যই । এ’ই সুখ-সমুদ্রের আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারে , এমন জীব পৃথিবীতে কোথায় ? সেই কারণেই তো এই ইন্দ্রিয়সুখকে জয় করতে গেলে সাধনা করতে হয় । ‘সুখ যারে কয় সকল জনে, বাজাই তারে ক্ষণে ক্ষণে..’ । আমি সুখ বাজিয়ে চললাম। আমার সুখের সাতটা সুর ওর হাতে, মধ্যমে , চড়ায়, কখনো খাদে, বেজে চলল । পাশের অন্ধকার চা বাগান থেকে সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে যেন হাজার হাজার প্রজাপতি আনাচ কানাচ বেয়ে ঢুকে পড়ল ঘরের ভেতর । প্রজাপতির মেলা। একটা সময় বুঝলাম আমার শরীরটাও একটা প্রজাপতি হয়ে গেছে । ডানা মেলেছে । ভেসে চলেছি আমি কোন অনন্ত সুখ উড়ানে ।
ও নিজেই নিজেকে সম্পূর্ণ অনাবৃত করে ফেলেছে । তার কয়েক সেকেন্ড পরে আমিও সম্পূর্ণ অনাবৃত হলাম ওর হাত ধরে। ও আমাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসে শুইয়ে দিল শয্যার ওপরে। আমি এখন চোখ বন্ধ করে আছি । আমি আজকে এই চরম সুখের মুহূর্তগুলোর বেশিরভাগটাই চোখ বুজে রয়েছি। ওর সেই পায়ের পাতা ছাড়া আর বিশেষ কিছু দেখিনি। ওকে অনুভব করেছি , চোখে দেখিনি । আমি চোখ বন্ধ করেও জানি ও আমাকে এই নীলচে মোহময় আলোয় দেখছে। নিবিড়ভাবে দেখছে। ওর আঙুলগুলো ঐ আমার নাভি ছুঁলো । তারপর, আরও নিচের দিকে এগিয়ে চলল ।
তারপরে..
হঠাৎই..
ও একটা কথা বলে উঠলো ।
বলল, ইস! তুমি ক্লিন করো নি ! এইটুকুও জানো না ? টুডে ইজ আওয়ার ফার্স্ট নাইট । তুমি এভাবে চলে এসেছো ?
কল্পনার উড়ান থেকে বাস্তবে ফিরে এসে ওর কথাগুলো বুঝতে আমার বেশ কিছুটা সময় লাগলো। কি বলতে চাইছে? কি ক্লিন করার কথা বলছে? আমি তখন বয়সে যুবতী হলেও, ওর হাত ধরে সবেমাত্র মনের কৌমার্য ভাঙছে একটু একটু করে । যৌনতা সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই । ফলে ও ঠিক কি বলতে চাইল , বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল আমার । পিউবিক হেয়ারের কথা বলছে কি? পরিষ্কার করা মানে, কি করতে হতো আমায় ?
ও আস্তে করে কেটে কেটে কঠিন স্বরে বলল, মিনিমাম হাইজিন যে মেন্টেন করতে হয় , সেটুকু আইডিয়াও তো নেই দেখছি তোমার ।
ও কথাগুলো খুব আস্তে আস্তে বললেও আমার মাথার মধ্যে ঝংকার তুললো। এক নিমিষে যেন সমস্ত কল্পনার জগৎটাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিল। আমি বাস্তবের কঠিন মাটিতে ধাক্কা খেয়ে পড়লাম । আর তার সাথেই অসম্ভব ছোট মনে হলো নিজেকে। গা ঘিনঘিন করে উঠলো । কল্পনার চোখে দেখতে পেলাম , আমার সমস্ত শরীরটা যেন কালো লোমে ভরে উঠেছে । একটা লোমশ ক্লেদাক্ত নারী আমি । এই কি আমার স্বরূপ ? কই, আমিতো শ্রীরাধিকা নই ! আমার দেহে-মনে কোথাও তো কোনো সৌন্দর্য নেই ! আমি নির্মমভাবে অসুন্দর । সংসারের সমস্ত পাঁক গায়ে মেখে আজকে এই নিশুতি-রাতে আমি ছুটে এসেছি । এই রাতের কথা যদি জানাজানি হয়ে যায়? অজিত কাকু.. ভামিনী কাকিমা .. বান্টি.. এরা সবাই জানবে আমি ব্যভিচারিণী ? কয়েক মিনিট আগে পর্যন্ত যা ছিল পবিত্র নির্মল এক সুখানুভূতিতে ভরা, এখন নিমেষের মধ্যে তা মনে হল ব্যভিচার ! অজিত কাকু, যিনি কিনা এতোখানি বিশ্বাস করে স্নেহের বশে আমাকে নিজের মেয়ের মতন এনে রেখেছেন এখানে, তিনি জানবেন আমি ব্যভিচারিণী ? অজিত কাকুর কাছ থেকে বাবা জানবে ! বাবা জানবে তার তরু রাতবিরেতে নিজের শরীরের জ্বালা মেটাতে হানা দিয়েছিল পাশের বাংলোয় ?
ছি ছি ছি !
এই কি আমি !
না না না..
আমি এমন নই।
আমি এমন হতে চাইনা । কখনো চাইনা । আমি তরু । বাবা আমি তোমার তরু । আমি তোমার তরু হয়েই থাকতে চাই ।
কিন্তু , তরু তা কি আর সম্ভব রে ?
তুই তো ব্যভিচারিণী হয়েই গেছিস।
তুই তো মাঝরাতে পুরুষ মানুষের শোয়ার ঘরে ঢুকেই পড়েছিস । তার বিছানায় এই যে শোয়ানো রয়েছে তোর সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরটা । তার ওপর আনাচে-কানাচে খেলা করে বেড়াচ্ছে যে একজন পুরুষের হাত । তা কিভাবে তুই অস্বীকার করিস ?
পুরুষ ! কিসের পুরুষ ? ও তো সোনু দা ! ওকে যে আমি ভালোবাসি !
তুই যাকে ভালোবাসিস , যার হাতে নিজের সমস্তটা তুলে দিতে এসেছিস, সঁপে দেওয়ার পর তবে কেন নিজেকে এমন ক্লেদাক্ত লাগছে তোর? কেন এমন হচ্ছে তরু ? সত্যিটা আসলে কি ? তুই কি তবে আসলে তোর সোনুদার তরু নোস.. তোর বাবার তরু-মা’ও নোস ..
তুই একজন ব্যভিচারিণী!
মাথার মধ্যে গোলমাল হয়ে গেল আমার । হঠাৎ কোন এক দুঃস্বপ্ন থেকে চমকে জেগে উঠে , অন্ধকারে ক্ষীণ আলোয় হাতড়ে হাতড়ে নিজের অন্তর্বাস , পোশাক , সব পরে নিয়ে নাইট স্যুটের বেল্টে ফাঁস লাগালাম । অন্ধের মতো দরজা খুলে ছুটে বেরিয়ে চললাম সদর দরজার দিকে । দরজার খিল খুলে ফেলে অন্ধকারে ছুটতে লাগলাম নিজের বাংলোর দিকে । অসহায় ভাবে । দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে চলেছি তখন । খেয়াল নেই , আসার সময় পিছনের খিড়কি দরজা খুলে নিঃশব্দে বেরিয়ে এসেছিলাম । বাংলোর সামনের ফটফটে আলোর সীমানায় এসে পড়ার পর খেয়াল হলো, একি সর্বনাশ করতে চলেছিলাম ! আমি কি এখন সদর দরজায় বেল বাজিয়ে সকলের ঘুম ভাঙ্গিয়ে বাংলোয় ঢুকবো ! সরীসৃপের মত শরীরটাকে তখন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলতে পারলেই সুখী হতাম । কিন্তু, তা হলোনা । কিছুটা সরীসৃপের মতোই সরসরে ভঙ্গিমায় নিজেকে অন্ধকারে লুকিয়ে ফেলে আবারো নিঃশব্দে ছুটে চললাম পেছনের দিকে ।
খিড়কির দরজাটা নিঃশব্দেই খুলতে পারলাম । ভেতরে ঢুকে যখন দরজায় ছিটকিনি দিয়েছি , তখন বুকের মধ্যে কে যেন বসে হাজার হাতে হাতুড়ি পিটছে । কয়েক মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে হাঁপানির রোগীর মত হাঁপালাম । অল্প একটু ধাতস্থ হতে মাথার মধ্যে কেমন একটা রিনরিনে শব্দ শুনতে পেলাম । সেই শব্দ কি আমার মাথার মধ্যেই উঠেছে, নাকি অন্য কোথাও?
— তরুশী !
— তরু দিদি !
কেউ বা কারা কি ডাকছে আমায় ?
কান পেতে শুনলাম । না , কান পাততে যে হয়, তা নয়। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে । বেশ জোরেই আমার নাম ধরে ডাকছে । একজন নয় , একাধিক জন । মাথাটা ইন্যাক্টিভ ছিল, তাই ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারিনি । এখন বুঝলাম, শুধু ডাকছে যে তাই নয়, রীতিমতো ডাকাডাকি চলছে । উত্তেজনা মিশ্রিত স্বরে। প্রবল বর্ষণের রাতে, অন্ধকারে, প্রকাণ্ড শব্দে বাজ পড়ার মতো মাথার মধ্যে বেজে উঠলো-
আমি মাঝরাত পার করে গোপন অভিসারে গিয়েছিলাম । সেখান থেকেই চোরের মত পালিয়ে এসেছি । তবে কি আমি যে ঘরে নেই , হঠাৎ করে মাঝরাতে উধাও হয়ে গেছি, এটা এরা আবিষ্কার করে ফেলেছে ? এইটুকু সময়ের মধ্যেই ? সমস্ত বাড়িখানা মাথায় করে তুলে কি এই রাতবিরেতে আমার খোঁজ চলছে তবে? সর্বনাশ ! কি হবে ! হায় রে!
তরু! একি সর্বনাশ তুই করে ফেললি ? এক রাতের মধ্যে নিজের সমস্ত সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে ফেললি? শুধু নিজেকে নয়, তোর বাবা-মায়ের কি হবে ? বাবার ওই উন্নত মাথাটা এবার কি তবে হেঁট হবে ? সবাই তো সমস্তটাই জেনে ফেলবে ।
তখন ঠিক আর কি কি ভেবেছিলাম জানিনা । যন্ত্রচালিতের মতো পা ফেলে এগিয়ে চলেছিলাম । কোথায় চলেছি বোধহয় তাও জানতাম না। কারো সামনে পড়লে কি কৈফিয়ৎ দেব, তাও নয় । কতক্ষণ ওভাবে হেঁটেছিলাম, তাও জানিনা ।
এক সময় একটা মহিলা কন্ঠ শুনতে পেলাম , ওমা ! এইতো তরু দিদিমণি এখানে । কোথায় গিয়েছিলে গো? সবাই মিলে যে চেঁচিয়ে বাড়িখান মাথায় করছি , শুনতে পাচ্ছিলে না ?
পূর্ণিমা মাসি। ভামিনী কাকিমার বহাল রাখা কাজের মানুষ ।
— ও দিদিমণি! এইতো এখানে তরু দিদিমণি । দেখে যান গো –
আমি তখন স্রেফ একটা মূর্তি বনে গেছি । নিশ্চল মূর্তি । নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা তাও জানিনা। তবে আমি দেখতে পাচ্ছি সবকিছু । একে একে বান্টি, ভামিনী কাকিমা, অজিত কাকু সকলে নেমে এলেন !
আমার মধ্যে শ্রীরাধিকা হওয়ার সমস্ত ইচ্ছা তখন কোথায় বাষ্পীভূত হয়ে গেছে । ছিটেফোঁটাও আর অবশিষ্ট নেই। সমস্ত মনের গুমোট কালো আকাশ ঘিরে তখন প্রবল ইচ্ছা হল মা সীতার ক্ষমতার এতোটুকুও যদি থাকতো ?-
ধরিত্রী মা ! তুমি দ্বিধা হও । আমার কোলে তোমায় তুলে নাও। চিরতরে আমার অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে দাও । এই পৃথিবীতে আমায় যেন কখনো কারো সামনে মুখ আর দেখাতে না হয় –
ক্রমশ..
©®copyright protected
এক-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/978775899579141/
দুই-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/980083989448332/
তিন-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/981378992652165/
চার-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/983543179102413/
পাঁচ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/986002805523117/
ছয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/987404668716264/
সাত-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/989485091841555/
আট-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/991102821679782/
নয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/993099491480115/
দশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/994279738028757/
এগারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/995634347893296/
বারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/998832147573516/
তেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1000733104050087/
চোদ্দো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1002718000518264/
পনেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1004549847001746/
ষোল-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1007202950069769&id=248680819255323
সতেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1009015169888547/
আঠারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1011129543010443/
উনিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1013312572792140/
কুড়ি-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1015118655944865/
একুশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1017814589008605/
বাইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1019125995544131/
তেইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1021798458610218/
চব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1024967944959936/
পঁচিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1031476470975750/
ছাব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1034632350660162/
সাতাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1038754843581246/
আঠাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1046967802759950/
উনত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1048831039240293/
ত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1051696202287110/
ছবি : সংগৃহীত