Mysterious
Part -24
Romoni
ইয়ান ঘরে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বেডে শুয়ে পড়ে, তবে ঘুমায় না।
আর তায়াশা ব্যালকনিতে এসে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।
তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে।
তায়াশা নিচে এসে অবাক হয়ে যায়, কেনোনা এখন মাএ সকাল সাড়ে সাত টা বাজে, আর ইয়ান এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে না, তার ওপর আবার সারা রাত জাগার পরেও এই সময় ইয়ান ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে এসে বসে আছে।
তায়াশা ইয়ানের সামনে এসে বলে, ইয়ান স্যার আপনি এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছেন?
ইয়ান তায়াশার প্রশ্নে স্মিত হেসে তায়াশার দিকে তাকিয়ে বলে, ঘুমালাম আবার কখন?
ইয়ানের এহেন উওর এ তায়াশার মুখটা মলিন হয়ে যায়, তায়াশার নিজের মধ্যে এক অপরাধ বোধ কাজ করছে, কারন তায়াশার জন্য ইয়ান এর অনেক বেশি কষ্ট পেতে হচ্ছে, কেনোনা ইয়ান এর ভালোবাসাটা এক পাক্ষিক , আর এক পাক্ষিক ভালোবাসার যাতনা অতী তীব্র, যা তায়াশার কিছুটা হলেও জানা।
ইয়ান তায়াশাকে মন খারাপ করে ফেলতে দেখে বলে, আরে আপনি কেনো মন খারাপ করছেন কেনো, আপনি ভাবছেন আপনার জন্য আমি রাত জাগি বা খুব কষ্টে আছি?
তাহলে এই ভাবনাটা বদলে ফেলুন,কারন আমি আপনাকে ভালোবাসি ঠিকই, তবে তার জন্য যে আপনার ও আমায় ভালোবাসতে হবে তার কোনো মানে নেই, আর আমি এই কথাটা মনে রেখেই আপনাকে ভালোবেসেছিলাম,আর আমি এটাও জানতাম যে আপনার জীবনে অন্য একজন আছে, কিন্তু সে আপনাকে, কথাটা বলতে গিয়েও ইয়ান কিছু একটা ভেবে আর বলে না।
তারপর ইয়ান অর্ধেক বলা কথাটাকে এড়িয়ে বলে, আর তাছাড়াও আপনি এতোটাই কৌতুহলী আর এতো বেশি বেশি প্রশ্ন করেন, যার জন্য আমি এতোটা সময় আপনার সাথে থেকেই বিরক্ত হয়ে গেছি,আর যদি আপনিও আমায় ভালোবেসে ফেলেন তাহলে তো সারাজীবন আপনার প্রশ্নের উওর দিতে দিতে আর আপনার কৌতূহল দূর করতে করতেই আমার মস্তিষ্ক ভেঙে হাতে চলে আসবে, তাই আমার ভালোবাসাটা এক পাক্ষিক আছে এটাই ভালো আছে।
কথা গুলো ইয়ান তায়াশাকে রাগানোর জন্য এবং একটু হাসানোর উদ্দেশ্য কিছুটা দুষ্টুমির ভঙ্গিতে বলে।
আর এতে তায়াশা রেগেও যায়, তবে ইয়ানের দুষ্টুমি ভরা মুখটা দেখে তায়াশার রাগটা নিমিষেই নিঃশেষ হয়ে যায়, আর তায়াশা হেঁসে দেয়,তায়াশার সাথে ইয়ান হাসতে থাকে।
তবে ইয়ান এর কথা এড়িয়ে যাওয়াটা তায়াশার নজর এড়ায় না, তবে আজ তায়াশা কোনো প্রশ্নও করে না, কারন তায়াশা খুব ভালো করেই জানে ইয়ান স্বইচ্ছায় কিছু না বললে ইয়ানকে দিয়ে জোড় করে কিছু বলানো যায় না।
— মস্তিষ্ক ভেঙে হাতেও আসতে পারে?
আগে জানতাম না, তায়াশা কথাটা বলে উচ্চ শব্দে হাসতে থাকে।
তায়াশা আর ইয়ান কে এভাবে দেখে কায়রানা ও খুব খুশি হয়, কেনোনা অনেক দিন পড়ে তায়াশা আর ইয়ান কে এভাবে আনন্দ করতে দেখছেন তিনি, দুজনের মধ্যেই সব সময় একটা বিষন্নতার ছাপ লক্ষ্য করতেন কায়রানা, আজ সেই বিষনতার ছাপ কিছুটা হলেও মুছে গেছে।
–তোরা দুজন খাবার খেয়ে নে।
কায়রানা ইয়ান আর তায়াশার দিকে এগিয়ে এসে বলেন।
কায়রানার কথা অনুযায়ী ইয়ান তায়াশা গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে যায়, কায়রানাও ওদের সাথে যায়।
কায়রানা ইয়ান আর তায়াশাকে খাবার দিচ্ছেন।
হঠাৎ করেই কায়রানা তায়াশার কাঁধে হাত রেখে ইয়ান এর উদ্দেশ্য বলেন, ইয়ান এবার মনে হয় তায়াশাকে এই বিশাল মিথ্যা বিশ্বাস টা থেকে বের করে আনা দরকার, আর কতো সময় নিবি তুই?
ইয়ান কায়রানার প্রশ্নের প্রতিউওরে বলে, আর মাএ কিছু সময়ের অপেক্ষা মম, এতোগুলো দিন যখন তায়াশা অপেক্ষা করেছেন, তাহলে আর একটু অপেক্ষা করুক না, ক্ষতি কি?
কথা গুলো ইয়ান অনেকটা গুরুত্ব হীন মনোভাবের সহিত বলে।
ইয়ানের এমন গুরুত্বহীন উত্তর এ কায়রানা বেশ ক্রোধান্বিত হয়ে গিয়ে ইয়ান এর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।
–আচ্ছা মম তোমরা আমার কথায় সব সময় রেগে যাও কেনো?
তোমাদের মনে হয় আমি সব বিষয় এ অবিনিবেশহীন, তাই না?
আমি কোনো কিছু গুরুত্বতার সহিত ভাবি না?
অযথা-ই রহস্য বৃদ্ধি করি?
কারোর ইমোশন বুঝি না?
আচ্ছা মম আমার করা কাজের পিছনের তোমাদের অজানা দিকটা নিয়ে তোমরা কেউ ভাবতে পারো না কেনো?
আমার নেওয়া পদক্ষেপ গুলোর পেছনে তো অনেক লুকায়িত সত্যি বা অজানা রহস্যও থাকতে পারে।
আর আসলেই কি আমি কারোর ইমোশন বুঝি না?
সে বিষয়টা বিবেচনা করো না কেনো?
হ্যা, তবে একেবারেই যে আমার করা কাজ গুলোর পেছনে কোনো না কোনো কারন থাকতে পারে তা তোমারা বোঝো না তা নয়, কিছুটা বুঝতে পারো, তবে সবটা নয়, যদিও একজনের পক্ষে বিপরীত ব্যাক্তির সব কিছু সব সময় বুঝতে পারা সম্ভব না, কিন্তু তা বলে তোমরা আমায় বেশির ভাগ ক্ষেএেই ভুল বুঝবে তাও তো ঠিক না,তাই না মম?
এবার বলো তো, আমি কি কিছু ভুল বললাম?
প্রশ্ন গুলো ইয়ান খাবারের দিকে স্থির দৃষ্টিপাত রেখেই করে।
কায়রানা ইয়ান এর কথার প্রেক্ষিতে কোনো উওর দিতে পারে না, কেনোনা ইয়ান এর বলা কথা গুলোতে যথার্থ যুক্তি আছে, আসলেই তারা বেশির ভাগ সময় ই ইয়ান এর করা কাজের পেছনের সঠিক অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে না।
অপরদিকে তায়াশা শুধু এক দৃষ্টিতে ইয়ান এর দিকে তাকিয়ে ইয়ান এর বলা কথা গুলো শুনছে।
আমায় দেখার সময় অনেক পাবেন, তার আগে খেয়ে নিন, নয়তো না খেয়ে অসুস্থ হয়ে যদি জ্ঞান হারান তখন আর আমায় দেখতে পারবেন না, কারন তখন আপনার চোখটা বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ ই ইয়ান এর এহেন কথায় তায়াশা আর কায়রানা দুজনেই হেঁসে দেয়, আর ইয়ান এর ঠোঁটের কোনেও এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
ইয়ান খাওয়া শেষ করে তায়াশাকে বলে,
–খাওয়া শেষ করে আমার ঘরে আসুন।
–আচ্ছা (তায়াশা)।
|
|
|
|
|
হিডেন হাউস,
প্রায় দশ ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের একটা শুভ্র রঙের দেয়াল অবস্থিত একটা অন্ধকার কক্ষের ভেতর, আর দেয়ালটা থেকে অতি মাএায় শুভ্র রঙের আলো ছড়াচ্ছে, যার ফলে এই বিদঘুটে অন্ধকার এর মাঝেও দেয়ালটা স্পষ্ট এবং প্রজ্জ্বলিত হয়ে আছে।
(তায়াশা খাওয়া শেষ করে, ইয়ান এর কথা অনুযায়ী ইয়ান এর ঘরে যায়।
তারপর ইয়ান তায়াশাকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে, ইয়ান এর ঘর এর বাহিরের বাম দিকে হাঁটতে থাকে দুজন।
অতঃপর কিছুক্ষণ পরে এসে ইয়ান একটা ঘরের সামনে থামে, আর ঘরের বন্ধ দরজায় কিছুটা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায়।
দরজাটা খোলা মাএই ভেতর থেকে খুব তেজস্বী রশ্নি এসে পড়ে ইয়ান আর তায়াশার উপর।
তায়াশা দুই হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেলে, তবে ইয়ান স্বাভাবিক ভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
তায়াশা চোখ থেকে হাত নামিয়ে ফের সামনের দিকে তাকায়, প্রথম কিছুক্ষণ তায়াশার এতোটা তীব্র আলোতে তাকিয়ে থাকতে সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে তায়াশা ইয়ানের মতই স্বাভাবিক ভাবেই তাকতে পারে।
তারপর ইয়ান তায়াশাকে নিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে।)
তায়াশা ইয়ানের দিকে প্রশ্নতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ইয়ান নিজের চোখ থেকে শুভ্র রঙের রশ্মি নিক্ষেপ করে দেয়ালটার দিকে, আর হঠাৎই দেয়ালটাতে দু’টি অবয়ব ভাসমান হয়।
অবয়ব দুটো তায়াশার কাছে অতি পরিচিত মনে হচ্ছে, হয়তো এই অবয়ব দুটোর সাথে তায়াশার কোনো গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
ধীরে ধীরে অবয়ব দুটো………………..
To be continue…