#আজল
#পর্ব-ষোলো
৩১.
ড্রইং রুমের সোফায় বসতে বসতেই খবরটা শুনলো ফুয়াদ। মনটা খারাপ হলো ভীষন, মুখের উজ্জ্বলতা ম্লান হয়ে গেলো। কোথায় ও ভাবলো ঘরে ঢুকেই সাঁচিকে দেখবে মনভরে, তা আর হলো না! সাঁচির মা বিষয়টা খেয়াল করে মুখ টিপে হাসলো একটু-
“বাবা, তুমি ফ্রেশ হয়ে চা নাস্তা খাও, সাঁচি ততক্ষনে চলে আসবে।”
“জ্বী মা।”
সাঁচির পড়ার টেবিলে ওর জন্য আনা জিনিসগুলো সযতনে রাখলো। তারপর ফ্রেশ হতে গেল। ফ্রেশ হতে যেয়ে মনে হলো যে ও নিজের কোনো কাপড় আনেনি। কি পড়বে এখন? হঠাৎ টেবিলে নজর গেলো। একটা বই থেকে অনেকখানি কাগজ বেরিয়ে আছে। কোতুহলী হয়ে কাগজটা টানতেই চোখে পড়লো লেখাগুলো-
“জানি, আপনি পরার মতো কোনো কাপড় আনেননি সাথে। সমস্যা নেই, আমার আলমিরা খুললেই পেয়ে যাবেন আপনার কাপড়। হাতের কাছেই আছে,বেশি কষ্ট করতে হবে না।”
ফুয়াদের মুখে হাসি ফুটলো। মেয়েটা উপরে উপরে যতই কঠোর ভাব দেখাক না কেন ভিতরে ভিতরে ভালোই বাসে ওকে। তা না হলে এতো খেয়াল রাখতো না ওর। আর ওর এই কঠোরতার জন্যও তো সে নিজেও দায়ী। ফুয়াদের ও ইচ্ছে করে আবার নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে, কারো মায়ায় নিজেকে বেঁধে ফেলতে? কিন্তু বড্ড ভয়ও হয় মনের মাঝে, ও তো কারো প্রত্যাশা পূরন করতে পারে না? এবারও যদি কোনো ভুল হয়ে যায়? এমনিতেই একটা ঘা এখনো মন থেকে মুছে যায়নি। সবসময় তারই কন্ঠস্বর যেন কানের কাছে বাজে। সেটাই যেন সবসময় তাড়া করে ফিরে ফুয়াদকে। ও ভেবেছিলো সাঁচিকে বলে মন থেকে বোঝা নামাবে। নিজের করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইবে কিন্তু সাঁচি তো ফুয়াদকে ওর কথাটা শেষ করার সুযোগটাই দিলো না? ফুয়াদ মনেমনে ভাবে আজ যে করেই হোক বাকি কথাগুলো সাঁচিকে বলতেই হবে! সাঁচি শুনতে না চাইলেও জোর করে বলবে আজ।
ভার্সিটি থেকে আসতে আসতে লেইট ই হয়ে গেল সাঁচির। আজ একটা এ্যাসাইমেন্ট করে জমা দিতে গিয়েই লেট হলো। অথচ ক্লাসের পুরোটা সময় বাসায়ই মন পরে ছিলো। ফুয়াদকে দেখে না কত দিন? আজ দেখবে সেই খুশিতে ভেতর ভেতর ছটফট করছিলো। বাসায় আসতেই দেখলো পিচ্চি ভাই বোন দুটো আর ফুয়াদ গোল হয়ে বসে গল্প করছে। ফুয়াদ কিছু একটা বলছে আর সবাই হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। সাঁচি মনে মনে রাগ হলো-
” আমি নাই আর ওনার গল্প দেখো? আমার সাথে তো জীবনেও এতো হাসির কথা বলে না। মুখটা এমন করে রাখে যেন মনে হয় তিতা করলা খাইছে, হুহ!”
সাঁচি ফুয়াদকে না দেখার ভান করে ভিতর রুমে চলে যাচ্ছিলো। মা ডাকলো ওকে-
“কি রে সাঁচি! জামাই এসে কখন থেকে বসে আছে? আজই তোর আসতে দেরি হলো?”
“কাজ থাকলে কি করবো মা? ভার্সিটিতে তো আর খেলতে যাই না?”
ওর কথা শুনে ফুয়াদ মুখ টিপে হাসলো একটু। সেটা খেয়াল করে সাঁচির আরো রাগ হলো।
“আচ্ছা যাক বাদ দে। আমরা সবাই বসে আছি তোর জন্য। তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় একসাথে খাবো।”
“তোমরা বসো মা। আমি চট করে মুখ ধুয়ে আসছি।”
রুমে ঢুকতেই দেখলো টেবিলের উপর রাখা জিনিস গুলো। লাল টকটকে গোলাপ, টকলেট বক্স আর খুব সুন্দর একটা শাড়ি। খুব খুশি হলো সাঁচি, কেন জানেনা চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। প্রিয়জনের থেকে উপহার পেলে যে সুখ সুখ অনুভব হয় তাই মনে হয় চোখের জল হয়ে গড়িয়ে যায়! জিনিসগুলো সস্থানে রেখে সাঁচি চোখটা মুছে নিয়ে বাথরুমে যায়।
খাওয়াদাওয়া সেরে সাঁচি রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো। তারপর পড়তে বসলো, আসলে ওর মনটা অস্থির হয়ে আছে। খাবার টেবিলে ফুয়াদের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা যখন বলছিলো ফুয়াদ একটু অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। পরে বুঝতে পেরেছে যে বাবা মা সামনে আছে বলেই সাঁচি এভাবে কথা বলছে। ও নিজেও তারপর সাঁচির সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেছে। খাওয়া দাওয়া সেরে সাঁচি তারাতাড়ি নিজের রুমে চলে এলো। ও দিকে ফুয়াদ এখনো গল্প করছে শালা শালিদের সাথে। সাঁচির ও আসলে খুব ইচ্ছা করছে ফুয়াদের সাথে কথা বলতে! পরক্ষণেই আবার মনটাকে এই বলে প্রবোধ দিচ্ছে,তুই কেন কথা বলবি, ও নিজে থেকে না বললে? অভিমান ও হলো,ফুয়াদ একবারও বললো না ওকে বসতে। হুহ! বয়েই গেছে ওর সাথে গল্প করতে? সাঁচি মন অন্যদিকে ঘুরাতে পড়তে বসলো। কিছুক্ষণ পর ফুয়াদ রুমে ঢুকলো। টেবিলে তাকিয়ে দেখলো ওর দেওয়া গিফটগুলো ওভাবেই টেবিলে পড়ে আছে। ভ্রু কুচকে তাকালো ফুয়াদ, সাঁচি কি ওগুলো খুলে দেখেনি?
“সাঁচি, তোমার জন্য কিছু এনেছিলাম। তুমি দেখোনি কি এনেছি? ”
“কোনগুলো? ওহ এগুলো? না তো? কেন দেখবো? আপনি কার জন্য না কার জন্য এনেছেন, আমি জানি? বিনা অনুমতিতে কারো জিনিস আমি ধরি না।”
মিথ্যে বলে সাচি।
“প্লিজ,এখন দেখো না? আমায় বলতো তোমার পচ্ছন্দ হয় কিনা?”
বলতে বলতে খাটে যেয়ে বসলো ফুয়াদ। সাঁচি প্যাকেট থেকে চকলেট আর শাড়িটা বের করলো-
“হুম, সুন্দর আছে।”
বলেই আবার জিনিসগুলো রেখে পড়তে লাগলো।
“তোমার পড়াটা কি খুব জরুরী? ”
“কেন বলুন তো?”
“একটু কথা বলতাম তোমার সাথে?”
“আপনার কথা কি খুব জরুরী? জরুরী না হলে থাক? পরে শুনবো? ”
ফুয়াদ উঠে এলো, সাঁচির সামনে দাঁড়ালো। কি মনে করে ওর হাত দুটো নিজের দুহাতের মধ্যে নিলো। এই প্রথম সইচ্ছায় সাঁচির হাত ধরলো ফুয়াদ। সাঁচি একটু অবাক হয়ে তাকালো।
“আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করে কথা বলছো না আমার সাথে। প্লিজ! তুমি এমন করো না আমার সাথে! আমি আমার কথাগুলো শেষ করতে চাই, আর আজ তোমার সেগুলো শুনতেই হবে। আমার তো আর কেউ নেই যাকে আমি এগুলো বলতে পারি। এই বোঝা আমি আর নিতে পারছি না সাঁচি, প্লিজ?”
ফুয়াদের চোখে অসহায় এক অনুনয় ঝরে পরলো। সাঁচি হার মানলো সেই নজরের সামনে-
“ঠিক আছে বলুন, কি বলবেন?”
“এসো না খাটে বসি।”
সাঁচি হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় এগিয়ে গেলো, এক কোনো বসলো। ফুয়াদ বললো-
“আমি যদি চাইতাম তাহলে এসব কিছু না বলেই তোমার সাথে জীবন শুরু করতে পারতাম। কিন্তু কেন শুরু করিনি জানো?”
সাঁচি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
“কারন আমি তোমার সাথে কোনো ছলচাতুরী করতে চাইনি। আর তাছাড়া যে অপরাধবোধ আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে তার ছোয়া একদিন না একদিন আমাদের দাম্পত্য সম্পর্কে ইফেক্ট ফেলতো। এটাতো শুধু একটা শারীরিক সম্পর্ক না, তাই না? প্রথম প্রথম হয়তো শরীরের একটা নেশা থাকতো, তাই বুঝতে পারতে না। তারপর সেই নেশা কেটে গেলে সেটা একটা মৃত সম্পর্কে পরিনত হতো, যেটা আমি কখনো, কোনোদিনও চাইনি। তাই তোমার সাথে সম্পর্ক আগানোর ক্ষেত্রে আমি সত্য প্রকাশ করতে চেয়েছি। তুমি বলো? আমি কি ভুল ভেবেছি? ”
সাঁচি কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
“আর আমি চাইনি আর একটা মেয়ে আমার কারনে কষ্ট পাক? ”
“এখনো তো কষ্ট পাচ্ছি। পাচ্ছি না?”
“মা যখন আমাকে তোমার ছবি দেখিয়েছিলো আমি হ্যা কেন বলেছিলাম জানো?”
মাথা নারে সাঁচি।
“তোমায় দেখে কেন জানিনা আমার মনে হয়েছিলো,তুমি ই পারবে আমায় এই মনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে। মানুষ কিন্তু সবার থেকে সব কিছু আশা করে না? বুজলে?”
“আচ্ছা, যাইহোক, সেদিন তোমাকে বাকি কথাটুুকু বলতে যেয়েও বলতে পারিনি। যতবার বলতে গেছি তুমি বাঁধা দিয়েছে? আজ সেটুকু বলতে চাই জানি তোমার কষ্ট হবে শুনতে,তবুও তোমায় শুনতে হবে? তারপর তুমি আমায় বলবে আমার করনীয় কি?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাঁচি বলে-
“বলুন, কি বলবেন?”
“ঐ ঘটনার এক বছর পরে একটা ঘটনা ঘটেছিলো। তখন আমার ফাইনাল সেমিস্টার চলছে। সামনে এক্সাম, ভীষন রকম ব্যস্ত সময় কাটছে আমার। আমি ঔ সময়টা মোবাইল ব্যবহার প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। কারন বাড়িথেকে মা প্রায় সময় ফোন দিয়ে কান্না কাটি করে বাড়ি যাওয়ার কথা বলতো। প্রায় সময়ই মোবাইল আমি হোস্টেলেই রেখে যেতাম। তো একদিন আমি হোস্টেল ফিরে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখি একান্নটা মিসকল, একটা আননোন নাম্বার থেকে। এতগুলো মিসকল দেখে আমি তারাহুরো করে সেই নাম্বারে ফোন দিলাম, ধরলো না। এরপর আমি ভাবলাম যার প্রয়োজন সে নিশ্চয়ই আবার ফোন দেবে? আমি ফোন রেখে আমার কাজে বিজি হয়ে গেলাম। ঠিক সন্ধ্যার সময় ঐ নাম্বার থেকে আবার ফোন। এবার আমি সময় নষ্ট না করে ফোন ধরলাম। ওপাশ থেকে রেহনুমার গলা পেলাম-
” ফুয়াদ, কই আপনি? সারাদিন কত্তো ফোন দিলাম ধরলেন না একবারও? আমাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন?”
“রেহনুমা? ”
আমি অবাক হয়ে বললাম।
“হ্যা,রেহনুমা। আপনার রেহনুমা। আমি খুব কষ্টে আছি ফুয়াদ। প্লিজ আমাকে নিয়ে যান এখান থেকে? প্লিজ? আপনাকে ভুলতে পারিনা, খুব কষ্টে একটা বছর পার করেছি! কেমন দম বন্ধ লাগে, মনে হয় মারা যাবো?”
আমার কেন জানিনা সেদিন খুব রাগ উঠেছিলো ওর উপর, জানো? রাগটা কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারিনি। রাগের মাথায় ওকে কত কি যে বললাম। বললাম-
” এখন কেন আমায় ফোন দিয়েছো? যখন আমি তোমাকে বিয়ে করতে বলছিলাম তখন তো অনেক কথা বলছিলা? এখন থাকতে পারো না ক্যান? আমাকে এখন কেন এইসব বলতেছ?”
“এই ভাবে বলোনা প্লিজ। কষ্ট হয় গো। আমাকে নিয়ে যাও গো? আমি আর পারি না?সহ্য হয় না!”
“কেন সহ্য হয় না? সহ্য করো এখন? খবরদার আমাকে ফোন দিবানা? সামনে আমার পরীক্ষা, ফেল করার শখ নাই আমার, বুঝলা?”
আমি খট করে ফোনটা কেটে দিলাম। প্রচন্ড রাগে গা কাঁপছিলো আমার। মাথা ঠান্ডা করার জন্য গোসল দিলাম, তারপর এসে না খেয়েই ঘুম দিলাম। ঘুম যখন ভাংলো তখন রাত এগারো টা বাজে। উঠে বসে মনে পরলো রেহনুমার কথা। হায়!হায়! ওকে আমি কি সব বলেছি? এতো নিষ্ঠুর ভাবে ওকে আমি অপমান করলাম কিভাবে? মেয়েটা আমার কাছে সাহায্য চাইছিলো তাকে আমি অপমান করলাম?? ভাবতেই নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছিলো। আমি তখনই রেহনুমার নাম্বারে ফোন দিলাম, নাম্বার বন্ধ। সারারাত ধরে ফোন দিলাম, বন্ধ ই পেলাম ফোন। পরদিন আমি মিলিকে ধরলাম। মিলি আমার সাথে কথা বলা বাদ দিয়েছে বহুদিন আগেই, যখন রেহনুমার বিয়ে হয়েছে। ঐ দিন ওকে অনেক অনুরোধ করার পরও আমাকে রেহনুমার কোন ইনফরমেশন ই দিলো না। শুধু বললো-
” সামনে পরীক্ষা, পড়ায় মন দে? যে চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করিস না। আর তাছাড়া বারবার রেহনুমার ফিলিংস নিয়ে খেলার সুযোগ আমি তোকে দেবো না।”
“তারপর?”
নির্লিপ্ত ভাবে প্রশ্ন করে সাঁচি।
“বিশ্বাস করো? আমিও চাই তোমাকে ভালোবাসতে, কাছে টানতে কিন্তু পারি না।
আমি যখনই তোমার কাছে যাই আমার কানে রেহনুমার কন্ঠ বাজে। আমি…আমি…আমার শ্বাস আটকে আসে….কষ্ট হয়…ভীষন কষ্ট হয়। বলোতো আমি কি করবো?”
দু হাতে মুখ ঢেকে কাদে ফুয়াদ।
“আচ্ছা এখন যদি ওকে সামনে পান তাহলে কি করবেন? আসলে আপনি এখন কি করতে চান?”
“আসলে… আমি শুধু একটু জানতে চাই যে রেহনুমা কেমন আছে? ও যদি ভালো থাকে…তাহলে আমি শান্তি পাবো। আমি আসলে একবার ওর কাছে ক্ষমা চাইতে চাই। ওকে আমি স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম কিন্তু তার মর্যাদা রাখতে পারিনি। সেই অপরাধ থেকে যদি ও আমাকে মুক্তি দেয় আমি ঠিকঠাক মতো জীবন শুরু করতে পারবো।”
ফুয়াদ মুখ মোছে। সাঁচি আবার বলে-
“আর যদি এমন হয় যে, ও সুখে নেই, তখন আপনি কি করবেন? ওকে আবার গ্রহন করবেন আপনার লাইফে?”
সাঁচির এরকম প্রশ্নে ভ্যবাচ্যকা খায় ফুয়াদ। আসলেই তো!এরকম তো ভাবেনি সে-
“আমি আসলে সে রকম কিছু ভাবিনি?”
সত্যি কথাই বললো ফুয়াদ।
“আর তাছাড়া ওকে গ্রহন করার কথা আসছে কেন? সে রকম হলে তোমায় বিয়ে করতাম নাকি? তুমি মনেহয় সব ব্যাপার গুলিয়ে ফেলছো? আমার তোমাকে সবকিছু বলার উদ্দেশ্য কিন্তু এটা না যে,আমি রেহনুমা কে জীবনে ফেরত চাই!”
“আপনারা যে কোন কারনে কি করেন? নিজেরাই নিজেদের বোঝেন না? যদি বুঝতেন তাহলে জীবনে এতো জটিলতা হতো না? আর কোনটা আপনার উদ্দেশ্য আর কোনটা না সেটাই তো বুঝতে পারলাম না এতোদিনে?”
সাঁচির কথা শুনে ফুয়াদ বিছানা থেকে নেমে পানি খায়। কিছুটা ধাতস্থ হয়, প্রসঙ্গ পাল্টে বলে-
” তোমাকে আর একটা কথা জানানোর ছিলো?”
“বলুন?”
” সিঙ্গাপুর আর মালোয়েশিয়ান দুটো প্রজেক্ট এর কাজ হ্যান্ডেল করার জন্য অফিস থেকে আমার নাম সিলেক্ট করেছে। মাস দুয়েকের জন্য যেতে হবে। ওয়াইফ কেউ নিয়ে যাওয়া যাবে। তুমি চলো আমার সাথে?”
“আমি যেয়ে কি করবো? আপনি কাজে বিজি থাকবেন আমি কি করবো? আর তাছাড়া আমার লাস্ট সেমিস্টার চলছে। আপনি বরং ঘুরে আসুন, ততদিনে আমার পড়া শেষ হয়ে যাবে।”
” তাহলে আমি আসলে তুমি বাসায় যাবে বলো? তখন তো কোনো অযুহাত দিতে পারবে না আর? আমার উপর রাগ করবে থাকবে না বলো?”
“সে দু মাস পরের ব্যাপার, তখন দেখা যাবে। এখন এসব নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ নেই। প্লিজ, আপনি ঘুমিয়ে পরুন। ”
“তুমি ঘুমাবে না?”
“নাহ, আমি একটু পড়বো। তারপর শোবো।”
আসলে ফুয়াদের চোখের সামনে থেকে সরতে চাচ্ছিলো সাঁচি। ফুয়াদ কি সুন্দর ওকে বলে ভারমুক্ত হয়ে গেলো। অথচ ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে কি করবে তাই জানে না। চোখে জ্বালা ধরে সাঁচির। বারান্দায় এসে বসে। কান্না করে আর ভাবে কি করবে ও? ফুয়াদ কি কখনো পুরোপুরি ওর হবে? ফুয়াদের অপরাধবোধ কি কখনো ওর পিছু ছারবে? এ কেমন জীবন পেলো ও? এই এতোদিনে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে ফুয়াদকে তা এই দেড়মাসে হারে হারে টের পেয়েছে সাচি। কিন্তু এতোকিছু জানার পর নিজে থেকে আর ফুয়াদের কাছে যেতে ইচ্ছা জাগে না ওর। আবার ওর আকর্ষনও এড়াতে পারে না। মাঝে মাঝে মনটা তীব্রভাবে কাছে চায় ফুয়াদ কে। নিজের মনের চাওয়া পাওয়াকে বুঝতে পারে না সাঁচি। মনের এই দ্বন্দ্ব ওকে যেন শতটুকরো করে দিচ্ছে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে সারারাত এভাবেই কেঁটে যায় সাঁচির।
দিন দশেক পর ফুয়াদ যেদিন সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলো, সাঁচি এসেছিলো ওকে সি অফ করতে। ফুয়াদ যাওয়ার আগে ওর কপালে একটা চুমো দিয়ে যখন বললো-
“ভালো থেকো। নিজের যত্ন করবে। আমার বিরহে আবার অসুস্থ হয়ে যেয়ো না যেন!”
তখন সাঁচি ওর কপালের চুমোর জায়গায় হাত দিয়ে অনেকক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো আর ভাবছিলো-
” এটা কি হলো?”
চলবে—-
©Farhana_Yesmin