#আজল
#পর্ব-নয়
২১.
“ডু ইউ হ্যাভ এনি পাস্ট ফর হুইচ ইউ আর নট কমফোর্টেবল উইথ মি? ইফ ইউ হ্যাভ, ইউ ক্যান শেয়ার উইথ মি?”
ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলো ফুয়াদ। ফুয়াদ সাংসারির টানাপোড়েন খুব ভয় পায়। সারাজীবন এই অশান্তি কে দূরে রাখার জন্যই তো সবার সব কথা মুখ বুজে মেনে গেছে। এখন কি এই প্রশ্ন, প্রশ্নের সব উত্তর তারপর জীবনটা হ জ ব র ল বানাবে? কি বলবে? ভেবে পেলো না ফুয়াদ। প্রশ্নের উত্তর হ্যা হলে আরো একগাদা প্রশ্ন আর না হলে মিথ্যে বলা হবে। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো দু’জনাই। ফুয়াদ ই নিরবতা ভাঙলো-
” তোমার প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা হয় তবে কি হবে আর না হলেই বা কি? ”
ফুয়াদ উৎসুক দৃষ্টিতে সাঁচির দিকে তাকালো।
সাঁচি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে। বোঝার চেষ্টা করছে ও আসলে কি বলতে চাইছে? ফুয়াদ ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করলো-
“ধরো, তোমার যদি কোনো ভালোবাসার মানুষ থাকতো তারপরেও কি আমার সাথে বিয়ে টা এতো সহজে মেনে নিতে? ”
“আমার কেউ থাকলে কি আমি আপনাকে বিয়ে করতাম নাকি?”
“তোমার বাবা মেনে নিতো? সে তো তোমাকে আগেই বলেছে যে এসব প্রেম ভালোবাসা চলবে না।”
“মেনে নিতো কি না সেটা পরের কথা…আমি আগে চেষ্টা করে দেখতাম। কিন্তু আপনি এখন এ প্রশ্ন কেন করছেন? আমি তো আমার প্রশ্নের উওর চেয়েছি! প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন করতে বলিনি!!!??”
“আমিও তো তোমার কাছে বলে কয়ে সময় চেয়েছিলাম সাঁচি… কিন্তু তুমি বারংবার আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছো। মাত্র তো চারমাস তাতেই এত অস্থির হয়ে গেলে? আচ্ছা তোমার কি চাই বলোতো?? ভালোবাসা নাকি শারীরিক সুখ?? তুমি যা চাবে আজ তোমাকে তাই দেবো!!”
ফুয়াদের কথায় রাগে, অপমানে লাল হয়ে গেল সাঁচি। কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারলো না কোনো।
“আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন? বউ হই আপনার…..কোনো খারাপ মেয়ে না??? তাছাড়া আমরা দুজন এ্যাডাল্ট মানুষ সইচ্ছায় একে অপরর সাথে এই বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।সম্পুর্ণ হক আছে আমার আপনার উপর….. আপনার ভালো…মন্দ সবকিছু জানার – এই কথাটা ভুলে যান মনে হয়?? আর সময় চেয়েছেন…. ঠিক আছে…..কিন্তু কত সময়? সেটাতো বলেননি?? আমি কি অনন্ত কাল আপনার জন্য অপেক্ষা করবো???কেন করবো?? কিসের আশায় করবো?? বিয়ের চারমাস পার হয়ে গেছে আমরা একই জায়গায় স্টাক হয়ে আছি। নিজেরা যদি চেষ্টা না করি সম্পর্ক টা কি আগে বাড়বে বলে আপনার মনেহয়??!!”
একদমে কথাগুলো বলে থামে সাঁচি। ফুয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এই প্রথম সাঁচিকে রেগে যেতে দেখলো। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে সাঁচির, চোখদুটো যেন ঠিকরে বের হয়ে আসবে! শান্ত শিষ্ট মেয়েটার রাগও আছে দেখছি- মনে মনে বলে ফুয়াদ। ওকে একটু ভরকে দেওয়া যাক- মনে মনে ভাবলো ফুয়াদ।
“আমাকে ভালোবাসো?”
আচমকা এরকম প্রশ্ন শুনে নার্ভাস হয়ে গেল সাঁচি। নিজেকে সামলে নিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো-
“আপনি কি আমার সাথে ফান করার চেষ্টা করছেন? যদি করেন তাহলে এটা খুব বাজে ফান। তারপরেও উত্তর টা আপনাকে দিচ্ছি, হ্যা!ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে! তাই জানতে চাইছি, কি ব্যাপার? কেন আপনি কষ্ট পাচ্ছেন? আর আমাকেই বা কেন কষ্ট দিচ্ছেন? আপনি হয়তো বুঝবেন ব্যাপারটা যে, আপনি যাকে ভালোবাসবেন…… চাইবেন সে সুখে থাকুক সবসময়….কাছে থাকুক সবসময়। তার আনন্দ বেদনা সবকিছুই নিজের করে নিতে মন চাইবে।”
“না মানে আসলে আমি ওভাবে বলতে চাইনি কথাগুলো। আসলে মা বাবা আমাকে জোর না করলে বিয়েটা হয়তো করা হতো না। আমি…..মানে….মানে…. কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না..কি করবো…. আসলে চেষ্টা করছি মেনে নেওয়ার.. কিন্তু… আসলে… প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না।”
সাঁচির কথা শুনে এলোমেলো হয়ে গেল ফুয়াদ।
ফুয়াদের নমনীয় কন্ঠ শুনে একটু নরম হলো সাঁচি। কন্ঠ টা মোলায়েম করার চেষ্টা করলো একটু-
“দেখুন আমি আপনাকে এটাই বলছি যে, আপনার যদি কোনো প্রবলেম থেকে থাকে আমার সাথে শেয়ার করুন। দু’জন মিলে সেটার সলুশান বের করার চেষ্টা করবো। আপনি তো আমাকে ফ্রেন্ড বলেছেন। তো ফ্রেন্ড এর সাথে কি প্রবলেম শেয়ার করা যায় না???”
“ওতো সব মেয়েরাই শুরু তে এরকমটা বলে…. তারপর ঝামেলা দেখলে পালিয়ে যায়।”
“দেখুন আমাকে সব মেয়ের কাতারে ফেলবেন না, প্লিজ!!! আর সত্যি কথা বলতে কি… সম্পর্কটা এভাবে ঝুলিয়ে রাখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না। যে কোনো জিনিসের একটা লিমিটেশন থাকে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। তাই না?”
ফুয়াদ আবার চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ। ঠিকইতো বলছে মেয়েটা! সাঁচি তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আরো একটু কাছে এগিয়ে এলো, ফুয়াদের হাতের উপর হাত রাখলো, ভরসা দিতে চাইলো যেন-
“প্লিজ, কিছু বলার থাকলে বলুন!”
ফুয়াদ কিছু বলতে যেয়েও যেন বলতে পারলো না। সাঁচি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে। সাঁচি চুপচাপ দেখছে ফুয়াদকে….চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলো ফুয়াদের মুখে কষ্টের ছাপ। ও ফুয়াদের হাতের উপর নিজের হাতের চাপ বাড়ালো-
“প্লিজ আমাকে বলুন তো কি হয়েছে… না বললে বুঝবো কি করে….”
“এখন একটা ধাঁধা বলবো তোমায়, যদি ঠিক ঠিক উওর দিতে পারো তবে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো তুমি যেখানে চাইবে সেখানে, আর সেই সাথে আমার সুখদুঃখের ভাগিদার হওয়ার সুযোগ পাবে। রাজি আছো?”
উত্তেজনায় শরীর টানটান হয়ে গেল সাঁচির। সত্যি সত্যি ফুয়াদ এই প্রস্তাব দিয়েছে?… এটাতো কোনো ভাবেই হেলায় হারানো চলবে না?!
“ঠিক আছে, ডান। সাথে আমারও একটা শর্ত আছে, সেটাও আপনাকে মানতে হবে এখন…..”
“তোমার আবার কি শর্ত? তোমার শর্ত কোথা থেকে আসলো? এখানে তোমার কোনো শর্তের কথা বলা হয়েছে বলে তো মনে পড়ে না!!”
“কেন? আমার শর্তের কথা শুনে আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?”
“না, ভয় পাবো কেন? বলো…”
“মানতে হবে কিন্তু?..”
আচমকা সাঁচি দুষ্টু হাসি দিতে শুরু করেছে । ফুয়াদকে এবার একটু নাচাতে হবে….ব্যাটা বহুত কষ্ট দিচ্ছে ওকে???
“আহ, বলনা।”
অস্থির হলো ফুয়াদ।
“ধাঁধা বলার আগে আমায় একটা কিসি দিতে হবে নিজে থেকে, খুব গভীরভাবে…… একেবারে মন থেকে। তারপর আপনি যা বলবেন তাই হবে!…. আপনার সব কথা মেনে নেবো।”
” এটা আবার কি ধরনের শর্ত? না না এমন তো কথা ছিলো না!!!”
ফুয়াদের কন্ঠে অসস্তি টের পাওয়া যাচ্ছে।
ফুয়াদের আরো একটু কাছে এগিয়ে এলো সাঁচি, চোখে চোখ রাখলো, ফিসফিসিয়ে বললো-
“এই যে দেখুন আপনার কত কাছে এসেছি….. আজ এতো সুন্দর ওয়েদার…তার উপর আপনি এতো দারুণ করে আবৃতি করছিলেন…… এতো ভালো লাগছিলো আপনাকে দেখতে…মনে হলো চকাম করে খেয়ে নেই আপনার ঠোট দুটো….” বলতে বলতে ফুয়াদের ঠোঁটটা হাত দিয়ে আলতো করে ছুয়ে দিলো সাঁচি-
” আজ নিজে থেকে দিন না……সেদিনের মতো…. জানেন আপনার জ্বরের ঘোরে আপনাকে কতবার কিসি দিয়েছি….. কিন্তু..আপনিতো কিছু বুঝতেই পারেন নি…..প্লিজ….”
কাতর গলায় বলে যাচ্ছে সাঁচি আর ফুয়াদের সেসব শুনতে শুনতে চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে -“বলে কি মেয়ে ওকে নাকি জ্বরের সময় চুমু দিয়েছে? মিথ্যুক কোথাকার!!…শুধু কপালে একটু আদর দিয়েই কি সুন্দর করে মিথ্যা বলছে?”
“প্লিজ আজ ফিরিয়ে দেবেন না সেই যে দু তিন মাস আগে একটা দিয়েছেন….. আমার বুঝি ইচ্ছে করে না!!!! জানেন তো মেয়েরা নিজে মুখে কখনো এসব বলে না অথচ আমি কিনা শুধু বলা না করেও দেখিয়েছি….. আমার মতো মেয়ে….ভাবা যায়….শুনলে কেউ বিশ্বাস করবে…???”
আধো আধো চাঁদের আলোয় সাঁচির মিনতি ভরা মুখ… ফুয়াদ ভিতরে ভিতরে ভাঙছিলো… কাঁপন উঠে যাচ্ছে শরীরের মধ্যে…কোন সাধু পুরুষেরও সাধ্য নেই এই মিনতি পায়ে ঠেলার..আর ফুয়াদ তো মানুষই…..ফুয়াদ সম্মোহিতের মতো সাঁচিকে কাছে টেনে নিলো….. বসে থাকা অবস্থায়ই শক্ত করে একহাত দিয়ে সাঁচির কোমরটা পেচিয়ে ধরে একেবারে কাছে টেনে আনলো….সাঁচি কেঁপে উঠলো একটু …..ফুয়াদ সাঁচির পেছনের চুলের ভেতরে হাত দিয়ে চুল মুঠো করে ধরে সাঁচির মুখটা উচু করে ধরলো….ফুয়াদকে একবার দেখে সাঁচি চোখ বন্ধ করে ফেললো…উত্তেজনায় মুখটা লাল হয়ে আছে সাঁচির… ঠোঁট দুটো ঈষৎ ফাঁকা হয়ে আছে….হালকা হালকা কাঁপছে ঠোঁট দু’টো…ফুয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো সাঁচির দিকে। সাঁচিকে এতটাই মোহনীয় লাগছে যে ফুয়াদের মতো নিয়ন্ত্রিত মানুষের ও ঘোর লেগে যাচ্ছে। ফুয়াদ থাকতে না পেড়ে সাঁচির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোয়ালো। প্রথমে ছোয়ালো তারপর এমনভাবে সাঁচির ঠোঁট গ্রাস করলো যেমনটা একটা জোক মানুষের শরীরে চেপে বসে। সাঁচি অন্ধের মতো হাতরে ফুয়াদের পিঠের দখল নিলো দুহাতে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফুয়াদের চুলগুলো সাঁচির হাতের মুঠোয় চলে আসলো। একহাতে পিঠ আকরে ধরে আর এক হাতে মাথার চুল আকরে ও যেন ফুয়াদের শরীরের মধ্যে সেধিয়ে যেতে চাইছে! আলো আধারির মধ্যে দুজন মানব মানবী বিভোর হয়ে ডুবে আছে একে অপরের মাঝে…..
২২.
এই মুহুর্তে তানভীর আর আজমল সাহেব মুখোমুখি বসে আছে। রেস্টুরেন্টের কোনার দিককার টেবিল, এখান থেকে রাস্তাটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। দু’জনার সামনেই দু’টো চায়ের কাপ রাখা। আজমল সাহেবের দৃষ্টি বাহিরের রাস্তার দিকে, মাঝে মাঝে সেখান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। শশুরের কান্ড দেখে তানভীরের খুবই বিরক্ত লাগছে। পনেরো মিনিট ধরে এখানে বসে আছে ওরা। শশুর মশাই নিজে কথা বলতে চেয়ে পনেরো মিনিট ধরে শুধু শুধু বসে আছে! অথচ অফিসের অনেক ইম্পর্টেন্ট কাজ ফেলে রেখে ও এসেছে। আবার ঘড়ি দেখলো তানভীর। নাহ আর সম্ভব না, আজকে ইম্পর্টেন্ট একটা মিটিং আছে সাড়ে এগারো টা নাগাদ। উশখুশ করতে করতে বলেই ফেললো-
“বাবা, কিছু বলতে চেয়েছিলেন মনেহয়?”
“হু, চাচ্ছি তে? তোমার কি কোন জরুরি কাজ আছে নাকি?”
“জ্বী বাবা, সারে এগারো টা নাগাদ একটা মিটিং আছে।”
“তাহলে ওটা ক্যানসেল করে দাও। ”
“জ্বী!!!!”
অবাক চোখে তাকালো তানভীর।
“বললাম মিটিংটা ক্যানসেল করে দাও। তোমার সাথে যে কথাগুলো বলবো সেটা এই মিটিং থেকেও অনেক জরুরি। ”
তানভীর কিছুক্ষণ শশুরের দিকে তাকিয়ে থাকলো, বুঝলো লোকটা বেশ সিরিয়াস। কিন্তু কি এমন বলবে!…. যাই বলুক…দেখা যাবে। ও ওর পিএ কে ফোন করে বলে দিলো আজকের মিটিংটা ক্যানসেল করার জন্য। তানভীর ফোন রাখতেই আজমল সাহেব এবার ওর দিকে ঘুড়ে বসলো।পূর্ণ দৃষ্টিতো ওর দিকে তাকালো। শীতল গলায় ওকে জিজ্ঞেস করলো-
“আমার মেয়ের সাথে তোমার যখন বিয়ে হয় ওর বয়স কত ছিলো?”
প্রন্শটা শুনে হকচকিয়ে গেল তানভীর –
” জ্বী, আঠারো.. ”
“আর তোমার?” কন্ঠ আগের চাইতেও শীতল।
” ত্রিশ “মাথা নামিয়ে উত্তর দিলো তানভীর।
” কখনো ভেবেছো ওর সাথে তোমার বয়সের ব্যবধান কত? নাকি ভাববার অবকাশ পাওনি?”
তানভীর বিস্মিত ভাবে তাকিয়ে রইলো শশুরের দিকে। এতদিন পরে এসব কথার কি মানে….. ওর বোধগম্য হলো না। এনারা তো সব জেনে বুঝেই বিয়ে দিয়েছিলো তখন!!! তানভীর কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আজমল সাহেব আবার বলতে শুরু করলো-
“তোমার শাশুড়ির সাথে আমার যখন বিয়ে হয় তখন ওর বয়স পচিশ আর আমার বত্রিশ। যুগ হিসেবে দু’জনারই বয়স বেশি ছিল। আমি বাপ হারা বড় ছেলে, সংসারের পুরো দায়িত্ব আমার কাঁধে ছিল। সংসারের ঘানি টানতে টানতে কখন বয়স পার হয়ে যাচ্ছিলো টের পাইনি। ভাইবোনেরা বেশ বড় হয়েছে সবাই। তখন মায়ের হুশ হলো যে ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে। তাড়াতাড়ি পাত্রী খোজা শুরু করলেন। কিন্তু পাত্রী আর পাওয়া যায় না, আসলে পাওয়া যায়না বললে ভুল হবে… কেউ মেয়ে দিতে চাচ্ছিলো না। কারন আমার তিন বোনের এক বোনেরও তখন বিয়ে হয়নি। ভাইও আছে দুটো ছোট। কে জেনেশুনে এরকম ঝামেলার ঘরে মেয়ে দিতে চায় বলো!!!
তো ঐ সময় তোমার শাশুড়ি মায়ের খোঁজ পাই। তারও বিয়ে হচ্ছিল না। মোটামুটি শিক্ষিত ফ্যামিলি। ছোট বোনটা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছিলো… বদনাম হয়েছিল প্রচুর… তাই আর ওর বিয়ে হচ্ছিল না। যাইহোক, তোমার শাশুড়ি মায়ের সাথে বিয়ে হলো। বাচ্চারা আসলো পৃথিবীতে। এর মধ্যে আমার তিন বোনের বিয়ে দিলাম। ভাই দুটো পড়ালেখা করে বেশ ভালোভাবেই দাড়িয়ে গেল। ওরাও বিয়ে শাদী করে সংসারী হলো। আমি কখনো কারো দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি রাখি নাই। আর আমার সাথে এই দায়িত্ব পালনের পূর্ন অংশীদার ছিলেন তোমার শাশুড়ি মা। তার মুখ থেকে আমি জীবনে কোনেদিনই আমার বিরুদ্ধে কোনে অভিযোগ শুনি নাই। ছেলেমেয়ে দু’টোকেও সে মানুষ করেছে। ভাই বোনের আর মায়ের দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে আমি আসলে ওদের দেখারই সুযোগ পাই নি। ওদের মা ওদের সব কিছুর খোঁজখবর আমাকে জানাতো। কোনো ডিসিশন নেয়ার হলে আমিই নিতাম। কিন্তু কখনো বাবার মতো বাবা হয়ে কিংবা বন্ধু হয়ে ওদের সাথে মেশা হয়নি। তাই ওরা হয়তো বা আমাকে ভয় পেত।”
একনাগারে বলে থামলেন আজমল সাহেব। এতোক্ষনে একটু নড়েচড়ে বসলো তানভীর। তার শশুর নিজের জীবন বৃত্তান্ত ওকে শোনাচ্ছে……. কিন্তু কেন????
চলবে—-
©Farhana_Yesmin