#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ১০
দিনটা ১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০২১ পহেলা ফাল্গুন৷ প্রেমিক প্রেমিকার জন্য প্রেমময় দিন৷ ভালোবাসা দিবস যাকে বলে৷ এ দিনে নিজের প্রেমের উপস্থাপনা ভালোবাসার মানুষ দুটো ভিন্ন ভাবে করেন৷ আর সব সময় ১৪ই ফেব্রুয়ারি নিয়ে আমার কখনোই কোন মাথা ব্যাথা না থাকলেও এবার কেন যেন অন্যরকম লাগছে৷ এমন লাগার কারণ কি?
সকাল থেকেই মোবাইল নামক যন্ত্রটার দিকে তাকিয়ে আছি এই বুঝি তিশান ফোন করে দেখা করার কথা বলবে৷
এ দিন টা তো কম বেশি সব কপোত-কপোতী তাদের ভালোবাসার নানান ভাবে বহিঃপ্রকাশ করেন৷ হঠাৎ নিজের ভাবনায় নিজেই ফেঁসে গেলাম৷ কপোত-কপোতী? আমরা কি? আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্কটা চলছে? তিশান তো কখনো কিছু বলে নি৷ না আমি আমার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ তাঁর সামনে করেছি৷ আচ্ছা তিশান কি আমাকে আজ প্রেম নিবেদন করবে? ‘প্রেম নিবেন’ কথাটা মাথায় আসতেই ভাবলাম ও কি পরেছে আমার প্রেমে? সে পাগলামি করলেও তেমন ভাবে কখনো কিছু বলেনিতো৷ তাহলে? ভালোবাসে কি আমায় সে? আমাকে নিয়ে তাঁর মনে কি ভালোবাসা নামক যন্ত্রণা দায়ক অনুভূতি আছে? আমার মত এ অসহ্যকর অনুভূতি তাঁর হয়?
কে যানে কি আছে তাঁর মনে৷ তাঁর পাগলামো গুলোতে আমি মত্ত্ব হয়ে পরেছি অথচ বুঝতে পারছি না তাঁর আমার প্রতি অনুভূতিটি কতটা প্রগাঢ়৷ ঘুম উঠেছি সেই বেশক্ষানেক্ষণ আগে৷ বিছানা ছেড়ে উঠলাম সবে৷ উঠে বারান্দার দিকে এগোতেই ফোন টা বেজে উঠলো নিত্যদিনের মতো৷ ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো আপনাআপনি৷ তিনি এই ক-দিনে আমার হাসির কারণ হয়ে উঠেছে৷ সে কি এ কথা জানেন? প্রসন্ন মুখে ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠ ভেসে এলো,
“উঠেছেন?”
হাসলাম তাঁর কথায় অতঃপর উত্তর দিলাম,
“উঠেছি৷ আপনি?”
“উঠবো না আজ৷ সারা রাত ঘুমাতে পারিনি৷ ”
আমি ব্রু কুচকে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে বললাম,
“কেন? ”
সে কিয়ৎক্ষণ চুপ রইলেন৷ চুপ থাকার কারণ বুঝলাম না অতঃপর মৌনতা ভঙ্গ করে ধীর কন্ঠে বললেন,
” আপনার অপরাধের পাল্লা সময়ের সাথে বাড়ছে চাঁদ৷ মোহময়ী দৃষ্টি দিয়ে সন্তপর্ণে নিজের প্রণয় কারাগৃহে করলেন অতঃপর এতো দূরে থেকেও নিজের বাচ্চা সূলভ আচরণ দিয়ে আমাকে আরো পাগল বানিয়ে দিতে চাইছেন?”
আমি তাঁর কথার মানে বুঝলাম না৷ তবে তার অভিযোগ সুরে বলা কথা গুলো হীম করে দিলো আমায়৷
আমি তাঁর সামনে না থেকেও লজ্জায় নতজানু হয়ে রইলাম৷
সে কি বুঝলো নাকি আমার লজ্জা টা কে যানে? সে আবার আওরালেন,
” কারো সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরা টা কি বাচ্চাদের কাজ নয়?”
এবার লজ্জাটা প্রগাঢ় হয়ে ঝাপটে ধরলো আমায়৷ সে সামনে নেই তবুও যেন নুয়ে পরছি৷ গলা থেকে শব্দ ধ্বনি বের হলো না প্রশ্ন করার৷ কাল রাতে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম৷ কিভাবে কখন ঘুমিয়েছি নিজেও যানি না৷ সে কালকের কথাটাই বলে লজ্জা দিচ্ছে লোকটা পাজি৷ সে কি বুঝে না আমার পরিস্থিতি?
সে ক্ষীন শব্দ করে হাসলো৷ অতঃপর সুশ্রী কন্ঠে বললেন,
“আজ সারা দিন অনেক ব্যাস্ত থাকবো আমি৷ কল দিতে আজ দেরি হবে৷ ”
মন টা নিমেষেই খারাপ হয়ে গেলো৷ সারা দিন কল দিবে না সে?আজ তো ভালোবাসা দিবস সে কি ভুলে গেলো?অভিমান হলো আমার৷ কি এমন ব্যাস্ততা? আচ্ছা সে কি সে দিনের মত আমার বাড়ির সামনে আসবে? এখন তো লকডাউন এতোটা কড়াকড়ি নয়৷ হয়তো সারপ্রাইজ দিবে? হতেও তো পারে? কিছু বললাম না আমি৷ সে ও চুপই আছে৷ আমাদের মধ্যে এমনই হয় কথা হয় টুক টাক কিন্তু মৌনতাটাই বেশি থাকে৷
আমি নিজেই কেটে দিলাম কিয়ৎ সময় পর৷
মন ভালো ও না খারাপ ও না৷ নিজের মনের অবস্থা নিজেরই বোধগম্য হলো না কেন তা নিজেও জানি না৷ বারান্দায় লোহার গোল দোলনাটায় পিঠ এলিয়ে বসলাম৷ আম্মুর ডাক পরলো এর মাঝে জবাব দিলাম না, এবার আম্মুই আমার রুমে এলো৷
আমাকে বারান্দায় দেঝে কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বলে,
“জেগেই তো আছিস ডাকছিলাম যে জবাব দিলি না কেন?”
আমি আম্মুর দিকে তাকালাম একবার অতঃপর আবার চোখ বন্ধ করলাম আম্মু আবার বলে,
“কি হয়েছে তোর? কথা বলছিস না যে?”
আমি কিছুটা মিনমিনিয়ে বললাম,
“ভালো লাগছে না আম্মু৷ ”
আম্মু ব্যাস্ত কন্ঠে বলে,
“এমা কি হলো তোর? পেটে ব্যাথা? ”
“না মা এমনি ভালো লাগছে না৷ ”
আমার কথায় আম্মু যেন স্বস্তি পেলো অতঃপর মোলায়েম কন্ঠে বলে,
“স্বর্না কে বিকেলে দেখতে আসবে৷ ওই যে এলো না একবার? তারা আসবে আজই আংটি পরিয়ে রেখে যাবে৷ ”
কথাটা আমি আগেই জানতাম তাই নিম্ন স্বরে বললাম “ওহ” ছোট উত্তর পেয়ে আম্মু আর কিছু বললো না৷ “একটু শুয়ে থাক৷ ” কথাটা বলেই প্রস্থান করলেন৷
আমি বারান্দায় বসে রইলাম, বেশ ক্ষানিক্ষণ পর রেডি হয়ে ছাদে এলাম৷ আমার বড় চাচার মেয়ের নাম স্বর্না আমার বাবারা চার ভাই তাই আমাদের চারটা বাড়ি এক সাথে আমাদের বিল্ডিং এর ডান পাশেই আমার বড় চাচার বিল্ডিং আমাদের ছাদ দিয়ে তাদের ছাদে অনায়েসে যাওয়া যায় শুধু মাঝে দিয়ে একটু ফাঁকা৷ তাই ছাদ দিয়েই এ বাড়িতে এলাম৷
আজ এ বাড়িতেই দাওয়াত সবার, আপু আর আমি বেস্ট ফ্রেন্ড সুলভ সকালে আসিনি তাই হয়তো রেগে আছে৷
আমি এসে দেখি আপু এখনো উঠেইনি, আর আমি তো ভাবছিলাম রেগে আছে হয়তো৷ ড্রইং রুমে এসে বসলাম৷ ঘড়িতে সারে দশটা বাজে আজ বাড়ি গমগমে পরিবেশ৷ গমগমে পরিবেশ বেশ ভালোই লাগে৷
চা খেতে খেতে আপুর খালাতো ভাই আকাশের সাথে কথা বলছিলাম ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো কাকি সবাইকে চা দিচ্ছিলো তাই আমাকে বললো দরজাটা খুলে দিতে৷ সন্তপর্ণে চায়ের কাপটা টি টেবিলে রেখে দরজার দিজে এগিয়ে গেলাম অতঃপর দরজাটা খুলে দিলাম৷ মাহতাব ভাইয়া এসেছে৷ ভাইয়া কে দেখে সৌজন্য মুলক হাসি দিলাম৷
মাহতাব ভাইয়া আমাকে দেখে বললেন,
“ভালো আছিস মুন?”
“ভালো আছি ভাইয়া৷ ”
সে ঢুকেই হৃদয় ভাইয়ার রুমে প্রবেশ করলো৷ আমি এ মানুষটাকে দেখে সব সময় কেমন জরতায় পরে যাই৷ জরতাটা আর কাটিয়ে তুলতে পারলাম না৷
প্রভাত পেরিয়ে দ্বিপ্রহর ও কেটে গেলো এখন অপরাহ্ণ চলছে৷ আপু সাজছে আর আমি বসে দেখছি৷ বাইরে মানুষের কথার শব্দ আসছে তাঁরা এসেছে বেশক্ষানিক্ষণ হলো৷
আমি এখনো আপুর হাসবেন্ড কে দেখিনি আপুকে নিয়ে যাবো তখনি দেখে নিবো ভাবলাম৷
মনটা মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ন্যায় হয়ে আছে৷ সে সত্যি ব্যাস্ত আজ আমি ভুল ভাবছিলাম৷ থাকুক ব্যাস্ত আমার তাতে কি? আমিও আজ কথা বলবোই না ভাবলাম৷ কেন কথা বলবো? অভিমান হয় না আমার? আজ আমার জীবনের প্রথম রঙিন বসন্ত অথচ যার প্রণয়ে প্রণয়িনী আমি সে তো নিজের অন্য কাজে ব্যস্ত৷
কত আশায় ছিলাম আজ ভাবতেই নেত্র যুগল ভিজে এলো৷
আমি তো এ ও ঠিক মতো যানি না তাঁর মনে আমার জন্য কোনো প্রণয় নামক অনুভূতি আছে কি না৷ তেমন ভাবে তো খোলাসা করে বলেনি কখনো৷
এসব ভাবলাম কিছুক্ষণ অতঃপর নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করলাম “খোলাসা করে না বললে কি বুঝে নেওয়া যায় না?”
কিন্তু আদৌ কি বুঝে নেওয়া যায়? আমি কি জ্যোতিষী নাকি? সে বুঝাতে পারে না আমায়?
অতঃপর আবার ভাবলাম “আমিও তো বলিনি তাকে৷ ”
তাহলে কি সে আমার আশায় আছেন? অনুভূতি গুলো যেন আবার জাগ্রত হলো ইসস এমন লাগে কেন? কেমন যন্ত্রনা অনুভব হয় এ যেন মধুর যন্ত্রনা৷ ভালোবাসা নামক মধুর যন্ত্রনা৷
ভাবনার সুতো কাটলো কাকির ডাকে আপুকে নিয়ে বাইরে যেতে বলছে৷ আপুর মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে আছে আপুর নিশ্চয়ই অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে? এ অনুভুতির সাথে বোধহয় নতুন পরিচিত আপু? ক্ষীণ হাসলাম আমি অতঃপর আপুকে নিয়ে বাইরে বের হলাম৷ আপুকে একটা সিংগেল সোফায় বসিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই ধক করে উঠলো বুকটা স্থীর হয়ে পরলো নেত্রপল্লব৷
আমার হৃদপিণ্ডটা যেন এখনি বেরিয়ে পরবে৷ কি হচ্ছে এসব? কি ঘটছে এসব? যা দেখছি সত্যি তো? নাকি ভ্রম?
(দেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত৷)
চলবে,