প্রণয় ডায়েরি পর্ব-৬

0
586

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ০৬

ধুসর কুয়াশা কেটে সোনালী রোদ্দুর উকি দিলো সবে৷ সময়ের কাটা তখন আটটা পঞ্চাশ এর কাটায় এসে থেমেছে৷ মিনিট আর ঘন্টার কাটা কিয়ৎ সময় একই স্থানে থাকলেও সেকেন্ডের কাটা টা ব্যাস্ত ভঙ্গিতে ঘুরেই চলেছে৷
তাঁর যেন বসার বা স্থির থাকার একিটুও সময় নেই৷
বিছানায় শুয়ে শুয়ে সেকেন্ডের কাটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখটা জ্বলছে৷ সেকেন্ড এর কাটার মতয় মানুষের জীবনে সময় ছুটতে থাকে৷
কাল সারা রাত ঘুমানো হয়নি এখনো ঘুম আসছে না, মানুষটার সাথে দীর্ঘ সতেরো দিন পর কথা হলো৷ আল্লাহ মানুষের জীবনকে কখন কি করে দেয় বোঝা বড় মুশকিল৷ কখন কার সাথে কেন দেখা করা এটাও বুঝা বড় দায়৷ সব কিছু কাকতালীয় হয় না সব কিছুর মাঝেই কোন না কোন কারণ লুকিয়ে থাকেই৷
কত মানুষের সাথেই তো কত কথা হলো বাইরে গিয়ে কিন্তু এই অদ্ভুত ছেলেটার জন্য যে এমন অনুভূতি জন্ম নিবে কে জানতো? কে জানতো যে ঝগড়া করে আমার মন এই ছেলেকেই খুঁজবে৷
মন বরই অদ্ভুত কখন কার প্রতি আকৃষ্ট করে দেয় কেউ কি বুঝতে পারে নাকি?
সব কিছুর পিছনেই একটা কারণ থাকেই৷ নয়তো কাকতালীয় ভাবে একজন মানুষের সাথে এতোবার দেখা হয় নাকি? কে জানতো সেই বিরক্তিকর হসপিটালে নতুন কিছুর সূচনা ঘটবে?
কিন্তু আমার এ অজানা অনুভুতির নাম কি? কেন আমার এ অনুভুতির নাম অজানা? আবেগ বলতে পারছিনা এটা এতো দিনে বুঝেছি সে আমার আবেগ না৷ তাহলে কি?
কানে হেডফোন গুজে ছিলাম গান শুনার জন্য হঠাৎ গান বন্ধ হয়ে রিংটোন বেজে উঠলো৷ ফোনের স্ক্রিনে তিশান নামটি ভেসে উঠলো একটু আগেই সেব করেছি নাম্বারটা৷
এ ছেলেতো দেখছি যখন তখন ফোন করে বসে৷ মা একবার দেখলে আর রক্ষে নেই৷
ফোনটা ধরতে একটু দেরি হলো ফোন রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো,
“একটা ফোন তুলতে এতো সময় লাগে?”
রাগ হলো আমার অদ্ভুত তো কথা বলা শুরু হতে না হতেই ধমকানো শুরু করে দিয়েছে? এ ছেলেকি এমনি বে-রসিক মানুষ? আমাকে কি উপন্যাসের কোনো নায়িকা চরিত্র পেয়েছে নাকি? যে নায়কের মত ধমকাবে আমি তাকে ভয় পাবো? মোটেও না৷
আমি গলা কিছুটা খাদে নামিয়ে শক্ত কন্ঠে বলি,
“মানুষ নিশ্চয়ই সারাক্ষণ হাতে মোবাইল নিয়ে থাকে না?”
সে এ নিয়ে কিছু বললো না তবে কিছুটা থমথমে গলায় বলে,
“যাত্রাবাড়ি আপনার বাড়ি তাই না? আপনি বেশ ঘাড় বাঁকা মেয়ে৷ তবে এমন মেয়েকে সোজা বানানোর কৌশল আমার জানা আছে৷ আপনি এড্রেস না দিলেও আমি ঠিকই জানতে পেরে গেলাম৷”
আমি অবাক হয়ে বলি,
” কিভাবে?”
“আপনার লোকেশন টা অন রেখে আমার সুবিধাই করে দিয়েছেন৷ আমি দেখা করতে চাই আপনার সাথে আর আজই৷ নয়তো আমি বাড়িতে চলে আসবো,এতে আমার কোনো আপত্তি নেই জামাই আদর খেতে পারবো৷ কি বলুন আসবো?”
আমি এহেন কথায় ভরকে গেলাম৷ হায় আল্লাহ কি ঠোঁট কাঁটা ছেলে ইসস এমন কথা কেউ বলে?
আমি কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলাম,
“আমি লোকেশন সেন্ড করে দিবো বিকেলে সেখানে চলে আসবেন৷ ”
অতঃপর চুপ করে রইলাম দুজনেই৷
কিছুখন পর সে নরম কন্ঠে বলেন,
“এতো দিন অপেক্ষা না করালেও পারতেন মিস বোম্বাই মরিচ৷ ”
কেঁপে উঠলাম আমি৷ এমন করে কথা বলে কি আমাকে পাগল বানাতে চাইছেন? আর আমি কি ওনাকে অপেক্ষা করিয়েছি? নিজেই তো অপেক্ষায় ছিলাম আবার কবে দেখা হবে সেই আশায়৷
“আমার অনুভূতির শীর্ষ বিন্দু না হলেও পারতেন৷ আমি অগোছালো ছিলাম না আপনি আমায় অগোছালো করে দিয়েছেন৷ এই অগোছালো আমিটার দায়িত্ব নিবেন কি আপনি৷ ”
তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে তাড়াহুড়ো করে “রাখছি ” বলে রেখে দিলো৷
রেখে দেওয়ার কারণ বুঝলাম না৷ অদ্ভুত তো লোকটা হুটহাট কি হয়ে যায়?
উঠে মায়ের কাছে গেলাম৷ মা কে বলেছি বান্ধুবিদের সাথে ঘুরতে বের হবো৷ অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি৷
আগে তো কখনো সামনা সামনি বসে কথা বলিনি আজ বলবো কি করে? আমার হার্ট যেন একটু পর বের হয়েই আসবে এমন করে বিট করছে৷
চারটার সময় বাড়ি থেকে বের হলাম এর মাঝেই তিশানের ফোন এলো৷
ফোন রিসিভ করতে সে বলে,
“বেড়িয়েছেন?”
“বেড়িয়েছি৷ ”
অতপঃর নিরবতা একটু পর লাইনটা কেটে গেলো৷ মিষ্টি কালারের একটা কূর্তি পড়ে বেড়িয়েছি সাথে ব্লু জিন্স আর ব্লু হিজাব৷
সেই রেস্টুরেন্টের সামনে আসতেই পা যেন চলছে না৷ তিশান বাইকে হেলান দিয়ে সিগারেট ফুকছে আর ফোন স্ক্রল করছে৷
লোকটা সিগারেট খায়? রাগ হলো এমনটা দেখে আমার আমি পা চালিয়ে গিয়ে তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ালাম৷।
আমাকে দেখে সে ও দাড়ালো ঠিক মতো৷ ক্যাবলাকান্তর মতো হাসি দিলো একটা৷ আমি হাসলামা না, আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিকেই হাত বাড়িয়ে থামিয়ে থমথমে গলায় বলি,
“এসব নিয়ে আমার সামনে আসবেন না৷ এলার্জি আছে আমার ধোয়াতে৷ ”
সাথে সাথেই সিগারেটটা ফেলে দিলো সে৷ অতপঃর একই জায়গা থেকে বলে,
“এবার তো কাছে আসুন মিস তাফসি৷ ফেলেছি আমি, আপনাকে দেখার জন্য আমার চোখ যে পিপাসু হয়ে আছে৷ ”
শেষের কথাটা সে মিনমিনিয়ে বললো৷আস্তে বললেও আমার কান এড়ালো না৷ একবার তাঁর চোখের দিকে তাকিয়েও চোখ সরিয়ে নিলাম৷ এমনি আমি কুপোকাত হয়ে আছি আবার এ দৃষ্টি৷
ও আশে পাশে চোখ বুলিয়ে আমার হাত ধরে বলে,
“ভেতরে চলো৷”
রেস্টুরেন্টটায় কাপল দের জন্য আলাদা ব্যাবস্থা আছে সেখানেই নিয়ে বসালো আমাকে তিশান৷ তাকে দেখে স্বাভাবিক লাগছে আমার এদিকে ইতস্ত লাগছে৷
আমার অবস্থা বুঝলো কি না কে যানে৷ হাসলো সে ঠোঁট বাকিয়ে আমার দিকে একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে৷ লোকটা অন্য দিকে তাকাচ্ছে না কেন? সে কি বুঝে না আমার অস্বস্তি হচ্ছে? আমি মাথা নিচু করে নিলাম৷
সে আমার বরাবর সামনে চেয়ারেই মুখোমুখি হয়ে বসা৷
এর মাঝেই কফি দিয়ে গেলো ওয়েটার, তখনি আমরা আবার চোখা চোখি হলাম সে ভুরু কুচকে তাকিয়ে আছে৷ সে দিন ও আমি তাঁর এই অভ্যাস টা লক্ষ করেছি আজ ও এমন তাকিয়ে আছে৷
লোকটা ইচ্ছে করে কি আমায় অস্বস্তিতে ফেলছে? এমন করে সরাসরি তাকিয়ে থাকলে বসে থাকা যায়?
তাঁর গলা খাকারি শুনে ধ্যান ভাঙলো আমার৷ সে গলা খাকারি দিয়ে ঠোঁটে প্রানবন্ত হাসি রেখেই কফিতে চুমুক দিলো আমার দিকে তাকিয়ে অতঃপর বলেন,
“আমাকে দেখার অনেক সময় পাবেন মিস.তাফসি আপাদত কফিটা শেষ করুন৷ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো৷ ”
তাঁর কথা শুনে কিছুটা ভরকে গেলাম আমি, সাথে বিষম ও খেলাম৷ আমি তাঁর দিকে কখন তাকিয়ে ছলাম? সেই তো তাকিয়ে আছে অদ্ভুত তো৷
“লজ্জা পেলে আপনাকে প্রাণনাশিনী লাগে মিস.তাফসি৷ আপনার এই লজ্জাজরিত মুখ টা দেখার জন্য হলেও আপনাকে আমার চাই৷ ”
হঠাৎ তাঁর এহেন কথায় আমি থমকে গেলাম৷ নুয়ে গেলাম আরো কিছুটা৷ আমার নেত্রপল্লব স্থির হয়ে রইলো সব সময়ের মত আমার লজ্জার সুযোগ নিয়ে উষ্ঠজোরা কম্পন শুরু করে দিয়েছে৷ ইসস এ ছেলে আজ আমাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা অবধারিত করে এসেছে নাকি?
শরীর যেন শীতল হয়ে এলো, লজ্জায় আমি উপরের দিকে তাকাতে পারছিনা৷ আর যতক্ষণ আছি আমি যে উপরে কেন নড়াচড়া ও করতে পারবো না৷ আজ এতো লজ্জা লাগছে কেন আমার?
হঠাৎ পাশে কাউকে অনুভব করলাম৷ সে সন্তপর্ণে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে আমার দিকে কিয়ৎ ঝুঁকে হিসহিসিয়ে বলেন,
“প্রথমত ঝগড়া করে আমার মাথাটা বিগ্রে দিলেন, দ্বিতীয় বার ভীতু ভীতু চাওনি নিয়ে মাথাটা একে বারেই পাগলাটে করে দিলেন৷ অতঃপর হাসিতে মুগ্ধ করলেন আপনার পিছু পিছু ছুটতে বাধ্য করলেন৷ এখন লজ্জাজড়িত মুখশ্রী দেখিয়ে কি সত্য সত্যি লোকের কাছে পাগল করে দিতে চাইছেন আমায়?নিজের কাছে তো পাগল হয়েই গেছি৷ লোকেতো আমায় পাগলের আখ্যা দিয়ে দিবে মিস তাফসি৷ তবে আপনি যদি এই পাগলাটে প্রেমিকের পাগলামো গুলো সহ্য করতে রাজি থাকেন, তাহলে তো আমি হাজার বার পাগল হতে রাজি আছি৷ ”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here