#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ০৩
নিজের আবেগ প্রবণ অদ্ভুত মন এর বিষণ্ণতা কাটিয়ে নিচে এলাম পার্কিং এরিয়া পার হয়ে গেটের পিছনের গেটের সামনে আসতেই দেখি বাইকের উপর ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিশান৷ আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম এমা এই ছেলে না তারাহুরো করে বের হলো জরুরি কাজ বলে তো এখানে কি করছে? সে হয়তো আমাকে দেখেনি তাঁর দৃষ্টি মোবাইলের দিকে৷ আম্মু একটা সিএনজি ঠিক করলো৷ সিএনিজিতে উঠার সাথে সাথে আমাদের সিএনজি ছেড়ে দিলো৷ কিছু সৃতি রয়ে গেলো এই বার্ডেম আর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এর সামনে৷ ক্ষীণ হাসলাম, আমি রাস্তায় কারো সাথে ঝগড়া করি না কিন্তু এবার তা ও করেছি৷ সিএনজি এসে থামলো অডিট ভবনের সামনে৷ থামার কারন জ্যাম৷ কিয়ৎ প্রহর পেরিয়ে গেলো ভাবতে ভাবতেই জ্যাম ছাড়েনি এখনো, এই হলো ঢাকা শহরের দোষ জ্যাম লাগলে ঘন্টা পার হলেও ছাড়ে না৷ হঠাৎ পাশে থাকা বাইকের দিকে নজর গেলো৷ এমা এ তো তিশান এই ছেলে এখানে কি করছে? ভাবলাম হয়তো কোথাও যাচ্ছে সে আমায় দেখেছে? আমি আড়ষ্ট হয়ে তাকালাম সে আমায় দেখেই হাসলো৷ আমি কিছুটা ভরকে গেলাম উনি কি দেখেছিলো আগে থেকেই?
আমি নড়েচড়ে বসে আম্মু আর নানির দিকে তাকালাম৷ না তারা দেখেনি দেখলে আমার বাঘিনী মা নিশ্চিত সন্দেহ করতো৷ আমার সামনে দিয়ে কোন ছেলে গেলে সেই ছেলের দিকে তাকালেই উলটা পালটা সন্দেহ করে বসে৷ আর এই ছেলেকে দু’দিন যাবত দেখছে আজ আবার আমাদের সিএনজির সাথেই দেখলে সন্দেহ করবেই৷
জ্যাম ছেড়ে দিলো আমি যেমন হাফ ছেড়ে বাচলাম৷ সিএনজি আপন গতিতে ছুটছে পাশে ফিরে বাইরে তাকিয়ে দেখি তিশানের বাইক আমাদের সিএনজির পথ অনুসরণ করেই চলছে৷ ব্যাপার টা কি হচ্ছে? তিশান কি আমায় ফলো করছে? কিন্তু আমাকে ফলো করতে যাবে কোন দুঃখে? বুক টা ধুক ধুক করছে এই বুঝি হার্ট অ্যাটাক করবো মা দেখলে রক্ষে নেই এই ছেলে হ্যালমেট ও পরেনি৷ আল্লাহ কি করতে চাইছে এই ছেলে? টিকাতোলি আসতেই পাশ ফিরে দেখি অভিসার সিনেমা হলের সামনে বাইক থেমেছে তিশানের৷ তিশান তাহলে এখানে এসেছিলো? আর আমি কি না কি ভাবছিলাম৷
রাজধানী মার্কেটে পাশ ঘেঁষে রাখলো আমাদের সিএনজিটা নানির জন্য পান নেওয়ার জন্য আম্মু বের হলো আমি যেহেতু জানলার সাইডে বসেছিলাম আমাকেই নামতে হলো আমি গিয়ে পাশে একটা দোকান থেকে পান নিলাম৷ দোকান থেকে বের হবো তখন দেখি তিশান আমার পাশে, বুক টা ধক করে উঠলো ও একটা সিগারেট নিলো তখনি আম্মুর ডাক পরলো আমি যেতে যেতে পিছনে তাকালাম ও হাত দিয়ে ফোন করার ইশারা করছে৷ ফোন কাকে করতে বলছে ওকে? একে আমি ফোন করবো কি করে? ও ওর বাইকের কাছে গিয়ে বাইকটা স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না হয়তো ও এ কারণেই থেমে গেছে? তাহলে কি আমার পিছনেই এসেছিলো?কিন্তু কেন?
বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে আমি সিএনজিতে উঠলাম তিশান আমাদের সিএনজির থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনের ইশারা করছে৷ আমার হাত পা কাপছে আল্লাহ আম্মু দেখলে শেষ সিএনজি টা ছেড়ে দিলো হাফ ছেড়ে বাচলাম আমি৷ কিন্তু ও ফোন করার কথা বলছে কেন? আর নাম্বারই পাবো কই?
এমনিতো মনটা ভালো ছিলো না এই অদ্ভুত অনুভুতির জন্য আবার তিশানের এমন কাহিনী৷ কি হচ্ছে এসব?
বিষণ্ণ মন নিয়ে নানু বাড়িতে আসলাম৷ গাড়িতেই আম্মুকে জানিয়েছি কাল কলেজে যেতে হবে৷ আম্মু আমাকে একা যেতে বলেছে কাজ শেষে আবার এখানে আসতে বললো৷
আজকের দিনটা কেটে গেলো সকালে উঠেই আটটা বাজে বেড়িয়ে পরলাম৷ আমার দাদুবাড়ি যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইলের এই দিকে তাই যেতে দেরি হয়ে যাবে তারাতারি বের হয়েছি৷ কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল মন টা ও যেন কুয়াশায় ছেয়ে ছিলো৷ ইসস আজ ও যদি দেখা হতো তাঁর সাথে? মন জুরে এমন ভাবনার বিরাজ আমার অদ্ভুত অনুভূতি জুরে রয়ে যাবে সে৷ যে অনুভূতির নাম আমার একে বারেই অজানা৷ সে ও হয়তো ভুলে যাবে আমায়?
ছোট খাটো মিটিং ছিলো স্কাউটে শেষ করে আমার বাড়িতে আসলাম নানু বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না আম্মুকে ফোন করে যানানোর পর বললো আম্মুও তাহলে বিকেলে চলে আসবে৷
হঠাৎ তিশানের ইশারা করে বলা ফোন করার কথাটা মনে পরলো, রাগ হলো ছেলেটার উপর ছেলেটা আস্ত গাঁধা নাম্বার ছাড়া ফোন দিবো কি করে? পাগল মনে হয় ছেলেটা৷ মন খারাপ করেই সারাটা দিন কেটে গেলো কাল ১৬ডিসেম্বর চাচিরা আর আম্মু মিলে ছাদ পিকনিক এর প্ল্যান করছে৷ আমার সব সময় পিকনিকের প্রতি লাফালাফিটা বেশি থাকলেও এবার আগ্রহ নেই৷ কেন তা জানি না৷ কিন্তু এই ভয়ংকর মন খারাপ থেকে বাচতে একটু তো আনন্দ করতেই হবে তাই আমাদের ছাদে এলাম৷
এখানে প্যান্ডেল করা হচ্ছে আমার ছোট কাকি আমার বন্ধু সুলভ বয়সটাও আমার থেকে দুই বছরের বড় সে আমাকে দেখে বলে,
“তাফসি তোকে আজ এমন মন মরা লাগছে কেন?কিছু হয়েছে?ভাবি কি তোকে বকেছে নাকি?”
আমি কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বলি,
“আরে কাকি কি যে বলো মন খারাপ থাকবে কেন?সারাদিন শুয়ে ছিলাম মাথাটা ঝিম মেরে আছে৷ ”
আমি দিয়ে এক কোনে দাড়ালাম৷
এ নিষিদ্ধ অনুভূতি থেকে বাচবো কি করে আমি? কি ভয়ংকর অনুভূতি আগে তো এমন হয়নি? অহেতুক কিছুর প্রতি এমন অনুভূতি? আচ্ছা সত্যি কি আর কখনোই আমাদের দেখা হবে না? আচ্ছা আমার এ অদ্ভুত অনুভূতির নাম কি? ভালোলাগা? নাকি আবেগ? আবেগ ভেবেই মন টা ক্ষীন শান্ত করলাম আবেগই হয়তো? সবার সাথে হাতে হাত লাগালাম কাজের মাঝে থাকলে এসব এর কথা মাথায় আসবে না৷ ভেবেই কাজ করতে লাগলাম৷
রাত একটা এসে আড্ডা শেষ করে ঘুমাতে আসলাম কিন্তু সেই অনুভূতি যেন আমায় ঝাপটে ধরলো৷ আমি নিজের উপর বিরক্ত হয়ে রাত দুইটা পর্যন্ত উপন্যাস পড়লাম৷ ঘুম চোখে ছিটেফোঁটা ও নেই৷
বুক কেমন করছে দাত খিচে চোখ বন্ধরে রইলাম৷ ঘুম আসলো না তাই আবার ফোন টা নিলাম বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বললাম কিছুখন সে ও ঘুমিয়ে পরেছে আজান কানে এলো৷ নিজের এমন কর্মকান্ডে অবাক না হয়ে পারলাম না নিজেই৷ যে মেয়ে এতো ঘুম কাতর সে গোটা রাত হাসফাস করে কাটালো? আচ্ছা সত্যি কি এটাকে আবেগ বলা যায়?তাহলে কি বলবো?
ভোরে উঠে হাটতে বের হলাম৷ আম্মু দেখে বলে,
“বাহ আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো বল তো? টেনেও ঘুম থেকে উঠানো যায় না আর তুই এখন হাটতে বের হচ্ছিস?”
আমি আম্মুর কথা উত্তর দিলাম না, বেড়িয়ে গেলাম৷ পিচঢালা রাস্তায় হাটছি অনেকে মর্নিং ওয়ার্কে বেড়িয়েছে৷ হঠাৎ এক জোরা দম্পতি দেখতেই আমার তাঁর কথা মনে হলো৷ পরক্ষণেই নিজের ভাবনায় হাসলাম আমি কি তাঁর প্রেমে পরে গেছি? তিন দিনে প্রেম হয় নাকি? আর শুরুটা তো ঝগড়া দিয়ে প্রেম হবে কি করে? আমি একটু বেশি ভেবে ফেলেছি৷
হাটতে বের হওয়ায় কিছুটা মন শান্তি লাগলো৷ আজ সারা দিন মন ভালোই ছিলো বাড়িতে বেশ গমগমে পরিবেশ৷ ফুপ্পি এসেছে আর ফুপ্পি আসা মানে তো আমাদের বাড়িতে ঈদ৷
চারটা দিন কেটে গেলো আজ বিশ তারিখ আজ হঠাৎ মন খারাপ লাগছে আবার তাঁর কথা মনে পরছে চার দিন দিনে মনে না পরলেও রাতে একটু মন খারাপ লাগছিলো৷
আজ শপিং করতে যাচ্ছি মন জুরে তাকে নিয়ে ভাবনা৷ কেন যেন মনে হচ্ছে আজ হয়তো তিশানের সাথে দেখা হবে? আচ্ছা সে কি আমায় মিস করে? আমার মত তার মনের আঙিনায় কি আমার বিচরণ থাকে? সে কি আমায় ভুলে গেছে? হয়তো ভুলে গেছে কেন যেন অভিমান হলো৷ দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো বুক চিরে৷
“আমার মন গহীনে তাঁর বিচরণ
তবুও কেও যেন কানে কানে বলে
ওহে প্রেম কুমারী তাঁর প্রেমে যে পরা বারণ,,,,,,,”
চলবে,